“তোমরাই ঐক্যবদ্ধ জাতি”→পাতা ২ ←

কোন মন্তব্য নেই
“(হে রাসূল!) আপনি বলুন! যদি মানব-দানব একত্রিত হয়ে এই কুরআনের অনুরূপ কিছু আনয়ন করতে চায়, তবু তারা তা আনতে সক্ষম হবে না।যদিও পরষ্পর তারা সহযোগী হয়।” (সূরা ইসরা- ৮৮)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জগতের জন্য কল্যাণকর, বিবেক-বুদ্ধি সমর্থিত, সহজ-সরল এবং ন্যায় সঙ্গত এক বিধান নিয়ে আসলেন। যা মানব জাতির স্বভাব ও প্রকৃতির পূর্ণ অনুকূল। যা তাদের পরিশুদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তাই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মহান অন-র বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ সে বিধানকে আনন্দচিত্তে গ্রহণ করলেন এবং এর হেফাযত ও বাস-বায়নে সীমাহীন নিপীড়ণ-নির্যাতন সহ্য করলেন। এমনকি এ পথে সহাস্য জীবন বিসর্জনেও তাঁরা সামান্যতম কুন্ঠাবোধ করেননি। যা মুসলিম মিল্লাতের জন্য চিরঅনুসরণীয়।
আল্লাহ্‌ তা’আলা যাকে ইচ্ছা তাকে রাসূলের মাধ্যমে সঠিক পথদেখালেন। আর যারা এ পথের সন্ধান পেয়ে ধন্য হলেন, তাঁরাসুদৃঢ়ভাবে অনুসৃত আদর্শের অনুসরণ করতে থাকেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেই একমাত্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। এটাই সত্যন্যায়ের পথ, আর সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
“হে রাসূল আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় মুত্তাক্বীদের (আল্লাহ্‌ ভীরুদের) জন্যই শুভ পরিণতি।” (সূরা হুদ- ৪৯)

সীসা ঢালা প্রাচীর:
আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসার মাধ্যমে যে সম্পর্ক গড়ে উঠে, তাই শ্রেষ্ঠ ও সম্মান জনক সম্পর্ক। যে বন্ধনের ভিত্তি হল আল্লাহ্‌ তা’আলার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন এবং তাঁর মহান বিধানকে ধর্ম ও আদর্শরূপে জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিগ্রহ করণ। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
“যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসূলকে ও মুমিনদেরকে ভালবাসবে, (তারাই আল্লাহ্‌র দলভূক্ত) আর আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।” (সূরা মায়েদা ৫৬)

উক্ত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে ইসলামী জীবন বিধানে মৌলিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ
“নিশ্চয় মুমিনগণ পরষ্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভ্রাতৃদ্বয়ের মাঝে মীমাংসা কর।” (সূরা হুজুরাত- ১০)

আল্লাহ্‌ পাক আরো বলেন:
মু’মিন নর-নারীগণ পরষ্পর পরষ্পরের বন্ধু।” (সূরা তওবা- ৭১)
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“তোমরা মু’মিন না হলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরষ্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কি করে পরষ্পরে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হল,) তোমরা পরষ্পরকে বেশী বেশী সালাম প্রদান করবে।” (মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
“একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। তার উপর যুলুম করবে না। তাকে উপহাস করবে না। তাকে হীন প্রতিপন্ন করবে না। তারপর রাসূল (ছাঃ) নিজের বুকের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, তাক্বওয়া (আল্লাহ্‌ ভীরুতা) এখানেই।একজন মুসলিম ভাইকে হীন প্রতিপন্ন করাই পাপের জন্যযথেষ্ট। প্রতিটি মুসলমানের উপর হারাম করা হয়েছে অন্য মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের ক্ষতি সাধন।” (বুখারী ও মুসলিম)

সকল মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের হেফাযতে প্রয়াস চালানো প্রতিটি মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের সাদৃশ্য প্রদান করেছেন ‘সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়’ বলে এবং ‘একটি দেহের সাথে’ তাদের তুলনাকরেছেন। তাঁর ছাহাবীগণ ছিলেন এর জীবন্ত উদাহরণ। মক্কা হতে আগত মুহাজিরদের সাথে মদীনাবাসী আনছারগণ যে আচরণ করেছেন, সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেনঃ
“যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এই স্থানে (মদীনায়) বসবাস করছিল এবং ঈমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে। আর মুহাজিরদের যা কিছু প্রদানকরা হয়েছে সে জন্য তারা নিজেদের হৃদয়ে কোন ঈর্ষা পোষণ করে না। আর নিজেরা অভাবগ্রস- হয়েও তাদেরকে (মুহাজিরদের) অগ্রাধিকার প্রদান করে থাকে।” (সূরা হাশর-৯)
.
মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠতা:
মুসলিম এক মহান জাতি, যাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণের জন্য নির্বাচন করেছেন এবং তাদেরকে ‘মুসলিম জাতি’ হিসেবে নাম করণ করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেন,
“তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর; যথাযোগ্য জিহাদ। তিনিই তোমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন। ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি। ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত (ধর্ম)। তিনি পূর্বে তোমাদের নাম করণ করেছেন ‘মুসলিম’।” (সূরা হাজ্জ- ৭৮)

আল্লাহ্‌ তা’আলা মুসলামনদের শীর্ষতা প্রদান করেছেন- শ্রেষ্ঠতম আসমানী কিতাব ‘আল কুরআন’ দিয়ে। তাই অন্য ধর্ম হতে মুসলমানদের কিছু গ্রহণ করার আদৌ প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ্‌ তা’আলা মুসলমানদের ক্বিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তাঁর পূত-পবিত্র ঘর কা’বা শরীফকে। তা যিয়ারত করে তারা ধন্য হয় এবং তারই হজ্জ ওওমরা তারা আদায় করে থাকে।
ছালাত আদায় করার জন্য আল্লাহ্‌ মুসলানদের প্রদান করেছেন একটি সুন্দরতম যিকির (আযান)। আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আযানের প্রথা প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বে মুসলমানগণ মদীনায় আগমনের পর একত্রিতহয়ে ছালাতের জন্য অপেক্ষাকরতেন। অত:পর এ বিষয়ে ছাহাবীগণ আলোচনায় বসলেন। কেউ বললেন: নাছারাগণের মত ঘন্টা বাজানো হোক! কেউ বললেন বরং ইহুদীদের শিঙ্গার মত কর্নেট (এক প্রকার বাঁশী) ব্যবহার কার হোক।
হযরত ওমার (রাঃ) বললেন, ছালাতের আহ্বানের জন্য কোনমানুষকে পাঠালে হয় না?
তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাঃ)বললেন: “হে বেলাল! উঠ এবং ছালাতের জন্য আহ্বান কর (আযান দাও)।” আরো পড়ুন......→“তোমরাই ঐক্যবদ্ধ জাতি”←→পাতা ৩ ←

কোন মন্তব্য নেই :