বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব / পাতা ৩
সামেরীর প্ররোচনায় গাভীর বাচ্চা দ্বারা তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল এমনকি তারা তার ইবাদাতওকরেছিল । আল্লাহ তা’আলা আয়াতের শেষে বলেছেন : “মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়েথাকি” । এটি ব্যাপকভিত্তিক কথা । এরসাথে বিদ’আতেরও সাদৃশ্যতা আছে । কারণ সকল প্রকার বিদ’আতও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের শামিল । যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :“নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ বিনা জ্ঞানে হত্যা করেছে এবংআল্লাহ তাদেরকে যেসব রিযিক দিয়েছিলেন , সেগুলোকে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে হারাম করে দিয়েছে । নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি” (সূরা আন’আম : ১৪০)।
অতএব আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে যে ব্যক্তিই বিদ’আত সৃষ্টি করবে তাকেই তার বিদ’আতের কারণে লজ্জিত ও লাঞ্ছিতহতে হবে । তাবেঈ’দের যুগে বাস্তবে বিদ’আতীদের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছিল । তাদেরকে তাদের বিদ’আত নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে ।
১৩. সুন্নাতের বিরোধীতা করার কারণে বিদ’আতী নিজেকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করে : সুফিয়ান ইবনু ওয়াইনাহ বলেন : আমি ইমাম মালেক (রহঃ) কে যে ব্যক্তি মদীনার মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই ইহরাম বাঁধলো তার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনি উত্তরেবললেন : সে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচারণকারী । তারউপর দুনিয়াতে ফিতনার তার আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি । তুমি কি আল্লাহ তায়ালারবাণী শুননি ।
“যারা তাঁর নির্দেশের বিরোধীতা করবে তারা যেনসতর্ক হয় তাদেরকে ফিতনাপেয়ে যাওয়া বা তাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি গ্রাস করা থেকে” (সূরা আন-নূর: ৬৩ ।
১৪. বিদ’আতের অন্যতম ভয়াবহতা কারণ এই যে , সহীহ সুন্নাহ , তার ধারক– বাহক ও তার উপর আমলকারীকে বিদ’আতী ঘৃণাকরবে এবং তাকে মন্দ জানবে ।
১৫. বিদ’আতী নিজেকে শরী’আতের মধ্যে কিছুসংযোজনকরী হিসাবে প্রকাশ করে : অথচ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে তাঁর বান্দাদেরজন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন। “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামাতকে সম্পূর্ণ করেদিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসাবে পছন্দ করলাম ।” সূরা মায়েদা /৩
১৬. বিদ’আত হচ্ছে জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলা : শরী’আতের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কিছু বানিয়ে বললে তা যে কতই ভয়ানক সেটি অনুধাবন করা যায় আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী(সাঃ) কে সম্বোধন করে বলা নিম্নোক্ত কঠোর ভাষার আয়াতগুলিতে :
“সে যদি আমার নামে কোন কিছু রচনা করতো , তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম , অতঃপর তার গ্রীবা কেটে দিতাম তোমাদের কেউ তাকে রক্ষাকরতে পারতো না” (সূরা আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৭) ।
রাসূল (সাঃ) কেও নিজের পক্ষ হতে কিছু বনিয়ে বলার অনুমতি দেয়া হয়নি ,এ আয়াত তার জাজ্বল্য প্রমাণ । তেমন তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলতেন না । আল্লাহ তা’আলা বলেন :
“আর তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না , যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহী নাযিল হয়” (সূরা আন-নাজম:৩-৫) ।
১৭. বিদ’আতীর জ্ঞান উলট-পালট হয়ে তার নিকট সব কিছুই গোলমেলে হয়ে যায় । ফলে সে বিদ’আতকে সুন্নাত আর সুন্নাতকে বিদ’আত মনে করে ।
অতএব বিদ’আতের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পেতে হলে , আমাদের মাঝে প্রচলিত বিদ’আতগুলো হতে সতর্ক হয়ে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহ মাফিকআমল করা ছাড়া আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই । আসুন আমরা দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসগুলো জেনে সেগুলো পরিত্যাগ করি এবং সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করেআমাদের জীবন গড়ি ।
বিদ’আতের সাথে জড়িত হওয়ার কারণগুলো নিম্নরুপ :
১. কুরআন , সুন্নাহ ও আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ।
২. অতীতের সত্যানুসারী ব্যক্তিগণের মত ও পথের অনুসরণ না করা ।
৩. প্রবৃত্তি বা মনোবৃত্তির অনুসরণ করা ।
৪. সন্দেহমূলক বস্তুর সাথে জড়িত থাকা ।
৫. শুধুমাত্র স্বীয় বুদ্ধির উপর নির্ভর করা।
৬. বড় বড় আলেমের উদ্ধৃতিদিয়ে তার অন্ধ অনুসরণ করা , যা গোঁড়ামির দিকে নিয়ে যায় । আর তখনই সে কুরআন ও সুন্নাতের দলীলগুলোকে অমান্য করে ।
৭. মন্দ লোকদের সংস্পর্শে থাকা ও চলা ।
পাঠক ভাই ও বোনেরা ! যে ব্যক্তি উপরোক্ত আলোচনাবুঝতে সক্ষম হবেন , আমারমনে হয় সে ব্যক্তি নিজেকে বিদ’আত ও তার ভয়াবহত হতে রক্ষার্থে এখন থেকে যাচাই – বাছাই করে পথ চলবেন । যাতে করেঅসতর্কতা বশতঃ বিদ’আতেরমধ্যে জড়িয়ে না যান । যেআমলই আমরা করি না কেন তাযাচাই – বাছাই করেই করা উচিত । কারণ হতে পারে বহু আমল আমার , আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভরশীল ।
রসূল (সাঃ) এর নিম্নোক্ত বাণী কোন ব্যক্তির ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না : “আমার এ নির্দেশের মাঝে যে ব্যক্তি এমন কিছু নবাবিস্কার করবে যা তারঅন্তর্ভুক্ত ছিল না , তাপরিত্যজ্য ।” (বুখারী হা/২৬৯৭ ; মুসলিম হা/৩২৪২ ; আবু দাউদ হা/৩৯৯০ ; ইবনু মাজাহ হা/১৪)
তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার উপর আমার কোন নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য ।” মুত্তাফাকুন আলাইহি হা/৩২৪৩ ।
অতএব আমরা কার স্বার্থ রক্ষার্তে তথাকথিত হুজুরদের ধোঁকায় পড়ে নবী (সাঃ) হতে সহীহ সনদেবর্ণিত হাদীসগুলো ছেড়ে দিয়ে নিজেদেরকে বিপদগামী করব ?
আসুন ! আমরা রাসূল (সাঃ)এ শাফায়াত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নিজেদেরকে তাঁর সহীহ সুন্নাহমুখী করি । আর অনুধাবন করি নিম্নোক্ত হাদীসটি । কারণ একমাত্র তাঁর সহীহসুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিষয়টি যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ এটি তারই প্রমাণ বহন করছে : রাসূল(সাঃ) বলেছেন : “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা যদি মূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার আর কোন সুযোগ ছিল না ।” মুসনাদ ইমাম আহমাদ হা/১৪৬২৩ ।
অতএব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সার্বিক কল্যাণ একমাত্র রাসূল (সাঃ) এর আদর্শের মধ্যেই আমাদেরকে খুঁজে নিতে হবে ।
আসুন ! আমরা জাল ও য’ঈফ হাদীসগুলো জানি এবং তথাকথিত হুজুরদের জাল ওয’ঈফ হাদীস নির্ভর ফতোয়া ও আক্বীদাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করি । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ও তাঁর নবীর যথাযথ অনুসরণ করার তাওফীক দানকরুন । আমীন ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন