মস্তিষ্ক সচল রাখতে কী খাবেন

1 টি মন্তব্য
ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম
বুঝেশুনে খাবার খেলে যদি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়, হৃদযন্ত্র সচল রাখা যায় তাহলে মগজকে কেন শাণিত করা যায় না? অবশ্যই যায়। এ ব্যাপারে প্রথম পরামর্শ হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিকর জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ক্ষতিকর যৌগগুলোকে ভেঙে ফেলে। ফলে কোষগুলো থাকে কর্মক্ষম আর তারুণ্যদীপ্ত। তাছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিরা-ধমনীর স্তিতিস্থাপকতা বাড়ায়, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হৃৎপিণ্ড সচল, মগজটাও টনটনে। প্রাণিজ আমিষ খেয়ে শরীরে হিমোসিস্টিন নামক এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই হিমোসিস্টিন উৎপাদনের প্রক্রিয়াও বেড়ে যায়। এই হিমোসিস্টিন ধমনীর প্রাচীরে জমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই মাছ-মাংস পরিমিত খাওয়াই সঙ্গত। তাহলে কী খাবেন? আগেই বলা হয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার। মূলত ভিটামিন-ই এবং সি হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন। দুধ, কলিজা, সয়াবিন, সবুজ শাকসবজি, ফলমূলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। সমপ্রতি পশ্চিমা গবেষকরা নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন। এগুলো হলো পালং শাক, ব্লু-বেরি এবং স্ট্র বেরি। সয়াবিন আর রসুনের প্রতিও তারা আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের যুক্তিটা হলো রসুন, সয়াবিন রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল সুষ্ঠু হয় এবং মস্তিষ্কের  কোষগুলোও সচল থাকে। বিজ্ঞানীরা ফলিক এসিডসহ ভিটামিন বি-কমপ্ল্লেক্সের অন্যান্য ভিটামিনের প্রতিও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন একই কারণে। বিশেষ করে হিমোসিস্টিন দূর করতে ভিটামিন বি ১২-এর জুড়ি  নেই।
তরুণদের প্রয়োজন যথাযথ কাউন্সিলিং
আমি বহুবার একথা লিখেছি যে, আমাদের তরুণ বা যুবসমাজের মধ্যে  কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই। অন্তত শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। প্রায় তিন সহস্রাধিক তরুণের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে তাদের আর যাই থাকুক কোনো ধরনের যৌন বা শারীরিক সমস্যা নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাজোসপারমিয়া ও অলিগোসপারমিয়া ধরা পড়েছে যা কোনোভাবেই শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে না। এসব তরুণ ও যুবকদের অন্তত শতকরা ৩০ ভাগ বিবাহিত। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫ দম্পতিকে কাউন্সিল করতে হয় যাদের কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই। অথচ এরা অজ্ঞতা ও মানসিক শক্তি হীনতার কারণে দাম্পত্য জীবনে সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন। এসব তরুণ-যুবক, ক্ষেত্রবিশেষে মধ্যবয়সী থেকে শুরু করে পঞ্চাশ-ষাটোর্ধ্ব পুরুষেরাও ছুটছেন হারবাল চিকিৎসা, তথাকথিত সেক্স বিশেষজ্ঞদের কাছে। আর আমাদের মতো চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞগণ তরুণ সমাজের এই দুর্বল অবস্থাকে পুঁজি করে বিশাল বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। আমি বহুবার লিখেছি যৌন সমস্যা ও যৌনরোগ এক নয়। শারীরিকভাবে অসুস' নয় অথচ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন যারা এদের জন্য প্রয়োজন যথাযথ কাউন্সিলিং। এ ধরনের কাউন্সিলিং করতে হলে প্রতিটি  রোগীর জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময়। এসব বিভ্রান্ত তরুণ ও দম্পতিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বোঝানো গেলে এদের স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে। অথচ আমরা ডাক্তাররা যারা শারীরিক সমস্যা চিকিৎসার লাইসেন্সধারী হিসেবে দাবি করি এবং  রোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করে গাড়ি-বাড়ি, সম্পদের মালিক হয়েছি তারা কি রোগীদের সময় দিই। অবশ্য ব্যতিক্রম ২-১ জন সব পেশায়ই থাকেন। আমরা কি প্রতিটি রোগীর জন্য ৩০-৪০ মিনিট দূরে থাকুক ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত সময় দিই। জবাব হবে দিই না। তরুণ যুবক বা দম্পতিগণ অনেক আশা নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে যান। এদের কজন আশার বাণী নিয়ে ফেরেন। এ প্রশ্ন যদি আজ করা হয় জবাব হবে কেউ না। রোগী পেলেই সমস্যা শোনার আগেই প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে বিদায় করে দিই। লিখে দিই একগাদা উত্তেজক ওষুধ। অথচ একবারও ভাবি না এই তরুণটি তো হতে পারত আমার সন্তান, আমার ভাই, আমার আত্মীয়। তাহলে কি তাকে উত্তেজক ওষুধের ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারতাম। শুধু তাই নয়, যদি তরুণদের এ ধরনের সমস্যা নিয়ে কোনো মানসিক চিকিৎসকের কাছে যান তবে এমন সব ওষুধ দেয়া হয় যে অনেক ক্ষেত্রে সত্যি সত্যিই মানসিক রোগীতে পরিণত হন অনেকে। অথচ মমত্ব আর ভালোবাসা দিয়ে এই বিভ্রান্ত বিশাল যুবসমাজকে সঠিক পরামর্শ দেয়া গেলে এদের বিভ্রান্তি দূর করা যায়। প্রয়োজন হয় না কোনো অপ্রয়োজনীয় উত্তেজক ওষুধ  সেবনের।
এসব গেল তো আমরা যারা চিকিৎসা করি তাদের কথা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো দেশে কোনো বিজ্ঞানসম্মত অ্যালোপ্যাথিক সেক্স মেডিসিন নেই। এক শ্রেণীর হারবাল ও আর্য়ুবেদিক কোম্পানি বিভিন্ন নামে বাজারজাত করছে বিপুল সংখ্যক উত্তেজক ওষুধ। আর ফার্মেসি থেকে বিক্রয় হচ্ছে অবাধে এসব ওষুধ। কোনো ধরনের প্রেসক্রিপশন বা ডাক্তারি পরামর্শের দরকার হয় না। হোমিওপ্যাথি ডাক্তাররাও আজকাল উত্তেজক ওষুধ দেন। ফলে ব্যাপক সংখ্যক তরুণ, যুবক, দম্পতি এসব অপ্রয়োজনীয় উত্তেজক ওষুধের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। ফলে এদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় বা ফিজিওলজিক্যাল সামর্থ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে হয়ে পড়ছেন মানসিকভাবে অসুস্থ, অসামর্থ্য। ভেঙে যাচ্ছে অনেক দম্পতির সোনার সংসার। এই অবস্থা থেকে বিশাল তরুণ, যুবসমাজ ও বহু দম্পতিকে মুক্তি দিতে পারে শুধু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সেবা-সহযোগিতার মনোভাব। খানিকটা মমতার পরশে কাউন্সিলিং করা গেলে এরা আবার স্বাভাবিক হতে পারেন। আর একটি কথা সকল চিকিৎসকের মনে রাখতে হবে কোনো অবিবাহিত তরুণ-যুবক যাতে কোনো ধরনের উত্তেজক ওষুধ সেবন না করে তার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। উত্তেজক ওষুধ মারাত্মক ক্ষতিকর এক বিষ। এটা হেরোইন, মরফিনের চেয়েও ভয়ংকর। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি প্রতীয়মান হয় রোগী সত্যি সত্যিই শারীরিক সমস্যায় আক্রান- তাহলে তিনি নিশ্চয়ই কোনো বিজ্ঞানসম্মত ওষুধ দিতে পারেন, উত্তেজক ওষুধ নয়। তবে এদের সংখ্যা হাতে গোনা ২-১ জনের বেশি নয়। শুধু চিকিৎসকেরই দায়িত্ব সবকিছু দেখার, তাই নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধীনস' সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও দায়িত্ব আছে এসব দেখার। ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে বেশির ভাগ উত্তেজক ওষুধের কোনো অনুমোদন নেই। এসব ওষুধের উপাদানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেশানো হচ্ছে ভায়াগ্রা জাতীয় ওষুধের উপাদান। এসব দেখার দায়িত্ব ড্রাগ প্রশাসনের।
যা বলছিলাম তরুণ সমাজ, তরুণ দম্পতি কারও উচিত নয় ক্ষতিকর উত্তেজক ওষুধ সেবনের। অজ্ঞতা ও মানসিক সমস্যা দূর করতে প্রয়োজন যথাযথ কাউন্সিলিং, ওষুধ নয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণই পারেন তরুণদের স্বাভাবিক জীবনের পথে ফিরিয়ে আনতে।
লেখকঃ চুলপড়া, চর্মরোগ ও অ্যালার্জি এবং
যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ
লেজার অ্যান্ড কসমেটিক সার্জন
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার
বাড়ি-৩৯ (আম্বালা কমপ্লেক্স)
রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা।

post by @ 
মনোজগত
   


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।  প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু