যৌনতা বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান

কোন মন্তব্য নেই
নারীর যৌনাঙ্গ
নারীর যোনি হলো একটি সুড়ঙ্গ পথের মতো যা যোনিদ্বার থেকে জরায়ু পর্যন্ত প্রসারিত। নারীর জীবনে তার যোনিতে ঘটে নানা পরিবর্তন। শিশুদের যোনি পূর্ণ বয়স্কা নারীর যোনি থেকে ভিন্ন। শিশুকন্যার মাসিক শুরু হয়নি এমন কন্যার যোনির পাশের পর্দাটি পূর্ণবর্তী নারীর তুলনায় পাতলা হয়। এ পরিবর্তন ঘটে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ফলে যা নির্গত হয় ডিম্বাশয় থেকে। যৌনক্রিয়া এবং   সন্তান জন্মের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে নারী যোনি।
  
নারী যোনি হলো একটি নালি যা প্রায় পৌনে ৩ ইঞ্চি থেকে সোয়া ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, যার চারপাশে থাকে আঁশ ও পেশির কলা, কিন্তু স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম নামক কোষের স্তরের দ্বারা আবৃত থাকে, এ নালির প্রাচীরগুলো স্বাভাবিকভাবে একে অপরের ওপর ভেঙে পড়ে এবং তাতে নানা ভাঁজ সৃষ্টি হয়। এর ফলে যৌনমিলন বা সন্তান প্রসবের সময় নারী যোনি সমপ্রসারিত হতে পারে। মূত্রনালি নারী যোনির সম্মুখ ভাগে থাকে এবং মলদ্বার থেকে যোনির উপরের দিকে তৃতীয় স্তরে পৌঁছেছে। পায়ু যোনি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে এক ধরনের তন্তুবিশিষ্ট পেশির দ্বারা। নারী যখন সন্তান ধারণক্ষম থাকে তখন যোনি থেকে নির্গত রসে অম্লত্বের ভাব থাকে। যার ফলে যোনিতে ক্ষতিকারক রোগজীবাণু বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু নারী ঋতুবর্তী হবার আগে বা ঋতু বন্ধ হওয়ার বা Menopause হবার পরের বছরগুলোতে ক্ষারধর্মী রস নির্গত হয়। এই অবস্থায় রোগজীবাণু বেড়ে উঠতে পারে এবং যোনিতে এক ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে যার নাম অ্যাট্রোফিক ভ্যাজাইনাইটিস। নারী যোনির প্রাচীরগুলো খুব পিচ্ছিল হয়ে থাকে সার্ভিক্স বা গর্ভাশয়ের সংকীর্ণ অংশ এবং বার্থোলিন গ্রন্থির রসক্ষরণের ফলে। যৌনক্রীড়ার সময় নারী যোনির এপিথেলিয়াম থেকে নারী যোনির নালিতে প্রবেশ করে এই ক্ষরিত রস। সব নারীর ক্ষেত্রে নারী যোনি থেকে এক ধরনের ক্ষরণ হওয়াটা স্বাভাবিক।
এ ক্ষরণের বৃদ্ধি ঘটে ভ্রূণ সৃষ্টির মুহূর্তে বা অধিক যৌন উত্তেজনাকালে। সতীচ্ছদের অন্য নাম কুমারীচ্ছদ। গ্রিসের বিবাহের দেবী হাইমেনের নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়। সতীচ্ছদের শারীরবৃত্তির গুরুত্ব কী এবং কতটা তা আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে তা সব জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে কুমারীত্বের প্রতীক হিসেবে। সতীচ্ছদ নানা আকারে ও আকৃতির হতে পারে এবং কুমারিত্বের সঙ্গে এর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণত সতীচ্ছদ খুবই পাতলা ত্বকের ঝিল্লি বিশেষ, যা সহজেই ছিন্ন হওয়া সম্ভব, মিলনকালে পুরুষের বিশেষ অঙ্গের চাপ ছাড়াও-
  • দৌড় ঝাঁপ
  • ব্যায়াম
  • ঘোড়ায় চড়া
  • সাইকেল চালানো এবং
  • আত্মরতি করার ফলেও সতীচ্ছদ ছিন্ন হতে পারে।
নারীর বিশেষ অঙ্গের রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় বা তুলার ন্যাপকিন ব্যবহারে অর্থাৎ ট্যাম্পুন ব্যবহারে নারীর সতীচ্ছদ ছিন্ন হতে পারে। কুমারিত্বের প্রতীক না হলেও প্রায়ই দেখা যায় প্রথম যৌনমিলনের সময় সতীচ্ছদ ছিন্ন হয়। সাধারণের মধ্যে একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, সতীচ্ছদ যদি অক্ষত থাকে তবে সেই নারী কখনো কোনো পুরুষের সঙ্গে সহবাস করেনি কিন্তু এ ধারণাও ঠিক নয়। জননেন্দ্রিয়ের এলাকার মধ্যে শুক্রাণু প্রবেশ করলে অতি প্রশ্রয়ের ফলে তা সতীচ্ছদের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে চলে যেতে পারে। আর তখন ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
পর্যায়ভিত্তিক যে রক্তস্রাব প্রথম শুরু হয় জরায়ু থেকে তাকে রজোদর্শন বলে এবং ঋতুচক্রের একটি পর্ব মাত্র যা নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হরমোনগুলোর দ্বারা। প্রথম মাসিক হয় যখন ইস্ট্রোজেন পরিমাণ কমে যায়, জরায়ুর গড়ে ওঠা আস্তরণ পরিত্যাগ করে ও তার গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন না নিয়েই, তারপর তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় এবং রক্ত ও কোষগুলো জরায়ুতে পড়ে জরায়ুর মুখ দিয়ে এবং সেই পথে দেহের বাইরে। পরবর্তী সময়ের মাসিক চক্রের মতো একই ধরনের রক্ত প্রথম রজঃস্রাবে নির্গত হলেও ডিম্বাশয় কোনো পরিণত ডিম্বাণু উৎপাদন করে না। ডিম্বাশয়ের পূর্ণমাত্রায় কাজ করতে সময় লেগে যায় প্রায় কয়েক মাস এমনকি এক বছর ও কমবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো না পর্যন্ত। যখন তার সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হয়ে ওঠে যদিও দেহ ও মনের দিক থেকে সে হয়তো পরিণত হয়ে ওঠেনি।
নারীর যোনির কর্মতৎপরতা
নারীর জননেন্দ্রিয়ের বহিঃস্থ অংশগুলোর নাম হলো ভগাঙ্কুর বা ক্লাইটোরিস এবং ল্যাবিয়া অর্থাৎ ভগের ওষ্ঠ যা একত্র করলে নাম হয় ভালভা বা স্ত্রী যোনিদ্বার। নারীর যোনির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ হলো দুটি ওষ্ঠ বা ল্যাবিয়া। বহিঃস্থ এবং বৃহত্তর ল্যাবিয়া মেজেরো ওষ্ঠটির মধ্যে আছে স্থূল চর্মের আবরণ যা অন্যান্য অংশকে সুরক্ষিত করে রাখে। ওষ্ঠ দুটি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এসে পেরিনিয়ামের যোনিমুখ এবং পায়ুর মধ্যবর্তী ত্বক মূলে গিয়ে মিশে যায়। উপরে বাইরের দিকে বহিঃস্থ ওষ্ঠটি মিশে যায় চর্বিযুক্ত কলার প্যাডের সঙ্গে যেখানে যৌনকেশ এবং ত্বক থাকে। এই প্যাডটি নরম মাংসল অংশ আবৃত করে রাখে পিউবিক হাড়ের সঙ্গে, যাকে চলিত কথায় বলা হয় মাউন্ট অব ভিনাস। এ ওষ্ঠ দুটি মূত্রনালির মুখকেও সুরক্ষিত করে। ক্ষুদ্রোষ্ঠের মধ্যবর্তী এলাকাকে বলা হয় ভেস্টিবিউল। যৌনক্রিয়ার আগে সাধারণত এ অংশটি ঢাকা থাকে সতীচ্ছদ দ্বারা। এর আকার, আকৃতি এবং দৃঢ়তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের হয়। ভেস্টিবিউল চারপাশে নখের মতো ত্বক থাকে অনেক নারীর, যেগুলো হলো সতীচ্ছদের ছিন্ন অংশ। পেছনের দিকে ক্ষুদ্রোষ্ঠটি যুক্ত হয়ে একটা পাতলা আবরণের সৃষ্টি করে যা ছিন্ন হয় প্রথম সন্তানের জন্মের সময়। নারীর ভগাঙ্কুর লিঙ্গের সমধর্মী প্রায়, এমনকি এর ভগোষ্ঠের আচ্ছাদন পর্যন্ত আছে। এটা মুখ্যত নারী যৌনাঙ্গের সবচেয়ে স্পর্শকাতর  ও যৌন উত্তেজক অঙ্গ। উত্তেজিত হলে এর স্পঞ্জের মতো জালিকা বা কলাগুলো রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে খাড়া হয়ে ওঠে। উত্থিত ভগাঙ্কুরে পুরুষাঙ্গ কিংবা হাতের আঙুল বা ক্রমাগত স্পর্শজনিত ঘর্ষণের ফলে নারী সহজে ও দ্রুততর যৌন উত্তেজনার চরমে উঠে যায় এবং অনেক সময় নারীর রাগমোচনও হয়ে যায়। যোনির অন্যান্য অংশও যৌন উত্তেজনায় দারুণভাবে সাড়া দেয়। ভগোষ্ঠের মধ্যে উত্থিত হতে পারে এমন জালিকা থাকে, যা দেহমিলনের সময় বড় হয়ে যায় এবং বার্থোলিন গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর নাম হলো বার্থোলিন গ্রন্থি। নারী যৌন উত্তেজিত হলে এ বার্থোলিন গ্রন্থি থেকে কামরস নির্গত হয়, যার ফলে যোনিপথ পিচ্ছিল হয়ে গিয়ে লিঙ্গকে যোনি অভ্যন্তরে অবাধে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এ গ্রন্থিগুলো ছোলার আকারের মতো এবং সহজেই এখানে যৌনরোগ সংক্রমিত হতে পারে।
পিটুইটারি প্রথমে তৈরি করে এক ধরনের হরমোন, যাকে বলা হয় ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফএসএইচ যা রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে। এ হরমোন এফএসএইচ সাহায্য করে ফলিকল এবং ডিম্বাণুকে বিকশিত করার ব্যাপারে, সেই সঙ্গে ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর আস্তরণকে মোটা হতে সাহায্য করে যাতে তা সমৃদ্ধ ডিম্বাণুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকে।
ইস্ট্রোজেন দেহের প্রোটিনকে গড়ে তুলতে এবং তরল বস্তুর প্রবাহকে ধরে রাখার ব্যাপারেও সাহায্য করে। ফলিকল অর্থাৎ ক্ষুদ্র থলিটি সম্পূর্ণ পরিণত হয়ে ওঠার পর ফেটে যায়, তখন অপর একটি পিটুইটারি হরমোন লুটেনাইজিং হরমোন বা এলএইচ তার কাজ করা শুরু করে এবং খালি ক্ষুদ্র থলির মধ্যে কারপাস লিওটিয়ামের বিকাশ ঘটায়। এই পদার্থটির কাজ হলো গর্ভ সঞ্চার করা, পক্ষান্তরে এ পদার্থ তার নিজস্ব হরমোন, প্রজেস্টেরন তৈরি এবং নিঃসরণ করে, যদি ডিম্বাণু পনেরো দিনের মধ্যে উর্বর না হয়ে ওঠে তবে করপাস লিউটিয়াম অংশটি সংকুচিত হয়ে যায় এবং প্রজেস্টেরোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং জরায়ুর আস্তরণ ঝরে পড়ে মাসিক রক্তস্রাবরূপে। তখন আবার ফলিকল স্টিমুলিটিং হরমোন উৎপাদন আরম্ভ হয় এবং চক্রের পুনরাবৃত্তি হতে শুরু করে। অবশ্য যদি ডিম্বাণুটিতে প্রাণ সঞ্চারিত হয়ে যায় তবে ঐ করপাস লিউটিয়াম অংশটি কাজ করতে শুরু করে, যতক্ষণ না পর্যন্ত গর্ভফুল তৈরি হয় এবং রক্তস্রাব বন্ধ হয়।
পুরুষ যৌনতার মূল্যবান কথা
হতাশা, অবসাদ, উৎকণ্ঠা প্রভৃতি কারণে বা কোনো আপাত কারণ না থাকলেও কখনো কখনো পুরুষের লিঙ্গশৈথল্য দেখা দিতে পারে। একবারের এ অসফলতা দেখে অনেকে নিজের ওপর আস্থা হরিয়ে ফেলেন। এরপর যখন তিনি সচেতনভাবে লিঙ্গোত্থান ঘটানোর চেষ্টায় ব্রতী হন তখন কিন্তু আবার ঐ শৈথল্য দেখা দিতে পারে। এর ফলে সৃষ্ট উৎকণ্ঠা লিঙ্গোত্থানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। পুরুষের লিঙ্গ শৈথল্য হওয়ার সবচেয়ে স্বাভাবিক কারণ হলো উৎকণ্ঠা। উৎকণ্ঠা ও অহেতুক ভয় দূর করতে পারলে অনেকাংশে সফলতা পাওয়া যায়। পুরুষের যৌন অসফলতার বিষয়টিকে আলোচনা করতে হলে আমাদের বিভিন্ন বিষয়কে আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন-
  • কামনা/বাসনা
  • লিঙ্গোত্থান
  • অঙ্গভেদ
  • লিঙ্গোত্থান বজায় রাখা
  • চরম আনন্দ বা তৃপ্তি লাভ এবং
  • বীর্যপাত
কামনা/বাসনা
হতাশা বা বিষাদ বা ঐ ধরনের অন্য কোনো কারণে সঙ্গিনীর দেহের গন্ধে বিতৃষ্ণায়, অবসাদে, অসুস্থতায় কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়নে পুরুষের যৌনবাসনার হানি ঘটতে পারে। আবার অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস, মনমতো সঙ্গিনী লাভ প্রভৃতিতে যৌন বাসনা বেড়ে যায়।
লিঙ্গোত্থান
সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় কিংবা হস্তমৈথুনের সময় যদি লিঙ্গোত্থান ঘটে কিন্তু মিলনকালে লিঙ্গ শৈথল্য দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ব্যাপারটি শারীরিক নয়, মানসিক।
অঙ্গভেদ
মিলনকালে পুরুষটি যদি যোনিভেদে অসমর্থ হয়, তাহলে আসনভঙ্গি সম্বন্ধে এবং নারীর দেহগঠন সম্বন্ধে তার পূর্ণতর জ্ঞান আছে কি না, তা দেখতে হবে। অঙ্গভেদের সময় যদি লিঙ্গে ব্যথা হয় তাহলে পুরুষটির ফাইমোসিস বা মুদারোগ আছে কিনা এবং নারীটির যোনিপথে বা যোনিমুখে কোনো বাধা আছে কিনা তা দেখতে হবে। অনেক সময় একটি মিলনে অঙ্গশৈথল্য পরবর্তী মিলনগুলোতে ভয়জনিত বাধা সৃষ্টি করে এবং সে ক্ষেত্রে অঙ্গভেদের প্রাক মুহূর্তে লিঙ্গ শৈথল্য দেখা দিতে পারে।
লিঙ্গোত্থান বজায় রাখা
অঙ্গভেদের পরে যদি লিঙ্গ তার দৃঢ়তা হারায় তাহলে বুঝতে হবে ব্যর্থতার ভয় বা অত্যধিক শিথিল যোনিপথ এ ব্যর্থতা ডেকে আনছে।
চরমানন্দ লাভ
দেখতে হবে ঘুম থেকে ওঠার পর সঙ্গমে প্রবৃত্ত হলে চরমানন্দ লাভে বিঘ্ন দেখা দিচ্ছে কিনা, নাকি ঘুমাতে যাবার আগে মিলনে প্রবৃত্তি হলে চরমানন্দে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। বীর্যপাত বিলম্বের ব্যাপার ঘটলে তাকেও বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে।
বীর্যপাত
চরমানন্দ লাভের সঙ্গে সঙ্গে মূত্রপথ থেকে বীর্য বেরিয়ে আসে। কখনো কখনো চরমানন্দ লাভের পরে কোনো বীর্যপাতই হয় না, একে বিপরীত স্খলন বলা হয়। বীর্যপাত ঠিক কীভাবে হচ্ছে, চুইয়ে পড়ছে নাকি, ছিটকে বেরোচ্ছে, তাও দেখা দরকার। এসব ক্ষেত্রে স্নায়বিক বা পেশিঘটিত গোলমালের ভূমিকা অনেক, তাই এসব পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
বয়ঃসন্ধিকালে বা যৌবনের প্রারম্ভে কোনো তরুণের কেবলমাত্র দৃষ্টিতে বা যৌনচিন্তায় লিঙ্গোত্থান ঘটে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই এই ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং তখন লিঙ্গোত্থানের জন্য সরাসরি লিঙ্গ উদ্দীপনা প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীই মিলনের আগে পূর্ব রাগ পূর্বে স্বামীর যৌনাঙ্গে হাত দিতে চান না। ভালো মেয়েরা এসব কাজ করে না, কিংবা এভাবে এগোলে স্বামী কী ভাবেন, এ কথা ভেবেই সম্ভবত কাজটিতে তারা বিরত থাকেন। নারীর এমন মনোভাব নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর।
যৌনবিষয়ক কল্পনায় পুরুষের লিঙ্গোত্থান ঘটে। মস্তিষ্কে অবস্থিত যৌনকেন্দ্রটি প্রথমে উদ্দীপিত হয়। ঐ কেন্দ্র দ্বারা উত্তেজনার সংবাদ মেরুদণ্ড  ও বিশেষ স্নায়ু মারফত যৌনাঙ্গে এসে পৌঁছায়। এ সময়ে বস্তি অঙ্গগুলোতে বাড়তি রক্তের প্রবাহ আসে এবং এরই পরিণতিতে লিঙ্গোত্থান ঘটে। বয়স যত বাড়তে থাকে, লিঙ্গোত্থানের জন্য পুরুষের ততই সরাসরি লিঙ্গে উদ্দীপনা প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। অবশ্য ভয়, ভীতি, দোষী মনোভাব বা যৌনচিন্তা থেকে সরে গেলে যৌন উদ্দীপনায় বাধা পড়ে এবং সে ক্ষেত্রে লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়।
মদপান পুরুষত্বহীনতা আনতে পারে। এ ধরনের পুরুষত্বহীনতা সাধারণত দু ধরনের। কোনো সময়ে মদ বেশি পান করলে পুরুষত্বহীনতা হবে এক রকমের আবার নিয়মিত মদ্যপানের ফলে পুরুষত্বহীনতা হবে ভিন্ন রকমের। বহুক্ষেত্রে দেখা যায়, একদিনের অধিক মদ্যজনিত পুরুষত্বহীনতা পরবর্তী উপসর্গকে ডেকে আনছে। তবে, এসব হলো সাময়িক ব্যাপার এবং নিয়মিত মদ্যপানে স্নায়ুতন্ত্র ও লিভারের মাত্রাধিক ক্ষতি সাধিত হয়। পরিণামে যৌন বাসনাই কমে আসে এবং লিঙ্গ শৈথল্য একটা স্নায়বিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। শারীরিক পুরুষত্বহীনতার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হলো ডায়াবেটিস, রেডিয়াম চিকিৎসা বা ভাসকুলার বিশৃঙ্খলা। যৌন গবেষক মাস্টার এন্ড জনসন যৌনতার চারটি স্তরের কথা বলেছেন এগুলো হলো-
  • উত্তেজনার স্তর
  • বিস্তার স্তর
  • চরমানন্দ লাভের স্তর এবং
  • বিরতির স্তর
উত্তেজনার স্তরে লিঙ্গে রক্তপ্রবাহের
আধিক্য ঘটে এবং এর ফলে লিঙ্গোত্থান হয়। অন্ডকোষের থলিটি অল্প উপরে উঠে যায় এবং অন্ডকোষটি উপরে ওঠে। পরবর্তী স্তরে রক্তপ্রবাহ আরো বাড়ে এবং লিঙ্গের কাঠিন্য দেখা যায়। অন্ড দুটি আরো উপরে ওঠে এবং আকারে একটু বড় হতে পারে। চরমানন্দ লাভের স্তরে অনৈচ্ছিক পেশিসমূহের সংকোচন ঘটে এবং মূত্রপথ দিয়ে বীর্যধারা ছিটকে বেরিয়ে আসে, চলতি কথায় একে বলা হয় স্খলন। শারীরিক দিক দিয়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেশ বৃদ্ধি পায়। ক্রমে শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক স্তরে চলে আসে এবং এ স্তরটিকেই বলে বিরতির স্তর। একবার স্খলনের পর পুরুষের পক্ষে তাৎক্ষণিক লিঙ্গোত্থান ঘটানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
নারী-পুরুষের যৌন আনন্দ
নারী-পুরুষের যৌন আনন্দকে তৃপ্তিময় ও দীর্ঘস্থায়ী এবং তাৎপর্যময় করে তুলতে হলে পুরুষ এবং নারী উভয়কেই নিত্য নতুন ধ্যান-ধারণার আলোকে এগোতে হবে। পুরনো ধ্যান-ধারণা পাল্টানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন।
আধুনিক যৌনবিজ্ঞান বলে যে, ইচ্ছে করলে নারীও চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা পুরুষের উপর চেপে বসে প্রচণ্ড উত্তেজনায় কোমর নাচিয়ে যৌনমিলনে লিপ্ত হয়ে দারুণ তৃপ্তি সুখ উপভোগ করতে পারে। এতে করে উভয়ের দারুণ যৌন আনন্দ লাভ করতে পারে। যৌনমিলনে বিভিন্ন আসন বা ভঙ্গি আনন্দ এনে দিতে পারে উভয়ের মাঝে। কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ না থেকে স্বামী-স্ত্রী ঘরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র ভঙ্গিতে যৌনমিলনে লিপ্ত হলে দাম্পত্য জীবনে যৌনতৃপ্তির মাত্রা বেড়ে যাবে অনেক গুণ। যৌন আনন্দ লাভের জন্য প্রয়োজন পরস্পর পরস্পরের শরীরকে ভালোভাবে জানা। সেই সাথে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত যৌনবিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক পড়া প্রয়োজন।
সবাই যৌনজীবনে, যৌনমিলনে পরিপূর্ণ সুখ, তৃপ্তি ও আনন্দ চায়। এ চাওয়া খুবই যৌক্তিক ও স্বাভাবিক। শতকরা ১০০ ভাগ যৌনতৃপ্তি না পেলে সেক্সের কোনো তাৎপর্য থাকে না, এ কথা অনেক নারীরই। অর্থাৎ এর বয়স ২৫-২৬ বছর হবে। একজন সন্তানের এই যুবতী গৃহবধূ তার যৌনজীবনকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা লাভকারী এই মহিলা যৌনবিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন মনোযোগ দিয়ে পড়েন। যৌনসুখ ও তৃপ্তি লাভের বিচিত্র কৌশল, যৌনমিলনে পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভের উপায়, যৌনমিলনে নারী-পুরুষের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি মোটামুটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ধারণা রাখেন।
স্বামীর সাথে তার চমৎকার আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখী এই মহিলা অনেক সময় তার প্রিয় স্বামীকে যৌনমিলনের নিত্য নতুন কলাকৌশল সম্পর্কে অবহিত করেন। তার স্বামীটিও ভালো মানুষ। স্ত্রীকে ভালোবাসেন। স্ত্রীর মতামত এবং ইচ্ছাকে যথেষ্ট মূল্য দেন। এই মহিলাকে অতি কামুক বলা যায় না। বরং তাকে যৌন বিষয়ে সচেতন আধুনিক যুগের যোগ্য নারী বলা যায়। যেখানে যৌন বিষয়ে আগ্রহ দেখানো কিংবা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করাটাকে অনেক নারী কিংবা তরুণী-যুবতী বিব্রতকর মনে করেন।
আসলে যৌনজীবনকে পরিপূর্ণ সুখময়, আনন্দময়, তৃপ্তিকর ও তাৎপর্যময় করে তুলতে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে সক্রিয় হতে হবে। পুরুষরাই কেবল যৌন বিষয়ে অভিজ্ঞ হবে, সে তার ইচ্ছার প্রকাশ ঘটাবে, যৌনমিলনের সময় নারীর কিছু বলার কিংবা করার থাকবে না তা তো হতে পারে না। যৌনমিলনে পুরুষের মতো নারীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুরুষের মনে কামনার আগুন জ্বালিয়ে ক্রমান্বয়ে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে নারীকে অবশ্যই যৌন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। নারীকে তার নারীত্বের মধ্যে থেকেই পরিপুর্ণ আনন্দ ও সুখ পাবার চেষ্টা চালাতে হবে।
দীর্ঘ দাম্পত্যের ফলে অনেক সময় এক ধরনের একঘেয়েমি চলে আসে স্বামী-স্ত্রীর জীবনে। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কের দিকটি এতে বাধা পেতে পারে। অনেক সময় স্বামী নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এ ধরনের শৈত্য দাম্পত্য জীবনে অভিশাপ নিয়ে আসে, আর জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিসহ। এ সময় অযথা স্বামীকে দোষারোপ করলে কষ্ট কেবল বেড়েই যাবে। তাই এক্ষেত্রে স্ত্রীকে এগিয়ে আসতে হবে। স্ত্রী হিসেবে স্বামীর মানসিক দিকটি সতেজ এবং স্বাভাবিক করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। যৌন বিশেষজ্ঞের কথা হলো, ‘দাম্পত্য জীবনে শৈথল্য জেগে ওঠার কারণ হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, কলহ, বিবাদ ও সন্দেহ’। তাই এসব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিতটি খুব শক্ত হওয়া দরকার। এ সময় প্রেম-প্রীতি, মায়া-মমতা ও পাস্পরিক ভালোবাসার টানকে গভীরভাবে জাগিয়ে তুলতে হবে।
কয়েক দিন আগে এক দম্পতি আসে আমার চেম্বারে। এক সঙ্গে এলেও ওদের দেখে আমার মনে হয়েছিল সম্পর্কটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। দুজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম আর কিছুই নয়, এখানেও সেই ভুল বোঝাবুঝি। আসলে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে যা হয়। দম্পতির সাথে কথা বলে জানা গেল যে, স্বামী বাইরের কাজে    ব্যস্ত। বাড়ি ফিরে স্ত্রীর প্রতি আর শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করত না। স্ত্রীর কাছে এগিয়ে আসতে ভালো লাগত না। এরই ফলে সৃষ্টি হয়েছিল এক ধরনের শারীরিক অনিচ্ছা, তার থেকে অক্ষমতা। আমি মেয়েটিকে বললাম, আপনিই বরং উদ্যোগ নিয়ে স্বামীর কাছে এগিয়ে যাবেন। তার ইচ্ছাকে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব আপনার হাতে তুলে নিন। তার মন-মানসিকতাকে জাগিয়ে তুলতে পারেন একমাত্র আপনিই। এর কয়েক মাস পরে সে দম্পতি আবার আমার চেম্বারে এল। এবার কিন্তু তাদের চোখে-মুখে বিষণ্নতা আর দেখা গেল না। বেশ প্রাণবন্ত লাগছিল দম্পতি স্বামী-স্ত্রীকে।
তাদের কাছে তাদের বর্তমান অবস্থা জিজ্ঞেস করাতে তারা উভয়ে জবাব দিল যে, তারা এখন দুজন দুজনাকে বুঝতে পারে এবং পরিপূর্ণ যৌনজীবন উপভোগ করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে বলা দরকার যে, যৌন সমস্যা বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে ফেলুন এবং প্রয়োজনে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
মানসিক রোগ শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও জনসচেতনতায় পথিকৃৎ
 আমার ফেসবুক
Syed RubEL

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :