স্বাস্থ্য কথার নানা বিষয় আরিফ (মাহমুদ সাহাবুল)

কোন মন্তব্য নেই
আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু না কিছু সাধারণ জ্ঞান থাকা দরকার। কারণ এই জ্ঞান দিয়ে আমরা মেডিকেল সাইন্সের সাথে ধীরে ধীরে পরিচিত হতে পারবো। পারবো বুঝতে বিভিন্ন রকম রোগের লুক্কায়িত রহস্য। কথায় আছে- যত জানবো ততই বুঝতে পারবো-আর যতই বুঝতে পারবো ততই সচেতন হওয়ার চেষ্টা চালাতে উৎসাহবোধ করবো। যে উৎসাহ এক সময় আমাদের নিজেদেরই উপকার বয়ে নিয়ে আসবে। এসব কথা সামনে রেখে আমাদের সুপ্রিয় বিজ্ঞ পাঠক-পাঠিকাদের জন্য ‘স্বাস্থ্য তথ্যের টুকিটাকি’ বিষয়ক ধারাবাহিক লেখা উপহার দিলাম। উপকৃত হলে জানানোর আমন্ত্রণ রইল।
বিষণ্নতায় ভুগে কতজন?
মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় নানা কারণে বিষণ্নতায় ভুগে থাকে। শতকরা ১৫ ভাগ লোক বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে ১ জন লোক বিষণ্নতার শিকার হন। মহিলারা প্রতি ৪ জনে ১ জন এবং পুরুষরা প্রতি ১০ জনে ১ জন বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। মাত্র এক তৃতীয়াংশ রোগী চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে আসেন। আমেরিকায় প্রতি ১ মিনিটে ১ জন করে বিষণ্নতার রোগী সুইসাইট করার চেষ্টা চালায়। আর প্রতি ২৪ মিনিটে ১ জন বিষণ্ন রোগী আত্মহত্যায় সফল হন।
প্রতি বছর প্রায় ৫০০০০০ (পাঁচ লক্ষ) আমেরিকান কিশোর কিশোরী আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালায়। বিষণ্নতা রোগে ভোগার প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে প্রায় ৩ গুণ বেশি। বিষণ্নতার কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫৬৭ কোটি কর্মঘন্টা নষ্ট হয়ে থাকে। যা কি না দেশের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ।
আগুনে পোড়া যন্ত্রণা কমাতে
আগুনে পোড়ার ক্ষতে যথা শিঘ্র সম্ভব আয়োডিন মলম লাগাতে হয়। ১৫ মিনিট পরে তা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হয়- ফলে এতে করে ব্যথা কমে আসে এবং রক্তিমাভা ও ফোস্কা দূর হতে শুরুকরে। তবে খোলা বিস্তৃত ক্ষতে অথবা যারা আয়োডিনের প্রতি সপর্শকাতর থাকে তাদের বেলায় কোনোভাবেই এই মলম ব্যবহার করা যাবে না।
ঘুম কেমোথেরাপির কষ্ট ও ক্ষতি কমাতে পারে
ক্যান্সার হলো ভয়ঙ্কর এক মরণ ব্যাধি। যার কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তবু চলছে দিনরাত নিরন্তর গবেষণা। এই রোগের অন্তিম মুহর্তে রোগী অমানুষিক কষ্টের সমমুখীন হন। আরোগ্যের উপায় বলতে কেবলমাত্র শেষ সম্বল হল কেমোথেরাপি। কিন্তু্তু এই উপশম প্রণালী এত বেশি কষ্টকর যা কি না সহ্য করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। যেন এর থেকে মৃত্যু ভালো এমন মনে হয়। স্বভাবতই বিজ্ঞানীরা বহু দিন থেকে চেষ্টা করছেন ক্যান্সারকে রুখতে কেমোথেরাপিকে সহনশীল করে তুলতে। এক্ষেত্রে যে শুধু সহ্য শক্তির কথাই উঠছে তা-ই নয়। কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত মেডিসিন বা রাসায়নিক পদার্থগুলোরও অনেক সময় সাইডএ্যাফেক্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর ক্ষতি করে। রোগীর জীবনী শক্তি কমিয়ে দেয়। কাজেই এই ধরনের ড্রাগস ক্যান্সার রোগীর পক্ষে কম ক্ষতিকর করার চেষ্টাও চলছে।
তবে এ চেষ্টাতেই কিন্তু্তু শেষ নয়। কাজও উদ্যমের সাথে এগিয়ে গেছে অনেকটা। পরীক্ষাগারে নানা রকম পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, ঘুমন্ত অবস্থায় ক্যান্সার রোগীর ওপর কেমোথেরাপি সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং তা সম্ভব হলে কেমোথেরাপি হতে আরো সহজ, আরো সরল এবং কম কষ্টকর। তাছাড়া ঘুমের মধ্যে মানব দেহে কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত সাইটোটক্সিক ড্রাগ প্রবেশ করলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না বললেই চলে। কাজেই এতে করে ক্যান্সার রোগীর দেহের ক্ষতি হয় লক্ষণীয়ভাবে কম।
যৌন রোগ থেকে মহিলাদের আত্মরক্ষার নতুন উপায়
পুরুষরা তাদের নিজেদেরকে নানা রকম যৌন ব্যাধি যেমন-এইডস থেকে রক্ষা করতে পারেন কেবলমাত্র সফলভাবে ‘কনডম’ ব্যবহার করে। কিন্তু্তু নারীদের বেলায় কি এমন কোনো কিছু আছে? এর উত্তরে বলা যায়, বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রকার যোনির জেল বা ক্রিম আবিষকার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন যা কি না মহিলাদেরকে যে কোনো ধরনের যৌন সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে।
এই যোনির জেল বা ক্রিম যৌন সহবাসের সময় যোনিতে, যোনি পথে এবং সার্ভিক্সে সুন্দরভাবে মেখে নিতে হবে-যা কি না এন্টিপ্র্যাগনেন্সি ফোমের মত করে বীর্যকে নারীর যোনিতে প্রবেশ করার পথেই আটকে মেরে ফেলবে, ঠিক তেমনিভাবে ফোমের মত কাজ করবে। বীর্য নাশক বা সপার্মিসাইড যেমন-ননক্সিনোল-৯, এটিও এইডস এবং অন্যান্য যৌন সংক্রামক রোগের জীবাণুকে ল্যাব কনডিশনে নষ্ট করে দিতে পারে কিন্তু্তু তা সবসময়ই কার্যকর নয়। এর কিছু কিছু উপাদান তো আবার যোনি গাত্রের কোমল টিস্যুকে নষ্ট করে দেয় এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াকে সেখানে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়,  কাজেই বিজ্ঞানীদের সামনে এখন এমন এক চ্যালেঞ্জ তারা বের করতে চেষ্টা করছেন যা এক সাথে সবরকমের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াকে ধরে ধরে ধ্বংস করবে এবং সাথে সাথে হার্পিস সিম্পেলেক্স, সিফিলিস, গনোরিয়া এবং মরণ ব্যাধি এইডসকেও নষ্ট করে দিতে সক্ষম হবে।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার
শরীরে ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে কতগুলো আনুষঙ্গিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পারোক্ষভাবে বিভিন্ন ক্যান্সারের সূত্রপাতের সঙ্গে দায়ী করা হয়। মহিলাদের জরায়ু মুখের ক্যান্সার উৎপাদনে যেসব কারণ সাধারণভাবে ভূমিকা পালন করে সেগুলো হল-
  • অল্প বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ও অল্প বয়সেই সহবাসের সচনা এবং অনিয়মিত ও বাধাহীন উচ্ছৃখল যৌনাচার।
  • ঘন ঘন সন্তানের জন্ম
  • পুরুষাঙ্গে স্মেগমার প্রভাব।
  • বিভিন্ন প্রকার ভাইরাসজনিত কারণে কোষের পরিবর্তন।
  • অর্থাভাব ও মাসিককালীন স্বাস্থ্যবিধি পালনে অবহেলা। আমাদের দেশে মেয়েদের যৌনাঙ্গের ক্যান্সারের মধ্যে প্রায় ৫০-৬০% ক্ষেত্রে জরায়ু মুখের ক্যান্সার দেখা যায়। এই রোগ সাধারণত দরিদ্র গ্রামবাসী, বস্তিবাসী এবং যাদের গৃহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো নয় এবং যারা অল্প বয়সেই যৌন সম্ভোগে জড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।
ভেরিক্যাজ ভ্যাইন ডিজিজ
দেহের শিরা ফুলে বেকে গেলে তাকে ভেরিক্যাজ ভ্যাইন বা শিরা বলে। এগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই দারুণ যন্ত্রণাদায়ক হয়। বয়স্ক লোকদের আর গর্ভবতী এবং বহু সন্তানের জননীদের সাধারণত এই রোগ দেখা যায়। ভেরিক্যাজ ভ্যাইন বা শিরার তেমন কোনো ওষুধ নেই, তবে কতগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যায় এগুলো হলো-
  • বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা পা ঝুলিয়ে বসে থাকা চলবে না। যদি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় না থাকে তবে সেক্ষেত্রে আধ ঘন্টা বা ৩০ মিনিট পরপর কয়েক মিনিটের জন্য দু’পা উঁচু করে শুয়ে থাকার চেষ্টা করবেন। তাছাড়া ঘুমানোর সময় পা দুটো উঁচুতে তুলে রাখবেন, যেমন বালিশের ওপর রাখবেন অথবা ছোট কোনো পিড়ি বা খাটের পায়ের উপরের দিকটাতেও রাখা যেতে পারে।
  •  শিরা চেপে ধরে রাখার জন্য ইলাস্টিক বা ক্রেপূবেন্ডেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে কিন্তু্তু এগুলো খুলে ফেলতে ভুলবেন না যেন।
আর এভাবে শিরার নিয়মিত যত্ন নিলে গুলফের পুরনো ক্ষত বা ভেরিক্যাজ ভ্যাইন ও ভেরিক্যাজ আলসার এড়ানো সম্ভব হবে।
কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যা প্রবণতা
নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর পরে কিছু সংখ্যক কিশোর-কিশোরী দেশে আত্মহত্যা করার এরকম খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা গিয়েছিল-যা নিতান্তই বেদনাময় ঘটনা ছিল। কিশোর আত্মহত্যা বিশ্বব্যাপী দৈনন্দিন বেড়েই চলেছে। ১৫-২৪ বছর বয়সে আমেরিকায় আত্মহত্যা মৃত্যুর তৃতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৫-১৫ বছর বয়সে আত্মহত্ম্যা মৃত্যুর ৬ষ্ঠ কারণ। কিশোর কিশোরীদের আবেগের প্রচন্ডতা, মানসিক চাপ, টেনশন, নিজেকে বোঝার অক্ষমতা, আর্থিক অসচ্ছলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো কিশোর কিশোরীদের মাঝে প্রচন্ড ক্রিয়াশীল। কতক ক্ষেত্রে বাবা-মার বিচ্ছেদ, সৎ পিতা বা মাতা, নতুন পরিবারে গমন, নতুন চাকরি ইত্যাদিও কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত শিশু
এটি একটি জটিল মানসিক ব্যাধি। শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই রোগ হলে সহজে তা ভালো হতে চায় না। শিশু-কিশোরদের সিজোফ্রেনিয়া চেনার উপায় হলো-
অস্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনা স্বপ্নকে সত্যি থেকে আলাদা করতে না পারা, অলীক বস্তু দেখা, কানে গায়েবী আওয়াজ শোনা, চিন্তা ধারার অসংলগ্নতা, এলোমেলো ব্যবহার, নিজেকে তার বয়সের চেয়ে ছোট ভেবে শিশু সুলভ আচরণ করা, অত্যধিক ভয় পাওয়া, লোকজন তার পেছনে লেগেছে এরকম ভাবা, অন্তর্মুখী স্বভাবের হওয়া, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সঠিক ব্যবহার করতে না পারা। এগুলো অবশ্যই পিতা-মাতার লক্ষ্য রাখা দরকার এবং এমনটি হলে তাৎক্ষণিকভাবে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেয়া উচিত।
ধর্মবিচ্যুতি
কোনো কোনো ব্যক্তি ধর্ম সম্পর্কে জানতে জানতে এমন এক অবস্থায় উপনীত হন যাতে করে তার ধর্ম বিশ্বাসে ফাটল ধরে এবং ধর্ম বিচ্যুতির দিকে এগিয়ে যান। তার এই রকম মানসিক অবস্থাটা লজ্জা বা ভয়ে কারো কাছে প্রকাশ করতে পারে না। এতে করে সেই বক্তি মানসিক কষ্ট ও দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন। তাই এই রকম ব্যক্তির উচিত হবে ধর্ম বিষয়ে প্রচুর লেখা পড়া করা এবং প্রয়োজনবোধে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেয়া।
গড়িমসি করার অভ্যাস
কিছু কিছু অভ্যাস আছে যা সময়ের সাথে সাথে চলে যায়। আবার কিছু কিছু অভ্যাস আছে যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্তও থেকে যায়। কাজে কর্মে গড়িমসি করার প্রধান কারণ হচ্ছে সময়। কাজে কর্মে গড়িমসি করার জন্য আমরা নানা রকম অজুহাত মনে মনে দাঁড় করাই। অযৌক্তিক প্রবণতা, আত্মদ্বন্দ্ব বা নিজেকে বদলে ফেলার ভয় অথবা সময়ের অপব্যবহার করি এগুলো ঐ গড়িমসিকে ঢাকা দেয়ার কারণ। জীবনকে উপভোগ করার জন্য এবং গড়িমসির অভ্যাস কমানোর কিছু উপায় হলো-
  •  কিছু কিছু গড়িমসি যে কোনো মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম-এটা মেনে নেয়া।
  •  প্রতিদিন ২-৩টা কাজ ঠিক সময়ে করার চেষ্টা করা।
  •  প্রতিদিন কাজের লিস্টের সবগুলো কাজ না হলে বা না করতে পারলে নিজেকে অযথা দোষী না ভাবা।
  •  প্রতিটি কাজ যতদর সম্ভব ভালোভাবে সমাধা করার চেষ্টা করা।
  •  ব্যস্ততার মধ্যে কিছু সময় খেলাধুলা ও আমোদ প্রমোদ এবং বিনোদনের জন্য রাখার ব্যবস্থা করা। এতে করে পুনরায় উদ্যম ফিরে পাওয়া যায়। মোট কথা হল, খাওয়া-পড়া, লেখা-পড়া, কাজ কর্ম ইত্যাদি বিষয়গুলো আনন্দের সাথে করা হলে আচার আচরণ ও ব্যবহারে গড়িমসির প্রাধান্যতা কমে আসবে।
মাথা কি?
ঘাড়ের উপরের অংশ হল মাথা। ঘাড়ের অংশ বাদ দিলে গোলাকার যে বস্তুটি থাকে সেটিই হচ্ছে মাথা। মাথায় থাকে দুটি চোখ, দুটি কান, নাক, মুখ ও দু’পাটি দাঁত। এছাড়া মাথার এনাটমিতে পাওয়া যায় মাংসপেশি, হাড়, মেনিনজেস এবং শেষে মগজ। মেনিনজেস আবার ৩ ভাগে বিভক্ত- একটি হল ডুরা, আকেরটি এ্যারাকনয়েড ও অন্যটি পায়া ম্যাটার। ডুরা ম্যাটার হাড়ের ভেতরের অংশে লেগে থাকে, ডুরা এবং এ্যারাকনয়েড ম্যাটার এর মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। ফাঁকা জায়গাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের তরল পদার্থ থাকে যাতে করে ভেতরে মগজের অংশে নড়াচড়ায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত না হয় কিংবা বাইরের চাপে মল অংশের কোনোরূপ ক্ষতিও হয় না। মগজকে আবার সেরিব্রাল হেমিস্কেয়ার বা সেরিব্রাল করটেক্স ও সেরিব্রালাম নামে ভাগ করা হয়।
করটেক্সে বিভিন্ন রকম মেডিকেল ভাগ রয়েছে। করটেক্স থেকে স্নায়তন্ত্র উৎপত্তি হয়। সেখান থেকে নিউরন এর ফাইবার ধরে কোটি কোটি স্নায়ুতন্ত্র মিলে হয় সপাইনাল কর্ড। কর্ডের কাজ হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে সংবেদনশীল অনুভূতি মাথায় পৌঁছে দেয়া আর মাথায় বা মগজে যে প্রতিক্রিয়া হয় তা বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছে দেয়া, একে বলে রিফ্লেক্স। মানুষের মাথা কাজ করে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মত।
কিছুক্ষণ এক নাগাড়ে পড়লে মাথাব্যথা হয় কেন?
চোখের কাজের চাপ থাকলে তাতে করে মাথাব্যথা করতে পারে। তবে কম আলোতে লেখা-পড়া করলে বা অনেক সময় ধরে একটানা পড়তে থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে। আসলে চোখে তা ব্যথা হয় না, ব্যথা হয় চোখের পাশের ছোট ছোট মাংসপেশিগুলোতে। এই মাংসপেশিগুলো আমাদের চোখ নাড়া চড়ায় সাহায্য করে, চোখের মণি ছোট বড় করতে সাহায্য করে, তাই চোখের চাপ কমানোর জন্য উপযুক্ত আলাতে লেখা পড়া করা উচিত। প্রতি ঘন্টা পড়ার মাঝে অন্তত ৫ মিনিট বিশ্রাম নেয়া দরকার।
চোখের চাপে মাথাব্যথা শুরুহলে ঘরের আলো হাল্কা করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, অথবা কম আলোকিত রুমে যান। দু’চোখের উপর দু’হাত দিয়ে ঢাকুন। ঢাকা অবস্থায় চোখ খুলুন, এরকম ৩০ সেকেন্ড রাখুন। চোখ বন্ধ করুন, হাত দুটো নামান, তার পর আস্তে আস্তে চোখ খুলুন। এভাবে কয়েকবার করলে চোখজনিত মাথাব্যথা লাঘব হয়ে আসবে।
কোলন ক্যান্সার
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া এবং পায়খানার আকার, রং এবং বিভিন্ন পরিবর্তনগত উপসর্গগুলো হলো কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ। আমেরিকাতে এটি একটি তৃতীয় ঝুঁকিপূর্ণ রোগ এবং এই রোগে আক্রান্ত হয় বছরে প্রায় ৬৭,৬০০ (সাতষট্টি হাজার ছয় শত) জন। এর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। মলদ্বারে এক প্রকার বিশেষ রশ্মির দ্বারা এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। একে বলে সিগমিও ডোর্মকপি। অনেক ক্ষেত্রে অনেকেরই কোলন ক্যান্সারের কোনোরূপ উপসর্গ থাকে না। ফলে এতে করে সমস্যা তীব্র হতে থাকলেও তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না এবং ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশ বেড়ে যায়।
ইউরোপিয়ানদের টাক বেশি পড়ে
সার্ভে করে দেখা গেছে যে, আফ্রিকান, এশিয়ান ও আমেরিকানদের চেয়ে ইউরোপিয়ানদের মাথায় চুল বেশি পড়ে। এই সার্ভের ওপর ভিত্তি করে একটি চার্ট প্রস্তুত করা হয়েছে, এই চার্টে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সে মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের চুল পড়ার ধরন দেখা যায়। এর মাঝে টাইপ-৩ কসমেটিকালি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ টাইপের চুল পড়ার প্রবণতাটাই বেশি দেখা যায় ১৮-২৯ বছর বয়সে ১২% মানুষের, ৪০-৪৫ বছর বয়সে ৫০% মানুষের, ৮০ বা তার উপরে ৭০% মানুষের এ ধরনের চুল পড়া দেখা যায়।
ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস
শিশুদের এক ধরনের জন্ডিস হয় তার নাম হল ‘ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস’। মায়ের দুধে এমন এক প্রকার হরমোন থাকে যার থেকে বাচ্চার শরীরে রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি হয়ে যায়। এই ধরনের জন্ডিস অনেক শিশুদেরই হযে থাকে। মাঝে মধ্যে এক থেকে দু’মাস পর্যন্ত এটা থাকে। বাচ্চা ক্লিনিকে কিংবা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় এই জন্ডিস ধরা পড়লে অতি বেগুনি রশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেটরের নিচে বাচ্চাকে রাখা হয়। অনেক সময় শিশুকে ক্লিনিক থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর পরই এই জন্ডিস ধরা পড়ে। সে ক্ষেত্রে সর্যের খোলা আলোয় বাচ্চাকে শুইয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। আর এই দুই উপায়েই সাধারণত ‘ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস’ এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
ফাংশনাল ডিসঅর্ডার
মাঝে মাঝে দেখা যায় কেউ কেউ সব সময়ই তাদের নানা রকম শারীরিক অসুস্থতার কথা বিড়বিড় করে বলতে থাকেন। যেমন সর্বাঙ্গে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ভেতরে গ্যাস তৈরি হওয়া, উদর স্ফীতি হওয়া ইত্যাদি। এইসব উপসর্গের সারাংশ করলে যে রোগটি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে তা হল ইরিটেবল বাওল সিনড্রম। এই ধরনের মনোরোগ প্রসত সমস্যা মানুষকে অস্বস্তিতে নিপতিত করবে। অন্ননালী তার নিজস্ব কার্যকারিতা হারাবে। তাই উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং পরিমিত বিশ্রাম মানসিক প্রশান্তি এ ধরনের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে অর্থাৎ পরিশ্রম ও বিশ্রাম এ দুটোর মধ্যে সমন্ব্বয় সাধন করে চলতে হবে।
গ্যাসের বিড়ম্বনা
পরিপাকতন্তের ভেতরে প্রতিনিয়ত গ্যাস জমা হতে থাকে। অতিমাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম অথবা কিছু কিছু খাদ্য যেমন-ফুলকপি, বাঁধা কপি, শিম, মটরশুটি ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেলে গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে। তবে এইসব খাবারে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ভিটামিন রয়েছে তাই এই খাদ্যগুলো রাতারাতি ভ্যানিশ না করে দিয়ে বরং অল্প পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পরিপাকতন্ত্রের ভেতর গ্যাস জমা হলে উদর স্ফীত ঘটবে এবং প্রচন্ড ব্যথা হবে, পাকস্থলীর প্রদাহে পাকস্থলীতে এসিড তৈরি হয় এবং অতি মাত্রায় ওষুধ গ্রহণ ও ইনফেকশন এবং এ্যালকোহল সেবনের ফলেও পরিপাক তন্ত্রের গ্যাসের বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়।
ফলিকুলার ক্যাটার বা কঞ্জাংক্টিভাইটিস
এটি একটি চোখের রোগ। এই রোগে মিউকাস মেমব্রেন রক্তাভ এবং ফলিকল বা দানাগুলো প্রায় সোজা শ্রেণীতে সাজানো থাকে। কখনও বা তা সমস্ত কঞ্জাংক্টিভা ব্যাপি বিস্তৃত থাকে এবং কিছুটা ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। চো দিয়ে তরল রস নির্গত হয়। এই রোগ প্রতি বছর গরম আরম্ভ হলে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে স্কুল বয়সে শুরুহয় আর কৈশোরে শেষ হয়ে যায়।
লক্ষণ
চোখে চুলকানি, জল পড়া, আলো সহ্য করতে না পারা।
এই রোগের সঙ্গে ভিটামিন ও অন্তক্ষরণ গ্রন্থ্থির কাজের অভাব, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, ওষুধ, ফুলের রেণু ও অন্যান্য এলার্জি সৃষ্টিক্ষম পদার্থের অস্বাভাবিক উত্তেজনা জড়িত থাকে।
সাইকোসিস
পুরাতন, দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনঃপুনঃ আক্রমণ প্রবণ হয়ে থাকে এই রোগ। এর কারণ স্ট্যাফাইলোকক্কাস জীবাণুর কারণে সাধারণত কেশ ঘনস্থানে যেমন দাড়ি, গোঁফে হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্থানে অস্টিয়াল ফলি কুলাই টিস শক্তভাব, এবং পুঁজযুক্ত ক্রাস্ট দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানের কেশ সহজেই পড়ে যায়। অস্বাস্থ্যকরভাবে দাড়ি, গোঁফ কামানো এবং অপরিচ্ছন্ন থাকা এই রোগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্নায়ুতন্ত্র, অন্তঃক্ষরা বিশেষ করে যৌন সম্পর্কিত গ্রন্থ্থি তন্ত্রের কাজে গন্ডগোল, অতিরিক্ত মদ্যপান এই রোগের স্থায়িত্বের কারণ।
ডেল্টা ভাইরাস
আসলে এটা কোনো পরিপূর্ণ ভাইরাস নয়; ভাইরাসের ভেতর পরজীবি বলা যেতে পারে। একা একা এরা খুবই শান্ত ভাইরাস। কিন্তু্তু হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সঙ্গে মিলে একটা লংকাকান্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে এটি। আমাদের কিছুটা সৌভাগ্য যে, এর দৌরাত্ম্য বেশি দেখা যায় ভমধ্যসাগর এলাকায়। যখন এই ভাইরাসটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সঙ্গে মিলে একই সময়ে সংক্রমিত হয় তখন একে বলা হয় কো-ইনফেকশন। আর যদি আগেই সংক্রমিত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পরে যখন এটি সংক্রমিত হয় তখন একে বলা হয় সুপার ইনফেকশন। আর এই ইনফেকশন হল অত্যন্ত মারাত্মক।
হেপাটাইটিস বি যাদের হবার সম্ভাবনা বেশি
  •  সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকাসক্ত লোকেরা, যেমন-পেথেডিন আসক্ত।
  •  যারা সংক্রমিত রক্ত ও রক্তজাত উপাদান যেমন পস্নাজমা সেল, ফ্যাক্টর এইচ ইত্যাদি গ্রহণ করছেন।
  •  সংক্রমিত ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহারকারী
  •  পুরুষ সমকামী
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সাহচার্য
  • সংক্রমিত মায়ের গর্ভস্থ সন্তান
  •  নিয়মিত যৌনসঙ্গী
  •  ডাক্তার/ নার্স/ প্যারামেডিকেল কর্মী
  •  সার্জন/ অবস্টেটিশিয়ান
  •  ডেন্টিস্ট
  •  জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাক্তার/ নার্স/ কর্মচারী/ আয়া/ বয়
  •  লিভার ইউনিটে কর্মরত ডাক্তার/ নার্স/ কর্মচারী
  • ল্যাবরেটরি কর্মচারী।এই ওয়েবসাইটের প্রকা

আমার ফেসবুক  

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :