বয়ঃসরি ঋতুসমস্যা বয়ঃসরি সময় অনেক মেয়েই ঋতুসমস্যায় জর্জরিত হয়ে যান। কিভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করবেন জেনে নিন। ১
কোন মন্তব্য নেই
মেয়েদের যৌবন আসে শরীরের নানা গ্রন্থির পরিণত হয়ে পরসপরনির্ভর কাজকর্ম শুরু হওয়ার জন্য। মগজের হাইপোথ্যালামাস আর পিটুইটারি গ্রন্থি, কিডনির মাথায় বসে থাকা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি আর জরায়ুর দু’পাশে থাকা দুটোডিম্বাশয়ের পরিণত অবস্থাপ্রাপ্তিতে শুরু হয় নির্দিষ্ট হরমোন বা রসের ক্ষরণ।
পিটুইটারি থেকে গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ শুরু হওয়ায় হঠাৎ বেড়ে ওঠে শরীর, ওই গ্রন্থির FSH আর LH এই দুই হরমোন গিয়ে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপত করে স্ত্রী যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন নিঃসরণে। ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে বদলে যায় স্তন-অঙ্কুর। শরীর বদলে যায় মেয়েলি গড়নে, যোনি আর জরায়ু পরিণত হয়ে ওঠে। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির হরমোন অ্যানড্রোজেনের প্রভাবে শরীরের বিশেষ অঞ্চলে দেখা দেয় কেশপ্রাবল্য। এরপর আসে প্রথম রজঃদর্শনের পালা। রজঃদর্শন শুরু হয় জরায়ুর ভেতরকার আবরণী এন্ডোমেট্রিয়ামের ওপর ইস্ট্রোজেনের প্রতিক্রিয়ায়। নিয়মিত ঋতুচত্র তৈরি হয় এন্ডোমেট্রিয়ামের ওপর ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে।
প্রথম রজঃদর্শন সাধারণত ঘটে ১২-১৩ বছর বয়সে। তবে যথেষ্ট পুষ্টি আর স্বাস্থ্যের গুণে আজকাল আরো কম বয়সে, এমনকি ৮-৯ বছর বয়সেও দেখা দিতে পারেএরকম মেয়েলি বৈশিষ্ট্য। রজঃদর্শনের পর মেয়েলি বিশেষত্বগুলো আরো প্রকট হতে থাকে। মাথায় রাখুন, যৌবন শুরুর এরকম পরিবর্তনগুলো দুম করে আসে না, আসে ধাপে ধাপে, বেশ কয়েক বছর সময়কাল জুড়ে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বালিকা কিশোরী হয়ে আস্তে আস্তে বদলে যাননারীতে। বদলে যায় শুধু শরীর নয়, মনটাও।
বিলম্বিত রজঃদর্শন
অনেক সময় ১৩-১৪ বছর বয়সেওপিরিয়ড শুরু না হলে মেয়েদের মায়েরা ভয় পান। এনিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ১৭-১৮ বছরে, এমনকি ২০ বছরেও প্রথম রজঃদর্শনের ঘটনা ঘটে। দেখতে হবে শারীরিক পরিবর্তনগুলো আসছে কি না। শরীরে সব মেয়েলি পরিবর্তন [মেয়েলি গড়ন, স্তনের বৃদ্ধি, বিশেষ অঞ্চলে কেশবাহুল্য ইত্যাদি] এসেও পিরিয়ড শুরু না হলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।শরীরে পরিবর্তন সেভাবে আসেনি, দেখা দেয়নি রজঃদর্শন- এরকম হলে নিশ্চিন্ত থাকুন। অপেক্ষা করুন ১৮ বছর পর্যন্ত। ১৮ বছরেও কোনো মেয়ে ঋতুবতী না হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে নানা ধরনের পরীক্ষা। যেমন ক্রোমোসোম স্টাডি, রক্তের থাইরয়েড হরমোন, প্রোল্যাকটিন, FSH হরমোনমেপে দেখা; মাথার খুলির এক্স-রে বা স্ক্যান। এরকম স্ক্যান বা এক্স-রে ছাড়াও এখন এমআরআই করে পিটুইটারি গ্রন্থির অবস্থা দেখা যায় দরকার হলে। আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখা হয় জরায়ু আর ডিম্বাশয়ের অবস্থা, অবশ্যই দরকার পড়লে। বেশিরভাগ সময় এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকারপড়ে না। বয়স বাড়লে সমস্যামেটে আপনা থেকেই। দরকার হয় শুধু আশ্বস্ত থাকার। অকারণ ভয় বা দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে নিশ্চিন্ত হওয়ার। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষায় সমস্যা ধরা পড়লে মূল সমস্যার চিকিৎসা দরকার হতে পারে।
ত্বরান্বিত রজঃদর্শন
স্ত্রীরোগ শাস্ত্রে এরকমসমস্যা হলো ‘প্রিকশিয়াস পিউবার্টি’। নয় থেকে বারোবছরের মধ্যে আজকাল প্রথম পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঘটনা বিরল নয়, এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এরকম হলে বিশেষ দায়িত্ব মেয়ের মা বা অভিভাবিকার। মেয়েটিকেবোঝাতে হবে, সব মেয়েরই এটা হয়। এরকম স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ব্যাপারকে নিয়ে আতঙ্কের বা ভয়ের কোনো কারণ নেই। মা ভয় পেলে, দুশ্চিন্তায় ভুগলে মেয়ে আরো বেশি ভয় পাবে। মেনস্ট্রুয়েশন আর পিরিয়ডের বিজ্ঞান জেনে-বুঝে নিয়ে সহজ-সরলভাবে বুঝিয়ে দেবেন মা, এমনটাই হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে রজঃদর্শন নিয়ে স্বচ্ছ বাস্তবসমমত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে মেয়ের মনে। স্বাস্থ্যচেতনার অভাবে বহু মা এই কাজটা না করে উলটো ভেঙে পড়ে মেয়ের সমস্যা আরো বাড়ান। আট বছরের আগে কোনো মেয়ে ঋতুবতী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হতে পারে। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট টিউমার, মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, ওভারির নির্দিষ্ট টিউমার বা হাইপোথাইরয়েডের কারণে এরকম হতে পারে। মূল কারণ খুঁজে পেলে এবং তার চিকিৎসা করলে সমস্যা মিটতে পারে। এরকম হয় খুব ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে। নয়-দশ বছর বয়সে বা তারও আগে রজঃদর্শন বেশিরভাগ সময় হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-ওভারির পরসপরনির্ভর ক্ষরণ হঠাৎ করে আগে শুরু হয়ে যাওয়ার জন্য ঘটে। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা, বারবার আশ্বাস দেয়া আর মেনস্ট্রুয়েশনে জীবাণুমুক্ত ডায়াপার ব্যবহার করতে দেয়া-এক্ষেত্রে এছাড়া অন্য কোনো ওষুধ বা চিকিৎসার দরকার নেই।অনিয়মিত ঋতুচক্র
যৌবন শুরুর বছরগুলোতে পিরিয়ডের অনিয়ম অস্বাভাবিক কিছু নয়। হয়তো প্রথম রজঃদর্শনের পর বেশ কয়েক মাস ব রইল ঋতু বা বেশ কয়েক মাস নিয়মিত পিরিয়ডের পর দুম করে ঋতু ব হয়ে গেল। রজঃদর্শনের জন্য দায়ী হরমোনগুলোর ক্ষরণ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর সময় লাগে অনেকেরই। ঋতুবতী হওয়ার পর অনিয়মিত ঋতুচক্রের মূল কারণ হলো এই। এতে উদ্বেগের বা দুশ্চিন্তারকোনো কারণ নেই। শুধু নজর রাখতে হবে কোনো সুযোগসানী পুরুষ মেয়েটিরকোনো ক্ষতি করছে কি না। ঋতুর স্বল্পতা
কেউ কেউ যৌবনারম্ভের বছরগুলোতে দিনে ও পরিমাণে কম মেনস্ট্রুয়েশনের সমস্যায় ভোগে। বাস্তবে এটা তেমন কোনো সমস্যা নয়,বেশিরভাগ কম বয়সী মেয়ের বেলায় সমস্যাটা সাময়িক। হতে পারে যে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আবার খুব রোগা শরীর, শারীরিক অপুষ্টি বা দুর্বলতা, বেশি অ্যানিমিয়া অথবা অন্য কিছু সমস্যাতেও এরকম হতে পারে। একটানা এরকম হতে থাকলে, শরীর খুববেশি রোগা হলে বা সঙ্গে অন্য উপসর্গ থাকলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার দরকার হতে পারে। তবে মাথায় রাখুন, যে কোনো বয়সে পিরিয়ড কম হলে ‘শরীরে বদরক্ত জমে রোগ’ হওয়ার ধারণা শুধু হাস্যকর নয়, চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক। পিরিয়ডের রক্ত শরীরের রক্তের মতোই,এতে এন্ডোমেট্রিয়ামের ঝরে যাওয়া কোষ ও অন্য কিছু বস্তু থাকলে এর সঙ্গে কোনো দূষিত পদার্থ বা টক্সিন শরীর থেকে বেরিয়ে আসে না।

আরো
পড়তে থাকুন ২

কোন মন্তব্য নেই :