হিজড়া শিশুরা পাবে স্বাভাবিক জীবন : চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার সার্জনের সফল অস্ত্রোপচার

কোন মন্তব্য নেই
মানুষের গর্ভে এমন অনেক শিশু জন্মগ্রহণ করছে যারা—না ছেলে, না মেয়ে। সন্তান ধারণ বা জন্ম দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ডাক্তারি ভাষায় এদেরকে বলা হয় ‘ইন্টারসেক্স ডিস্অর্ডার’ রোগী। প্রচলিত সমাজে এরা হিজড়া নাম নিয়ে অবহেলিত, বঞ্চিতও মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি লিঙ্গ সমস্যার কারণে রাষ্ট্রীয়সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত এসব শিশুরা। চিরদুখী এসব মানব সন্তানের দুঃখ মোচনের দ্বার উদ্ঘাটন করেছে চিকিত্সা বিজ্ঞান। গতকালথেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুরু হয়েছে ‘ইন্টারসেক্স ডিস্অর্ডার’ রোগে আক্রান্ত শিশুদের অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে অথবা মেয়ে শিশুতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বখ্যাত শিশু সার্জন মেলবোর্ন চিলড্রেনস্ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধানপ্রফেসর জন এম হার্টসন এসব শিশুর অপারেশন করছেন। একই সঙ্গে এই অপারেশনের মাধ্যমে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন মেডিকেলকলেজের প্রায় পঞ্চাশজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক এবং সমপরিমাণ পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট।
মানুষের গর্ভে জন্ম, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই আছে শুধুমাত্র লিঙ্গ সমস্যারকারণে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে এরা বঞ্চিত। বিশ্বে প্রতি ১৫ হাজার নবজাতকের মধ্যে অন্তত একজন (ইন্টারসেক্স ডিস্অর্ডার) এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। অনেক পিতামাতা লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে এসব শিশুকে ঘরে বন্দিকরে রাখছে। এমনকি নির্মম হত্যাকাণ্ডেরও শিকার হতেহয়েছে এসব নিষ্পাপ শিশুকে। শিশু অবস্থায় লিঙ্গ সমস্যা বুঝতে না পারলেও একটু বড় হতেই বুঝতে পারে সৃষ্টিকর্তা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে তাদের গড়েনি। ধীরে ধীরে সমাজ থেকে ছিটকে পড়তে থাকে তারা। ঠাঁই হয় কোনো হিজড়াপল্লীতে। তারপর শুরু হয় মানবেতর জীবন। জীবন ধারণের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি বা প্রতারণাসহ নানান ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয় এসব মানুষ।
অবশেষে চিকিত্সা বিজ্ঞানএসব চিরদুখী মানবসন্তানের দুঃখের অবসান ঘটানোর আয়োজন করেছে। এখন থেকে হিজড়া নামে পরিচিত এসব শিশুও মুক্ত আকাশে ছুটে বেড়াবে,খেলবে নিজের মতো করে, সমাজের অন্য দশজনের মতো বেড়ে উঠবে—এ প্রত্যাশা নিয়ে বুধবার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ‘লাইভ অপারেটিভ ওয়ার্কশপ অন ইন্টারসেক্স ডিস্অর্ডার’নামে দু’দিনব্যাপী কর্মশালা শুরু হয়েছে। এই কর্মশালায় ১৯ জন ইন্টারসেক্স ডিস্অর্ডার শিশুকে অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে অথবা মেয়ে শিশুতে পরিণত করা হবে।
অপারেশনে নেতৃত্ব দেবেন বিশ্বখ্যাত শিশু সার্জন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন চিলড্রেনস্ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর জন এম হার্টসন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরশিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা তাহমিনা বানুর আমন্ত্রণেতিনি চট্টগ্রামে এসেছেন।৭ ও ৮ ডিসেম্বর অপারেশন শেষে ৯ ডিসেম্বর তিনি অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাবেন।এরপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তাররা অপারেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন।
অপারেশনের একপর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. জন এম হার্টসন জানান, নিষ্পাপ শিশুগুলোর মাঝে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এ শিশুগুলোর অনেক বাবা-মা জানে না তাদের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে। অনেকের শরীরের নিচের অংশে রয়েছে ছেলের বৈশিষ্ট্য কিন্তু উপরে একজন মেয়ে, আবার অনেকের নিচের অংশ মেয়ের বৈশিষ্ট্য কিন্তু উপরে ছেলে। আবার অনেকে ছেলেও না মেয়েও না। এ শিশুদের কারও কারও মধ্যে ছেলে এবংমেয়ের দুটোই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদের যে কোনো লিঙ্গে রূপান্তরিত করা যাবে।

কোন মন্তব্য নেই :