সন্তানের সর্দি হলে

কোন মন্তব্য নেই

সন্তানের সর্দি হলে

বিদেশি পত্রিকা থেকে
আপনার ছোট সোনাটি সারা বাড়িতে টলমল পায়ে ছুটে বেড়ায়। বাড়ির জিনিসপত্র টানাটানি করে আপনাকে নাজেহাল করে। আবার হঠাৎ-হঠাৎ আধো-আধো গলায় দু-একটা এমন কথা বলে যে আপনারা হেসেই আকুল। সদাব্যস্ত এই ছোট শিশুটি যদি সামান্য সর্দি জ্বরে চুপচাপ শুয়ে থাকে বা কান্নাকাটি করে, তাহলে আপনার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় তাই না? ‘মন খারাপ করবেন না’ -একথা বলা বৃথা, তবে আপনার সন্তানের ভালোর জন্যই মন শক্ত করে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। আপনি যদি অধৈর্য হয়ে পড়েন, তাহলে শিশুটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হবে। বাচ্চাদের সর্দি হলে কি করবেন সেই সম্পর্কে জানানো হচ্ছে শিশু বিশেষজ্ঞের মতামত।
সর্দি কি, কেন হয়
ডাক্তারি ভাষায় সর্দি লাগার অর্থ হল, ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল কিংবা এ্যালার্জিক সংক্রমণ। ঠান্ডা লাগলে বা শীতকালে সর্দি হলে উপসর্গ হিসেবে দেখা যায় বাচ্চার নাক দিয়ে পানি গড়াচ্ছে, মুখ চোখ লালচে লাগছে, গা-হাত পায়ে ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে বা ক্রমাগত হাঁচি হচ্ছে। তবে সদ্যজাত শিশুর কখনই এ্যালার্জির কারণে সর্দি হতে পারে না। হয়তো জন্মাবার সময় নাকের ভেতরটা পরিষকার করতে গিয়ে সামান্য হাঁচি হল-এটা ঠান্ডা লাগা নয়।
সর্দির ক্ষেত্রে দেহের বাহ্যিক অংশের মধ্যে নাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নাক কেবল দেহের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, নাকের মধ্যে দিয়ে যে বায়ু সরাসরি ফুসফুসে ঢোকে সেই বায়ু ঠান্ডা হলে নাক সেটা গরম করে দেয়, আর বায়ু গরম থাকলে নাক সেটা ঠান্ডা করে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এনে দেয়। কারণ ঠান্ডা বায়ু সরাসরি ফুসফুসে যাওয়া খুব খারাপ। বায়ুকে এই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আনতে নাকের ভেতরের অংশটা বা ভেতরের মিউকাস মেমব্রেন যা একটা পর্দার মতো জিনিস ফুলে যায়। তখনই নাক বন্ধ হওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। এমন সময় নাকের ভেতরের অংশ ফুলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মেমব্রেনটা লালচে, অথবা ফ্যাকাসে সাদা হয়ে যায়, আর তখনই ডাক্তার ধরে ফেলেন এই সর্দিটা কিসের থেকে হয়েছে, ব্যাকটেরিয়া না ভাইরাস। ব্যাকটেরিয়ার কারণে হলে মিউকাস মেমব্রেনটা লালচে আর ভাইরাসের কারণে হলে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তাছাড়া নাকের পানি পরীক্ষা করেও কি ধরনের সর্দি হয়েছে তা ধরতে পারা যায়।
সাধারণ সর্দিতে কি করবেন
অনেক মা-বাবা শীত পড়লেই এক গাদা গরম জামা বাচ্চাকে পরিয়ে রাখেন ভাবেন ঠান্ডার হাত থেকে বুঝি বাচ্চা বাঁচল। কিন্তু্তু এতে বাচ্চার কষ্ট হয়। কারণ আমাদের শরীরের চেয়ে বাচ্চাদের দেহের তাপমাত্রা বেশি। তাই যখন আমরা লেপের  তলায় থাকি তখন দেখি বাচ্চারা লেপের বাইরে বেরিয়ে অবলীলায় খেলা করে। সেই কারণে অযথা বেশি জামাকাপড় পরিয়ে বাচ্চাকে ঘামতে দেবেন না। সাধারণ সর্দিতে বিশেষ কিছু করার নেই। আপনা আপনিই তা কমে যায়। তবে বেশি বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
সর্দি হলে তেল মালিশ করবেন কি?
তেল মালিশ করলে সর্দির হাত থেকে বাচ্চারা নিষ্কৃতি পাবে-এ ধারণা ভুল। আসলে তেল মালিশ করলে বা যন্ত্রণানাশক ইনহেলার কিংবা ভেপার ব্যবহার করলে বাচ্চার সাময়িক আরাম লাগতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে ওই মালিশের জন্য একটা জালা হয় যা নাকের জ্বালা ভুলিয়ে দেয়, অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত।
তেল মালিশ করলেই যে শিশু সর্দির হাত থেকে নিস্তার পাবে তা নয়। এতে শিশুর  আরাম যেমন হতে পারে তেমনই ক্ষতি হবার সম্ভাবনাও থাকে। কারণ তেল শরীরের লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। যেহেতু শীতকালে ঘাম হয় না তাই লোমকূপ বন্ধ থাকলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে শীতকালে কোনো বাচ্চার যদি জ্বর হয়, তাহলে সেই বাচ্চাকে ওষুধ খাইয়ে ঘাম বের করে জ্বর ছাড়াতে হয়। এমতাবস্থায় যদি লোমকূপ বন্ধ থাকে তাহলে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে পারে না।
বুকে সর্দি জমলে
বুকে সর্দি জমলে এমন ওষুধ দিতে হয় যাতে সর্দিটা বুক থেকে বেরিয়ে যায়। এর জন্য অনেক সময় হয়তো বাচ্চাদের কাশি হতে থাকে। কিন্তু্তু মা-বাবারা এতে বিচলিত হবেন না। কারণ কাশির মধ্য দিয়েই বুকে জমা কফ বেরিয়ে আসে। মা-বাবা এই সময় অধৈর্য হয়ে পড়লে ডাক্তাররা কাশি নিরোধক ওষুধ দিয়ে বসেন। এতে সর্দিটা বুকে আরও বসে যায়।
সর্দিতে বমি
সর্দির ওপর সাধারণত জ্বর এলেই বাচ্চাদের বমি হয়। এই সময় আমরা বলি জ্বর কমে গেলে তবেই বাচ্চাকে খেতে দিন। এছাড়া খুব ছোট বাচ্চারা কিন্তু্তু জোরে কেশে বুক থেকে কফ বের করতে পারে না। ছয় থেকে সাত বছর বয়স হলে তবেই এটা করা সম্ভব। তাই এর কম বয়সী শিশুরা সর্দিটা গিলে ফেলে। সেটাই অনেক সময় বমি হয়ে বেরিয়ে যায়।
সর্দির সঙ্গে কাশি ও নাক বন্ধ
বড়দেরই দেখবেন গলায় ভাত আটকে গেলে কাশি হচ্ছে। এই কাশিটা কিন্তু ভালোর জন্যই। এতে গলার ভাতটা বেরিয়ে আসে। সেই রকমই সর্দির সঙ্গে সঙ্গে কাশি হলে তা সর্দি বের করতেই সাহায্য করে। অযথা কাশির ওষুধের অপব্যবহার করবেন না। আগেই বলেছি নাক কেন বন্ধ হয়। সেই জন্য নাক বন্ধ হলে নাকের ওষুধ (ড্রপ) না দেয়াই ভালো। তবে বাচ্চারা যদি নাক বন্ধ হলে ঘুমাতে বা খেতে না পারে তাহলে আমরা সামান্য ওষুধের ফোঁটা নাকে দিতে বলি। তবে দেখা গেছে নাকের ওষুধের বদলে নুন পানিও ব্যবহার করা হয় বরং এটাই করা ভালো। কারণ নাকের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। যেমন বন্ধ নাক খুলে গেলে ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি ফুসফুসে পড়ে, তাছাড়া এইসব ওষুধে একটু তৈলাক্ত ভাব থাকে। ফলে ফুসফুসে সরাসরি এই ওষুধটা চলে গেলে নিউমোনিয়া বা ব্রংকাইটিসও হতে পারে।
সর্দিতে কি খাবে
বাচ্চার সর্দি হলেও সে সবই খাবে। অনেকের ধারণা থাকে সর্দির সময়ে কলা অথবা নানা ধরনের ফল খাওয়া উচিত নয়। এই ধরনের চিনা ভাবনা ভুল।
সর্দিতে কি রকম জামা-কাপড় পরবে
সর্দি হোক বা না হোক বাচ্চারা এমন জামা পরবে যাতে বাচ্চারা ঘামবে না, আবার ঠান্ডায়ও কাঁপূবে না। কি করে বুঝবেন কোন জামাটা ঠিক? তাই তো! জামা পরিয়ে নিজের হাতের তালু জামার ভেতর দিয়ে বাচ্চার বুকে ঠেকিয়ে দেখুন ও ঘামছে, না কাঁপছে।
মা-বাবার জন্য দু-চার কথা
প্রথমত বেশি অধৈর্য হবেন না। ডাক্তারের ওপর আস্থা রাখবেন। ডাক্তাররা কখনো শিশুর ক্ষতি করবেন না। অতিরিক্ত অধৈর্য হলে ডাক্তাররা অনেক সময় অনর্থক ওষুধ দিয়ে ফেলেন। দ্বিতীয়ত সর্দি হলে তেল মালিশ করবেন কি না এই প্রশ্নের উত্তরে সব সময়ই ডাক্তাররা বলবেন ‘না দরকার নেই’। কিন্তু বাড়িতে দাদী-নানীরা পুরনো পন্থ্থা অনুযায়ী বাচ্চাদের তেল মাখাতে চান। এমন সময় বাড়িতে অশানি ডেকে আনবেন না। এতে বাচ্চার মনের ওপর চাপ পড়ে। দরকার হলে আলতো করে তেল মালিশ করতে দেবেন। তৃতীয়ত ডাক্তার যদি যথেষ্ট বিশ্বাসের সঙ্গে বলেন যে তিন চার দিন কাশি হবেই তখন কিন্তু্তু আপনাদের ওই তিন চারদিন অপেক্ষা করতেই হবে। শিশুর কষ্ট হচ্ছে দেখে ‘কফসিরাপ’ খাওয়াবেন না।
চতুর্থত এবং শেষ কথা হল বাচ্চাকে যখনই ওষুধ খাওয়াবেন তখন কিন্তু্তু ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। বাচ্চা অসুস্থ হলে চেষ্টা করবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে আপনার শিশুকে নিয়ে যেতে।
  বিষয়ঃ মাসিক মনোজগত  মনোজগত : এপ্রিল, ২০০৪
 ফেসবুকে  ব্লগারের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করুণ 


আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ। 

এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?
 

কোন মন্তব্য নেই :