শিশুর প্রস্রাবের পথে ইনফেকশন ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
শিশুর শৈশব ও কৈশোরে প্রস্রাবের পথে ইনফেকশন এক সাধারণ সমস্যা। শিশু জন্মের এক মাস বয়স পর্যন্ত ছেলেদের এটা দ্বিগুণ হয়, কিন্তু এক থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ১০ গুণ বেশি হয়। পাঁচ থেকে ১৫ বছর বয়সের স্কুলগামী মেয়েদের প্রায়৫ শতাংশ ভোগে প্রস্রাবের পথের ইনফেকশনে। শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর বারবার এ সমস্যা দেখা দেয়।রোগের কারণ
প্রস্রাবের পথের ইনফেকশনবা সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো মলাশয়ের ব্যাকটেরিয়া। মেয়েদের ক্ষেত্রে রোগটি সবচেয়ে বেশি ঘটায় ই-কলাই নামক ব্যাকটেরিয়া। এ ছাড়া অন্য যে ব্যাকটেরিয়াগুলোদায়ী সেগুলো হলো ক্লেবসিয়েলা, প্রোটিয়াস, স্টাফাইলোকক্কাস অ্যালবাস, সিউডোমোনাস। ছেলেদের ক্ষেত্রে রোগটি বেশি ঘটায় প্রোটিয়াস ব্যাকটেরিয়া। এ ছাড়া ই-কলাই, ক্লেবসিয়েলা, স্টাফাইলোকক্কাস, সিউডোমোনাসও রোগটি ঘটিয়েথাকে।
মলত্যাগের পরে ধৌত করার সময় এসব ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে মূত্রনালিপথে ভেতরে প্রবেশ করে এবং এর ফলে ইনফেকশন দেখা দেয়। এ ছাড়ামূত্রপথে কোনো আবদ্ধতা থাকলে ইনফেকশন ঘটে। কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি ভুগলে মূত্রপথে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রোগের উপসর্গ
এক বছর বয়সের শিশুর প্রস্রাবের পথের ইনফেকশনের উপসর্গের সাথেবয়স্ক শিশুর উপসর্গের ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। অনেক সময় এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে।
এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরযেসব উপসর্গ দেখা দেয় জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, জন্ডিস এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের যেসব উপসর্গ দেখা দেয় জ্বর, অল্প প্রস্রাব, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, বিছানায় প্রস্রাব করা, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবের দুর্গন্ধ, কখনো কখনো, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া, কাঁপুনি। রোগীর কিডনিতে ইনফেকশন থাকলে রোগী আক্রান্ত কিডনির স্থানে ব্যথা অনুভব করবে। পাইলোনেফ্রাইটিস রোগ থাকলে রোগীর কোনো উপসর্গ নাও প্রকাশ পেতে পারে।
রোগ নির্ণয়
ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রোগীর প্রস্রাবের সাধারণ ও কালচার পরীক্ষা করতে হবে। কিডনি কিংবা মূত্রপথের অন্য অসুবিধারজন্য সমস্যাটি দেখা দিচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করাতে হবে। এসব রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে রাখা ভালো।
চিকিৎসা
শিশুর প্রস্রাবের পথের সংক্রমণের জন্য শিশুকে প্রচুর পানি ও তরল খাওয়াতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো। অ্যান্টিবায়োটিক ১০-১৪ দিন চলবে। প্রস্রাবের পথের সংক্রমণে কোনো জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ
শিশুর প্রস্রাবের পথের ইনফেকশন রোধ করার জন্য মায়ের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যেসব উপায়েশিশুর প্রস্রাবের পথের ইনফেকশন রোধ হবে-
শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মলত্যাগের পর ভালোমতো শৌচকার্য সম্পাদন করে দিতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মেয়েদের মলদ্বার এবং যৌনাঙ্গ কাছাকাছি থাকে। মলত্যাগের পরে কিংবা গোসলের পরে সামনে থেকে পেছনে পরিষকার করতে হবে। কখনোই পেছন থেকে সামনে নয়। প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবের থলি ভালোভাবেখালি করতে হবে। ডোবাস্থলে কিংবা পুকুরে শিশুকে গোসল না করানো উত্তম। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দূর করতে হবে। কৃমির সংক্রমণ থাকলে চিকিৎসকেরপরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে শিশুকে প্রস্রাব করিয়ে ঘুমাতে হবে। শিশুকে টাইট জাঙ্গিয়া পরানো যাবে না। ন্যাপি বা ডায়াপার যত কম সময় পরানো যায় তত ভালো। প্রস্রাবে যেকোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন