১০টি ‘কুপ্রবৃত্তি’র বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

কোন মন্তব্য নেই

আশিক রাব্বানী
মানুষ সত্য ও সুন্দরের প্রতীক। সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ও সুষ্ঠু লালনই এ সত্য ও সুন্দরের নেপথ্য কথা। সুকুমার প্রবৃত্তি যেমন মানুষকে তাড়িত করে নিয়ে যায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে, তেমনি কিছু কুপ্রবৃত্তিও মানুষকে তাড়িত করে নিয়ে যায় নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক পথে। সমপ্রতি গবেষকরা মানুষের এ ধ্বংসাত্মক পথে পথচলার রহস্য উদঘাটন করতে সচেষ্ট হন। তারা মানুষের ১০টি ধ্বংসাত্মক কাজ বা আচরণের পেছনে লুকায়িত রহস্য উদঘাটন করে তা লাইভ সায়েন্স অনলাইনে প্রকাশ করেন। নিচে পাঠকদের উদ্দেশে এ ১০টি কুপ্রবৃত্তি বা খারাপ আচরণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হলো।
১. ভয় দেখানো
ভয় দেখানো আমাদের এক সহজাত প্রবৃত্তি। ছাত্র-শিক্ষক, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-সন্তান, ভাই-বোন, সহকর্মী, প্রতিবেশী একে অপরকে কারণে-অকারণে ভয় দেখিয়ে চলেন। ভয় দেখানো কুপ্রবৃত্তিরই বহিঃপ্রকাশ। ইভ টিজিং, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, শ্রমিক নির্যাতন ইত্যাদিও কুপ্রবৃত্তি। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, এ ধরনের কু-আচরণের মূল কারণ উচ্ছৃঙ্খলতা এবং এর উৎপত্তি পরিবার থেকেই। তাই এ কুপ্রবৃত্তি দূর করতে প্রয়োজন সুস্থ ও সুশৃঙ্খল পরিবার কাঠামো।
২. মিথ্যা বলা
মিথ্যা বলা মহাপাপ। এটা প্রায় সর্বজনবিদিত। তথাপি মিথ্যার সঙ্গেই যেন আমাদের নিত্য বসতি। এ প্রসঙ্গে ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির গবেষক রবার্ট ফেল্ডম্যান বলেন, শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলেন। তিনি আরো বলেন মিথ্যা বলা সহজ কাজ নয়, সত্য বলার চেয়ে এতে ৩০ ভাগ সময় বেশি লাগে। বর্তমানে ফেসবুক, ই-মেইল ইত্যাদি সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এ মিথ্যা বলা বেশি ছড়াচ্ছে। গবেষকদের মতে, মিথ্যা বলার মূল কারণ কিছু মানসিক সমস্যা।
৩. চুরি করা
চুরি করা শাস্তিযোগ্য একটি বড় অপরাধ। তবু চোর না শোনে ধর্মের কথা। একবার চুরি বিদ্যায় কেউ পারদর্শী হলে সে আর এ পথ থেকে ফিরে আসতে চায় না। এ যেন এক ভয়াল নেশা। কেউ চুরি করে অভাবে, কেউবা করে স্বভাবে। গবেষকরা বলেন, চুরির মূল কারণ বংশগত। এছাড়া অভাব বা প্রয়োজন থেকেও এ কুপ্রবৃত্তির জন্ম হয়ে থাকে।
৪. ধোঁকাবাজি
ধোঁকা বা ফাঁকি দেয়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় এক বেখাপ্পা আচরণ। গবেষণায়  দেখা গেছে, আমেরিকার মতো উন্নত রাষ্ট্রেও শতকরা দশ ভাগ লোক তাদের সহধর্মিণীকেই ধোঁকা দিচ্ছে। এটি একটি সামাজিক অপরাধ। এতে হানাহানি, আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে থাকে। গবেষকরা বলেন, ‘ধোঁকাবাজি নৈতিকভাবে মেনে নেয়ার মতো আচরণ’ এমন বদ্ধমূল ভাবনাই ধোঁকাবাজির জন্ম দিয়ে থাকে।
৫. গল্পবাজি
গালগল্প ও অন্যের সমালোচনা করা প্রায় প্রতিটি মানুষের এক সহজাত কুপ্রবৃত্তি। কিন্তু কেন এ গল্পবাজি। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, বিবর্তনপ্রক্রিয়ার ফলেই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে গালগল্প করেন, একে অন্যের খুঁত বের করেন এবং এতে মানবমনে কোনো দুঃখবোধও জাগে না। এ প্রসঙ্গে গবেষক রবিন ডানবার বলেন, বেবুনদের একে অপরের লোম বেছে দেয়ার মতো আচরণগুলোকে সামাজিক বন্ধন শক্ত করার উপায় বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এ আচরণের আরও বেশি বিবর্তন ঘটেছে। ফলে আমরা একে অপরের সমালোচনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আঠার মতো লেগে থাকতে পারি এবং এ আচরণগুলো সবাই জন্মের পর কোনো না কোনোভাবে অন্যের কাছে শেখে। আর এ গল্পবাজির কারণেই তৈরি হয় সামাজিক বিরোধ, হানাহানি ও অস্থিরতা।
৬. জুয়া বা বাজি ধরা
জুয়া বা বাজি ধরা একটি সামাজিক ব্যাধি। এ ব্যাধিটিও আমাদের জিনগত। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জুয়ার বিষয়টি আমাদের নিউরনের মধ্যেই খেলে বেড়ায়। মাথার ভেতর জিতে নেয়া সম্পর্কিত সার্কিট কোনো কিছু জিতে  নেয়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এ প্রসঙ্গে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুক ক্লার্ক বলেন, ‘কোনো বিশেষ কারণে জুয়া বা বাজিতে হেরে যাওয়া আরও বেশি করে বাজি ধরতে উস্কানি দেয়।’
৭. শরীরে ট্যাটু ও নকশা আঁকা
শরীরে ট্যাটু করা বা নকশা আঁকা একটি পুরনো অভ্যাস। বর্তমানে এটি দিন দিন বেড়েই চলছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, কসমেটিক সার্জারির উন্নয়ন ও দৈহিক সৌন্দর্য প্রকাশের প্রবৃত্তি থেকেই এ বদ অভ্যাসটির বৃদ্ধি ঘটেছে। উল্লেখ্য, একসময় গোত্র-পরিচয়, ধর্মীয় কারণ, পদমর্যাদা ও ক্ষমতার চিহ্ন হিসেবেই এসব কাজ করা হতো।
৮. বদ অভ্যাস
বদ অভ্যাস মানবমনের এক সহজাত প্রবৃত্তি। বলা হয়ে থাকে, মানুষ অভ্যাসের দাস। কিন্তু এর কারণ কী? বিজ্ঞানীরা বলেন, ক্রমাগত বদ অভ্যাস লালন করাটাই বদ অভ্যাস তৈরির প্রধান কারণ। মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অবাধ্যতা, সত্যিকারের ঝুঁকি বুঝতে না পারা এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি ও আসক্তির ফলেই জন্ম হয় বদ অভ্যাসের। মানুষের মধ্যে বিদ্যমান কিছু খারাপ জিন-ই এ জন্য দায়ী।
৯. দুশ্চিন্তা
দুশ্চিন্তা জন্ম দেয় হতাশার, যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো আত্মহত্যা। এছাড়া হার্টের অসুখ-বিসুখ এমনকি ক্যান্সার হওয়ার নেপথ্য কারণ এ দুশ্চিন্তা। কিন্তু  কেন এই দুশ্চিন্তা? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আধুনিক জীবনযাত্রা ও যাপিত জীবনধারণ পদ্ধতিই এর প্রধান কারণ। গবেষকরা বলেন, স্মার্ট ফোন ও ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তির আধুনিক ছোঁয়ায় মানুষ বিশ্রামের সময় হারিয়েছে, হারিয়েছে জীবনের প্রশান্তি ও স্নিগ্ধতা। ফলে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ও হতাশা।
১০. সন্ত্রাস
সন্ত্রাস, হানাহানি, নৈরাজ্য মানব ইতিহাসের চিরায়ত সত্য এবং চলমান ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এর কারণ হিসেবে বলেন, মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং প্রাপ্তির তীব্র অনুভূতি এ দুটি মিলেই জন্ম হয় সন্ত্রাসের। এ প্রসঙ্গে গবেষক ক্রেগ কেনেডি বলেন, সব মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যেই আক্রমণাত্মক আচরণ লক্ষ করা যায়। সঙ্গী, বাসস্থান এবং খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আয়ত্তে আনা ও তা ধরে রাখার জন্যই এ সন্ত্রাস চালানো হয় এবং এ জন্য ডোপামিন নামক মানবদেহের একটি হরমোনই বিশেষভাবে দায়ী। (সূত্র : ইন্টারনেট)
লেখকঃ স্বাস্থ্যবিষয়ক নিবন্ধকার
অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, প্রশাসন ইবনে সিনা ট্রাস্ট

পোস্ট @  মনোজগত 


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।
প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :