মাদকনির্ভর ব্যক্তি

অধ্যাপক ডা. এ কে এম নাজিমুদ্দৌলা চৌধুরী
এমবিবিএস ডিপিএম এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিসাইক
সেসব দ্রব্যকেই ড্রাগ বলা যায় যা শরীরে প্রবেশ করলে শারীরিক ক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। রোগ নিরাময়ে যখন ড্রাগের ব্যবহার করা হয় তখন তা ড্রাগের উপযুক্ত প্রয়োগ, নইলে নয়। রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্য ছাড়া যখন ক্রমাগত এবং মাত্রাধিকভাবে কোনো ড্রাগের অপব্যবহার চলে তখনই তাকে বলা হয় Drug Addiction বা ড্রাগের অপব্যবহার। ব্যক্তির ওপর ড্রাগের প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীর-মনে এমন সব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় যখন সেই ব্যক্তি অবিরামভাবে অথবা কিছুদিন পরপর সেই ড্রাগের ব্যবহার করতে বাধ্য হয় আর এ অবস্থাকেই বলা হয় Drug dependence বা ড্রাগ আসক্ততা, ড্রাগ ডিপেন্ডেন্স সাধারণত ২ ভাবে হয়-
  • physical dependence Ges
  • psychological dependence
ফিজিক্যাল ডিপেন্ডেন্স বা
শারীরিক নির্ভরতা
যারা পুনঃপুনঃ ড্রাগের ব্যবহারের ফলে এক প্রকার ফিজিক্যাল বা শারীরিক নির্ভরতা অবস্থার সৃষ্টি হয় আর যখন ওই ড্রাগ গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয় তা যন্ত্রণাদায়ক শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ করে, একে বলা হয় উইথড্রয়াল সিম্পটম। হেরোইন আসক্তি হয়েছে এমন ব্যক্তি যখন কোনো কারণে হেরোইন খাওয়া বন্ধ করে দেয় তখন তার মাঝে দেখা দেয়-
  • অস্থিরতা
  • ঘুমহীনতা
  • মাত্রাতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ
  • ছটফটানি
  • গ্রন্থিতে ব্যথা
  • পেশিতে ব্যথা
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া
  • বমি হওয়া
  • ডায়রিয়া
  • পেটব্যথা
  • দেহের লোম খাড়া হয়ে যাওয়া
  • বদহজম ইত্যাদি
এসব লক্ষণ বা উপসর্গ সাধারণত হেরোইন বন্ধ করার ছয় বা সাত ঘণ্টা পরে শুরু হয়। অ্যালকোহল বা মদে ডিপেন্ডেন্স আসার পর মদ্যপায়ী মদপান হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে তার মাঝে দেখা দেয় বিভিন্ন উপসর্গ, এগুলো হলো-
  • বমি
  • বমি বমি ভাব
  • বিরক্তি
  • রাগ
  • দুর্বলতা
  • ঘুম না আসা
  • অস্থিরতা
  • বিষণ্নতা
  • হতাশা ইত্যাদি
কখনো এসব লক্ষণ বা উপসর্গ অল্প মাত্রায় থাকে, আর কখনো বেশি মাত্রায় হলে তা মৃগীরোগীর মতো ফিট হয়ে যাওয়া এবং প্রলাপের অবস্থাও সৃষ্টি করতে পারে। এ সময় দেখা দিতে পারে-
  • অমূল প্রত্যক্ষণ (Hallucination)
  • ভ্রান্ত বিশ্বাস (Dullusion)
  • আতঙ্ক (Phobia)
  • স্থান-কাল-পাত্রের জ্ঞান লোপ পায়। এরকম অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারে।
Psychological dependence
বা মানসিক নির্ভরতা
ড্রাগ আসক্তির বা নির্ভরতার কোনো সর্বজনসম্মত লক্ষণ বা উপসর্গ বলা মুশকিল। তবে সাধারণভাবে দেখা যায় যে, নেশাদ্রব্য গ্রহণে আগ্রহটা এতটাই প্রবল হয় যে ওই ব্যক্তির পক্ষে সেই দ্রব্যের ব্যবহার রোধ করার অথবা ব্যবহারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে শারীরিক নির্ভরতা বা চংুংরপধষ ফবঢ়বহফবহপব থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। কিংবা দুটো অবস্থা এক সঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারে।
মাদকে নির্ভরতার আবেগগত উপসর্গ
  • ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
  • হঠাৎ করে মুডের পরিবর্তন
  • উদ্বিগ্নতা
  • দুশ্চিন্তা
  • বিষণ্নতা
  • ম্যানিয়া
  •  সিজোফ্রেনিয়া
  • দায়িত্বজ্ঞানহীনতা
  •  মাত্রাধিক্য কল্পনাবিলাসী
  • ফোবিয়া ইত্যাদি
পারিবারিক উপসর্গ
  • নীতিস্খলন ঘটা
  • পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা
  • একটানা ঝগড়া-বিবাদ করা
  • কলহে জড়িয়ে পড়া
  • মা-বাবাকে টাকা-পয়সার জন্য চাপ দেয়া
  • মা-বাবাকে মান্য না করা
  • কোনো বিষয়ে উৎসাহ না দেখানো
  • হুমকি দেয়া
  • কথায় কথায় রাগ করা
  • পারিবারিক কোনো কাজকর্মে অংশ না নেয়া
  • আইন ভঙ্গ করা
সামাজিক উপসর্গ
মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদক গ্রহণের ফলে সে যেন সমাজের কোনো তোয়াক্কাই করে না। সে যেন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। কোনো সামাজিক বন্ধনেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সামাজিক উপসর্গগুলো হলো-
  • মাদকাসক্ত নতুন নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হওয়া
  • চুল বড় করা
  • কাপড়-চোপড়ে ও পরনে ফ্যাশনের পরিবর্তন আসা।
লেখাপড়াগত উপসর্গ
মাদকনির্ভরতা একটি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে ধ্বংস করে দেয়। লেখাপড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়, ভালো ভালো ছাত্র খারাপ রেজাল্ট করতে থাকে। লেখাপড়া গোল্লায় যায়। এছাড়া
  • শিক্ষকের সাথে বেয়াদবিপূর্ণ আচরণ করা
  • শিক্ষকদের সম্মান না করা
  • স্কুল-কলেজে না যাওয়া
  • সহপাঠীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা
  •  স্যারের লেকচার মন দিয়ে না শোনা
  • ঠিকমতো লেখাপড়া না করা
  • স্কুল বা কলেজ পালানো ইত্যাদি
মাদকাসক্তের চিকিৎসা ৩ ভাগে ভাগ করা হয়
  • প্রথম ভাগে শরীর থেকে মাদকাসক্তি ভাবটা তুলে নেয়া হয়। এতে সময় লাগে ৭ দিন থেকে ১ মাস।
  • দ্বিতীয় ভাগে তাকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করা হয়। এ জন্য সময় লাগে একটু বেশি।
  • তৃতীয় ভাগে মাদকাসক্তি রোধ করার জন্য বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হয়। সাইকোথেরাপি দেয়া হয়।