আত্মহত্যা পর্যালোচনা

কোন মন্তব্য নেই
একটি পূর্ব সিদ্ধান্তকৃত আত্মহত্যা মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ণীত হয়।
(১)    একটি ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যুর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ, প্রতিরোধব্যবস্থা এবং আত্মহত্যার পূর্বে সতর্কতামূলক চিহ্নসমূহ।
(২)    রোগীর আত্মহত্যা বিষয়ক চিন্তা-চেতনা, পরিকল্পনা, ব্যবহার, আকাঙক্ষা এবং ইচ্ছা।
(৩)    উপরোল্লিখিত দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকের বিজ্ঞান বা চিকিৎসাশাস্ত্রমতে ব্যাখ্যা প্রদান।
প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোর-কিশোরীদের ইচ্ছামৃত্যু এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আত্মহত্যার পরিকল্পনা যেমন বিসতৃত, সুচিন্তিত এবং ব্যবস্থাকৃত আত্মহত্যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্ণীত হয়। সামপ্রতিক সময়ে জয়নার এবং তার সহকর্মীরা আত্মহত্যার ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা উল্লিখিত ৩টি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে।
চিকিৎসাশাস্ত্র এবং তদন্ত প্রতিবেদনে প্রথম এবং তৃতীয় বিষয়ের ওপর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয়ের ওপর সর্বাধিক কম চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় বিষয়ই ইচ্ছাকৃত মৃত্যুর ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর ভূমিকা প্রদান করে। অনেক চিকিৎসকই মনে করে একই ব্যক্তির বারবার আত্মহত্যার প্রবণতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বা ভিন্ন ভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
ইচ্ছামৃত্যু বা আত্মহত্যা
যে সকল রোগী বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ তারা কখনো তাদের আত্মহত্যার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, আবার কেউ বলে না কিন্তু প্রশ্ন ও তদন্ত করার মাধ্যমে ডাক্তাররা এ তথ্য বের করে নিতে পারে। এ ধরনের তথ্য সঠিক ও যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে এবং রোগীর আত্মহত্যাপ্রবণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস তা নির্ধারণ করে।  কারণ তারা মরতে চাইলেও তাদের মধ্যে বাঁচার একটি ক্ষীণ ইচ্ছা থাকে।
  • অনেক সময় রোগী তাদের ইচ্ছামৃত্যুর কথা প্রকাশ করে না, কারণ তারা মরতে চায় না।
  • রোগী ভাবে যে আত্মহত্যার কথা তাদের দুর্বলতার চিহ্ন এবং তারা তা বলতে লজ্জাবোধ করে।
  • রোগী ভাবে আত্মহত্যা অমানবিক এবং পাপ।
  • রোগী ভাবে আত্মহত্যার কথা আলোচনা করা একটি নিন্দনীয় কাজ।
  • অনেক সময় রোগী ভাবে যারা আত্মহত্যার কথা প্রকাশ করে তাদের চিকিৎসকরা পাগল মনে করবে।
  • অনেক সময় রোগী চিন্তা করে তার আত্মহত্যার কথা প্রকাশিত হলে তাকে পুলিশে দেয়া হবে এবং তালা মেরে আবদ্ধ করে রাখা হবে। সব রোগী আত্মহত্যার কথা চিকিৎসককে বলে না। অনেকেই তর্ক করে যে যেসব আত্মহত্যাপ্রবণ রোগী আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয় এবং নিজেদের যন্ত্রণা মুক্তির কোনো পথ দেখে না তারাও সব সময় মরতে চায় কি না তার সন্দেহ আছে। এমনকি এ ধরনের রোগী আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে মরতে চায় বা মৃত্যু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে তারাও মৃত্যুর আগে তাদের আত্মহত্যার ব্যাপার সব সত্য প্রকাশ করে। যদিও তাদের অনেকেই সত্যি সত্যি মরতে চায়। এ ধরনের রোগী তাদের আত্মহত্যার প্রবণতার পরিকল্পনা ব্যক্ত করে।
  • এমন অনেক কারণ রয়েছে কেন রোগী তাদের আত্মহত্যার কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে।
  • আবেগ দ্বারা তাড়িত রোগী তাদের মৃত্যুর চেষ্টা করার আগে তাদের পরিকল্পনা ব্যক্ত করে না। এটা রোগী তার কষ্ট বা আবেগ প্রকাশ করতে সমস্যাবোধ করে।
  • অনেক সময় এটা মনে হয় যে রোগীকে যদি সরাসরি তার আত্মহত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় সে সত্য এবং বিশ্বাসযোগ্য উত্তর দেবে। তাই এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এটা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় নয়। রোগীর মৃত্যুচিন্তার পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ‘আত্মহত্যার সমতা’ নামক প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে।
  • প্রকৃত আত্মহত্যার চিন্তা =বিকৃত মৃত্যু আকাঙক্ষা + সে অনুপাতে কৃত তৎপরতা + পুনরায় বাঁচার আকাঙক্ষা।
এভাবে একটি রোগীর ইচ্ছামৃত্যু তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে-বিকৃত মৃত্যুচিন্তা, মৃত্যুচিন্তাকে কার্যকর করার প্রক্রিয়া এবং পরবর্তীতে বাঁচতে চাওয়া। এই চিন্তা তিনটি বিষয়ের যোগফলের ওপর উপরোক্ত বা যে কোনো ধরনের বিভিন্ন রকম গঠনের ওপর নির্ভর করে।
 
 
বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
মানসিক রোগ শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও জনসচেতনতায় পথিকৃৎ

Syed Rubel ON FACEBOOK
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :