প্রসবকালীন বিলম্ব

কোন মন্তব্য নেই


ডা. বশির আহমেদ তুষার
প্রসবের সময় বিলম্বিত হলে বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন সাধারণ বুদ্ধিতেই শঙ্কিত এবং চিন্তিত হয়ে পড়েন। ডাক্তাররাও যে ভাবনায় পড়েন না তা নয়। তবে ধীরভাবে উপযুক্ত কারণ নির্ণয় করে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বিপদ এড়ানো যায়। বছর পনেরো আগে ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেই প্রসবের বিলম্ব হচ্ছে বলে ধরা হতো অভিজ্ঞতার দ্বারা দেখা গেছে যে, ক্রমাগত অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলে মা ও সন্তান দুজনেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ততক্ষণ ব্যথা সহ্য করার পর সন্তানের ক্লেশ শুরু হয় এবং ফরসেপস বা সিজারিয়ান করা সত্ত্বেও দুজনেরই উপসর্গ ও বিপদ দেখা দেয়। আজকাল সে জন্য ১৪-৪৮ ঘণ্টা গড়িয়ে গেলেই প্রসব বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধরা হয়। অতিক্রান্ত সময় ছাড়া প্রসবের অগ্রগতির পরিমাণ নিম্নলিখিত পরিবর্তন দিয়ে নিরূপণ করা হয়। (১) জরায়ুমুখের সমপ্রসারণ কতটা হচ্ছে। (২) বস্তিগহ্বরে শিশুর মস্তক কতক্ষণ নিচের দিকে যাচ্ছে।
জরায়ুর সংকোচন বা নিশ্চেষ্টতা
প্রসবের সময় জরায়ুর পেশির সংকোচনের ক্ষমতা দুর্বল হলে ভ্রূণস্থ শিশুকে নিচের দিকে ঠেলে দিতে পারে না। দুর্বল, নিষ্ফল এবং অনিয়মিত সংকোচনে জরায়ুর পেশি নিশ্চেষ্ট হয়ে পড়ে ও গর্ভাশয়ের মুখ সমপ্রসারিত হতে দেরি হয়। জরায়ুর পেশির নিষ্ফল সংকোচনের ফলে সন্তানের মস্তক বস্তিগহ্বরে সঠিকভাবে অবস্থান করে না ও সহজভাবে নিচের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। জরায়ুর পেশির শিথিলতার প্রভাবে প্রসব বিলম্বিত হয় এবং বেশি দেরি হলে মা ও শিশুর নানা উপসর্গও প্রায়ই দেখা দেয়।
অনিয়মিত ও অত্যধিক সংকোচন
কখনো কখনো জরায়ুর মাংসপেশি অনিয়মিতভাবে অতিশয় সংকুচিত হয়ে যায় এবং জরায়ুমুখের পেশির নম্রতার অভাবে অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। অত্যধিক সংকোচনের ফলে ব্যথার অনুভূতিও বেশি হয় এবং জরায়ুমুখ অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় প্রসূতি কামড়ানো বা কোমর ফেটে যাওয়ার মতো ব্যথা অনুভব করেন। এতে মায়ের মনে ভীতির সঞ্চার হয়ে মানসিক অবসাদ ও চাঞ্চল্য বেড়ে যেতে থাকে এবং ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা কমে আসে। বেশি বয়সে সন্তান হলে প্রসবের পূর্বে পানি ভেঙে গেলে বা শিশুর মস্তকের অবস্থান সঠিক না হলে এরূপ অনিয়মিত ও অতিরিক্ত সংকোচনের সূচনা হয়। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, জরায়ুর পেশির সংকোচন ও শিথিলতার অস্বাভাবিকতার ফলে প্রসবের প্রথম অধ্যায় মন্থর ও বিলম্ব হতে পারে।
সন্তানের মস্তকের অস্বাভাবিক অবস্থান
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাশয়ের মধ্যে ভ্রূণস্থ শিশুর মস্তক নিচের দিকে জরায়ুমুখের ঠিক ওপরে অবস্থিত থাকে। শিশুর হাত-পা, মাথা এমনভাবে কুণ্ডলিত ভঙ্গিমায় থাকে যে গর্ভাশয়ে পূর্ণ মাসের শিশু বঙ্কিম অবস্থায় বেশ কম জায়গা নিয়ে থাকতে পারে। কখনো কখনো শিশুর পা বা নিতম্ব নিচের দিকে থাকে। সাধারণ ভাষায় একে ‘পাদুকা’ বলা হয়, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রূণস্থ সন্তান গর্ভাশয়ে আড়াআড়িভাবে থাকে। এভাবে স্বাভাবিক প্রসব হয় না। আগে থেকে ডাক্তার না দেখানোর ফলে আমাদের দেশে গ্রামের বহু মায়ের এরূপ সন্তানের অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এতে প্রসবের সময় অস্বাভাবিক বিলম্ব ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত অত্যধিক সংকোচনে জরায়ুর পেশি ফেটেও যেতে পারে ও প্রসূতির প্রাণ সংশয় করে।
মস্তকের অবস্থান
শিশুর মস্তকের বিভিন্ন অংশ সাধারণত নিম্নলিখিত তিনটিভাবে বস্তিগহ্বরে প্রবেশ করতে পারে (১) তালু (২) ললাট (৩) মুখমণ্ডল। শিশুর তালুকে ডাক্তারি ভাষায় ‘অক্সিপুট’ বলা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় তালুর পশ্চাৎভাগ মায়ের বস্তিগহ্বরের সামনের দিকে থাকে। এই অবস্থায় শিশুর পিঠ মায়ের পেটের সামনের দিকে থাকে। ব্যথা শুরু হলে তালুর পশ্চাৎভাগ নিচে নামে ও মস্তকের ব্যাস ও পরিধি ছোট হয়ে বস্তিগহ্বরে সহজেই নিচে নেমে আসে এবং তলায় এলে সামনের দিকে ঘুরে প্রসবদ্বারে উপনীত হয় ও পরে স্বাভাবিকভাবে যোনিমুখ দিয়ে নির্গত হয়। কোনো কারণে যদি তালুর পশ্চাৎভাগ পেছনের দিকে ঘুরে যায় তবে মাথার বৃহৎ পরিধি ও ব্যাস বস্তিগহ্বরে প্রবেশ করতে দেরি হয়।
এই অবস্থায় শিশুর পিঠ মায়ের পেটের পেছনের দিকে থাকে। প্রসব বেদনা শুরু হলে ও বস্তিগহ্বরের হাড়ের মাপ পরিমিত হলে তালুর পশ্চাৎভাগ নিচে এসে পড়ে প্রায় ৭৫% ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে ঘুরে আবার সামনের দিকে এসে যায় ও সহজভাবে প্রসব হয়। কোনো কোনো সময় তালুর সামনের দিকে না ঘুরে অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায় বা পেছনের দিকে ঘুরে যায় এবং মস্তকের বৃহৎ পরিধি নিচে বস্তির হাড়ে আটকে যায়। এই অবস্থায় কিছু ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ সম্পূর্ণ সমপ্রসারিত হলে হাত দিয়ে তালু সামনের দিকে ঘুরিয়ে ফরসেপস ডেলিভারি করতে হয়। একে ‘পশ্চাৎ তালু অবস্থান’ বলা হয়।
তালুদেশ ছাড়া অন্যান্য অবস্থান
প্রথমে মস্তকের ললাট বা মুখমণ্ডল বস্তিগহ্বরে প্রবেশ করলে প্রসবে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। শিশুর পশ্চার্ধ বা নিতম্ব প্রথমে এলেও সন্তানের অনেক বিপদ হতে পারে। এতে সন্তান প্রসবের অসুবিধা ঘটায়। এভাবে প্রসবের সময় সন্তানের নিতম্ব, কাঁধি বা মাথা আটকে গেলে প্রসব বিলম্বিত হয় এবং সন্তানের মাথায় চাপ লেগে যেতে পারে। বেশি বিলম্বিত হলে বা এই অবস্থায় জোরাজুরি করে প্রসব করালে শিশুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস বিকল হয়ে যেতে পারে।
যোনিপথের এবং
বস্তিদেশের অপরিসরতা
যোনিপথ বা বস্তিগহ্বরের হাড়ে অপরিসরতার ফলেও সন্তানের মাথার অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। যেসব মেয়ে লম্বায় ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির কম, পূর্ণমাস যাদের সন্তানের মাথা বস্তিগহ্বরে প্রবেশ করে না বা যাদের কোমরের অসুখে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয় তাদের পূর্ণমাসে ভালোভাবে হাড়ের মাপজোক করে নেয়া উচিত। অভ্যন্তর পরীক্ষার দ্বারা শিশুর মস্তকের অবস্থান জরায়ুমুখের নম্রতা ও হাড়ের মাপ সঠিকভাবে দেখে নেয়া উচিত।
অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার দ্বারা শিশুর মস্তকের অবস্থান জরায়ুমুখের নম্রতা ও হাড়ের মাপ সঠিকভাবে দেখে নেয়া উচিত। পূর্ণমাসে মাকে বসিয়ে যদি বস্তিগহ্বরের ভ্রূণের শিশুর মস্তক ঢুকিয়ে দেয়া যায় তবে বোঝা যায় যে, শিশুর মস্তক বা বস্তির হাড়ের অসামঞ্জস্য নেই এবং ব্যথা ওঠার পর মাথা ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বস্তিগহ্বরের হাড়ের আকারে নানা রকমফের আছে। অসুস্থতায় বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও সুষম খাদ্যের অভাবে মেয়েদের হাড়ের মাপ অস্বাভাবিক বা ছোট হয়। এরূপ ক্ষেত্রে অনেক সময় সিজারিয়ান অপারেশন দরকার হয়। খানিকক্ষণ প্রসব বেদনা না হলে অনেক     সন্তানের মাথায় ও মায়ের বস্তিগহ্বরের অসামঞ্জস্য নিরূপণ করা যায় না।
লেখকঃ গবেষক, ফিমেল সেক্সুয়াল মেডিসিন
আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা, হবিগঞ্জ
ফোনঃ ০১৭১৭-০৫৩৫৭৭

 পোস্ট @ মনোজগত 

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।  প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।  প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :