বুদ্ধি বাড়াতে আপনার করণীয়

কোন মন্তব্য নেই

অধ্যাপক ডাঃ এএইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি
মস্তিষ্কের দুটো জায়গা ফ্রন্টাল লোব ও টেম্পোরাল লোব মানুষের বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানী ওয়েশলার বুদ্ধির সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে ‘বুদ্ধি হলো মানুষের এমন একটা মানসিক অবস্থা যেখানে সে পরিবেশের সাথে নিজেকে দক্ষ ও সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে। পরিবেশ সম্পর্কে বাস্তব চিন্তা করতে ও উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারে। আমাদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা, পিতা বুদ্ধিমান হলে পুত্র বুদ্ধিমান হয়। আসলে এই কথাটি সত্যি নয়। বুদ্ধি কখনো বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হয় না। বুদ্ধির বিকাশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। তবে বুদ্ধিমান পরিবারে সন্তানদের মধ্যে বুদ্ধির জীন তাদের শরীরে থাকে। পরিবেশের ক্রিয়া সাপেক্ষে সেই শিশু বুদ্ধিমান হয়ে যেতে পারে।
আমরা যারা ছেলেমেয়ের বাবা-মা তারা সবসময় আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে লেখা বা পড়ালেখার রেজাল্ট ভালো করার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করি। দেখবেন স্কুলগুলোর সামনে মা অথবা বাবারা একসাথে হয়ে সর্বোক্ষণ কথা বলছেন। তাদের কথার সাবজেক্ট কিন্তু্তু ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া কিংবা তাদের স্মৃতি অথবা তাদের বুদ্ধিমত্তা।
মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে কি করতে হবে এই প্রতিবেদনে আমরা মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি সম্পর্কে এবার একটু ধারণা দেবার চেষ্টা করি। মানুষের সবচেয়ে শক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাথা। এই মস্তিষ্কের হাড় বা খুলি বেশ শক্ত থাকে এবং এটা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষের মগজকে মাথাতে এই অবস্থা করা হয়েছে। মাথার খুলি বা করোটি কতকগুলো ছোট ছোট হাড়ের টুকরোর সাহায্যে গঠিত। নামগুলো এরকম ফ্রন্টাল বোন, পেরাইটাল বোন, টেম্পোরাল বোন, অক্সিপেটাল বোন ইত্যাদি। এই হাড়গুলো এমনভাবে খাপে খাপে আটকে থাকে যে মনে হয় কেউ যেন এগুলোকে পরসপরের সাথে সেলাই করে রেখেছে। এই বন্ধন বা সন্ধিগুলোকে বলে সেচুরাল জয়েন্ট। নবজাত শিশু বা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাথার এই হাড়গুলো খুবই নরম থাকে। প্রায় আঠারো মাস বয়সে খুলির গঠন সম্পর্ণ হয়। মস্তিষ্ক দুভাগে ভাগ করা থাকে। একটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম আর একটি পেডিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম। এ দুটি অংশের মধ্যে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা যাকে আমরা মগজ বলি তা শরীর ও মনের নিয়ন্ত্রণ কর্তা। মগজটি দুইটি সমান গোলার্ধে বিভক্ত। আমাদের মগজ জেলির মত থলথলে আকারের হয়। এর মধ্যে মগজের কোষ ছাড়াও রয়েছে সক্ষ্ম সক্ষ্ম রক্তনালী। মস্তিষেকর ওপরের অংশের দুই থেকে চার মিলিমিটার পুরো একটি খয়েরি আবরণ আছে এর নাম সেরিব্রাল কটেক্স। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের মস্তিষ্কের ওজন ১৪৫০ গ্রাম থেকে ১৪০০ গ্রাম। এদের মস্তিষ্কের ওজন পুরুষদের ওজনের চেয়ে কম। কিন্তু্তু এই ওজনের তাৎপর্য কোনো রকম বুদ্ধিমত্তার পরিমাপক নয়। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র কোটি কোটি নিউরন বা স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। মস্তিষক বা মাথার খুলির ভেতর যতটুকু পরিমাণ মগজ আছে তাতে প্রায় দশ হাজার মিলিয়ন নিউরন বা স্নায়ুকোষ রয়েছে। এই স্নায়ুকোষ বা নিউরনকে বলা হয় স্নায়ুতন্ত্রের একক। একটি নিউরন-এর দুটি অংশ, গোলাকার অংশটি কোষের দেহ এবং লম্বা অংশটি একসম। আমাদের জন্মের পর কোনো নতুন নিউরনের সৃষ্টি হয় না। তবে নতুন নতুন স্নায়ুসন্ধি সৃষ্টির মাধ্যমে শারীরিক স্নায়ু ব্যবস্থা ও মানসিক কাজ কর্ম অর্থাৎ স্মৃতি শক্তির বিচার বুদ্ধি চিন্তাশীলতা ইত্যাদি বিকশিত হয় ও পরিণত হয়। মস্তিষ্কের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রেফল করোটি ক্ষেত্রফলের তুলনায় অনেক বড় বলে মস্তিষ্কের অনেক ভাঁজ থাকে। ভাঁজ করা অংশটিকে বলে জায়রাই আর নিচু ঢেউ খেলানো অংশটিকে বলে সালসাই। করোটির মধ্যে থেকে মস্তিষ্ককে উন্মুক্ত করলে ধসর ও সাদা দুই ধরনের অঞ্চল দেখা যায়। ধসর বা খয়েরি ধরনের অংশকে বলে গ্রে-ম্যাটার। মস্তিষ্কে যে কোষগুলো থাকে সেই কোটি কোটি কোষের দেহ একসাথে হয়ে এর আকার ধসর বর্ণ হয়। ধারণা করা হয় গ্রে মিটারের সাথে মানুষের বুদ্ধির কিছুটা সম্পর্ক আছে। মস্তিষ্কের তিনটি প্রধান অংশ গুরু মস্তিষ্ক বা অগ্র মস্তিষ্ক মধ্য মস্তিষ্ক ও পশ্চাৎ মস্তিষ্ক বা লঘু মস্তিষ্ক। এদের মধ্যে মধ্যমস্তিষ্ক ও পশ্চাৎ মস্তিষ্ক মানুষের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালিত করে। মানুষের মস্তিষ্কের প্রধান অংশ গুরু মস্তিষ্কবা অগ্র মস্তিষ্ক সমস্ত বিচার, বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রেম, ভালোবাসা ইত্যাদি মানসিক শক্তির কেন্দ্র। মানুষের মন যাকে বলা হয় তা আসলে মানুষের মস্তিষ্কের সামনের দিকে থাকে। প্রধান মস্তিষ্কের বা গুরু মস্তিষ্কের মধ্যরেখার বরাবর একটি ভাঁজ-এটিকে বাম ও ডান দুই ভাগে ভাগ করে। প্রতিটি ভাগে আবার ফ্রন্টাল, পেরাইটাল, অক্সিপিটাল, লিমবিক ইত্যাদি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে ফ্রন্টাল লোবের সামনের অংশ লিম্বিক লোব বুদ্ধি, স্মৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখে। অনেকে ধারণা করেন যাদের মাথা বড় তাদের বুদ্ধি বেশি আসলে ব্যাপারটা সত্য নয়। মাথা বড় হলে মস্তিষ্কের পরিমাণও বেড়ে যাবে তা কিন্তু্তু সত্য নয়, তবে মস্তিষ্কের ব্রেনের গ্রে ম্যাটার-এর অংশে জায়রাই বেশি থাকলে বুদ্ধি বেশি হয়। কোঁচকানো অংশটির নাম জায়রাই। অসুখ বা অন্য কারণে ভাঁজ করা অংশ বা জায়রাই কমে গেলে বুদ্ধি কমে যেতে থাকে। মাথা বড় হলে যে জায়রাই বেশি থাকবে তা কিন্তু্তু নয়। বংশগত কারণেও কারো কারো মাথা একটু বড় হয় তবে এদের বুদ্ধি স্বাভাবিক থাকে। হাইড্রোসেফালাস নামে একটি রোগে মাথা বড় হয়। এই রোগে মগজে পানি জমে যায়। অনেক সময় বিভিন্ন রোগে মাথা বড় হতে পারে। অনেকের ধারণা যারা খেলাধুলা বা ব্যায়াম করেন তাদের বুদ্ধি কম হয় আবার যারা সারাদিন বইপত্র নিয়ে পড়েন তাদের বুদ্ধি বেশি হয়। ব্যায়াম বা খেলাধুলায় শরীরের ক্ষিপ্রতা বাড়ে এর নির্দেশ কিন্তু্তু মস্তিষ্কই দেয়। মস্তিষ্ককে সুস্থ সবল ও কার্যক্ষম রাখতে প্রতি মিনিটে প্রতি একশ গ্রাম ব্রেন টিসুতে পঞ্চান্ন মিলিমিটার রক্ত, ৫.৫ মিলিগ্রাম গস্নুকোজ ও ৩.৫ মিলিমিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গেই নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের এই চাহিদা পূরণ করতে পারে। সুতরাং শরীর ও মন ভালো রাখতে এবং পরোক্ষভাবে বুদ্ধির সঠিক বিকাশে ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন ভোরবেলা খোলা হাওয়ায়, রাস্তায় বা মাঠে আধ ঘন্টা হাঁটার অভ্যাস করা ভালো। পরামর্শ মত যোগব্যায়ামও করা যেতে পারে। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট নির্জন ঘরে মন স্থির করে চুপচাপ বসে থাকুন। এতে বুদ্ধি বাড়ে। আমাদের অনেকের ধারণা বিশেষ কিছু টনিক বা ভিটামিন খেলে স্মৃতি শক্তি বা বুদ্ধি বাড়ে। পৃথিবীতে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু্তু কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। স্মৃতিবর্ধক কোনো ওষুধ আজও বেরোয়নি। স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্কের কোষ সত্তর শতাংশ গঠিত হয় পানি দিয়ে আর বাকি ত্রিশ শতাংশ গঠিত হয় কঠিন পদার্থ দিয়ে। এই ত্রিশ শতাংশ প্রোটিন যেমন গেস্নাবিউলিন নিউকিলিওপ্রোটিন ইত্যাদি দিয়ে ন্যাচারাল ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট সোডিয়াম ক্যালসিয়ামযুক্ত অজৈব লবণ ভিটামিন ও মিনারেল দিয়ে, তাই সঠিক সময় সুষম খাবার খাওয়া ভালো। অল্প পরিমাণে ঘি বা মাখন, প্রচুর পরিমাণে ফলমল, শাকসব্জি, মাছ, ডিম, মাংস, ছানা, মিষ্টি ইত্যাদি সবই খাওয়া প্রয়োজন।
শিশুদের বুদ্ধি বিকাশ ঘটাবেন কি করে
শিশুদের শরীর বিকাশ যেমন প্রতিদিন হয়, তেমনি প্রতিদিনই তাদের বুদ্ধিও বাড়ে। আমরা শিশুর জন্মের পর থেকেই নানা স্তরে বিভিন্নরূপে নানা ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া দেখি। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ এর জন্য প্রাথমিকভাবে অভিভাবকদের সাধারণ কিছু চেষ্টা করা প্রয়োজন। যার প্রধান হাতিয়ার খেলনা। বয়সের তারতম্য অনুযায়ী খেলনারও রূপ পরিবর্তন হয় এই ব্যাপারে আরো একটি জিনিস প্রয়োজন তা হচ্ছে বাড়ির পরিবেশ। এই পরিবেশ আদর্শ হওয়া বাঞ্ছনীয় আপনার নিজের ধারণা সম্পর্কে ভাবুন সর্বদা ধরে নেবেন না যে, একজন বুদ্ধিমান শিশু নিজে নিজেই ভাবনা চিন্তা করবে আসলে অনেক ক্ষেত্রেই একজন বুদ্ধিমান মানুষও একটু আলসে প্রকৃতির হন। বুদ্ধিমান শিশুদের ভাবনার সুযোগ করে দেয়া দরকার। অতিদ্রুত শুরু করুন। শিশুদের ভাবানো যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন ততোই ভালো। নানা ধরনের পাজল, খেলা ইত্যাদি ছাড়াও শিশুদের ভাবনা জাগানোর বই কিনতে পাওয়া যায়। শিশুদের ভাবনার সুযোগ দিন ওদেরকে যাদুঘরে নিয়ে যান। শিশুদের ভালো লাগবে এমন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ওদের পাশে বসে দেখুন। এরপর যাদুঘরে কি দেখলেন টিভির অনুষ্ঠানে কি হলো এ বিষয়ে আলোচনা করুন। ওদেরকে প্রশ্ন করুন ওদের ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করুন। ওদের কল্পনাশক্তি বাড়িয়ে তুলুন। পুরো পরিবার যুক্ত হন, ভালো ভাবনা ছোট ছোট দলে বাড়ে ভালো। অবশ্যই আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাই পুরো পরিবার যদি একসঙ্গে বসে নানা কথা বলেন পরসপরের কথা শোনেন, ভাববেন তাহলেই ওদের ভাববার অবকাশ ঘটে। জোক্‌স, বলুন যে কোনো ধরনের মজা, হাসি ঠাট্টা বাচ্চাদের অন্যভাবে ভাবতে শেখায়। এই মজার মাধ্যমে তারা কোনো একটা পরিস্থিতি বা ঘটনাকে অন্যভাবেও ভাবতে শেখে। যদি বুঝে থাকেন শিশুর বিকাশের জন্য আপনার বাড়িতে একটা পরিবেশ এবং নিয়ম চালাতে সক্ষম হয়েছেন তাহলে দ্বিতীয় ধাপের দিকে এগোতে পারেন। সব দিকেই দৃষ্টি দিন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাধান্য দিন বাচ্চাদের। ভাবনার ক্ষেত্রে বাড়ানোর জন্য প্রতি ক্ষেত্রেও দৃষ্টি দিন। সূত্র এবং নকশা বের করুন। কোনো ঘটনা বা গল্প কিভাবে আগের ঘটনার সাথে যুক্ত কিংবা যে কোনো সমস্যার সূত্র কি ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে যদি অহরহ প্রশ্ন তোলা যায় তাহলে শিশুর মনে ভাবনার বিকাশ ঘটে। না ভাঙলেও জুড়তে দিন, তাদের কল্পনাকে বাড়তে দিন। অদ্ভুত প্রশ্ন করলেও আপনি ভেবে চিন্তে উত্তর দিন, দেখবেন অনেক আবিষকারকের জন্ম হবে। অপ্রচলিত প্রশ্ন করুন, শিশুদের কল্পনা শক্তি বিকাশের জন্য তাদের মাঝে মাঝে কিছু অপ্রচলিত প্রশ্ন করুন যেমন যদি শহরের সব লোক তাদের দেশের বাড়িতে চলে যায় তাহলে কি হবে ইত্যাদি। যা মনে করছেন সেটা বলুন, সঠিক শব্দ বা অর্থ প্রয়োগ করতে শেখান। আপনার বাচ্চাটি যার সাথে টেলিফোনে কথা বলল তাকে জিজ্ঞেস করুন সে তার বন্ধু না পরিচিত। এই জাতীয় প্রশ্ন বাচ্চার বুদ্ধিকে শাণিত করে। অন্যদের মতের মল্য দিন। ধরুন আপনার সন্তান রেগে গিয়ে কাউকে গাধা বলল, সঙ্গে সঙ্গে তার কোনো ভাই-বোন বা বন্ধুকে জিজ্ঞেস করুন আসলে বাচ্চাটি কি রকম তখন তারা অন্য মত দেবে। আর তখনি বাচ্চা এ বিষয়ে তার মত পাল্টাবে। পুরো ব্যাপারটি অন্যভাবে ভাবতে শিখবে। তাদের লিখতে দিন সে কি ভাবছে সেটা তাকে লিখতে বলুন। তার পক্ষে তো ভালো হবেই আপনার পক্ষেও জিনিসটা খুব সুবিধার হবে। কারণ প্রশংসা করুন কিংবা ঠিক করে দিন লিখিত বস্তু সামনে থাকলে সেটা সুবিধার হয়। ভবিষ্যতের কথা সবসময় তার পরে কি হবে এ বিষয়ে তাকে ভাবতে শেখান। সবসময় বাচ্চাদের প্রশ্ন করুন তারপরে কি? সবসময় উৎসাহ দিন, শিশুদের সবসময় উৎসাহ দেয়া দরকার। তবে তাদের আত্মবিশ্বাসের জন্ম হয়-আমি জানি তুটি এটা পারবে, তারপরে হয়ত বললেন জানতাম তুমি পারবে এই আত্মবিশ্বাস জন্মানোর জন্য একেবারে শৈশব থেকে চোখে রাখা উচিত। ছোট ছোট সাফল্য ও অভিনন্দন তাকে বড় লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। কোনো সাফল্যই অভিনন্দন জানানোর জন্য ক্ষুদ্র নয় তবে তার অর্থ এই নয় যে সর্বদা মিথ্যা কথা বলতে হবে কখনো কাজে সফল না হলে তাকে সমালোচনা করতে হবে, আবিষ্কার করতে দেন। শিশুদের অনেক খেলাধুলার মাঝে তারা এমন নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে পারে যে, এটা তাদের বৃহত্তর ক্ষেত্রে এগোনোর জন্য সুবিধা হয়। সে আবিষকার যত ছোটই হোক না কেন, সাফল্যে নজর দিন। আপনার শিশুটি যত ছোটই হোক না কেন, তার ছোট খাট সাফল্যকেও মল্য দিন তা না হলে তার জীবনে দ্বন্দ্ব ফিরে আসবে কোনো লক্ষ্যেই সে পৌঁছাতে পারবে না। তার মন সর্বদা আশঙ্কাগ্রস্ত হবে ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ওদের স্বপ্নকে জানতে হবে, তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নগুলো শুনে নিয়ে পুখানুপুখভাবে বিচার করে তাদের আগ্রহকে প্রধান্য দিন। নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে দিন। তাদের কোনো সমস্যা থাকলে তাদেরই জিজ্ঞেস করুন কিভাবে তারা সে সমাধান করবে। সবসময় খেয়াল রাখবেন তাদের সমস্যা তারা নিজেরা যেন সমাধান করতে পারে। তবে কিছুটা সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে প্রথম তিনটে ধাপ। প্রথম ধাপ সবসময় চেষ্টা করে যেতে হবে দ্বিতীয় ধাপ সর্বদা নতুনভাবে জীবনকে ভাবতে হবে তৃতীয় ধাপ নিয়মানুবর্তিতা ও একমুখিতাকে জীবনে প্রাধান্য দিতে হবে। এই তিনটা জিনিস যদি আপনার শিশুকে বোঝাতে পারেন তাহলেই সে আগামী দিনের সফল নাগরিক হতে পারবে।
মানসিক ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়ামে যেমন শরীরে সুঠাম শ্রী আসে, তেমনি এমন কিছু ব্যায়াম আছে যা ধারালো করে বুদ্ধি, সতেজ করে মস্তিষ্কের কাজকর্ম। এখানে বলা পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে মানসিক শক্তি যেমন বাড়বে তেমনই দৈনিক হতাশা কাটিয়ে মন ভরে উঠবে স্ফুর্তিতে। প্রত্যেক ব্যায়াম পদ্ধতি যেমন শুরু হয় ওয়ার্ম আপ দিয়ে, মাঝে থাকে বলবর্ধক অংশ ও শেষ হয় বিশ্রাম দিয়ে-এখানেও ঠিক তাই রয়েছে।
ওয়ার্ম-আপ
এক্সারসাইজের মল অংশে প্রবেশের আগে ওয়ার্ম-আপ করলে সতেজ হবে মন, সহজ হবে বাকি ব্যায়ামগুলো করা। এটি করতে হবে ঘুম থেকে ওঠার পরে। সময় লাগবে পাঁচ থেকে দশ মিনিট। এটি করতে হবে শুয়ে বা আরাম করে বসে, এই এক্সারসাইজের সাতটি ধাপই জোরে আওয়াজ করে বলতে হবে।
স্তর-১: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ১০০ থেকে এক অবধি গুনুন। অর্থাৎ এইভাবে ১০০, ৯৯, ৯৮, ৯৭, ৯৬...।
স্তর-২: বর্ণমালার প্রত্যেকটি অক্ষর সেই অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া শব্দ সমেত উচ্চারণ করুন যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব (যেমন অ, অন্য, আ-এ আকন্দ, ই- ইঁদুর ইত্যাদি)। যে অক্ষর দিয়ে শব্দ মনে করতে পারবেন না ৩০ সেকেন্ড-এর মধ্যে সেটি বাদ দিয়ে যান।
স্তর-৩: যত তাড়াতাড়ি পারেন ২০ জন পুরুষের নাম উচ্চারণ করুন তাদের নম্বরসহ যেমন ১ কানাই ২ অলক ৩ শ্যামল...।
স্তর-৪: ওই একইভাবে ২০ জন মহিলার নাম উচ্চারণ করুন।
স্তর-৫: যত তাড়াতাড়ি পারেন নম্বরসহ কুড়ি রকমের খাবারের নাম উচ্চারণ করুন যেমন ১ বিরিয়ানি ২ পোলাও ৩ কলা ৪ কেক ৫ রুটি ইত্যাদি...।
স্তর-৬: যে কোনো একটি অক্ষর বেছে নিন বর্ণমালা থেকে। সেটি দিয়ে শুরু হচ্ছে এমন কুড়িটি শব্দ উচ্চারণ করুন তাদের নম্বরসহ। যেমন যদি ব শব্দটি বাছেন তাহলে বলবেন ১ বোমা ২ বন্ধু ৩ বম্বে ৪ বোঝা ইত্যাদি...।
স্তর-৭: এতক্ষণ যদি চোখ খুলে এক্সারসাইজ করে থাকেন তাহলে এবার চোখ বন্ধ করে নিন। চোখ বন্ধ করে কুড়ি গুনুন, চোখ খুলে ফেলুন। শেষ হল আপনার ওয়ার্ম আপের পালা। তীক্ষ মনোযোগ লাগে এমন কোনো কাজে বসার আগে নিম্নলিখিত পদ্ধতিটি অভ্যাস করতে পারেন। এই পদ্ধতিটি অনুশীলন করতে সময় লাগবে পাঁচ মিনিট। এটি বসে করতে হবে, দরকার হবে একটি কলম, কিছুটা কাগজ ও একটি স্টপ ওয়াচ বা টাইমার ও একটি এ্যালার্ম ক্লক।
স্তর-১: যে কোনো একটি খবরের কাগজের বা বইয়ের কিছুটা অংশ পড়ূন, তাতে সর্ব প্রথম যে বিশেষ্যটি আপনার চোখে পড়বে সেটি বেছে নিন। ধরুন আপনার চোখে পড়ল প্রথম পাতার ‘বরফ’ নামক বিশেষ্যটি।
স্তর-২: কাগজ কলম নিয়ে বসুন, পাঁচ মিনিট বাদে যাতে বাজে সেইভাবে টাইমারটি সেট করুন।
স্তর-৩: কাগজের ওপরে যে বিশেষ্যটি আপনি বেছেছেন সেটি লিখুন। তারপর পাঁচ মিনিট ধরে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এমন বাগধারা, বাক্যাংশ অথবা বাক্য তৈরি করে যান যতটা পারেন। যেমন বরফ গলা পানি, রক্ত জমে বরফ হয়ে গেল...। পাঁচ মিনিটের এ্যালার্ম বাজলে দেখুন কটা করতে পারলেন, তারপর চোখ বন্ধ করে কুড়ি গুনুন। মন দিন কাজে।
চিন্তা শক্তির প্রসার বাড়াতে
এই পদ্ধতিতে চিন্তার প্রসার বাড়াতে আপনার সময় লাগবে দশ মিনিট। একই বই, পত্রিকা অথবা খবরের কাগজের দরকার পড়বে এটি করতে। বই অথবা কাগজ নিয়ে সেটিকে উল্টো করে ধরে ১০ মিনিট চেঁচিয়ে পড়ূন। দেখুন অক্ষরগুলো উল্টো থাকার দরুন আপনার পড়তে বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে।


আমার ফেসবুক/MY FACEBOOK

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :