বিয়েঃ জীবনের বন্ধন(আরিফ মাহমুদ সাহাবুল)

1 টি মন্তব্য
সাথী জীবনকে ভালোবাসে; অসম্ভব ভালোবাসে। যে ভালোবাসার শেষ নেই। জীবনকে সে মনে-প্রাণে স্বামী ভেবে নিয়েছে। এইতো আর কিছুদিন পরেই ওদের বিয়ের ফুল ফুটবে। ফুটে পবিত্র সুভাশ ছড়াবে চারদিকে। সাথী ওর ভালোবাসা বিয়ের পবিত্র বন্ধন দিয়ে আরো বেশি মজবুত, আরো বেশি শক্তিশালী করবে। নতুন সুখের সংসার সাজাবে
 
দৃশ্য-১
মৌসুমী কতইনা ভালোবাসে তার প্রিয় মনের মানুষ ফরহাদকে। এই মানুষটিকে ভালোবাসতে ওর কতই না কষ্ট হয়েছে। কতবারই না সে কেঁদেছে, চোখের পানিতে তার মন ভেসেছে, বড় ছটফট করেছে। তবু সে এতটুকু নিরাশ হয়নি, ধৈর্য হারায়নি। মৌসুমী জানে ধৈর্যের ফল দারুণ মিষ্টি হয়। মৌসুমী ফরহাদকে কোনোদিন ধোঁকা দেবে না। সেরকম মেয়েই নয় সে। ছেলেটিকে সে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে। নিয়ে এসেছে তার মনরাজ্যে মনের রাজা করে। ফরহাদকে সে ভালোবাসে মন-প্রাণ দেহ দিয়ে। তাই সে অন্য কারো কাছে কোনোভাবেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবে না। যাকে সে ভালোবাসে না তাকে সে কিভাবে সপর্শ করতে দিতে পারে? না তা সম্ভব নয় মেয়েরা একমনে দু’জনকে রাখতে পারে না। যাকে মন দেয় তাকেই সবকিছু দেয়। মৌসুমী তাই চিরকালই তাদের ভালোবাসার বন্ধনকে আরো বেশি নিশ্চিত করতে চায়, করতে চায় অন্তরের ছোঁয়ায় সুশোভিত। মৌসুমী ভেবে নিয়েছে বিয়ে যদি করতেই হয় তবে তার মনের মানুষটিকেই সে বিয়ে করবে। তাকেই আপন করবে অন্য লোককে নয়। মৌসুমীর ভালোবাসা ভঙ্গুর নয়-নয় নড়বড়ে।
দৃশ্য-২
ছেলের নাম মাহমুদুল হাসান সুজন। বুয়েট থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে। ভালো চাকরিও হয়ে গেছে। বেতনও আকর্ষণীয়। বাবা ইটালিতে ব্যবসা করেন। মা সংসারী, নামাজী...।
ঘটক সাহেব এসব কথাই বলছিলেন মেয়ে পক্ষকে। মেয়ে পক্ষতো শুনে খুশী। ছেলেকে তারা পছন্দ করেছে- আগামী শুক্রবারই বিয়ে। তারিখ মত বিয়ে হল। সুজন পুলকিত সন্তু্তুষ্ট। লেখাপড়া করে সে মানুষের মত আদর্শ মানুষ হয়েছে। তাইতো আজ সুন্দর, শিক্ষিতা, গুণবতী বউ পেয়েছে এতে সে তৃপ্ত গর্বিত।
দৃশ্য-৩
বিয়ের পর প্রিতম খুব ভদ্র হয়ে গেছে। অথচ এই প্রিতমই বিয়ের কিছুদিন আগে পর্যন্তও লাম্পট্যের জন্য বন্ধু মহলে দারুণ পরিচিত ছিল। কোনো মেয়েকে একবার দেখলেই হতো-তার দিকে ধূর্ত বাজ পাখির মত করে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকতো; যেন চোখ দিয়ে মেয়েটিকে গিলে ফেলবে। মেয়েদের ব্যাপারে তো সে দারুণ দুর্বল ছিল। সেই কদিন আগেও একটি মেয়ের সাথে লাম্পট্য আচরণ করছিল কিন্তু্তু মেয়েটির ভাগ্য ভালো লোকজন এসে পড়ায় সেবারের মত রক্ষা পেল।
মা-বাবা সেদিন প্রিতমকে ঘরেই ঢুকতে দেয়নি। কিন্তু্তু তারা আর অযথা কালক্ষেপণ না করে ছেলেটির আচরণ বুঝতে পেরে শীঘ্রই ছেলের বিয়ে দিয়ে দিল। ঘরে বউ পেয়ে ছেলেতো ভীষণ খুশী-আহলাদে গদ্‌গদ। প্রিতম ইদানীং ঘর থেকে খুব কমই বের হয়, কাজেও কিছুটা মন দিয়েছে। দেখতে দেখতে তাদের ছেলে সংসারী হয়ে উঠল। এখন তো সে কোনো মেয়ের দিকেই আগের মত ড্যাব্‌ড্যাব্‌ করে চেয়ে থাকে না। কেনই বা থাকবে এখন যে তার বিয়ে হয়েছে তার নিজের ঘরেই সুন্দরী প্রিয়তমা বউ রয়েছে। যে তাকে ভালোবাসা দিয়ে আদর দিয়ে শীতল পরশ দিয়ে একান্ত আপন করে নিয়েছে। আঁচলের সাথে বেঁধে ফেলেছে মমতার উষ্ণ বাঁধনে। বিয়ের পবিত্র বিস্ময়কর ম্যাজিকে।
দৃশ্য-৪
সাথী চমৎকার মেয়ে। ফুলের মত চমৎকার কোমল মন তার। যে মন সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের রঙ তুলিতে ভালোবাসার পৃথিবী সাজায়। এমন পৃথিবী যে পৃথিবীতে থাকবে না কোনো হাহাকার, থাকবে না কোনো শূন্যতা, নিঃসঙ্গতা, হারানোর ভয়। সাথী জানে পৃথিবীতে কোনো কিছু নিজে থেকে আসে না তাকে জয় করতে হয়। সাথী জানে যে তাকে ভালোবাসে সেই তাকে সারাটি জীবন সুখী করতে পারবে। বুকে আগলে রাখবে, বুড়িটি হওয়ার পরেও মৃত্যু পর্যন্ত।
সাথী জীবনকে ভালোবাসে; অসম্ভব ভালোবাসে। যে ভালোবাসার শেষ নেই। জীবনকে সে মনে-প্রাণে স্বামী ভেবে নিয়েছে। এইতো আর কিছুদিন পরেই ওদের বিয়ের ফুল ফুটবে। ফুটে পবিত্র সুভাশ ছড়াবে চারদিকে। সাথী ওর ভালোবাসা বিয়ের পবিত্র বন্ধন দিয়ে আরো বেশি মজবুত, আরো বেশি শক্তিশালী করবে। নতুন সুখের সংসার সাজাবে। যে সংসারে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার কোনো কমতি থাকবে না-থাকবে না আর কোনো পিছুটান। থাকবে শুধু সুখ-শান্তি-আর আনন্দ। হাসি-খুশীতে দেহ মন উলস্নসিত হবে। মনে পবিত্র শান্তি প্রবাহিত হবে, নিশ্চিত হবে একটি ঘরে দু’টি প্রাণের নিষ্পাপ বসবাস। সেদিন কেউ পারবে না বাধা দিতে-পারবে না হিংসার জাল বুনতে। সাথী আর জীবন স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে যেখানে খুশী সেখানে। গান গাইবে, কবিতা বলবে, হাত ধরে বেড়াবে, যা ইচ্ছা তাই করবে, করবে নতুন কিছু আবিষকার। দু’জনে মিশে যাবে একাকার হয়ে গভীরভাবে। হবে স্বামী-স্ত্রী অতি প্রিয় দু’জন, আপনজন। হবে নিষ্পাপ শিশুর মিষ্টি মধুর কোলাহল, গুঞ্জন।
দৃশ্য-৫
আশিক সাজ্জাদ (ফারুক); কাবিন নামায় নিজের নাম লিখল বর। এই তো আজই তাদের বিয়ে হল। বরতো খুব খুশী, আনন্দে আত্মহারা। সেই কদিন ধরেই না ভাবছিল মিনুকে বিয়ে করে সে সংসারী হবে, আজই তাই হল। মনটা যেন তার কেমন কেমন লাগল। মনটা যেন আশিকের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সুখের ফল্গুধারায়।
দেখতে দেখতে একমাস হয়ে গেল বিয়ের। বিয়ের পর কাজে যাবার সময় আশিকের মনে হচ্ছিল সে যেন আগের মত আর নেই বদলে যাচ্ছে! এখনতো সে আর আগের মত অযথা অপব্যয় করে না। টাকার প্রতি তার মায়া হয়েছে সঞ্চয়ী হয়ে উঠছে। বন্ধুদের সাথে বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা ও খেজুরে আলাপ সে এখন ছেড়ে দিয়েছে। কাজ শেষ হলেই সোজা বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে আসার পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন তার প্রিয়তমা স্ত্রী মিনুর দিকে তাকায় তখন মিনুর প্রফুলস্ন হাসিতে তার সব ক্লান্তি, সব দুশ্চিন্তা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। মুখে ফুটে ওঠে সুখের হাসি। আশিক ভাগ্যবান সে দাম্পত্য জীবনে চমৎকার সুখী। যে সুখ তাকে ভবিষ্যতের সফলতার পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়, অনুপ্রাণিত করে, সাহস জোগায়।
দৃশ্য-৬
বিয়ের কথা শুনলেই সীমার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। হাসি পায়। সীমা ভাবে আজ সে ছোট কিন্তু্তু বয়সের গন্ডি পেরিয়ে একদিন সেও বসবে বিয়ের পিঁড়িতে। বউ সাজবে। ওকে ঘিরে চারদিকে হৈ হুলেস্নাড় হবে। আনন্দে সবাই মেতে উঠবে। কতই না মজা হবে! ভাবতেই অজানা এক শিহরণে মনপ্রাণ ভরে ওঠে। দারুণ লাগে, সীমাকে নিয়ে ওর মা-বাবার কতই না স্বপ্ন। মেয়ে বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে। তারপর একদিন ভালো ছেলে দেখে মেয়েকে তার হাতে তুলে দেবে। যে ছেলে সুখে-দুঃখে সবসময় ছায়ার মত থেকে তাদের আদরের মেয়ের পাশেপাশে থাকবে। তাকে নিরাপত্তা দেবে, দেবে ভালোবাসা, রচনা করবে সুন্দর সংসার।
দৃশ্য-৭
মিতু হাস্যউজ্জ্বল-হাস্যময়ী নম্র, ভদ্র লাজুক মেয়ে। কথায় কথায় হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়। মিতুর হাসিতে মিষ্টিমাখা প্রশান্তি আছে-আছে অনাবিল প্রফুলস্নতা। অন্য মেয়েদের মত মিতুও চায় এক সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা। যে নিশ্চয়তা তাকে সুখের জগতে নিয়ে যাবে, নিয়ে যাবে আনন্দময়তায়-মুগ্ধতায়। জীবন চলার পথে মিতুকেও একদিন বসতে হবে বিয়ের পিঁড়িতে-যেতে হবে অন্য একজনের ঘরে। যে ঘর হবে তার সাজানো সুখের ছোট সংসার। যে সংসারে থাকবে একটি অবলম্বন একটি ভরসা। থাকবে স্বামীর মায়া-মমতা, স্নেহমমতা, থাকবে প্রচুর ভালোবাসা; সত্য সুন্দর পবিত্র ভালোবাসা। ভালোবাসাই তো পরকে আপন করে। ভালোবাসাই তো সংসারকে টিকিয়ে রাখে। ভালোবাসা ছাড়া কি সুখ আছে? ভালোবাসা ছাড়া কি দাম্পত্য জীবন মজবুত থাকে। মিতুর বিয়ে হবে; সে বউ সাজবে-শুরু হবে নতুন জীবন, নতুন শিহরণ, নতুন উচ্ছলতা, নতুন অভিজ্ঞতা...।
সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকামহল। আশা করি সবাই ভালো আছেন-সুস্থ আছেন। আপনাদের সুস্থতাই আমাদের প্রথম ও প্রধান চাওয়া। ‘মনোজগত’ পত্রিকা আপনাদের মনের অজানা শূন্যতা পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও বিপুল ভালোবাসার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এ লেখার গতি শক্তি পাচ্ছে, পাচ্ছে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা। আর সেই অনুপ্রেরণায় বরাবরের মত এবারেও আমরা ভিন্ন স্বাদের লেখা ‘বিয়ে’ সম্পর্কিত সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি রকমারি তথ্যপূর্ণ লেখা উপহার দিলাম। ভালো লাগলে জানানোর আমন্ত্রণ রইল।
বিয়ে
বিয়ে নারী-পুরুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যে অধ্যায় বৃহত্তর জীবনের শুভ সচনা করে। বিয়ে মানব জীবনের পূর্ণতা দান করে বিকশিত করে তোলে। সুখের উষ্ণ পরশ এনে দেয়, দেয় মনে শান্তির প্রলেপ। বিয়ে নারী-পুরুষের নিঃসঙ্গতা, একাকীত্বতা দূর করে। জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। হতাশ, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা হ্রাস করে। জীবনকে উপভোগ করতে শেখায়। ভাবের আদান-প্রদান করতে উৎসাহিত করে। হৃদয় মনকে জাগ্রত করে। কাজে-কর্মে অনুপ্রেরণা জোগায়, এনার্জি বাড়ায়।
বিয়ে স্বভাবকে সুশোভিত করে চরিত্রকে মাধুর্যপূর্ণ করে তোলে। অশস্নীলতা বেহায়াপনা ও লাম্পট্যপনাকে বিদুরিত করে মন-প্রাণ পবিত্রতায় কানায় কানায় ভরিয়ে তোলে। বিয়ে অশান্ত মনকে শান্ত করে-ভবঘুরে অলসকে কর্ম প্রেরণা দেয়, কর্মঠ করে। বিয়ে ইবাদত বন্দিগীতে একাগ্রতা সৃষ্টি করে ধৈর্যশীল সংযমী হতে সাহায্য করে।
বিয়ে মানুষকে সমাজবদ্ধ, পরিবারবদ্ধ ও শৃখলিত করে তোলে, দায়িত্ববান বানায়। জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে এ তিনটি বিষয় মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু অমোঘ এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। অর্থাৎ কিনা এ দু’টি অবশ্যম্ভাবী। জন্ম হলে মরতে একদিন হবেই। মৃত্যু অবধারিত সত্য। কিন্তু্তু বিয়ে, অমোঘ বা অবধারিত নয়। এরপরও সামান্য সংখ্যক কিছু মানুষ ছাড়া অধিকাংশ মানুষের জীবনেই বিয়ের ঘটনা ঘটে।
মানব সমাজে বিয়ে হচ্ছে নতুন সৃষ্টির পথ নতুন সৃষ্টির উপায়। মানব সভ্যতার সেই ঊষা লগ্ন থেকেই সমাজে শৃখলতা আনতে বিয়ের সূত্রপাত হয়। বিয়ের মাধ্যমেই নারী-পুরুষ সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। বিয়ে কারও জন্য আশীর্বাদ কারও জন্য আবার অভিশাপ আর সবার জন্য এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত। সুশৃখল পরিবার ও সভ্য মানব সমাজ তৈরির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বিয়ের কোনো বিকল্প নেই।
বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুষের সম্পর্কের এক অনন্য সেতু বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ কি চায়? সমাজ মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বিয়ে হল জৈবিক চাহিদা পূরণ, তৃপ্তি, সুখ-শান্তি, বন্ধুত্ব, সন্তান-সন্ততি লাভ এবং মানসিক প্রশান্তির এক অনাবিল উপহার। বিয়ে প্রধানত নারী-পুরুষের মধ্যে নির্ধারণ করে দৈহিক, মানসিক ও সাংসারিক সুসম্পর্ক। ত্রিমাত্রিক এই নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে বিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন (এনসিয়েন্ট) ও টেকশই (এভার লাসটিং) চুক্তি বিশেষ। এই চুক্তিকে জীবন বন্ধনে পরিণত করতে হলে প্রয়োজন নিখাদ ভালোবাসা। কারণ পর্যাপ্ত ভালোবাসা পেলে তা টিকে থাকে আমৃত্যু। আর ভালোবাসার অভাব হলে ফাটল ধরে তাতে দেখা দেয় ভাঙ্গন। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, শুধু বিয়ে নামক প্রথাগত চুক্তি সম্পাদন করাই আসল কথা নয়, আসল কথা হল যে, যে নারী পুরুষ পরসপরকে গভীরভাবে ভালোবাসে তারাই হল প্রকৃত স্বামী-স্ত্রী।
প্রেম-ভালোবাসা শূন্য বিয়ে কখনও শুভ হয় না। শান্তির হয় না, হয় না আনন্দের। অর্থাৎ বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুষের যৌথ (কম্বাইন্ড লাইফ) জীবন-যাপনের অঙ্গীকার। আর ভালোবাসা হচ্ছে সেই অঙ্গীকারকে বাস্তবায়নের সুন্দরতম উপায়। সবদিক বিবেচনা করে মনোবিজ্ঞানীরা বিয়ের একাধিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন। বিজ্ঞানী হ্যাভলক এলিস (ঐধাষড়প) বলেছেন, বিয়ে বলতে বোঝায় সাধারণত দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে সাময়িক বা আজীবন দৈহিক-মানসিক এবং সন্তান সন্ততি লালন পালনের সমমতিযুক্ত সম্পর্ক। আধুনিক বিজ্ঞানীরা আরেকধাপ এগিয়ে বলেন, ধর্ম, সমাজ কিংবা আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের নামই হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের মধ্যে তিনটি মল সূত্র বিদ্যমান যথা-
  • বিপরতি লিঙ্গ লোকের প্রয়োজন।
  • বিয়ের দ্বারা প্রধানত দেহ সম্পর্ক স্থাপনই উদ্দেশ্য বলে বিপরীত লিঙ্গ হওয়া প্রয়োজন। ঐ সম্পর্ক স্থায়ী হবে, অন্তত বিচ্ছেদ পর্যন্ত এ ধরনের আশা থাকা প্রয়োজন।
  • এই সম্পর্ক ধর্ম, সমাজ কিংবা আইনের দ্বারা স্বীকৃত হওয়া চাই। তিনটি শর্তের সব কয়টি পূরণ না হলে তাকে বিয়ে বলা যেতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-
  • কই লিঙ্গের দুই ব্যক্তির দৈহিক সম্পর্ককে যৌন সহযোগিতা বা সমলিঙ্গিক সম্বন্ধ (হোমোসেক্সুয়াল রিলেশন) বলা যায়-তাকে বিয়ে বলা যায় না।
  • গণিকা বা উপপত্মীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হলেও তা সাময়িক বলে অর্থাৎ স্থায়িত্বের সম্ভাবনাযুক্ত নয় বলে তাকে বিয়ে বলা যায় না। স্থায়িত্বের সম্ভাবনাযুক্ত হলেও ধর্ম সমাজ কিংবা আইন ঐ ধরনের সম্পর্ককে স্বীকার করে না বলে তা বিয়ে নয়।
  • পরসপর সম্পর্ক নিজেদের কাছে যতই মধুর হোক না কেন-যদি ধর্ম সমাজ বা আইন তা নিয়ম অনুযায়ী না পায় তবে সেটাকেও বিয়ে বলা যাবে না। তবে আইনে স্বীকার না করলেও ধর্ম মতে বিয়ে হতে পারে-যেমন বাল্য বিবাহ। আবার ধর্ম ও সমাজে স্বীকার না করলেও আইনত বিয়ে হতে পারে, মেযন সিভিল ম্যারিজ অথবা ডক্টর হরিসিং গৌরের ইন্টার কাস্ট ম্যারিজ এক্ট অথবা ১৯৯৫ সালে প্রবর্তিত বিশেষ বিবাহ আইন বা (সেপশাল ম্যারিজ এক্ট অনুসারে অনুষ্ঠিত বিয়ে।)
বিশ শতকের শেষ দিকে বিয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত সব সংজ্ঞা তাৎপর্য হারাতে শুরু করেছে। কারণ এ শতকের নবক্ষই দশকে আমেরিকাসহ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমকামী নারী ও পুরুষের মধ্যে বিয়ে আইন সিদ্ধ হয়েছে। ফলে সন্তানের জন্মদান ও প্রতিপালনের বিষয়টি আর বিয়ের প্রধানতম কারণ বা শর্ত হিসেবে বলবত থাকছে না। সবাই জানেন বিয়ের জন্য ধর্ম, সমাজ ও আইনের স্বীকৃতি আবশ্যক। কিন্তু্তু সেখানেও রয়েছে নানারকম ফাঁক ফোকর। ফলে আইনের চোখে অপরাধ হলেও বাল্য বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়।
পুরুষ ও নারী এই দুই অস্তিত্ব মিলেই হয় একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন। পুরুষ ছাড়া নারী আর নারী ছাড়া পুরুষ অসম্পর্ণ-অপূর্ণাঙ্গ। দু’জন পুরুষে-পুরুষে কিংবা নারীতে-নারীতে জোড়া সৃষ্টি হয় না।
জোড়া হয় পুরুষ ও নারী মিলেই। আর এই জোড়ার মিশ্রণেই হয় নতুন সৃষ্টি নতুন প্রাণ সঞ্চার। নারীতে নারীতে কিংবা পুরুষে-পুরুষে আকর্ষণ (এট্রাকশন) সাধারণত জন্মে না। কিন্তু্তু পুরুষ-নারীতে, নারী-পুরুষে এক অদৃশ্য আকর্ষণ ঠিকই বিদ্যমান। যে আকর্ষণকে অবহেলা করা যায় না, যায় না এড়িয়ে চলা। আর এই আকর্ষণই ভালোবাসা বয়ে আনে বয়ে আনে মায়া-মমতা। একজনকে আরেকজনের কাছে টেনে নিয়ে যায়-আপন করে। সঙ্গী বানায় আর বিয়ের মাধ্যমেই তা পূর্ণতা লাভ করে।
বিয়ে নর-নারীর এক জৈবিক অধিকার, মানসিক অধিকার। আর এই অধিকার খর্ব করা হলে দেখা দেয় অনাকাক্ষিত ফলাফল, পরিণাম। সভ্যতার সচনা লগ্নে বিয়ে প্রথা প্রচলিত ছিল না বললেই চলে। প্রথমত স্বেচ্ছাচারিতা কমানো, দ্বিতীয়ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্দিষ্ট করার জন্য যৌন সম্পর্ক (সেক্সুয়াল রিলেশন) স্থাপনের ক্ষেত্রে ক্রমশ বহু রকমের বিধি নিষেধের প্রচলন ঘটে। পরিবার গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ প্রয়োজন দারুণভাবে অনুভূত হয়। ডাঃ ওয়েস্টমার্ক-হিস্ট্রি অব হিউম্যান ম্যারিজ গ্রন্থ্থে উলেস্নখ করেছেন, বিয়ের উৎস হচ্ছে পরিবার প্রথা। পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন পিতা। তার ওপর অর্পিত হয় পরিবারের ভরণ-পোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়দায়িত্ব। অপর পক্ষেমা, সন্তান-সন্ততি লালন-পালন ও গৃহ কর্মের দায়-দায়িত্বের ভার তুলে নেন। এই প্রথা ক্রমে ক্রমে সমাজ ও আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর থেকে জন্ম নেয় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত।
সেই আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত বিয়ে পরিণত হয়েছে প্রথায়। যে প্রথায় সমাজের প্রায় সবাই সাড়া দেয় মেনে নেয়।
সমাজ মনোবিজ্ঞানী ব্যাকোফেল, মর্গান, ব্যাস্টিক্যাল, ল্যাবক, উইনক্যান্স প্রভৃতিদের ধারণা মানুষ যখন সমাজবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে প্রাণে অনুভব করে তখন থেকেই বিয়ে প্রথার সচনা ঘটে। তাদের গবেষণা মতে পরিবার ও দলের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃখলা, সন্তান-সন্ততি লালন-পালন ও লোকবল বৃদ্ধি করতে বিয়ে প্রথা জরুরি হয়ে ওঠে। এরপর ক্রমশ সমাজে দেখা দেয় ধর্মীয় মল্যবোধ। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের বিয়ে করে স্বামীর সংসারে আসার নিয়ম প্রচলিত হয়। অন্যদিকে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা বিয়ে করে স্ত্রীর সংসারে স্থায়ী সদস্য হওয়ার বৈধতা অর্জন করে।
বর্তমান যুগে স্ত্রী শুধু সহধর্মিনী নন, শয্যা সঙ্গীই নন-স্ত্রী একজন সহকর্মী, সহযোগী ও সঙ্গী এবং বন্ধুও বটে। বিয়ে এখন শুধু একত্র বাসের পূর্বশর্ত নয় বরং দু’পক্ষের সমমতিক্রমে যুগল জীবন-যাপনের সুন্দরতম অঙ্গিকার বিশেষ। পৃথিবীতে বহু রকমের বিয়ে প্রথা বা বিবাহ সম্পর্ক প্রচলিত রয়েছে। সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো প্রথা লুপ্ত বা নিষিদ্ধ হয়েছে। আবার সেই সঙ্গে উদ্ভব হয়েছে নতুন নতুন প্রথার। ম্যারিজ বিশেষজ্ঞরা বিয়ে প্রথাকে ভাগ করেছেন প্রধানত চারভাগে যথা-
- এক পত্নীক বিয়ে (মনোগামী ম্যারিজ)
- বহু পত্মীক বিয়ে (পলিগামী ম্যারিজ)
- বহু স্বামী বিয়ে (পলিয়ন ড্রাই ম্যারিজ) এবং
-দলগত বিয়ে (গ্রুপ ম্যারিজ)।
একই সময়ে একজন স্ত্রী গ্রহণ এক পত্মীক বিয়ের বৈশিষ্ট্য। আধুনিক যুগে এক পত্মীক বিয়েই বেশি গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়।
একই সঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখার নাম বহু বিবাহ। একাধিক বিয়ের পেছনে যেসব কারণ বিদ্যমান সেগুলো হচ্ছে-
  • পুরুষের বহুগামী আকাক্ষা
  • রাষ্ট্র ও সমাজে পুরুষ প্রাধান্য
  • অধিক সন্তান লাভের বাসনা
  • পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া। কোনো কোনো দেশের আবহাওয়া এমন যে পুরুষ অত্যন্ত শক্তিশালী কিন্তু্তু মেয়েরা সেতুলনায় দুর্বল হলে
  • সাংসারিক ও অভ্যন্তরীণ গন্ডগোল
  • অসহায় বিধবাকে সাহায্য করার ভাবনা ইত্যাদি।
সামন্ত যুগ পর্যন্ত বহু বিয়ে ছিল আভিজাত্যের নিদর্শন। বর্তমান সমাজে এ প্রথা নিন্দনীয় হলেও একবারে বিলুপ্ত হয়নি। বহুস্বামী গ্রহণ অনেক আগেই সামাজিকভাবে রহিত করা হয়েছে। কারণ এতে করে বিশৃখলার সৃষ্টি হত। পৌরনিক ভারতে দ্রোপদী একইকালে পাঁচ স্বামীর স্ত্রী ছিলেন। মোঘল আমলের শেষ দিক পর্যন্ত সিংহল ও দক্ষিণ ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে এ প্রথা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের কতিপয় সম্প্রদায় তিবক্ষতী এবং এস্কিমো জাতিতে বহু পতিত্ব (বহু স্বামী) প্রথা দেখা যায়। ভারতের জওনসারি এবং রাজস্থানের জাঠ সম্প্রদায়ের মধ্যে আজও বড় ভাইয়ের স্ত্রী তার অন্যান্য ভাইদের স্ত্রী হিসেবে গণ্য হয় এবং সবাই স্বামীর মতই আচরণ করে। বর্তমান যুগে একমাত্র টোগা উপূজাতিতে দলগত বিয়ে প্রচলিত। সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আদিম যুগে আত্মরক্ষার তাগিদে মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করত। তখন সম্প্রদায়ের সব বস্তুতে ছিল দলের সবার সমান অধিকার। আর একারণেই একদলের মেয়ে বা পুরুষ বৈবাহিক সূত্রে অন্য দলের সব মেয়ে বা সব পুরুষের ওপর যৌন অধিকার ভোগ করতে পারতো।
মেয়েদের বেলায় এ ধরনের বিয়ে বহির্বিবাহ বা এক্সোগামী নামে চিহ্নিত। সমাজ বিজ্ঞানী লিসিয়ানের মতে-এট্রাকসন, ক্রেটান ও মিসরীয় কিছু উপূজাতিতে দলগত বিয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিয়ের প্রয়োজনীয়তা
দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবন এ কয়টি দিক নিয়েই মানুষের সবরকম কর্মক্ষেত্র। এর মধ্যে দাম্পত্য জীবন বা পারিবারিক জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্য জীবন মানুষকে নতুন পথের দিশা দেয় নতুনভাবে জীবন যাপন করার সুযোগ করে দেয়। আর পারিবারিক জীবন হচ্ছে একজন মানুষের প্রথম শিক্ষা নিকেতন। শিশু প্রথম শেখে মা-বাবার কাছ থেকে। পরিবার হতে মানুষ যে শিক্ষা লাভ করে আমৃত্যু মানুষের জীবনে সে প্রতিভার ক্রিয়াশীল থাকে। সুতরাং পারিবারিক জীবন হল মানব শিশুর পরবর্তী জীবনের দিক নির্দেশক। এজন্য স্বামী-স্ত্রীর সন্তান দ্বারা গঠিত পরিবারকে ‘সুসংরক্ষিত এক অট্টালিকার’ সাথে তুলনা করা হয়।
প্রাচীন যুগে শাসকগণ কেলস্না নির্মাণ করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধরনের কেলস্নার অস্তিত্ব বর্তমানেও লক্ষ্য করা যায়। বিশাল দুর্ভেদ্য প্রাচীর পরিবেষ্ঠিত ঐ সমস্ত কেলস্নার অভ্যন্তরে শাসকগণ পরিবার পরিজনসহ যুদ্ধকালীন সময়ে অবস্থান করতো। সেখানে জীবন ধারণের উপযোগী রসদসহ তারা নিরাপদে থাকতো। শত্রুর আক্রমণ হতে হেফাযতে থাকার জন্য সৈন্য বাহিনী পাহারায় নিয়োজিত থাকতো। স্বামী-স্ত্রীর দ্বারা বিয়ের মাধ্যমে গঠিত পরিবার ও সুরক্ষিত ঐ কেলস্নার মতো। আর এরকম পরিবার একমাত্র নারী-পুরুষের বিয়ের মাধ্যমেই গড়ে ওঠা সম্ভব। তাই বিয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যথেষ্ট।
সারা পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মাঝেই রয়েছে যৌন চেতনা, যৌন প্রবণতা। আর এই প্রবণতা না থাকলে নারী-পুরুষ উভয় উভয়ের প্রতি কোনো আকর্ষণই অনুভব করত না। আর গড়ে উঠতো না পরিবার, তৈরি হত না শৃখলিত মানব দাম্পত্য জীবন। যৌন অনুভূতি (সেক্সুয়াল টেনডেন্সি) এমনি এক অনুভূতি এমনি এক কামনা-বাসনা যা তৃপ্তির সাথে চরিতার্থ করতে না পারলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যাহত হয় বিভ্রান্ত হয়। তাই মানুষের এই স্বাভাবিক যৌন চেতনা জৈবিক চাহিদা ও যৌন অধিকার নিবৃত্ত করার জন্য বিয়ে এক মল্যবান সমাধান, অমূল্য রত্ন বিশেষ। কেবলমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই নারী-পুরুষের সতীত্ব ও নৈতিকতা বজায় রাখা সম্ভব।
পোশাক যেমন করে মানব দেহকে আবৃত করে রাখে নগ্নতা ও কুশ্রীতা প্রকাশ হতে বাধা দেয় এবং সবরকমের ক্ষতি ও অপকারিতা থেকে নিরাপদে রাখে স্বামী-স্ত্রী ও পরসপরের জন্যে ঠিক তেমনি। তারাও ঠিক একে অপরের পোশাকস্বরূপ। যা একে অপরকে নগ্নতা থেকে বেহায়াপনা থেকে আবৃত করে রাখে, নিরাপদে রাখে। তাই নারী-পুরুষের বিয়ে করা অবশ্য প্রয়োজন।
বিয়ের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে-নারী-পুরুষের হৃদয় অভ্যন্তরস্থ স্বাভাবিক প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার প্রকাশ করতে পথ করে দেয়া, সুযোগ করে দেয়া। স্বামী-স্ত্রীর মনের গভীর পরিতৃপ্তি সুখ-শান্তি স্বস্তি ও স্থিতি লাভ হচ্ছে বিয়ের অন্যতম লক্ষ্য। বিয়ের মাধ্যমেই নারী-পুরুষের মধ্যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব চমৎকার ভালোবাসা জন্ম নিতে পারে।
পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব যেমন এক স্বাভাবিক ব্যাপার। নারী-পুরুষের মাঝে জোড়া সৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও তেমনি এক প্রকৃতিগত সত্য ব্যাপার। এ সত্যকে কেউই অস্বীকার করতে পারে না। এজন্যে প্রথম মানুষ সৃষ্টি করার পরই তার থেকে মহান প্রভু; আদমের জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এ জোড়া যদি বানানো না হত তবে মানুষের জীবন অতৃপ্তি আর নিঃসঙ্গতায় অশান্তিতে দুঃসহ হয়ে উঠতো। আদিম মানুষের জীবনে জুড়ি গ্রহণের এই আবশ্যকতা আজও এতটুকু ফুরিয়ে যায়নি। প্রথম মানুষ যুগলের ন্যায় আজকের মানব-মানবীও স্বাভাবিকভাবে পরসপরের মুখাপেক্ষী। আজকের যুগের স্বামী-স্ত্রী পরসপরের কাছ থেকে লাভ করে নিরাপত্তা, মনের প্রশান্তি, যৌনতৃপ্তি, সুখ, সহানুভূতি ও কর্মোউদ্দীপনা। একজনের মনের অশান্তি, অস্থিরতা, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা অপর জনের নির্মল প্রেম-ভালোবাসার বন্যা স্রোতে ধুয়ে মুছে যায়। একজনের নিজস্ব বিপদ আপদও অন্যের কাছে তা নিজেরই দুঃখ, বিপদ, আপদ রূপে গণ্য হয়, গৃহীত হয়। একজনের যৌন উত্তেজনা, কামনা-বাসনা অপরজনের ছোঁয়ায়-আদরে প্রশমিত হয়-তৃপ্ত হয়। এসব কথা থেকে একথাই প্রমাণিত হয় যে, নারী-পুরুষের জীবনে জোড়া গ্রহণ বা জীবন সঙ্গী নির্বাচন বা বিয়ে করা একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। যা এড়িয়ে চলা বা অস্বীকার করার তেমন কোনো উপায় নেই।
বিয়ের শ্রেণী বিভাগ
-মুসলিম বিয়ে
- হিন্দু বিয়ে
-খ্রীস্টান বিয়ে এবং
-বৌদ্ধ বিয়ে।
মুসলিম বিয়ে
মুসলিম আইনে বিয়ে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। বিয়ে হচ্ছে একটি বিশুদ্ধ দেওয়ানী চুক্তি বিশেষ। এককথায় পাত্র-পাত্রী ছাড়া দুইজন পুরুষ বা চারজন স্ত্রীলোককে সাক্ষী রেখে একজন মৌলভী সাহেব শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন করতে পারেন। শরীয়তী বিধানে স্বীকৃত না থাকলেও বাঙালি মুসলমান সমাজে বিয়েতে নানারকম লোকাচার আচার অনুষ্ঠান পালিত হতে দেখা যায়। যেমন-সন্ধ্যাকুটাই, গায়ে হলুদ, কনে বরণ, জামাই বরণ, লৌকিক সঙ্গীত বা মেয়েলি গীত পরিবেশন এবং দুধভাত অনুষ্ঠান, মালা পরানো ও বাসর সজ্জা ইত্যাদি ক্রিয়াকর্ম ঘটা করে করা হয়ে থাকে। বিয়ের মল অনুষ্ঠান হচ্ছে- নির্ধারিত নিয়মে প্রয়োজনীয় সাক্ষীর সামনে বিয়ের প্রস্তাবের সপক্ষেকনেকে তিনবার (থ্রিটাইমস) বিয়ের স্বীকারোক্তিমূলক ‘কবুল’ শব্দটি মুখে উচ্চারণ করতে হয়। কিংবা নীরব থেকে সমমতি জানানো হয়। অতঃপর বর কনের জন্য দোয়া করার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কার্যকলাপের সমাপ্তি ঘটে। উলেস্নখ্য, শিয়া মুসলমানের মধ্যে ‘মত আ’ নামে এক প্রকার অস্থায়ী বিয়ে প্রচলিত আছে। এ প্রথায় স্বামী-স্ত্রী কয়েক ঘন্টার মধ্যে পরসপরকে তালাক (ডিভোর্স) দিতে পারে।
মুসলিম আইনে বিয়ে ৩ প্রকার যথা-
  • বৈধ বিয়ে
  • ত্রুটিপূর্ণ বিয়ে ও
  • অবৈধ বিয়ে
বৈধ বিয়ে
যে বিয়েতে আইনের সমস্ত শর্ত (কন্ডিশন) প্রতিপালিত হয়, সেই বিয়েকে বৈধ বিয়ে বলে।
বৈধ বিয়ের আইনগত ফলাফল
বৈধ বিয়ের ফলে উৎপাদিত সন্তান বৈধ হয়। স্ত্রী দেন মোহর ও খোরপোষের অধিকারী হয়। স্বামী-স্ত্রীর গতিবিধিকে সংগত পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই বিয়েতে পারসপরিক উত্তরাধিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ত্রুটিপূর্ণ বিয়ে
নিম্নবর্ণিত বিয়েকে ত্রুটিপূর্ণ বিয়ে বলা হয় যথা-
-সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হলে
- ইদ্দতকালে কোনো নারীর বিয়ে হলে
- কোনো মুসলিম পুরুষ যদি অন্য ধর্মের মহিলাকে বিযে করে (বিশেষ করে হিন্দু বা প্রতীমা পূজাকারী মহিলাকে)
- যদি কোনো ব্যক্তি দুই বোনকে একত্রে বা একসাথে বিয়ে করে।
-চতুর্থ স্ত্রীর বর্তমানে পঞ্চম বিয়ে করলে।
অবৈধ বিয়ে
ইসলামী আইনে কয়েক শ্রেণীর আত্মীয়ের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ। এই শ্রেণীর মধ্যে আসে রক্তের সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়, বিয়ে সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়, এসব আত্মীয়ের মধ্যে যদি কোনো বিয়ে হয় তবে তা হবে অবৈধ বা বাতিল বিয়ে।
অবৈধ বিয়ের আইনগত ফলাফল
অবৈধ বিয়ের পক্ষবৃন্দের অনুকূলে বা প্রতিকূলে কোনো দায় বা অধিকারের উদ্ভব হয় না। এই বিয়ের দ্বারা জন্মানো সন্তান অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়।
হিন্দু বিয়ে
প্রাচীন লোকাচার ও শাস্ত্র মতে বিয়ের প্রকার বিন্যাস করা হয়েছিল। এর কয়েকটি ছিল সম্পর্ণভাবে লোকাচার ভিত্তিক। তাতে কোনো প্রকার মন্তোচ্চারণ বা যাগ যজ্ঞের প্রয়োজন হতো না। অন্যদিকে কয়েকটি বিয়ে ছিল শাস্ত্র অনুমোদিত। সেগুলোর মল অনুষ্ঠান ছিল মন্ত্রপাঠ, যজ্ঞ অনুষ্ঠান এবং কনেকে নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী বরের হাতে সম্প্রদান (কন্যাদান)। চার প্রকার বিয়ে প্রচলিত ছিল মহাভারতীয় যুগে যথা-
(১) ব্রাহ্ম (২) গান্ধর্ব (৩) আসুর ও (৪) রাক্ষস
-এর মধ্যে একমাত্র ব্রাহ্ম বিয়েতেই মন্তোচ্চারণ এবং যজ্ঞের আয়োজন হত। বৈদিক যুগের পর (ঋগ্বেদ) এর সঙ্গে যোগ হয় আরও চার প্রকার বিয়ে এগুলো হচ্ছে-
(১) দৈব (২) আর্য (৩) প্রাজাপত্য (৪) পৈশাচ
-পৈশাচ ছাড়া অন্য বিয়েগুলো ছিল মন্ত্র ও যজ্ঞ নির্ভর। এই আট রকম বিয়ের মধ্যে বেশিরভাগ পন্ডিতরা ব্রাহ্ম, আর্য ও প্রাজাপাত্য বিয়েকে উন্নত ও আধ্যাত্মিক বিয়ে নামে অভিহিত করেছেন। শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্ন পাত্রের কাছে যজ্ঞ ও মনোচ্চারণসহ কন্যাদানের নাম ব্রাহ্ম বিয়ে। যজ্ঞাদিসহ অলঙ্কারাদি দিয়ে সাজিয়ে কন্যাদান দৈব বিয়ে। বরের কাছে থেকে এক বা একাধিক গোমিথুন নিয়ে কন্যাদান আর্য বিয়ে। ‘উভয়ে মিলিত হয়ে ধর্মাচরণ কর’-এই উপদেশ দিয়ে অর্চনা সহকারে কন্যাদান প্রাজাপাত্য বিয়ে। অন্য চার প্রকার বিয়ের মধ্যে পৈশাচ বিয়ে, ঘুমন্ত অবস্থায় কিংবা নেশাদ্রব্যে অজ্ঞান করে কোনো মেয়ের সতীত্ব নষ্ট করে তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করাকে বোঝায়। মেয়ের আত্মীয় স্বজনকে যুদ্ধ বা অন্যভাবে পরাজিত করে কোনো মেয়েকে জোর করে বিয়ে করাকে বলা হত রাক্ষস বিয়ে। অর্থের বিনিময়ে মেয়ে কিনে তাকে বিয়ে করার নাম ছিল আসুর বিয়ে। গান্ধর্ব বিয়ে মলত প্রেমজ বিয়ে। পিতা-মাতার অজ্ঞাতে দু’জনের সমমতিক্রমে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হত। আধুনিককালের লাভ ম্যারিজ এই বিয়ের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
সমাজ মনোবিজ্ঞানী ওয়েস্টমার্ক রাক্ষস বিয়েকে ম্যারিজ বাই ক্যাপচার এবং আসুর বিয়েকে ম্যারিজ বাই পারচেজ নামে অভিহিত করেছেন। একুশ শতকের প্রারম্ভকাল পর্যন্ত হিন্দু সমাজ বিশেষত বাঙালি হিন্দু সমাজে প্রাজাপাত্য বিয়েই প্রচলিত। এখনকার মত আগের দিনের হিন্দু বিয়েও বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হত। নৈষধচরিত নামক গ্রন্থ্থে সেকালের বিয়ে সম্পর্কে বলা হয়েছে প্রথমে কন্যাকে স্নান করানো হত, স্নান পূর্ব সমাধা করতেন সধবা ও পুত্রবতী মহিলারা। স্নান শেষে কনেকে পরানো হত পাটের কাপড়। এতে দময়ন্তির বিয়ের সাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে সখীরা তার কপালে দিলেন মনঃ সীলার তিলক, সোনার টিপ, চোখে আঁকলো কাজল, কানে দু’টি মনিকুন্ডল, ঠোঁটে আলতা, গলায় সাতলহোর মুক্তোর মালা, দু’হাতে শখ ও স্বর্ণ বলয়। এখন বাঙালি হিন্দুদের বিয়ে সাধারণত স্থায়ী হয় তিনদিন ধরে। এতে বর-কনে ছাড়া প্রধান ভূমিকায় থাকেন পুরোহিত, ক্ষৌরকার, ভগ্নিপতি, বর-কনের বাবা-মা ও অন্যান্যরা।
স্থায়ী আচার হিসেবে পালিত হয় গায়ে হলুদ, ছাদনাতলার আচার, বৌভাত, ফুল শয্যা ইত্যাদি। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে পিতৃ পুরুষের প্রীতির জন্য পালিত হয় আভ্যুদায়িক ও কন্যা সম্প্রদান। এরপর হয় সিঁদুর দান। বিয়ের দ্বিতীয় রাতকে বলা হয় ‘কাল রাত্রি’ এ রাতে বর-কনে আলাদা রাখা হয়। আর পরদিন বৌভাত শেষে অনুমতি দেয়া হয় বর-কনের একসঙ্গে থাকার। শুরু হয় ফুল শয্যা।
বাঙালি হিন্দুদের বিয়ে হয় সাধারণত রাতের বেলা। বর্ণ ভাগের কারণে হিন্দুদের মধ্যে লোকাচার অধিক। অঞ্চল ও সম্প্রদায় বিশেষে লোকাচারের চেহারাও হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন। এখানে উলেস্নখযোগ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ মহর্ষি দেবন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবর্তিত ব্রাহ্ম সমাজের বিয়েতে সনাতন পন্থ্থী হিন্দুদের মত শুভ দিনক্ষণের তেমন কোনো বালাই নেই। নেই পণ প্রথা এবং গোত্র বিচার। বিয়ে অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য। আশীর্বাদ শেষে উপাসনা ও ব্রাহ্ম সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বিয়েতে বর আসেন কনের বাড়িতে। পুনরায় ব্রাহ্ম উপাসনা ও ব্রাহ্ম সঙ্গীত শেষে বর কনের পরসপরের দায়িত্ব নেয়ার শপথ নেয়, এরপর আবার আশীর্বাদ এবং অভিভাবকদের পাত্র-পাত্রী সম্প্রদান এবং বর কনের মধ্যে মালা বদল ও আংটি বিনিময় করা হয়। এরপর হয় উৎসব। ব্রাহ্ম বিয়ে হয় ‘সেপশাল ম্যারিজ এ্যাক্ট’ অনুসারে।
খ্রীষ্টান বিয়ে
খ্রীষ্টানদের মধ্যে কন্যদায় বলে কিছু নেই। বর পক্ষকন্যা পক্ষের দ্বারস্থ হন। উপাসনালয় গীর্জায় নাম -পরিচয় রেজিস্ট্রার হলে পরে পরপর তিন রবিবার পুরোহিত (পাদ্রী) প্রস্তাবিত বিয়ের ঘোষণা দেন। গীর্জায় দু’জন সাক্ষীর সামনে বর-কনে নিজেদের সমমতি প্রকাশ করেন। অতঃপর মন্ত্র পাঠ শেষে বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় গীর্জার খাতায়। সেখান থেকে দক্ষিণা দিয়ে বর-কনেকে সংগ্রহ করতে হয় ‘ম্যারিজ সার্টিফিকেট’। এরপর যার যার বাড়িতে চলে নানা রকম আনন্দ অনুষ্ঠান। সাধারণত চৈত্র ও কার্তিক মাসে বাঙালি খ্রীষ্টানরা বিয়ে করে না। উলেস্নখ্য, খ্রীষ্টান সম্প্রদায় ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট নামে বিভক্ত। তাদের বিয়ে অনুষ্ঠানে নানারকম পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রোটেস্ট্যান্টরা আনুষ্ঠানিকতাকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
বৌদ্ধ বিয়ে
বাঙালি বৌদ্ধ সমাজে চলন্ত ও নামন্ত নামের দু’ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা যায়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বেশ কিছু অঞ্চলে নামন্ত বিয়ে প্রচলিত রয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে বিয়ে হয় বরের বাড়িতে। অর্থাৎ কনে বিয়ে করতে আসে বরের বাড়িতে। এরূপ বিয়েকে বলা হয় চলন্ত বিয়ে। বৌদ্ধ সমাজে বিয়েতে গোত্রভেদ ও পণপ্রথা নেই। বৌদ্ধ বর মামাত বোনকে বিয়ে করতে পারে। আচার অনুসারে আষাঢ়ী পর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পর্ণিমা পর্যন্ত ‘বর্ষাবাস’ জন্ম ও অশৌধ বর্ষ। পৌষ ও চৈত্র মাস এবং বড় ছেলে হলে জ্যৈষ্ঠ মাস বিয়ের ক্ষেত্রে বর্জনীয় হয়। বিয়ের সচনা পূর্বে কনের আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দেয় বর নয় বরের ছোট ভাই। তারপর শুভ দিন ধার্য করে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রচলিত নিয়ম রীতি ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে।
বিয়ে এবং যৌবনকাল
যৌবনকাল বলতে কি বোঝায় এটা বোঝানো বেশ কঠিন ব্যাপার। জীব মাত্রেরই জন্ম ও মৃত্যু আছে। এর মাঝে তারা যেকালের সমমুখীন হয় সে সময়কে সাধারণত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন-শৈশবকাল, কৈশোর কাল, যৌবনকাল, প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ কাল। এর মধ্যে যৌবনকাল হল মানব জীবনের পরম ও চরমতম সময়। এ সময় বড়ই কঠিন সময়, কনফিউজিং সময়।
পুরুষের যৌবনকাল
সাধারণত ১১-১৩ বছর বয়সের মধ্যে কিশোর শরীরে এক বিপস্নবাত্মক পরিবর্তন ঘটে থাকে। শরীর বৃদ্ধি পায়, মাংসপেশি বহুল হয়। ছেলেদের দেহ অভ্যন্তরে থাইরয়েড অ্যাড্রিলেন এবং পিটুইটারি প্রভৃতি গ্রন্থ্থিসমূহ সবল হয়। অন্ডকোষ সক্রিয় হয়ে নতুন প্রাণ সৃষ্টিকারী শুক্র কীটের জন্ম দিতে শুরু করে দেয়। এসময় ওষ্ঠ ও গন্ড দিয়ে গজিয়ে ওঠে পৌরুষের ছাপ, শ্যামল আভরণ আর যৌন প্রদেশে দেখা দেয় অনুরূপ প্রকাশ। সাধারণত আঠারো বছর থেকে শুরু করে প্রায় চলিস্নশ বছর পর্যন্ত বয়সকে যৌবনকাল ধরা যায়।
নারীর যৌবনকাল
পুরুষের মত নারীর যৌবনেও আসে লক্ষণীয় পরিবর্তন। আসে উন্মত্ততা, মতোয়ারা ভাব। এ সময় মেয়েদের দেহ তার পূর্ণতা লাভ করতে শুরু করে। এ সময় মেয়েদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, ওজন বাড়তে শুরু করে। নিতম্ব বিস্তৃত-প্রশস্ত হতে শুরু করে। স্তন বিকশিত হয়ে তার সৌন্দর্যময়তা প্রকাশ করতে থাকে। নারীর গন্ড দেশ, উরু, বাহুকৃষ্ণ ঘন কেশ, মুখের উজ্বল লাবণ্য দেহের মসৃণতাকে অপরূপ রূপে সাজিয়ে তোলে। এ সময় মেয়েদের যৌন গ্রন্তিগুলো (সেক্সুয়াল গস্ন্যান্ডস) সক্রিয় হয়ে ওঠে। যৌন প্রদেশ ও বগলে রেশমী ঘন কৃষ্ণ লোম রাশি আবির্ভত হয়। হয়ে ওঠে অপরূপ সৌন্দর্য্যের আধার। একদিন হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিত ভাবে ঋতুস্রাব এসে নারীকে জানিয়ে দেয় তুমি এখন আর সেই কিশোরীটি নও। তুমি এখন পরিপূর্ণ একজন যুবতী-ভবিষ্যত সন্তান জন্মদানের জন্য সদা প্রস্তুত এক আকর্ষণীয় নারী।
এই যুবতী হওয়ার সাথে সাথেই মেয়েদের মধ্যে দেখা দেয় পুরুষের ছোঁয়া পাবার এক চৌম্বকীয় অস্থিরতা। পুরুষকে ঘনিষ্ঠভাবে কাছে পাবার তীব্র বাসনা-আকাক্ষা। এ বয়সে নতুন সামাজিক প্রত্যাশা ও নতুন জীবন ধারার আঙ্গিকে নারী-পুরুষ নিজেকে সামাঞ্জস্যপূর্ণ করে নেয়ার চেষ্টা চালায়। মা-বাবা ও উপার্জনক্ষম অন্যান্য ব্যক্তির দায়িত্বের মত নতুন নতুন করণীয় সম্পর্কে যুবক-যুবতীদেরকে সচেষ্ট হতে হয়। এর পাশাপাশি যথাযোগ্য আগ্রহ, মনোভাব এবং মল্যবোধও গড়ে তুলতে হয়। যৌবনকালে পদার্পূণ করার সাথে সাথে যুবক-যুবতীকে নতুন দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা নিজ প্রচেষ্টায় অর্জন করে নিতে হয়।
এ বয়সেই ছেলে-মেয়েদের মনের মাঝে প্রেম-ভালোবাসা দেয়া ও নেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, তৈরি হয় রোমান্টিক আগ্রহ, রোমান্সের বেলা। এসময় ছেলেরা চায় মেয়েদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য আর মেয়েরাও চায় ছেলেদের নিবিড় সান্নিধ্য ও উষ্ণ পরশ এবং সুখের ছোঁয়া। অনেক যুবক আবার এ সময় সারা জীবন সন্তু্তুষ্টি বিধান করবে এমন গুণের অধিকারী একটি স্ত্রীর অনুসন্ধান করতে থাকে। একইভাবে আধুনিক যুগের যুবতীরা সাংসারিক জীবন শুরুর আগে প্রচেষ্টামূলক পর্যায় অতিক্রম করে। অনেকে এ বয়সে চাকরি নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে, বিয়ে না করে শুধু শুধু চাকরি-বাকরি করে নিঃসঙ্গ জীবন কাটানো সম্ভব নয়-তাই তারা সংসার ও কর্ম জীবন একই সাথে সমান গুরুত্ব দিতে ভালোবাসে। অপেক্ষাকৃত বয়স্কা যুবতী মেয়ে এ বয়সে বিভিন্ন পুরুষের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে পছন্দমত স্বামী নির্বাচন করে।
আগেই বলা হয়েছে যে, যৌবনকাল খুবই কঠিন সময়। কনফিউজিং সময়। তাই এ সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখাটা দারুণ কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে অনেকেই যৌবনের নিয়ন্ত্রণহীন তাড়না-যাতনা সহ্য করতে না পেরে নানারকম অবৈধ পথে যৌবনের উন্মত্ততা দমন করতে চেষ্টা করে ফলে অনেক সময়ই দেখা দেয় চরিত্রের অধঃপতন, নৈতিক বিপর্যয়। যে বিপর্যয় হয়ত মানুষকে অমানুষের স্টেজে নিয়ে দাঁড় করাতে পারে, করাতে পারে দৃষ্টিকটূ, অগ্রহণযোগ্য কার্যকলাপ। তাই এ সময় নিজেকে যথা সম্ভব বশে রেখে উপযুক্ত কাজ কর্মের যথাযোগ্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা করে বিয়ের পিঁড়িতে বসার সুন্দর সৎ চেষ্টা করা প্রয়োজন যা কিনা পরবর্তী জীবনে আনন্দময় সুখের সম্ভাবনা বয়ে আনবে। সেই সাথে চরিত্র ও নিষকলুষ থাকবে যৌবন থাকবে অটুট সক্ষম। সংসার জীবনেও দেখা দেবে চরমশান্তি তৃপ্তি ও মধুরতম দাম্পত্যময়তা উষ্ণ সুখের ছোঁয়া।
বিয়ে এবং বয়স
বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন (১৯২৯) এই আইনে আগে ছিল মেয়ের ক্ষেত্রে ১৪ বছর এবং ছেলের ক্ষেত্রে ১৬ বছর, কিন্তু্তু এখন মেয়ের ক্ষেত্রে ১৬ বছর এবং ছেলের ক্ষেত্রে ১৮ বছর পূর্ণ না হলে বিয়ে দেয়া যাবে না। কিন্তু্তু এই আইনে বাল্য বিবাহ যদি হয়েই যায় তবে সে বিয়ে বাতিল হবে না কিন্ত যারা এ বিয়ে সম্পন্ন করবে আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হওয়ার কথা।
ইসলামে বালেগা হওয়ার পরেই বিয়ে দেয়ার অনুমতি আছে। তবে এর পূর্বে বালিকার বা একেবারে বৃদ্ধারও বিয়ে নিষেধ করা হয়নি। আজকাল বিয়েতে পুরুষের ২২-২৮ বছর এবং মেয়েদের ১৮-২৪ বছর বয়সই প্রশস্ত। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ৪-১০ বছরের পার্থক্য থাকাটা বাঞ্ছনীয়। আইনে বাল্য বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে মেয়েদের লেখাপড়া বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে স্বামীর সঙ্গে বিদ্যা ও বুদ্ধির পার্থক্য অনেক বেশি থাকায় তারা যোগ্য স্ত্রী হতে পারে না।
বাংলাদেশে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বিয়ের হার প্রায় ১৬ গুণ বেশি। ৭৫ ভাগ মেয়ে ১৬ বছরের আগেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, আর ১৫-১৯ বছরে আবদ্ধ হয় শতকরা ৫০ জন। দেশের সকল সক্ষম দম্পতির ৪৭% এ বয়সের। এ বয়সে প্রায় ৩৭ ভাগ মেয়ে গর্ভবতী হয়। মাতৃমৃত্যু প্রতি হাজারে প্রায় ৫.৮ ভাগ (জন)।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, আদর্শ বয়সে বিয়ে দেয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ বিয়ে যেমন খুব  কম বয়সে দেয়া ঠিক না, তেমনি ঠিক নয় অধিক বয়সেও বিয়ে দেয়া। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের সুতো ধরে আসা শারীরিক পরিবর্তনের কিছু দিন পর থেকেই নারী-পুরুষের দৈহিক অনুভূতি উপলব্ধির সম্ভাবনা আরম্ভ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর প্রবণতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবার এক সময় তা কমতেও শুরু করে দেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ৩৫ বছরের পর থেকে নারী-পুরুষ স্বাভাবিক যৌণক্ষমতা, উত্তেজনা ও যৌন আকাক্ষা কমতে শুরু করে। দেখা দেয় যৌবনে ভাটা। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫ বছরের বেশি বয়সের নারীদের অন্তত ৫ শতাংশ কখনই চূড়ান্ত যৌনসুখ (অর্গাজম) আস্বাদনে সক্ষম হন না। ফলে দেহমনে দেখা দেয় ক্লান্তির ছায়া। নানা প্রকার মানসিক চাপ। তাই আদর্শ বয়সে বিয়ে করাটা হবে আদর্শ বুদ্ধিমানের কাজ।
বিয়ের রেজিস্ট্রিকরণ
১৯৬১ ও ১৯৭৪ সালের অর্ডিন্যান্সের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি বিয়ের রেজিস্ট্রি হতে হবে। কাজেই প্রতিটি নারী-পুরুষেরই এ বিষয়ে সজাগ সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন যাতে বিয়েতে আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করা হয়। কারণ এতে করে বিয়ে হবে পাকাপোক্ত আরো মজবুত গ্রহণযোগ্য।
বিয়েতে স্বামী নির্বাচনে মেয়েদের অধিকার
মেয়ে তা সে অবিবাহিত হোক বা তালাকপ্রাপ্ত হোক কিংবা বিধবা হোক সে তার বিয়ের জন্য উত্থাপিত যে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখানের ব্যাপারে পুরো স্বাধীন। কোনো মেয়ে বা মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়ার অধিকার তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ভগ্নিপতি, চাচা-চাচী, মামা-মামী বা কোনো দায়িত্বশীল অভিভাবক কারোরই নেই।
কারণ সংসার করবে যে মেয়ে সেই তার পছন্দমত জীবন সঙ্গী নির্বাচন করবে। এটাই স্বাভাবিক এটাইতো বাঞ্ছনীয় হওয়া প্রয়োজন। বিয়ের সময় মেয়ের কাছে যদি অনুমতি চাওয়া হয় এবং সে যদি তাতে চুপ করে থাকে এবং কোনোরূপ বাধা বা কোনো রকমের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে তবে সেটাকে তার অনুমতি হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু্তু বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত মেয়ের বিয়ে যদি তার পরামর্শ ও সপষ্ট ভাষায় অনুমতি ছাড়া করে দেয়া হয় তাহলে সে বিয়ে বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে অবিবাহিত বা কুমারী মেয়ের থেকে যদি সপষ্ট অনুমতি না নেয়া হয়ে থাকে তবে বিয়ের পর সেই বিয়েকে ভঙ্গ করা অথবা ঠিক রাখার ব্যাপারে ইসলামে তার স্বাধীনতা রয়েছে।
অবিবাহিত জীবন বা বৈরাগ্যবাদ
প্রাচীন সমাজে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিকভাবে অপূর্ণ মনে করা হত এবং তাকে প্রভুর নৈকট্য লাভের অযোগ্য মনে করা হত। সুতরাং সে যুগের সাধু ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভের জন্য সংসার ধর্ম বর্জনকে জরুরি মনে করতো। তারা সবরকমের পার্থিব তৎপরতা থেকে নিজেকে পৃথক করে নিয়ে ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়তো। এই জন্যে তপ্‌জপ্‌কারী ব্যক্তি বিয়ে শাদীর ঝামেলায় পড়তে চাইতো না কেননা তাদের মতে এতে করে মানুষের আবেগ উজ্জীবিত হয়ে উঠে এবং মানুষ সংসারমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু্তু প্রাচীন অন্ধকার যুগের সেই বাতিল ও ভুল ধারণাকে সমলে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে ধর্ম এবং বিয়েকে পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের সুন্দর মাধ্যম বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও বৈরাগ্যবাদকে সমর্থন করে না। করে না উৎসাহিত।
কারণ বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার মনকে নতুনত্বের স্বাদ দিতে পারে-দিতে পারে দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা দূর করে মনের প্রফুলস্নতা। বিয়ে হচ্ছে পরিবার ও সমাজের বুনিয়াদ। কেবল বিয়ের মাধ্যমেই যে কোনো মানুষ তার লজ্জা স্থানের শক্তি, সামর্থ্য, সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। বিয়েকে অস্বীকার করা মানেই হচ্ছে মানবতার মল অস্তিত্ব ও তার বিকাশকেই অস্বীকার করা। বন্ধ করে দেয়া নতুন মেহমানের আগমন পৃথিবীর বুকে। যা কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। সুতরাং বৈরাগ্যবাদ নয় বিয়েই হোক অস্তিত্ব রক্ষাকারী মল হাতিয়ার।
বিয়ে এবং যৌনতা
যৌনতার প্রতি নারী-পুরুষের আকর্ষণ একেবারে প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক। বিয়ের ফলে একজন নারী যৌন জীবনে প্রবেশ করে। বিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন-ভালোবাসার বন্ধন-দাম্পত্যের বন্ধন। একজন পুরুষ ও একজন নারীর একত্রে সহাবস্থানের অঙ্গিকারকে বিয়ে বলা যেতে পারে। নারীর জীবনে বিয়ের ফুল শয্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। অনেক নারীই এটিকে ভয় পায়। বিশেষ করে যারা নানা রকম কুসংস্কার দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে তারা। বিয়ের প্রথম রজনীতে বিভিন্ন রকমের অপ্রীতিকর কর্মকান্ড ঘটতে পারে। আমাদের এই উপমহাদেশে বিয়ের সময় নানা রকমের অনুষ্ঠানের আড়ম্বরপূর্ণ ব্যবস্থা থাকলেও বিয়ের পরবর্তী যৌন জীবনের ওপর পারিবারিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নারীকে দেয়া হয় না। নারীর বিয়ে পরবর্তী যৌন জীবনে বহু রকমের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই জাতীয় সমস্যাগুলো জেনেটিক বা বংশগত কারণেও হতে পারে। আবার অনেক সময় এর কারণ নিতান্তই অজ্ঞানতা হয়ে থাকে। তবে যৌন জীবনে যে কোনো প্রকার সমস্যাই নারী এবং পুরুষ উভয়কেই ভাবিয়ে তুলতে পারে সমানভাবে। যা কিনা পরবর্তী জীবনেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সবাইকে জানার চেষ্টা করতে হবে বিয়ের সাথে সেক্সের কি সম্পর্ক রয়েছে। জানতে হবে কিভাবে নারী-পুরুষ একে অপরের সাথে গভীরভাবে মিশে যায় একাকার হয়ে যায়। আর এই জানার মাধ্যমেই অনেক অজানা রহস্য উদঘাটিত হবে, প্রকাশিত হবে মানব-মানবীর বিয়ের মল রহস্য।
 Syed Rubel
FACEBOOK ME
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

1 টি মন্তব্য :

টিপলু বলেছেন...

ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরার জন্য।