আগুনে পুড়ে গেলে কী করবেন? ডা. আবুল হাসেম খান part1

কোন মন্তব্য নেই
শরীরের চামড়া ও অন্য স্থান পুড়ে যাওয়ার কারণ অনেক হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
*. আগুন
*. গরম পানি
*. গরম তেল
*. বিদ্যুৎ
*. রাসায়নিক পদার্থ : এসিড, ক্ষার ইত্যাদি
*. আভনিক রশ্মি বা রেডিয়েশন
*. বোমা বিস্ফোরণ
তবে আমাদের দেশে আগুন ও আগুনজনিত ঘটনায় (গরম পানি, তেল ইত্যাদি) পুড়ে যাওয়ার ঘটনা অন্যগুলোর চেয়ে বেশি। পোড়ার খুব সহজলভ্য ও কার্যকরী চিকিৎসাব্যবস্থা হাতের নাগালে না থাকা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবেআমাদের দেশে পুড়ে মৃত্যুর হার বেশি। অথচ একটু সচেতন হলে অনেক বড় বিপদ থেকে নিজেকে এবং আক্রান্তকে রক্ষা করা যায়।
পোড়ার ধরন
চামড়ায় পোড়ার গভীরতা, আক্রান্ত স্থানের ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতার ওপর ভিত্তি করে পুড়ে যাওয়া বাবার্নকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এ ভাগগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। তাই প্রত্যেকেরই এ সম্পর্কিত ধারণা থাকা দরকার। যেমন-
এক ডিগ্রি বার্ন বা পোড়া
যখন চামড়ার উপরিভাগের একটি স্তর (এপিডার্মিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিচের লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন এক ডিগ্রি বার্ন বলা হয়।
*. চামড়া লাল হয়ে যাওয়া
*. সামান্য ফুলে যেতে পারে
*. ব্যথা হবে
*. অনেক সময় লাল না হয়ে গোলাপি বা হালকা গোলাপি রং ধারণ করতে পারে
*. ফোস্কাও পড়তে পারে
কারণ
*. তীব্র রোদে বেশিক্ষণ থাকলে
*. দীর্ঘ সময় বা দীর্ঘদিন ধরে রোদে কাজ করলে বা থাকতে হরে
*. আগুনের পাশে কাজ করলে
*. রান্নার সময় আগুনের আঁচ বেশি লাগলে
*. ফুটন্ত পানি নয় কিন্তু বেশ গরম-এ রকম পানিতে শরীর পুড়লে
চিকিৎসা
*. আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি ঢাললে বা বরফের সেঁক দিলে উপকার হয়।
*. ব্যথা বেশি হলে আক্রান্ত স্থানে ব্যথানাশক মলম বা ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে।
*. ঠান্ডা পানিতে ভেজানো পরিষ্কার কাপড় আক্রান্ত স্থানে ব্রান্ডেজের মতো খানিকটা সময় বেঁধে রাখতে হয়।
*. নতুন করে যাতে আক্রান্ত স্থানে কোনো আঘাত বা ঘষার শিকার না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে। সাধারণত এ জাতীয় পোড়া কোনো ক্ষতিকর প্রভাব বা দাগ ফেলা ছাড়াই এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে যাদের পেশাগত কারণে যেমন-রোদে কাজ করা বা বাবুর্চির কাজ করা থেকে এ জাতীয় বার্নহয়, তাদের সতর্ক হয়ে কাজ করা ছাড়া তেমন কিছুকরার নেই।
দুই ডিগ্রি বার্ন বা পোড়া
যখন চামড়ার উপরিভাগের দুটি স্তরের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে এবং পরবর্তী স্তর (ডার্মিস) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন তাকে দুই ডিগ্রি পোড়াবা বার্ন বলে।
লক্ষণ
*. পুড়ে যাওয়া স্থান লাল হয়ে যায়
*. ফোসকা পড়বে
*. প্রচণ্ড ব্যথা হবে
*. অনেকখানি ফুলে যাবে
*. পুড়ে যাওয়া স্থান থেকে পানির মতো রস বের হতে পারে বা ভেজা ভেজা থাকতে পারে
কারণ
*. সাধারণত গরম পানি বা গরম তরকারি জাতীয় কিছু পড়লে এ ধরনের ক্ষত তৈরিহয়
*. কাপড়ে আগুন লেগে গেলে এবং তা দ্রুত নিভিয়ে ফেললে (সাধারণত রান্নার সময়)
*. মোমের গরম তরল অংশ সরাসরি চামড়ায় পড়লে
*. আগুনে উত্তপ্ত কড়াই বা এ জাতীয় কিছু খালি হাতেধরলে বা শরীরের কোনো খোলা স্থানে এগুলোর স্পর্শ লাগলে।
*. চিকিৎসা
*. আক্রান্ত স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা পানি ঢালুন।
*. সরাসরি বরফ আক্রান্ত স্থানে লাগাবেন না।
*. আক্রান্ত স্থানে সরাসরি ব্যথানাশক ওষুধলাগাবেন না।
*. ডিম, পেস্ট ইত্যাদি লাগাবেন না।
*. এ জাতীয় পোড়ার চিকিৎসা বাড়িতে নয়, হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে করাতে হয়। উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ সেবন করলে অন্তত দুই সপ্তাহ লাগে ঘা শুকাতে।
তিন ডিগ্রি বার্ন বা পোড়া
যখন চামড়ার উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপেক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চামড়ার নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয় তখন এ জাতীয় পোড়াকে তিন ডিগ্রি পোড়া বা বার্ন বলে।
লক্ষণ
*. আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়
*. চামড়া পুড়ে শক্ত হয়ে যায়
*. স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না
*. আক্রান্ত স্থান অনেকখানি ফুলে যায়
*. আক্রান্ত স্থান থেকে পানির মতো রস বের নাও হতে পারে
*. সরাসরি আগুনে পুড়লে
*. বিদ্যুতায়িত হলে
*. ফুটন্ত পানি সরাসরি শরীরে পড়লে
*. ফুটন্ত তেল সরাসরি শরীরে ছিটকে এলে বা পড়লে
*. আগুনে উত্তপ্ত ধাতব কড়াই, পাতিল বা তাওয়া শরীরে পড়লে
চিকিৎসা
*. আক্রান্ত ব্যক্তিকে যতদ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম পদার্থ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।
*. দ্রুত ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, ঠান্ডা পানিনা পেলে সাধারণ তাপমাত্রার পানি ঢালতেহবে। সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ট্যাপের পানির নিচে বসিয়ে দিতে হবে। পুড়ে যাওয়া কাপড় খুলে দিতে হবে।
*. আক্রান্ত অংশ পরিষ্কারকাপড় বা গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
*. হাত-পায়ের আঙুল পুড়ে গেলে তা আলাদাভাবে ব্যান্ডেজ করতে হবে। অন্যথায় একটার সঙ্গে অন্যটা জোড়া লেগে যেতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ছাড়ানো কঠিন হবে।
*. আক্রান্ত স্থান একটু উঁচুতে রাখতে হবে।
*. আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে এবং মুখে খাওয়ার মতো অবস্থা থাকলে পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে বা শরবত করে খেতে দিন, স্যালাইন বা ডাবের পানি এমনকি সাধারণ খাওয়ার পানিও পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে দিন।
*. অবশ্যই ডাক্তারের কাছেবা হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। মনে রাখতে হবে, এ জাতীয় পোড়ায় সাধারণত পোড়া স্থানের অপারেশন বা স্কিন গ্রাফট দরকার হয়, তাই প্রথম থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
আরো দেখুন
আগুনে পুড়ে গেলে কী করবেন?
ডা. আবুল হাসেম খান
part 2

কোন মন্তব্য নেই :