কৃমির সংক্রমণ থেকে দূরে থাকুন আকরাম হোসেন হিমু

কোন মন্তব্য নেই

কৃমি যে কোনো সময়ই হতে পারে। তবে বর্ষায় এর উপদ্রব বেশি হয়। এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা না গেলেও বলা চলে দষিত পানি অবশ্যই অন্যতম কারণ.....

কিভাবে সংক্রমণ হয়
পানি ও খাদ্যের সঙ্গে মলত কৃমির ডিম আমাদের পেটে প্রবেশ করে। এই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় (লার্ভা), বাচ্চা বড়ো হয়, বংশ বৃদ্ধি করে। সবই কিন্তু আমাদের শরীরের ভেতরে ঘটে। মলত্যাগের সময় এই কৃমিই আবার বাইরে চলে আসে। মাটিতে মেশে, খাদ্যে মেশে, পানিতে মেশে আবার পেটে ঢোকে। অর্থাৎ সংক্রমণ হয় ‘ফিকাল ওরাল রুটে’ বা মল থেকে মুখে।
নানা ধরনের কৃমি
কেঁচো কৃমি
৮ থেকে ১৪ ইঞ্চি লম্বা সাদা বা গোলাপি রঙের এই কৃমির ডিম শাকসব্জি, ফলসহ নানা ধরনের খাদ্য ও পানির সঙ্গে থাকে। মলত্যাগের পর ঠিকমতো হাত না ধুলে হাতের আঙুলের ভাঁজের সঙ্গে আমাদের মুখে প্রবেশ করে। সেখান থেকে খাদ্যনালীর ক্ষুদ্রান্তে এই ডিম পৌঁছে, সেখানে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এই ক্ষুদ্রান্তের দেয়াল ফুটো করে রক্তনালী বেয়ে লিভার, হৃদপিন্ড, ফুসফুস-শ্বাসনালী-খাদ্যনালী-পাকস্থলী হয়ে আবার ক্ষুদ্রান্তেই এসে পৌঁছায়। সময় লাগে তবে বিপত্তি দেখা দিতে পারে। অন্তনালীতে আটকে গেলে অনেক সময় অপারেশন করে বের করতে হতে পারে। শ্বাসনালীতে আটকে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়, দম আটকে মৃত্যুও হতে পারে। হঠাৎ করে কাশির সঙ্গে বা বমির সঙ্গে অনেক শিশুর গলা বেয়ে কেঁচো কৃমি উঠে আসে।
সুতো কৃমি
শিশুদের বেশি হয়। সাদা রঙের আধা ইঞ্চি লম্বা সুতোর মতো এই কৃমিগুলো রাতে মলদ্বারের বাইরে এসে ডিম পাড়ে। মলদ্বার চুলকায়। শিশুর আঙুলের নখের মধ্যে কৃমি বা তার ডিম ঢুকে যায়। ওই আঙ্গুল মুখে দিলে ডিম চলে আসে খাদ্যনালীতে। এছাড়া শিশুর জামা, প্যান্ট বা বিছানার চাদরে লেগেও সংক্রমণ হতে পারে। বেশি চুলকালে শিশুর মলদ্বারে ঘা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুকে পরীক্ষা করে প্রয়োজনে ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
হুক কৃমি
লাল রঙের খুব ছোট এই কৃমিগুলো সাধারণত পায়ের পাতা ফুটো করে রক্তনালী বেয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়। সেখান থেকে শ্বাসনালী বেয়ে প্রবেশ করে খাদ্যনালীতে, তারপর পাকস্থলী হয়ে ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছায়। এজন্য দিন চার-পাঁচেক সময় লাগে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ পথে ঘাটে, ক্ষেতখামারে খালি পায়ে হাঁটে বলে এই কৃমির সংক্রমণ তাদের বেশি হয়। অন্তনালীর রক্ত খেয়ে এরা বাঁচে বলে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে চোখ-মুখ ফ্যাকাশে দেখায়, হাত-পা ফোলে, বুক ধড়ফড় করে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এছাড়া পায়ের পাতার যেখান দিয়ে কৃমি ঢোকে সেখানে চুলকানি ও ঘা হতে পারে। এছাড়াও চাবুক কৃমি ও ফিতা কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। চাবুক কৃমির সংক্রমণ হয় পানি ও খাবার থেকে। ফিতা কৃমি গরু ও মোষের আধ সেদ্ধ মাংস থেকে হয়।
চিকিৎসা
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মল পরীক্ষা করে মলে কৃমির ডিমের উপস্থিতি দেখে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। ওষুধের মাত্রা বয়স ও দেহের ওজন অনুযায়ী ঠিক করা হয়।
সাবধানতা
মল নিষকাশনের জন্য সেনিটারি পায়খানা ব্যবহার করা প্রয়োজন। মাঠে ঘাটে পায়খানা করা উচিত নয়। মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া উচিত। মায়েরা শিশুর জামাকাপড় ও কাঁথা পরিষকারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। শাকসব্জিসহ যে কোনো খাদ্য ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে খেতে হবে। খাবার তৈরি, পরিবেশন ও খাদ্য গ্রহণের আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে। বিশেষত, বর্ষাকালে। শিশুদের নখ নিয়মিত কাটতে হবে। রাতে প্যান্ট পরে শোয়াতে হবে, যাতে শিশু মলদ্বারে আঙ্গুল দিতে না পারে কিংবা কৃমি বিছানার চাদরে বা কাঁথায় এসে লাগতে না পারে। খালি পায়ে হাঁটাচলা করা উচিত নয়। বিশেষত ড়্গেতখামারে। অসিদ্ধ বা আধাসিদ্ধ মাংস খাওয়া অনুচিত। শিশু যদি খেতে না চায়, বারবার বমি করে, পেট খারাপ কিংবা রক্ত স্বল্পতায় ভোগে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃমি সংক্রমণের জন্য এমনটা ঘটে।
কৃমি নিয়ে কুসংস্কার
চিনি খেলে কৃমি হয়
অনেকেই বিশ্বাস করেন চিনি খেলে কৃমি হয়। প্রকৃতপক্ষেএটা সত্য নয়। চিনি হলো এক ধরনের খাদ্য উপাদান। কার্বোহাইড্রেট। কৃমি হলো এক ধরনের পরজীবি প্রাণী। খাদ্য ও পানিবাহিত হয়ে পায়ের পাতা ফুটো করে কৃমি শরীরে ঢোকে। অতএব এ ব্যাপারে চিনির কোনো ভূমিকা নেই। পেটে দু চারটা কৃমি থাকা ভালো। অনেক বয়স্ক ব্যক্তি নাকি এটা বিশ্বাস করেন। ফলে কৃমির ওষুধের সম্পর্ণ ডোজ বাড়ির শিশুদের খাওয়ান না। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। কৃমি সব সময়ই আমাদের শত্রু। আমাদের শরীরকে আশ্রয় করে রক্ত চুষে খেয়ে আমাদেরই সর্বনাশ করে। কাজেই আপদ যতো তাড়াতাড়ি বিনষ্ট করা যায় ততোই ভালো।
কৃমির ওষুধ শরীর গরম করে
একেবারে ভুল ধারণা। অনেক মা এই ভয়ে শিশুকে গরমকালে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে চান না। অথচ কৃমির ওষুধ অন্যান্য অনেক ওষুধের চেয়ে কম ক্ষতি করে।
কৃমি থেকে খিঁচুনি হয়
হতেই পারে। কারণ কৃমি সারা দেহে ঘুরে বেড়ায়। বেড়াতে বেড়াতে রক্তনালী বেয়ে হয়তো মাথায়ও চড়ে বসতে পারে। তখন মেনিনজাইটিসের মতো রোগ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ খিঁচুনি, ভীষণ জ্বর, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
ওষুধ খেলে পায়খানার সঙ্গে কৃমি বের হয়
মৃত কৃমি সাধারণত পায়খানার সঙ্গেই বের হয়। ছোট কৃমি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চোখে পড়ে না। তবে অনেক সময় মুখ ও নাক দিয়েও কৃমি বের হয়। বিশেষত কেঁচো কৃমি।
শেষ কথা
কৃমি মানবদেহের প্রধান শত্রু। অখিদে, বদহজম, পেটব্যথা, পেট খারাপ, কাশি, বমি ভাব, রক্তস্বল্পতা, অন্তনালী অবরুদ্ধ হওয়া, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ফুলে যাওয়া, অপুষ্টি, মস্তিষ্কে সংক্রমণ প্রভৃতি রোগ এর প্রধান কারণ কৃমি। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে ছোট বড়ো সবাইকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ খেতে হবে। তবেই লাভ করা যাবে সুস্থ সুন্দর জীবন  বিষয়ঃ , মাসিক মনোজগত 
মনোজগত : মে, ২০০৪
 ফেসবুকে  ব্লগারের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করুণ 


আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ। এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :