ঘরে বসেই ক্ষতের চিকিৎসা
আমরা প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনারশিকার হই। আর তাতে তেমন মারাত্মক
সমস্যা না হলেও ছোটখাটো ক্ষত
সৃষ্টি হতেই পারে। ছিঁড়ে যাওয়া,
ছুলে যাওয়া, কেটে যাওয়া—
এগুলো হরহামেশাই হয়। বাচ্চাদের
ক্ষেত্রে এগুলো হওয়ার আশঙ্কা আরও
বেশি। কখনো কখনো আবার গৃহপালিত
পশু বা বন্য জীব, যেমন—কুকুর,
বিড়াল, বেজি, বাদুড়, শিয়াল
কামড়ে বা আঁচড়ে দিতে পারে।
ক্ষতের প্রাথমিক
চিকিৎসা আমরা বাড়িতে বা ঘটনাস্থলে
কী করে করব, আজ তাই নিয়ে একটু
আলোচনা করা যাক।
হইচই বা হাঙ্গামা না করে আগে নিজের
দুটো হাত ভালো করে সাবান ও
পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। কারণ,
ময়লা বা নোংরা হাতে ক্ষত
পরীক্ষা বা পরিষ্কার করা ঠিক না।
তাতে ক্ষতে প্রদাহ হওয়ার
আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এবার ক্ষতস্থান পরীক্ষা করুন।
রক্তপাত হচ্ছে কি না,
ময়লা লেগেছে কি না ক্ষতে, ক্ষতের
পরিমাণটাই বা কেমন—এসব পরখ
করার পর সাবান ও পরিষ্কার
পানি দিয়ে ক্ষত খুব
ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। একটু
বেশি পানি দিয়ে বা রানিং ওয়াটারে ধুলে
ভালো হয়। এবার শুকনো পরিষ্কার
কাপড় না হলে ফেসিয়াল টিস্যু
দিয়ে জায়গাটা হালকাভাবে শুকিয়ে নিন।
যদি পরিলক্ষিত হয়, ক্ষত দিয়ে রক্ত
বের হচ্ছে, তবে তা পরিষ্কার কাপড়
বা গজ দিয়ে চেপে রাখুন ২০ মিনিট।
রক্ত বন্ধ হলে বিটাডিন বা হেক্সিসল
দিয়ে পরিষ্কার করুন ক্ষত। প্রদাহ
অনেক কমে যাবে। এবার একটু
অ্যান্টিবায়োটিক মলম, যেমন—
নিউমাইসিন বেসিট্রাসিন, মিউপেরিসিন,
জেন্টামাইসিন ইত্যাদি লাগলে ভালো হয়
(কখনো ভুলেও কোনো স্টেরয়েড মলম
লাগাবেন না)। ১২ থেকে ২৪
ঘণ্টা হালকা ব্যান্ডেজ
করে রাখতে পারলে আরও ভালো হয়।
ব্যথা প্রশমনের জন্য এরপর একটু
প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
তবে যদি ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ ২০
মিনিটের মধ্যে বন্ধ না হয়,
তবে কাছের হাসপাতাল
বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে পরবর্তী
চিকিৎসার জন্য।
যদি ক্ষতটি তৈরি হয় কুকুর, বিড়াল,
বেজি, শিয়াল, বাদুড়, ইঁদুর বা এ-জাতীয়
প্রাণী কর্তৃক, তবে তা আরও
গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। আগের
মতোই পরিষ্কার পানি ও সাবান
দিয়ে ক্ষত তিন-চারবার
ভালো করে ধুতে হবে। তারপর বিটাডিন
দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এ
ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ দেওয়া যাবে না।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর কাছের
হাসপাতালে গিয়ে অ্যান্টিরেবিস ও
অ্যান্টিটিটেনাস ভ্যাকসিন দিতে হবে।
পাশাপাশি প্যারাসিটামল ও
মুখে অ্যান্টিবায়োটিক
খেতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী।
যেকোনো ময়লা ক্ষত, বিশেষ
করে সড়ক দুর্ঘটনা বা ময়লা পেরেক,
টিন, পিন ইত্যাদি দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত
হলে প্রদাহের পাশাপাশি টিটেনাস হওয়ার
আশঙ্কা থাকে। তাই চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী টিটেনাস টক্সয়েড ও
টিআইজি দিতে হবে।
হাতে বা পায়ে ক্ষত হলে সেই
অংশকে ঝুলিয়ে না রেখে উঁচু
করে রাখতে পারলে ফোলা বা ইডিমা কম
হবে। পায়ের ক্ষতে পায়ের নিচে বালিশ
দিয়ে শুয়ে থাকলে আরও ভালো হয়।
গরম পানি, গরম তেল, গরম খাবার
বা পানীয়, যেমন—চা, কফি, ভাতের
ফ্যান, গরম ডাল, জ্বলন্ত সিগারেট,
মশার কয়েল, চুলার আগুন থেকেও
অনেক সময় ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
প্রথমে দেখতে হবে কতটুকু ক্ষত
হয়েছে। ক্ষতের ব্যাপ্তি ও গভীরতার
ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। সামান্য
ক্ষত হলে বা একটু
ফোসকামতো পড়লে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা
পরিষ্কার পানি দিয়ে ক্ষতটি কিছুক্ষণ
ধুয়ে ফেলতে হবে। তাতে জ্বালা ও
ব্যথা কমবে। ফোসকা গেলে দেওয়ার
দরকার নেই। ক্ষতটিতে সিলভার
সালফাডায়জিন মলম দিনে তিন-চারবার
লাগাতে হবে।
তবে পোড়া ক্ষতটি যদি আকারে বড় ও
গভীর হয়, চিকিৎসকের
পরামর্শে চিকিৎসা করাতে হবে। এসব
ক্ষেত্রে টিটেনাস প্রফাইলেক্সিস
নেওয়া ভালো।
এ ধরনের সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য
আমাদের সর্বদা সতর্ক ও সাবধান
থাকতে হবে। বাচ্চাদের
বেশি সাবধানে রাখতে হবে।
বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার
জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস
থাকলে ভালো হয়। যেমন,
কয়েকটি স্টেরাইল গজের প্যাকেট
(যা এখন সব ফার্মেসিতে পাওয়া যায়),
কিছু তুলা, ব্যান্ডেজ, বিটাডিন,
হেক্সিসল সলিউশন আর
অ্যান্টিবায়োটিক মলম ও
প্যারাসিটামল। এগুলো আপনার
ঘরে থাকলে প্রতিবেশীকেও
আপনি প্রয়োজনে সাহায্য
করতে পারবেন।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
এম করিম খান
অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ,
ময়মনসিংহ।
সূত্রঃ বাংলা হেলথ ।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন