বুক ব্যথা হয় না অনেক হার্ট অ্যাটাকে
হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যসূচকলক্ষণ হলো হঠাৎ বুক ব্যথা।
জানা কথা। তবে অনেকগুলো নতুন
গবেষণাকর্ম থেকে দেখা যায়, অনেক
লোক যাদের
হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে হার্ট অ্যাটাক
সন্দেহ করে, এদের বুক
ব্যথা হয়নি এবং সে জন্য
হালকাভাবে চিকিৎসা হয়েছে তাদের।
তরুণ ও মধ্যবয়সী নারীদের জন্য
পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। ১১ লাখ
লোকের ওপর একটি গবেষণা রিপোর্ট
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হার্ট
অ্যাটাকের জন্য ভর্তি নারীদের ৪২
শতাংশের
আশ্চর্যভাবে কোনো বুকব্যথার
ইতিহাস ছিল না।
তুলনামূলকভাবে ৩০.৭ শতাংশ পুরুষের
মাত্র ছিল না বুক ব্যথার ইতিহাস।
হার্ট অ্যাটাকের পর মহিলাদের মৃত্যুর
সম্ভাবনাও বেশি। গবেষণায় দেখা গেল,
নারীদের মৃত্যুহার ছিল ১৫ শতাংশ,
পুরুষের ছিল তুলনামূলকভাবে ১০
শতাংশ।
এই গবেষণার একজন প্রধান গবেষক
এবং ফ্লোরিডার লেকল্যান্ড
রিজিওন্যাল মেডিকেল সেন্টারের চেস্ট
পেইন সেন্টারের পরিচালক ডা. জন
জি ক্যান্টো বলেন,
‘আমরা মনে করি এর আংশিক কারণ
হলো যেসব নারীর হার্ট অ্যাটাকের
উপস্থাপনা নিয়ে আসেন তাঁদের
বৈশিষ্ট্যসূচক উপসর্গ নাও
থাকতে পারে।
তাই হার্ট অ্যাটাক
হয়েছে বলে তাঁরা চিহ্নিত হন না:
সম্ভবত, এদের মধ্যে কিছু রোগীর এত
দেরিতে এসব উপসর্গ হয় যে জীবন
রক্ষাকারী পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ হতেও
দেরি হয়ে যায়।’ গবেষণার ফল
প্রকাশিত হয়েছে প্রখ্যাত জার্নাল অব
দি আমেরিকান মেডিকেল
অ্যাসোসিয়েশনের
সম্প্রতি প্রকাশনায়।
স্ত্রী ও পুরুষের মৃত্যুর একটি প্রধান
কারণ হলো হূদরোগ। কেবল আমেরিকায়
নয়, সারা পৃথিবীতে: প্রতিবছর
এতে প্রাণ হারান ৭০ লাখ লোক।
১৯৮০ সাল পর্যন্ত
হূদেরাগকে পুরুষের রোগ
বলে মনে করা হতো এবং পুরুষকে লক্ষ
করে বা কেন্দ্র
করে অনেকগুলো গবেষণা হয়েছিল
এবং এগুলো থেকে হার্ট অ্যাটাকের
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ
লক্ষণগুলো সম্বন্ধে একটি সংকীর্ণ
ছবি আঁকা হয়েছিল মাত্র: বুকব্যথা,
শ্বাসকষ্ট, ঘাড়, চোয়াল, পিঠ ও বাহু
দিয়ে বয়ে আসা ব্যথা। তবে আরও
অন্তর্গত গবেষণায় দেখা গেল,
স্ত্রী রোগীদের এসব উপসর্গ হলেও,
কখনো কখনো এমন সব উপসর্গ তাদের
হয় যা হার্ট অ্যাটাকের বৈশিষ্ট্যসূচক
নয়, যেমন ঘুমের সমস্যা এবং হার্ট
অ্যাটাকের কয়েক দিন বা কয়েক
সপ্তাহ আগে থেকে গুরুতর ক্লান্তি, এ
ছাড়া শীতলঘাম, দুর্বলতা ও
মাথা ঝিমাঝিম ভাব হার্ট অ্যাটাকের
সময়। নতুন এই গবেষণায় ডা.
ক্যান্টো ও তাঁর
সহকর্মীরা ১৯৯৪-২০০০ সাল
পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাকের জন্য
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের
জাতীয় নিবন্ধীকৃত
নথি পর্যালোচনা করে পুরুষদের ও
মহিলাদের উপসর্গসমূহ ও মৃত্যুহার
তুলনা করে দেখেছেন।
বুকব্যথা মহিলা ও পুরুষের
মধ্যে সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলেও
সর্বমোট ৩৫ শতাংশ রোগীর কখনোই
বুকব্যথা ছিল না।
৫৫-অনূর্ধ্ব নারী যাদের হার্ট
অ্যাটাক হয়েছিল
তবে বুকে অস্বস্তি ছিল না তাদের
হাসপাতালে মৃত্যুঝুঁকি, একই বয়সের
পুরুষ যাদের বৈশিষ্ট্যসূচক হার্ট
অ্যাটাক উপসর্গ ছিল, তাদের তুলনায়
দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেশি ছিল।
তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই
পার্থক্য কমে এল এবং পরে মিলিয়েও
গেল। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে হার্ট
অ্যাটাকের উপসর্গগুলোর তারতম্য
কেন হয়, তা সঠিকভাবে জানা নেই।
তবে ডা. ক্যান্টোর ধারণা, অনেক
উপাদান জড়িত থাকতে পারে।
এমনকি হরমোনও। অনেক
নারী যাঁরা গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন
করেন, তাঁদের রক্তনালি ও ধমনীসমূহ
পুরুষের চেয়ে অনেক আঠালো।
ডা. ক্যান্টো বলেন, নারীদের
মধ্যে বিশেষ করে তরুণ নারী যাদের
মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়, এদের
করোনারি ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার
প্রক্রিয়া তরুণ পুরুষের তুলনায়
আলাদা। এদের ধমনীগাত্রে চর্বিপুঞ্জ
দীর্ণ হওয়ার চেয়ে বরং চর্বিপুঞ্জ
ক্ষয় ও ক্ষত খসে পড়ার
ঘটনা ঘটে বেশি।
যাদের হার্ট অ্যাটাক হলো অথচ
বুকে চাপ চাপ ব্যথা, আঁটোসাঁটো ভাব
হলো না, এঁরা বুঝতে পারেন
না কী ঘটল। ডা. ক্যান্টো বলেন,
তাঁরা যখন চিকিৎসার জন্য আসেন
তখন ডাক্তাররা হার্ট অ্যাটাকের
সম্ভাবনা অবিলম্বে বিবেচনা করতে
পারেন না বিশেষ করে মহিলাদের
ক্ষেত্রে। ফলে, তাই অবিলম্বে বাইপাস
সার্জারি, হার্ট ক্যাথেটেরাইজ
করা এবং অন্যান্য জীবন
রক্ষাকারী পদ্ধতি প্রয়োগ অনেক
কমে যায়। বাস্তবতা হলো, অনেক
ডাক্তারই ভাবেন
না যে কমবয়সী নারীদের হার্ট অ্যাটাক
হতে পারে, বলেন আমেরিকান হার্ট
অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য
এবং নিউইয়র্কে মন্টে ফিওবে
আইনস্টাইন সেন্টার ফর হার্ট অ্যান্ড
ভাসকুলার
কেয়ারে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান
ডা. ম্যারিও গার্সিয়া। আবার অনেক
গবেষণা থেকে এও দেখা গেছে,
এমনকি যেসব নারীর বুক ব্যথাসহ হার্ট
অ্যাটাকের বৈশিষ্ট্যসূচক উপসর্গ
হয়েছিল তাঁরাও পুরুষদের তুলনায়
চিকিৎসা-সহায়তার জন্য অনেক কম
গেছেন ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে।
ডা. মারিয়া গার্সিয়ার বক্তব্য:
পুরুষেরা এ রকম সমস্যা হলে দ্রুত
পরামর্শ নেন ডাক্তারের।
নারীরা নিজেদের চেয়ে তাঁদের স্বামীদের
ব্যাপারে ভাবেন বেশি। উদ্বিগ্ন হন
বেশি।
কেবল এ দেশে কেন, পৃথিবীজুড়েই
নারীরা নিজেদের নিয়ে ভাবেন কম,
নিজেদের যত্ন নেন কম।
বিবাহিতা নারীরা স্বামীদের
ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হন বেশি।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস,
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক
অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ,
ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন