লাম্পট্যতা রোধে জেল-জরিমানা! কতটা ফলপ্রসু? ‘ইভ টিজার’ বলে বখাটেদের সম্মান না দিয়ে যথার্থ বাংলা শব্দের প্রয়োগ করতে হবে। part1

কোন মন্তব্য নেই
। রূপবানের গানের সূরে নীনাহামিদ প্রতিটি গ্রামের বধুদের কাছে পরিচিত। অথছ তখন ছিলনা টিভি, রেডিও, কেসেট প্লেয়ার, এমপি থ্রির মত সহজলভ্য যন্ত্রাংশ কিংবা ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এসব শিল্পীদের মানুষ নামে চিনত, কন্ঠে চিনত, ফলে হৃদয় নিংড়ানো ইজ্জত দিত। এখন ইলেকট্রনিক্স বাদ্যের কারনে বেসুরো গায়ক-গায়িকাদের মেলা কদর বেড়েছে। আগে গানের তালে বাদ্য বাজত, এখন বাদ্যের তালে বেসুরো গলায় শিল্পীকে গাইতে হয়। মিক্সিং করে গলা ও সুরের দুর্বলতাগুলো রিপেয়ার করা হয়। এত কিছু করেও শিল্পীরা আগের মত পরিচিতিপাচ্ছেনা। ফলে গান দেখানোর জন্য আশ্চর্য্য এক ব্যবস্থা চালু হল। শিল্পী নিজে গাইবে, আর মডেল কণ্যা, গায়িকা নামধারী একজনকে কলা গাছেরতলায়, সীম বাগানের ঝোপ-ঝাড়ে নৃত্যে করাবে। সেটার জন্য অরুচিকর বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা হবে। ব্যবসা এখন তাতেও ভাল যাচ্ছেনা, ফলে গানের মডেলদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করে খোদ গায়িকারাই নিজেই গানের মডেল হয়ে গাইছেন। এখন গায়িকাদের ভাল কণ্ঠ থাকলেই চলেনা, মঞ্চ কাঁপানোর মত লম্প-ঝম্প, নর্তন কুর্দন না করলে চলেনা। সমস্যাটা এখানেই, বাজার দখলের ধান্ধায় এসব গায়িকা কাম মডেল কণ্যারা, নিজেরাই নিজেদের ড্রেস তৈরী করছেন। ড্রেসগুলো আভিজাত্য ও পরিমার্জিত করার চেয়ে বেশী নজর দেয়া হয়, সেগুলো যথেষ্ট উত্তেজক হয়েছে কিনা সেদিকে। সে ড্রেসগুলো পরেগায়িকা কাম মডেল কণ্যারা, নেচে গেয়ে চলছেন অবিরত। কেউ ভাবছেনা, কেউ বলছে না এগুলো আমাদের দেশের সাংস্কৃতির সাথে মানান সইকিনা? দেশের ছেলেমেয়েরা আমাদের সাংস্কৃতির অংশবিশেষ। বড় আফসোস লাগে বাংলার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া, সম্মান পাওয়া গায়িকা ছাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লার মত দেশ কাঁপানো গায়িকারাও হাল আমলের শিল্পীদের মাঝেবিলীন হয়ে যেতে। অথছ তাদের না দেখেই বাংলার মানুষ শ্রদ্ধা করতে শিখেছিল।
আজ ঘরে ঘরে হিন্দী ছবির সয়লাব। অনেক পরিবার ভাল বাংলা বলতে পারেনা, ইংরেজী বলতে পারেনা, তবে ঠিকই হিন্দী বলতে পারে ও বুঝে। হিন্দী নাটক ও ছবিগুলো সর্বদা সমাজের মধ্যে অসামাজিক নোংমারী ঢুকাতে সিদ্ধহস্থ। প্রায় সব নাটকেই পরকীয়া প্রেমকেসুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়। এক পুরুষের সাথে মা-মেয়ের প্রেম, এক মহিলার সাথে বাবা-ছেলের প্রেম! এসব হচ্ছে ভারতীয় ছবি ও নাটকের উপজীব্য বিষয়। এসব কুৎসিত চিন্তা, নোংরা কাহিনী হলো নাটকের মূল বিষয় বস্তু, সেগুলোকে বাস্তবতার রূপ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।যারা দেখে তারা এক পর্যায়ে দেখতে অভ্যস্থ হয়ে যায়। সেসব গর্হিত কাজকে বর্তমান তরুণ শ্রেনী বাস্তব পক্রিয়া বলে ভাবতেশুরু করে। বর্তমানে নাটকের শিখানো কায়দায় ছেলেরা রাস্তাঘাটে অসহায় নারীদের উত্যক্ত করে চলছে, এগুলো যাদের দেখার দায়িত্ব তারা কিভাবে এই পরিণতির দায় এড়াবেন? বর্তমানে বিয়ের সম্পর্ক করতে গেলে ঘরে কি কি চ্যানেল তারা দেখে থাকেন, খোঁজ খবর নেওয়া অনেকেই জরুরী মনে করেন, অনেকে এদের সাথে আত্মীয়তা করতে দশবার ভাবছেন।
বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন চ্যানেলেও নাটক তৈরীতে ভারতীয় ভূতের আছর পড়েছে। তারা ব্যবসা সফলতার জন্য ভারতীয় পন্থাকে অনুকরন করছে এবং আমাদের চ্যানেলগুলো সেদিকে ধাবিত হচ্ছে। চ্যানেল গুলোতে অভিনেত্রী, গায়িকা খুঁজারনামে কোটি কোটি টাকা খরছ করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে সেরা গায়িকা-নায়িকা বাছাই হলেই জাতি স্বনির্ভর হবে অচিরেই। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ইংরেজী-অংকের পিছনে সময় দেবার চেয়ে, গানের পিছনে বেশী সময় ব্যয়কে উপরে উঠার মাধ্যম মনে করছেন। কেননা চ্যানেলগুলোতে তাদের মূল্যই বেশী। একটি চ্যানেলও শিক্ষার ক্ষেত্রে নূন্যতম সময় ব্যয় করেনা। আবার নায়িকা বাছাই পক্রিয়ার রীতি নীতিগুলো আপত্তিকর, তাদের ক্লোজআপ দৃশ্যগুলো আরেকটি অনুষ্ঠান বানিয়ে রগরগে বর্ণনায়, রঙ্গচটা ভঙ্গিতেপ্রচার করা হয়। সামাজিক সমস্যার কথা বাদ দিলেও উঠতি যৌবনপ্রাপ্ত বালদের জন্য এসব দৃশ্য দেখে ধর্য্য ধারন করা অবশ্যই কষ্টকর হবে। যারা এসব বানাচ্ছে তাদের কাছে সমাজের চাহিদার কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাদের মূলউদ্দ্যেশ্যই হল টাকা বানানো, সমাজ বানানো নয়।
নারীদের উপর এসব প্রতিরোধে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে, মার্শালআট শেখানো হচ্ছে। একটি ওড়না দিয়ে কিভাবে ছেলেকে কাবু করা যায় শেখানো হচ্ছে। আরো নতুন প্রতিরোধক ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। ছেলেরা যেখানে ছুরি মারছে, এসিড মারছে, শরীরে গাড়ি তুলে দিচ্ছে; সেখানে মার্শাল আর্ট প্রযুক্তি কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে? সরকার ইতিমধ্যে ১ বছরের জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা করেছে। ইতিমধ্যে ছোট খাট শাস্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। এ দ্বারা একটি বখাটে ছেলের বিরুদ্ধে সাময়িক ভীতি তৈরী করা সম্ভব হলেও, একদলবখাটের বিরুদ্ধে কি কাজে আসবে? যে সমাজে দৈনিক হাজার হাজার বখাটে তৈরীর উপকরণ খোলা রেখেছে, সেখানে উপরোক্ত পদ্ধতি কৌতুক ছাড়া বড় কিছু নয়।আরো দেখুন part 2

কোন মন্তব্য নেই :