সড়ক দুর্ঘটনা এবং মাথায় আঘাত
অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
সড়ক
দুর্ঘটনা সারা বিশ্বে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর প্রায় ১.৩
মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। উন্নত
দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে মৃত্যুহার অনেক বেশি। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায়
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন আরও
অনেকে। প্রকৃতপক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি বলে মনে করেন
বিশেষজ্ঞরা। যে কেউ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তবে নিত্যদিন যাদের
অফিস-আদালতের কাজে বাইরে যেতে হয়, তুলনামূলকভাবে তারাই বেশি দুর্ঘটনার
শিকার হন।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ - অনুন্নত সড়ক/যোগাযোগব্যবস্থা
- ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন না হওয়া
- ট্রাফিক আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো
- চালকের অদক্ষতা
- সনদবিহীন চালক
- ফিটনেসবিহীন গাড়ি
- অযথা তাড়াহুড়া করা
সড়ক দুর্ঘটনায় কী হতে পারে
সড়ক দুর্ঘটনায় কিছু না হওয়া থেকে মৃত্যু অবধি হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা হয় :
সড়ক দুর্ঘটনায় কিছু না হওয়া থেকে মৃত্যু অবধি হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা হয় :
- কোনো ধরনের আঘাত না পাওয়া
- কম গুরুতর আঘাত পাওয়া
- গুরুতর আঘাত পাওয়া যেমন হাত-পা ভেঙে যাওয়া, মাথায় আঘাত পাওয়া, পেটের ভেতর নাড়ি-ভুঁড়ি ছিঁড়ে যাওয়া, প্রস্রাবের থলি/নালি ছিঁড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
- প্রতিটি সমস্যাই অতি জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন, তবে কোন সমস্যার জন্য কোথায় কোন ডাক্তারের কাছে গেলে ভালো হবে সেটা বোঝার জন্য প্রথম অবস্থায় নিকটবর্তী চিকিৎসক বা হাসপাতালে যোগাযোগ করা উত্তম। অবশ্য দুর্ঘটনাস্থলে আঘাতপ্রাপ্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা সাধারণত জনগণ/আমরাও দিতে পারি। আঘাতপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তাদের অতি দ্রুত তিন শ্রেণীতে ভাগ করে নিতে হবে, যারা আঘাতপ্রাপ্ত নন/কম আঘাতপ্রাপ্ত তাদের আলাদা করতে হবে। যারা আশঙ্কাজনকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত তাদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। হাত-পা ভাঙা রোগীদের হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে অথবা পায়ের সঙ্গে পা বেঁধে রেখে, কোমর ভাঙা হলে যাতে মোচড় না লাগে সে জন্য সোজা তক্তায় শুইয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। শরীরের কোনোখানে রক্তপাত হলে পরিষ্কার কাপড়/ব্যান্ডেজ বেঁধে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। নাসারন্ধ্রে/নাকে মুখে কাদামাটি ময়লা লেগে থাকলে পরিষ্কার করে দিতে হবে। শরীরে ভেজা কাপড়/আঁটোসাঁটো কাপড় থাকলে খুলে দিতে হবে। সর্বোপরি রোগীকে সাহস জোগাতে হবে।
- সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিটি সমস্যাই গুরুতর। তবে মাথায় আঘাত পাওয়া (ঐবধফ ওহলঁৎু) সম্পর্কে সাধারণের কিছু ধারণা থাকা উচিত।
মাথায় আঘাত পাওয়া রোগীর ক্ষেত্রে করণীয়
- মাথার বাইরে বড় আঘাতের চিহ্ন থাকতে পারে
- তবে বাইরে আঘাতের চিহ্ন না থেকেও ভেতরে থাকতে পারে
মাথার আঘাত পাওয়া বলতে গেলে আমরা সাধারণত মাথার ভেতরে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়াকে বুঝে থাকি।
- মাথায় আঘাত বোঝার উপায়
- রোগী অজ্ঞান হতে পারে
- রোগী অসংলগ্ন কথা বলতে পারে
- রোগী অস্থির হতে পারে, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করতে পারে
- রোগী বমি করতে পারে, বমি বমি ভাব হতে পারে
- রোগীর মুখ দিয়ে ফেনা পড়তে পারে
মাথায় আঘাত কতটা গুরুতর সেটা বুঝতে হলে রোগীকে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে। যেমন :
চোখ
চোখ
- রোগীর চোখ খোলা আছে কি না
- নাম ধরে ডাকলে চোখ খোলে কি না
- শরীরে আঘাত করলে বা চিমটি কাটলে চোখ খোলে কি না
- কখনোই চোখ খোলে না
কথাবার্তা
- স্বাভাবিক কথাবার্তা
- সন্দেহপ্রবণ কথাবার্তা
- অসংলগ্ন কথাবার্তা
- অসংলগ্ন শব্দ উচ্চারণ
- কোনো কথা না বলা বা শব্দ না করা
আদেশ নির্দেশ
- দেশ মানা
- ব্যথা নির্দিষ্ট করে বলতে পারা
- ব্যথা দিলে বা আঘাত করলে শরীরের সে অংশ সরিয়ে নেয়া
- ব্যথা দিলে হাত-পা ভাঁজ করা
- ব্যথা দিলে হাত-পা সোজা করা
- কোনো কিছু না করা
- ঘোর যত বেশি রোগী তত ভালো, ঘোর যত কম রোগী তত খারাপ।
মাথায় আঘাত পাওয়া রোগীর জন্য করণীয়
তাৎক্ষণিকভাবে নরমাল স্যালাইন দিয়ে শিরার লাইন খুলে দেয়া। যা পরবর্তীতে চিকিৎসার সহায়ক হয়
মুখে কিছু খেতে না দেয়া
তাৎক্ষণিকভাবে নরমাল স্যালাইন দিয়ে শিরার লাইন খুলে দেয়া। যা পরবর্তীতে চিকিৎসার সহায়ক হয়
মুখে কিছু খেতে না দেয়া
- রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। যেখানে ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার সুযোগ আছে।
- সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়
- ভ্রমণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা
- বিআরটিএ-র নিয়মকানুন মেনে চলা
- চালকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং প্রোগ্রাম করা
- ট্রাফিক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা
- ফিটনেস নেই এমন গাড়ি রাস্তায় চলতে না দেয়া
- পরিবহন শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝানো
- প্রশস্ত এবং একমুখী রাস্তা করা
- চালকের সঙ্গে অযথা কথা না বলা
- বিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে নিরাপদ সড়ক সম্পর্কে অধ্যায় সংযুক্ত করা
মনে
রাখবেন, সড়ক দুর্ঘটনায় কেড়ে নিতে পারে আপনার আমার জীবন। পঙ্গুত্ব বরণ করে
নিতে হতে পারে যে কাউকে। তাই আসুন, সবাই মিলে গড়ে তুলি নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ
জীবনযাত্রা।
লেখকঃ অর্থোপেডিক সার্জনFB ME
Syed Rubel
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন