স্ট্রোক হয় যে কারণে...

কোন মন্তব্য নেই
অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ
আপনার স্ট্রোক ঝুঁকি কমানোর জন্যই স্বাস্থ্যকর জীবন পদ্ধতি আজই শুরু করুন। ধূমপান বা তামাক সেবনের অভ্যাস পরিহার করুন।
  ব্রেইন বা মগজের রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়ে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে ব্রেইন বা মগজের কোষ নষ্ট হয়ে যায়, যাকে স্ট্রোক বলে। ব্রেইনে রক্তক্ষরণ বা রক্ত সরবরাহকারী শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার ফলে স্ট্রোক হতে পারে। ব্রেইনে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালির অভ্যন্তরে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমার ফলে মূলত রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। ফলে রক্তনালি সরু হয়ে যায় ও নমনীয় হওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সহজে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ব্রেইনের রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। রক্তনালিতে চর্বিজাতীয় পদার্থ জমার মূল কারণ হলো ধূমপান কিংবা অন্য তামাক সেবন; অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ; কর্মশীল না থাকা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তনালিতে চর্বি জমার প্রবণতা বেড়ে যায়। ব্রেইনের রক্তনালি ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে ব্রেইনের কোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যাকে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বলে। উচ্চরক্তচাপ এ ধরনের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের ঝুঁকিপূর্ণ গুণক। হূদকম্পন দুর্বল কিংবা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে হূৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে, যা রক্তনালির মাধ্যমে ব্রেইনে চলে যেতে পারে। ব্রেইনের সরু রক্তনালিতে যা আটকে গিয়ে ব্রেইনের রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে।
  স্ট্রোকের ফলে অনেক রোগী হয় মৃত্যুবরণ করেন কিংবা অক্ষম হয়ে পড়েন। কাজেই স্ট্রোক না হওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়াই উত্তম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ গুণক প্রতিরোধ করে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। দৈনন্দিন জীবনে উপরে বর্ণিত গুণকগুলো হচ্ছে স্ট্রোকের মূল কারণ (ধূমপান কিংবা তামাক সেবন; অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ; কর্মশীল না থাকা)। এ ধরনের খারাপ জীবনযাপনের গুণকগুলো মূলত তিন ধরনের মারাত্মক শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে-উচ্চরক্তচাপ; ডায়াবেটিস (বহুমূত্র); রক্তের চর্বি বেড়ে যাওয়া। বিশ্বের বেশির ভাগ অংশে ধূমপানের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এছাড়া কম কর্মশীল থাকার কারণে বেশি পরিমাণে চর্বি ও চিনি গ্রহণের ফলে অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে অধিক সংখ্যক লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
  তামাকের খারাপ জিনিসগুলোর কারণে ধূমপানের ফলে ফুসফুস, রক্তনালি ও হূৎপিণ্ড ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যায়। ক্রমে এসব খারাপ সামগ্রী রক্তের অক্সিজেনের স্থান নিয়ে নেয়। তামাক সেবনের ফলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। অন্যের ধূমপান গ্রহণ করার কারণে নিজে ধূমপান না করেও এই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
  বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ, বেশি পরিমাণে চর্বি-চিনি লবণ গ্রহণ ও পরিমাণমতো ফল ও সবজি না খাওয়া। বেশি পরিমাণে খাবার খেলে এবং একই সাথে কম কর্মশীল থাকলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। ক্রমে ক্রমে আপনি মোটা হয়ে যেতে পারেন। ফলে মোটা হওয়ার কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এসব শারীরিক সমস্যার কারণে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মোটা ব্যক্তির কোমরে ও পেটে চর্বি বেশি জমে। এছাড়া বেশি পরিমাণে ফাস্টফুড গ্রহণেও ওজন বাড়তে পারে।
  কম কর্মশীল থাকলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শারীরিক কর্মকাণ্ড শরীরের চিনি ও চর্বি ক্ষয় করে ওজন কমাতে সাহায্য করে, রক্তচাপ কমায়, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়, হূৎপিণ্ড ও হাড়ের সামর্থ্য বাড়ায় এবং রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়। এছাড়া কর্মক্ষম থাকলে অন্যান্য রোগ কম হয়, ভালো ঘুম হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে, কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়ে নিজে ভালো অনুভব করে সুখী থাকা যায়।
কাজেই আপনার স্ট্রোক ঝুঁকি কমানোর জন্যই স্বাস্থ্যকর জীবন পদ্ধতি আজই শুরু করুন। ধূমপান বা তামাক সেবনের অভ্যাস পরিহার করুন। অন্যের ধূমপানের ধোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট কিছু কাজ করুন (দ্রুত হাঁটা, বাগান করা, গৃহস্থালি কাজ করা)। পরিমাণমতো ফল ও সবজি গ্রহণ করুন। লবণ-চর্বি-চিনি অনেক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বছরে কমপক্ষে একবার নিজের ওজন, রক্তচাপ, রক্তের চিনি ও চর্বির পরিমাণ মাপুন। নিজের পরিবারের সদস্যদের ও অন্যদের জীবনযাত্রা পরিবর্তনে উৎসাহিত করুন।


FB ME 
Syed Rubel

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :