অ্যালকোহল যেভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে?

কোন মন্তব্য নেই
 
অনেক বছরব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং তর্কবিতর্কের পর জানা গেছে অ্যালকোহল কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে? যদিও আমেরিকাতে অ্যালকোহল সেবনের নির্ধারিত বয়স ২১ বছর তথাপি অনেক অ্যালকোহলের দোকান রয়েছে যারা টিনএজকে কিন্তু টাকার লোভে অ্যালকোহলের রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে। টিনএজার এবং যুবকদের মস্তিষ্কে অ্যালকোহল কীভাবে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে তা তারা বুঝতে চায় না। আমাদের অনেকেই জানে অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন মস্তিষ্কের কোষে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কিন্তু সবাই এটাকে গুরুত্ব সহকারে কেন নিচ্ছে না তাই বিস্ময়ের এবং দুঃখের বিষয়? কেন তারা তাদের প্রিয়জনের কথা ভাবছে না? এই প্রবন্ধটি সেই যুবকদের জন্য যারা ভাবছে অ্যালকোহল গ্রহণ উপকারী। যারা এটি নিয়মিত সেবন করছেন তাদের মনে রাখতে হবে যে তারা নিজ হাতে নিজেদের কবর খুঁড়ছেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যখন আপনি হতাশা এবং অ্যালকোহলের গহিনে তলিয়ে যাবেন।
মস্তিষ্কের ওপর অ্যালকোহলের প্রতিক্রিয়া
খারাপ কাজের দিকে ঝুঁকে পড়া, হাঁটতে অসুবিধা হওয়া, ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি, বাড়ানো কথা অ্যালকোহলের সাধারণ খারাপ প্রভাব। এটা মস্তিষ্কের ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। অ্যালকোহল মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশেই ক্ষতি করে, কিন্তু এর প্রধান ক্ষতিকর দিক হচ্ছে মস্তিষ্কের কোষগুলো নিস্তেজ করা, কেন্দ্রীয় ্লায়ুতন্ত্রকে হতাশায় ও বিষাদে ডুবানো। অধিক মাত্রায় এবং নিয়মিত সেবনে এই অ্যালকোহল মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি করে যার মধ্যে একটি হলো জ্ঞানগত এবং স্মরণশক্তি হ্রাসজনিত ক্ষতি করা। যখন এটি রক্তে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কের রক্তের সাথে মিশে যায় তখন এটি মস্তিষ্কের কোষের সাথে দেহের কোষের যোগাযোগ ঘটানোয় বিঘ্ন ঘটায়। মস্তিষ্কের এই অবসাদ খুব অল্প মাত্রার অ্যালকোহল সেবনেও ঘটে, খালি পেটে প্রচুর অ্যালকোহল সেবন করলে এটি চোখে অন্ধকার দেখার কারণ হয়, যা কোনো ঘটনা বিস্তারিতভাবে মনে করতে পারে না, এমনকি পুরো ঘটনাই সে ভুলে যায়।
মস্তিষ্কের অ্যালকোহলের তাৎক্ষণিক প্রভাব
অনেক গবেষণার পরও দেখা যায় অনেকেই বুঝতে চায় না কেন এটি মস্তিষ্কে এত দ্রুত প্রভাব ফেলে। আমি জানি এটি মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে পুরো দেহের নিয়ন্ত্রক। এটা আপনার পেশি, শ্বাসযন্ত্র এবং বিপাকীয় কাজের নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার মস্তিষ্ক একটি শৃঙ্খলের মধ্য দিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশের সংকেত পাঠায়। যখন রক্ত প্রবাহের সাথে এই অ্যালকোহল মেশে তখন সংকেতগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অ্যালকোহল মস্তিষ্কের কর্মক্ষম অংশকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে।
সেরেব্রাল কর্টেক্স এবং অ্যালকোহল
সেরেব্রাল কর্টেক্স তথ্য, চিন্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং দেহের বেশির ভাগ ঐচ্ছিক পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যালকোহল প্রবেশের সাথে সাথে চিন্তাচেতনাকে দুর্বল এবং ঘোরালো করে ও স্মৃতির বিঘ্ন ঘটায়। এটা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে নষ্ট করে ব্যক্তিকে বাচাল এবং অপ্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, যা ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
দেহের অঙ্গ এবং অ্যালকোহল
দেহের বেশির ভাগ আঙ্গিক ক্রিয়া মস্তিষ্কের বিশাল অঞ্চল, যা হিপোক্যাম্পাস নামে পরিচিত, তা দিয়ে এবং সেপ্টাল অঞ্চল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে যা আবেগ এবং স্মরণশক্তিতেও প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহল স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে এবং ব্যক্তিকে আক্রমণাত্মক বা বিধ্বংসী করে তোলে।
সেরেবেলাম এবং অ্যালকোহল
সেরেবেলাম পেশির সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে। সেরেব্রাল কর্টেক্স এবং সেরেবেলাম মস্তিষ্ক থেকে মেরুদণ্ডীয় শিরায় সংকেত পাঠানোয় একসাথে কাজ করে, যা পেশির স্বাভাবিক কাজে সহায়তা করে। যখন অ্যালকোহল সেরেবেলামের সংস্পর্শে আসে পেশির সংকোচন, প্রসারণ অসংলগ্ন হয়ে থাকে।
হাইপোথ্যালামাস এবং অ্যালকোহল
হাইপোথ্যালামাস মস্তিষ্কের অনেক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এটি পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণ নিয়মিত করে। অ্যালকোহল হাইপোথ্যালামাসের কাজে বিঘ্ন ঘটায়, যেই হাইপোথ্যালামাস জননকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ জৈবিক আকাঙক্ষা বৃদ্ধি করে, কিন্তু জৈবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে অক্ষম করে তোলে।
পিটুইটারি গ্রন্থি এবং অ্যালকোহল
অ্যালকোহল পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে অ্যান্টিডিওরেটিক নামক হরমোন ক্ষরণ বন্ধ করে এবং হজমক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়। অ্যান্টিডিওরেটিক হরমোন কিডনিতে পানি শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যখন অ্যালাকোহল অউঐ ক্ষরণ বন্ধ করে তখন কিডনির পানি শোষণ ক্ষমতা কমে যায় এবং প্রস্রাব বেশি হয়।
মেডুলা এবং অ্যালকোহল
মেডুলা দেহের অনৈচ্ছিক পেশির যেমন হৃদযন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ, দেহের তাপমাত্রা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়মিত করে। অ্যালকোহল মেডুলার কাজ বন্ধ করে দেয়, যা ব্যক্তিকে তন্দ্রালু করে তোলে। বেশি মাত্রায় সেবনকৃত অ্যালকোহল ব্যক্তিকে অচেতন করে। তাই আমি মনে করি অ্যালকোহল দেহ এবং মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
অধ্যাপক ডা. এ কে এম নাজিমুদ্দৌলা চৌধুরী
এমবিবিএস ডিপিএম এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিসাইক
 FB ME
Syed Rubel
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :