এইডস, বাস্তবতা এবং প্রতিরোধ বিভ্রান্তি মোহামমদ সাইফ উদ্দিন ২

কোন মন্তব্য নেই
প্রতিরোধ বিভ্রান্তি
সারা বিশ্বে এইডস সম্পর্কে একটাই স্লোগান-প্রতিকার নেই তাই প্রতিরোধ। কিন্তু এ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেই চলছে চরম বিভ্রান্তি এবং ক্ষেত্রবিশেষে মতলববাজি। বিশ্বে প্রতিদিন শত শত সেমিনার, সিসেপাজিয়াম, টক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে, হাজার হাজার সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে, মূলত একটি বাণী নিয়ে আর তা হচ্ছে-নিরাপদ যৌন আচরণ করুন, কনডম ব্যবহার করুন। সম্পূর্ণ বিষয়টি এমন যেন কনডম বাজারজাতকরণের পর্যায়ে চলে গেছে। আর এ সুযোগে কিছু এনজিও এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এইডসের নামে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করছে।
পুরো ব্যাপারটি আসলেই অদ্ভুত! ধূমপানজনিত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, ধূমপান ত্যাগ করুন-ক্যান্সার থেকে বাঁচুন। ধূমপানে বিষপান ইত্যাদি। আর এখানে বলা হচ্ছে অবৈধ কাজগুলো করুন,তবে সাবধানে করুন। ক্ষেত্রবিশেষে এসব বিষয়কে বৈধতা দেয়ার জন্য আন্দোলন হচ্ছে। এর ফলে ব্রিটেনসহ বিশ্বের অনেক দেশে সমকামিতা আইন করে বৈধ করা হয়েছে। এসব বিষয়কে মূল্যবোধের অবক্ষয় হিসেবেই ধরা যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও চিত্র প্রায় একই। এইডসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রচুর সংগঠন কাজ করছে। এইডস এবংএইডসসংক্রান্ত বিষয় নিয়েপ্রায় ৩০০ এনজিও এখানে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৩৫টি এনজিও শুধু এইচআইভি/এইডস নিয়ে কাজ করছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষভাবে পতিতা এবং এদের খদ্দেরদের এইডস প্রতিরোধসম্পর্কিত জ্ঞানদান এবং সময় সময় বিনামূল্যে প্রতিরোধের উপাদান সরবরাহ করাই এদের কাজ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এ ভয়াবহ সমস্যার মূলোৎপাটনে এদেরকোনো উদ্যোগ বা উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যায় না।
২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে পতিতা রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার। ছদ্মবেশী এবং বিশেষ উচ্চ শ্রেণীর পতিতাদের এ হিসাবে ধরা হয়নি। বড় শহরগুলোতে এদের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। এছাড়া অচিহ্নিত প্রচুর ভাসমান পতিতা রয়েছে যাদের হিসাব করা প্রায় অসম্ভব।
মানুষের চোখের আড়ালে বিপথগামী পুরুষের একটি বিশাল অংশ রয়েছে, যারা সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে থাকে। এসব মাদকসেবীর ৭০ ভাগই মাদক নেয়ার সময় একই সূচ অনেকে ব্যবহার করে থাকে। ট্রাক ড্রাইভার, বিশেষত সীমান্ত এলাকার গাড়িচালকদের মধ্যে সমকামিতার হার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবই পুরো বাংলাদেশের জন্য এক মহাবিপদ সংকেত।
এটা খুবই সহজবোধ্য যে, এসব মারাত্মক আচরণ প্রতিরোধ ব্যতিরেকে এইডসনামের ভয়াবহ দানবকে কিছু নিম্নস্তরের উপাদান দিয়েধ্বংস করা কখনোই সম্ভব নয়। রোগের প্রতিরোধ জরুরি, তবে তার চেয়ে জরুরি আচরণ প্রতিরোধ।

কোন মন্তব্য নেই :