‘মানসিক অত্যাচার’ প্রতিরোধের উপায়
আফতাব চৌধুরী
বিশ্ব
নারী দিবস শুনতে অনেক শ্রুতিমধুর। কিন্তু এ নারী দিবস পালন করতে গিয়েই
হয়তো কত পুরুষ নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে শরীরের
ক্ষিধে মেটানোর আশা প্রকাশ করেছেন কোনো নারীর প্রতি। অথবা অশ্লীল মন্তব্য
করেছেন পাশের বাড়ির মহিলাকে লক্ষ করে। শুধু নারীদের সম্মান জানাতে একটি দিন
নির্ধারণ করে দেয়াটাই শেষ। কিন্তু এ নির্ধারিত দিনটিতেই নারী কতটুকু
নিরাপদ তা কি কেউ বলে দিতে পারবে?
সকালে কাজের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়া
মহিলা হোক আর স্কুল-কলেজে পাঠরত ছাত্রী হোক অথবা অন্য কোনো মহিলা দিনের
কোনো না কোনো মুহূর্তে একজন পুরুষের অম্লীল মন্তব্য, অশ্লীল ইঙ্গিত অথবা
তির্যক চাহনি থেকে রক্ষা পাওয়ার উদাহরণ বিরল। তবে স্কুল-কলেজে পাঠরতদের
মধ্যে যৌন হয়রানির একটা ব্যাপার থাকে তা অনেকটা সহ্য করা যায় যদি এতে কোনো
বিকৃত মানসিকতা না থাকে। কিন্তু এ হয়রানির যখন কোনো একজনের আত্মমর্যাদায়
আঘাত করে তখন তাকে সমর্থন করা যায় না।কিন্তু এ হয়রানি থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক একাংশ নিু মানসিকতার লোক স্থান, কাল, পাত্র না বুঝে এক মহিলার প্রতি অশ্লীল মন্তব্য মানসিক শাস্তিস্বরূপ। কিন্তু আসল কথা এই যে পুরুষের এ ধরনের ব্যবহারের পরও সাধারণত মুখ বুঝে সহ্য করে নারীরা। কারণ যখন নারীরা এর প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে তখন সমাজের একাংশ ওই নারীর চরিত্রের দিকে আঙুল উঠাবে, আর না হলে সে প্রতিবাদের নেতিবাচক ফল সুদূরপ্রসারী হবে। তাই মনের ভেতর জ্বলে ওঠা প্রতিবাদ তথা রাগের বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে নীরবে সহ্য করে যায়। কিন্তু এ কথাও ভাবার বিষয়, সাধারণত এ ধরনের ব্যবহার প্রতিবাদ করতে একজন নারীর যতটুকু মানসিক সাহসের প্রয়োজন তার থেকে অনেক বেশি সাহসের প্রয়োজন এ ধরনের ঘটনাকে মনের ভেতর নিয়ন্ত্রণ করতে। নারীর এমন মৌন প্রতিবাদের আড়ালে হয়তো এ কথাও প্রভাব ফেলতে পারে যে নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পুরুষ-প্রধান সমাজটি নারীকে ত্যাগ, প্রেম-ভালোবাসা এবং মমতার প্রতীকরূপে বিভূষিত করে আসছে। এও বলা হয় যে অতীতের নারীরা উপরের বিশ্লেষণগুলোর পক্ষে এক একটা সুন্দর উদাহরণ দেখিয়ে গেছেন তাদের উত্তরসূরির জন্য। এর জন্য হয়তো একাংশ নারী প্রতিবাদের ভাষা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ কথা এটাই যে, পুরুষরা নারীর মানসিক শক্তি দমন করে রাখার জন্যই এ বিশেষণ প্রয়োগ করে। কারণ সত্যিকার অর্থে নারীদের যদি এ স্থানে বসানো হতো তাহলে এত দ্রুতগতিতে নারীসংক্রান্ত অপরাধ সংখ্যা বৃদ্ধি হতো না।
সাধারণত বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড বা স্কুল-কলেজের আশপাশের একাংশ কুরুচিসম্পন্ন পুরুষের আড্ডার স্থান। এ ধরনের স্থান বা অন্যান্য জনবহুল স্থানে বেশির ভাগ পুরুষ সুযোগ-সুবিধা বুঝে নারীদের প্রতি অশালীন ব্যবহার অথবা অশ্লীল মন্তব্যে ভূষিত করে। এ ধরনের মুহূর্তে যখন নারীর মৌন প্রতিবাদের সুযোগ নিতে কোনো শ্রেণীর পুুরুষই কুণ্ঠাবোধ করে না, তখন প্রকৃত অর্থে আত্মসম্মানে লাগে। আর তখনই মনে হয় নারী হয়ে জন্ম নেয়াটাই বোধহয় ভুল। অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলা কর্মচারীদের নিজের কার্যালয়ের পুরুষ সহকর্মী অথবা বসের দ্বারা মানসিকভাবে হয়রান হতে হয়। এমন মহিলাকে শুধু যে মানসিক শাস্তি দেয়া হয় তা নয় অনেক ক্ষেত্রে ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যও চেষ্টা করা হয়। কোনো মহিলা যদি এ ধরনের কাজের প্রতিবাদ করে তখন সে মহিলার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় অনেক সহকর্মী। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, অনেক সময় ওই মহিলাকে চাকরি ছাড়তেও বাধ্য হতে দেখা যায়। বর্তমান পরিস্থিতি ঘাঁটলে দেখা যায় শিশু থেকে বৃদ্ধ অবধি সব মেয়েমানুষই কোনো না কোনোভাবে পুরুষের হাতে অপদস্থ, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত হচ্ছেন। যে দেশের ১৮ মাস থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কোনো মহিলা ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে নারীর মানসিক বলাৎকারের বিষয়কে চিন্তা করবে? ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আকাশ-বাতাস মুখরিত করা হয়। ক-বছর আগেই জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় কিন্তু ক্রমবর্ধমানরূপে বাড়ন্ত মানসিক হয়রানির ব্যাপারে কেউ মুখ খোলে না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া নারীই একমাত্র উপরব্ধি করে এসব মানিয়ে নিতে কতটুকু মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। প্রশ্ন হলো, নারীর এ ধরনের মানসিক অত্যাচার প্রতিরোধ করবে কে? অথবা এর প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
প্রকৃত অর্থে এ ধরনের সমস্যা এক দিন বা এক রাতের ভেতর শেষ হওয়ার নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ব্যবহার সমপ্রতি পরম্পরাগতভাবে চলছে। বহু সময় তা চূড়ান্ত রূপও নেয়। নিু মানসিকতাসম্পন্ন একাংশ পুরুষ নারীদের কেবল ভোগের সামগ্রী বলেই মনে করে। কোনো নারীকে দেখামাত্রই তাদের বিকৃত মানসিকতার উদগিরণ ঘটে। বেশির ভাগ মেয়ে সেটা পুরুষের স্বভাব বলে বিনা প্রতিবাদে সহ্য করে যায়। উল্লেখ্য, নারীর মানসিক শাস্তির প্রত্যুত্তরে নারীদের পালন করা মৌন প্রতিবাদ অনেক সময়ে পুরুষদের ধর্ষণের মতো নিষ্ঠুর কর্মের জন্য উসকে দেয়। এ মানসিক শাস্তি একটি অপরাধ বলে গণ্য হয়। যদিও আমাদের সমাজব্যবস্থা এবং আইনের সঙ্গে এ সমস্যায় আক্রান্ত নারীও সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ফলে এ ধরনের মানসিক শাস্তির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
অবশ্য এ কথা অপ্রিয় হলেও সত্য যে নারীর মানসিক শাস্তিতে ইন্ধন জোগায় একাংশ নারী। এ দেশে বস্ত্র উদ্যোগগুলো বৃহৎ প্রসারতা লাভ করলেও একাংশ নারীকে দেখলে শরীরটিকে ঢেকে রাখার ন্যূনতম বস্ত্রেরও অভাব বোধ হয়। সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে তারা নিজের নিু মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরে। যাই হোক এসব সমস্যা সমাধানে নারী-পুরুষের যৌথ সহযোগিতার প্রয়োজন। সাধারণত একজন মানুষের মন-মানসিকতা জন্ম থেকেই বিকৃত হয় না। সামাজিক পরিবেশ ব্যক্তির মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। তাই একা কারোর চিন্তাধারা বদলে ফেললে কাজ হবে না, পুরো সমাজটাকেই বদলাতে হবে। তবে শুরু করতে হবে নিজ থেকেই।
পোস্ট @ মনোজগত
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন