কেমন সেক্স করবেন

কোন মন্তব্য নেই
অধ্যাপক ডাঃ এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এফসিপিএস, এমআরসিপি, এফআরসিপি
এখন মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজনের প্রতি আসক্ত থাকে, ভালোবাসে, বিয়ে করে এবং একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে জীবন সাগর পাড়ি দেয়। আসলে মানুষের সম্পর্কটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষ মানসিক, ঐশ্বরিক এবং দৈহিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কযুক্ত হয়...

পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণিকুল শুধুমাত্র বংশ রক্ষার্থে বা সন্তান উৎপাদনের জন্য যৌনসঙ্গম করে থাকে। যথা সম্ভব একমাত্র মানবকুলই সেক্সকে আনন্দে, আবেশ ও ক্রীড়া হিসেবে উপভোগ করে। মানুষের কাছে টাকা, ক্ষুধা, ক্ষমতার মতো সেক্সও জীবনের একটা প্রাথমিক চালিকাশক্তি। এটা প্রতিটি মানুষের মৌলিক কামনা যা তারা জীবনের একটা সময় উপভোগ করে থাকে। মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান রাখতে যৌন সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গত সিকি শতাব্দিতে আমাদের যৌন অঙ্গনে অনেক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বিশেষ করে নিরাপদ সেক্স এবং বিভিন্ন জন্ম নিরোধক প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে মনোযোগ ছিল বেশি। এ জন্য কনডম, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল উল্লেখযোগ্য। যৌন সঙ্গমে কিছু কিছু বিপজ্জনক রোগের ব্যাপারে সতর্ক হতে হচ্ছে তার মধ্যে সিফিলিস, গনোরিয়া, হারপিস এবং ইদানীংকালের মরণব্যাধি এইডস। এখন মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজনের প্রতি আসক্ত থাকে, ভালোবাসে, বিয়ে করে এবং একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে জীবন সাগর পাড়ি দেয়। আসলে মানুষের সম্পর্কটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষ মানসিক, ঐশ্বরিক এবং দৈহিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কযুক্ত হয়। যদিও কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যা শুধুমাত্র ভালো যৌন আবেদনে টিকে থাকে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালোবাসাই আসলে সেই মল জীবনীশক্তি যার মাধ্যমে মানুষ দৈহিক ও মানসিকভাবে উপভোগ করে। মানসিক চাপ এবং পুষ্টি যৌন শক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানসিক চাপ বিভিন্ন উপায়ে (যেমন- দুঃখবোধ, বেশি বেশি কাজ করা, অর্থাভাব প্রভৃতি) যৌনশক্তি যৌনাবেদনকে বাধাগ্রস্ত করে। অন্যদিকে যৌন অসুবিধার আবার উদ্বিগ্নতা এবং অসুখীতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অপরাধ প্রবণতা এ ক্ষেত্রে বড়ো কালপ্রিট। কাল্পনিক কোনো ভয়ও যৌনশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। স্বাভাবিক কাজের জন্য আমাদের স্বাস্থ্য সম্মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করা এনডোকরাইন সিস্টেম যা প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরিতে সক্ষম। পিটুইটারি গ্রন্থ্থির কাজ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে, যৌনাঙ্গ বিকাশ কম হয়, মেয়েদের দ্রুত রজঃনিবৃত্তি ঘটে ছেলেদের পুরুষত্বহীনতা ঘটে। এড্রেনাল দুর্বল হলে যৌন আবেগ বা কামনা শক্তি দুই কমে যায় এবং মানসিক চাপের প্রতি মন সংবেদনশীল হয়।
থাইরয়েড গ্রন্থ্থির কাজ কম হলে যৌন কামনা এবং ক্ষমতা কমে যায়। ছেলেদের টেস্টিকলার ফাংশন কম হলে যৌন ক্রিয়া এবং শুক্রাণু তৈরি দুইই কমে যায়। মেয়েদের ওভারী থেকে আসা ইস্ট্রোজেন কম হলে যৌন পরিপূর্ণতা আসে না স্তনের আকার ছোট হয়, ডিম্ব পরিপক্বতা হ্রাস পায়।
একটি পরিপূর্ণ যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেয়েদের দরকার ভালোবাসার প্রকাশ, অফুরান প্রাণশক্তি, ব্যালেন্সড ডায়েট, হরমোন, শান্তিপর্ণ মানসিকতা এবং ভালোভাবে যৌনচালনার জন্য কিছুটা শিথিলতা। আর ছেলেদের প্রয়োজন লিঙ্গের পরিপূর্ণ উত্থান, শারীরিক জীবনীশক্তি এবং ভালো হরমোনাল ফাংশান। প্রথম দিকে হরমোনাল ফাংশনের সুষম অবস্থার জন্য ছেলে ও মেয়ে দুজনেরই কাল্পনিকতা ও সেক্সুয়াল সেনশেসন বেশি থাকে। সুতরাং যৌনজীবন সুখময় থাকে কিন্তু বহুদিন একই ধরনের কাজ বারবার করলে তাতে উত্তেজনা কমে আসে এবং এই যৌন আবেদনে নতুন কিছু যোগ করতে হবে।
অনেকের দিনের যৌন সম্পর্ক আসলে শেষে বিরক্তিকর একঘেয়েমি কিংবা শুধুমাত্র আত্মপ্রসাদে পরিণত হয়। একে অপরকে বার বার ব্যবহার করার ফলে এবং প্রতিদিনের একটু আধটু বিরক্তি বা দ্বন্দ্ব সহজেই যৌন সঙ্গীর ওপর প্রভাব ফেলে এবং দেখা যায় তখন যৌন সঙ্গম প্রায় দুর্লভ হয়ে যায়। তাই এ সময় ফ্রেশনেস অনুভব, কল্পনা, রোমান্সসহ নতুন উজ্জীবন নিয়ে আসা উচিত সম্পর্কে এবং বেড রুমে। তাহলে যৌন জীবন আবারো নতুন জীবন পাবে। সম্পর্কে নতুনত্ব সৃষ্টি এ ক্ষেত্রে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে যদিও দেখা যায় যৌনজীবনের পরবর্তী বছরগুলোতে যৌন সঙ্গমের হার অনেক কমে যায় কিন্তু কেন এমন হয় এর যুক্তি যুক্ত শারীরিক কোনো কারণ নেই। কেননা দেখা যায় শেষের দিকে মেয়েদের হরমোনের পরিমাণ কমে গেলেও তারা তাদের যৌন কর্ম তখনো ভালোভাবেই চালিয়ে যেতে পারে। আর পুরুষের ক্ষেত্রে হরমোনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ব্যাপার হলো মেয়েদের মতো পুরুষদের হরমোন লেভেল খুব একটা কমে যায় না। সুতরাং পুরুষেরও যৌনকর্ম চালিয়ে যেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
অতএব, যতোদিন পর্যন্ত তাদের হৃদপিন্ড ও রক্ত সঞ্চালনতন্ত ঠিক থাকে ততোদিন তাদের যৌন জীবন ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। স্থূলতা, কম খাবার, মানসিক চাপ, রক্তসঞ্চালন তন্তের রোগ প্রভৃতি যৌন ক্ষমতা কমানোর প্রধান কারণ। চাইনিজদের একটা ধারণা আছে যে, বারবার বীর্যপাত এবং অর্গাজম সেক্স ক্ষমতা কমায়। তাদের মতে নিয়মিত বীর্যপাতে কিডনি/এড্রেনাল দুর্বল হলে কোনো চাপের সম্মুখীন হলে সেটা মোকাবিলা করার ক্ষমতা কমে যায়। তাদের থিওরি অনুসারে পুরুষরা পুনঃপুনঃ সেক্স করুক, আনন্দ করুক কিন্তু বীর্যপাত না ঘটাক তাহলেই তার যৌন ক্ষমতা সে অনেকদিন অটুট রেখে তার সঙ্গিনীকে সুখি করতে পারবে। আর মেয়েরা যতোবার ইচ্ছা অর্গাজম ঘটাতে পারবে এটা বরং তাদের শক্তিবর্ধন করবে।
আরো অনেক ফ্যাক্টর আছে যা যৌন কামনা বা ক্ষমতাকে আঘাত করে। যেমন-এ্যালকোহল (মদ), নিকোটিন (সিগারেট/ জর্দা প্রভৃতি) কফি, মারিজুয়ানা, চিনি, আনন্দ প্রদায়ক ওষুধ প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য। কিছু কিছু ওষুধ আছে যেমন- ট্রাস্কুলাইজার, এন্টিহাইপারটেনসিভ বিশেষ করে বিটাল্বকার, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা হরমোন, তাছাড়া বংশগতি, নিজস্ব ভাব প্রভৃতি। হরমোন লেভেল যৌনক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। যেমন যেসব পুরুষের টেস্টেস্টেরন বেশি এবং এড্রেনাল গ্রন্থ্থির কাজ সুষম তাদের যৌনক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অন্যদের তুলনায় বেশি।  মানসিক চাপ যৌন ক্ষমতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। টাকা বা চাকরি প্রভৃতির জন্য নিশ্চুপ বেদনা আমাদের যৌনশক্তিকে আঘাত করে। সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গেছে যেসব লোক কাজে বা চাকরিতে উন্নতি বা প্রমোশন পেয়েছে তাদের সেক্স আগের তুলনায় এবং অন্যদের তুলনায় বেড়ে গেছে। যৌনশক্তি বা ক্ষমতায় পুষ্টির ভূমিকাও অপরিহার্য। অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতায় যৌন ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। কম চর্বি জাতীয় খাবার, বেশি ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার, জটিল শর্করা প্রভৃতি খাবারের উলেস্নখযোগ্য দিক হওয়া দরকার। আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ তবে অতিরিক্ত আমিষ ক্ষতি করতে পারে। সোজা কথা এমন সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যাতে ওজন খুব বেশি না হয়। রক্ত সংবহনতন্তও যেন ঠিক থাকে।
নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ ও উদ্বিগ্নতা দূর করে এবং হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যাপার তাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা, মাসিক, হরমোন লেভেল ইত্যাদি যৌন ক্ষমতা প্রভৃতি উল্টা পাল্টা করে দিতে পারে। সুতরাং ব্যায়ামটাও সুষম হওয়া জরুরি।


  বিষয়ঃ নারী পুরুষের যৌন সমস্যা সমাধান , যৌন শিক্ষা/যৌন মিলন/জন্মনিয়ন্ত্রন    , মাসিক মনোজগত 
মনোজগত : জুন, ২০০৪
 ফেসবুকে  ব্লগারের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করুণ 


আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ। এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :