হীনম্মন্যতা মারাত্মক ব্যাধি
অধ্যাপক ডা. মো. তাহমিনুর রহমান সজল
নিজেকে
 অপরের থেকে ছোট ভাবা একটি মারাত্মক মানসিক সমস্যা যা পরিবারে, সমাজে, 
রাষ্ট্রীয় জীবনে বিপর্যয় আনতে পারে। এর প্রত্যক্ষ উদাহরণ ঘটেছে গত জুন ২০১১
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উচ্চশিক্ষিত নারী তার বেকার শিক্ষিত, হীনম্মন্য
 স্বামীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়া। এটা শুধু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা মিডিয়ার 
বদৌলতে প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম অসংখ্য ঘটনা আমাদের চারপাশে ও পরিবারে, দেশে 
বিদেশে অহরহ সংঘটিত হচ্ছে।
হীনম্মন্যতা বা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স কী?এটা এক ধরনের অনুভূতি যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে মনে করে দেয় সে অন্যদের তুলনায় নিচু বা নিকৃষ্ট কিছু ব্যাপারে। এটা কোনো কোনো সময় অবচেতনভাবে জন্ম লাভ করে; তবে ব্যক্তি এটার প্রকাশ ঘটায় কিছু অভাবনীয় সাফল্যজনক কাজ করে বা মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকদের মতো মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
হীনম্মন্যতা তৈরি হওয়ার কারণ?
সাধারণত চারটি প্রধান কারণে হীনম্মন্যতা তৈরি হতে পারে। এগুলো হচ্ছে-
১. বাবা-মায়ের আচরণ এবং তাকে অযত্নে বড় করে তোলা। বাবা-মা সন্তানকে সব সময়ই নেগেটিভ অ্যাটিচুড, সবকিছুতে না বলা, সন্তানের চাহিদা ও ব্যবহারে এনালাইজ না করা, বিশেষত ছয় বছর বয়সের আগে এই হীনম্মন্যতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া বাবা-মায়ের সম্পর্ক খারাপ হলে ঝগড়া-ঝাঁটি করলে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলে, মতের মিল না হলে, এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া চলাফেরা না করলে, সন্তানদের সঠিক পর্যাপ্ত সময় না দিলে, তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ না করলে এবং প্রতিটি ভালো কাজে উৎসাহ না দিলে, খারাপ কাজ করার জন্য অনুৎসাহিত না করলে বাচ্চাদের হীনম্মন্যতায় ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. শারীরিক ত্রুটি। মুখ ও শরীরের অস্বাভাবিকতা, উচ্চতা সঠিক না হওয়া, ওজন বাঞ্ছিত না হয়ে মেদশূন্য বা মোটা বা খুব পাতলা হওয়া, কথার সমস্যা, চোখের সমস্যা, কানের সমস্যা ইত্যাদি হীনম্মন্যতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
৩. মানসিক সীমাবদ্ধতা। যখন অন্য সন্তান বা অন্যদের ভালো কাজের প্রশংসা এবং তুলনা করা হয় যেখানে মোটামুটি সন্তোষজনক ফলাফল হলেই প্রত্যাশিত ছিল-এ ধরনের অবস্থা অন্য সন্তানকে হীনম্মন্যতা তৈরিতে সাহায্য করে।
৪. সামাজিক অসুবিধা এবং বৈষম্য। বিশেষত পরিবার, বর্ণ, গোত্র, যৌনশিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ধর্ম হীনম্মন্যতা তৈরির জন্য দায়ী।
হীনম্মন্যতার প্রকারভেদ
হীনম্মন্যতাকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি প্রাইমারি অন্যটি সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হীনম্মন্যতা বলতে উঠতি বয়সের বাচ্চাদের দুর্বলতা, সাহায্য না পাওয়া এবং নির্ভরতায় আদি অভিজ্ঞতাকেই বোঝায়। সেকেন্ডারি হীনম্মন্যতা বলতে প্রাপ্তবয়স্কদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারা, যার জন্য অচেতনতা, সঠিক নির্দিষ্ট লক্ষ ঠিক না করা এবং হীনম্মন্যতার অনুভব দূর করার জন্য কোনো সাফল্য না পাওয়া বোঝায়। হীনম্মন্যতা বা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স কীভাবে দূর করা বা প্রতিরোধ করা যাবে
ক. পরিবারে বাবা-মা-ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন এ ধরনের কোনো বাচ্চা থাকলে তার সঙ্গে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে উৎসাহ দিয়ে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তুলনা না করে তাকে বোঝানো যে সে যা সেটাই তার জন্য স্বাভাবিক। বিনোদনমূলক কার্যক্রম, দেশে-বিদেশে ঘোরানো, খেলাধুলার ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত করার চেষ্টা করতে হবে।
খ. কোনো বহিরাগত ফ্যাক্টর যেমন ভালোবাসার পার্টনার, খ্যাতিমান হওয়ার চেষ্টা না করা বা অনেক ইনকাম না করা। এগুলো পরিত্যাগ করে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা যে আমার শক্তিতে চেষ্টায় আমি যা করছি সেটাই আমার জন্য সর্বোত্তম।
গ. তাকে এটা বোঝানো যে সে পবিত্র হয়েই জন্মগ্রহণ করেছে এবং এখন শুধু প্রোগ্রামড হয়ে অনুভব করছে যে সে হীনম্মন্য। পৃথিবীতে কেউ হীনম্মন্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না এটা তাকে বোঝানো। হয়তো কেউ তার থেকে একটু বা বেশি ভালো করছে তার নিজস্ব গুণে। কিন্তু সময় সুযোগ পরিস্থিতি পেলে তুমিও ভালো করবে।
ঘ. তোমার হীনম্মন্যতার জন্য তুমি দায়ী নও এটা বোঝানো।
ঙ. এটা বোঝানো যে বর্ণবাদীরা সব সময়ই নিজেদের হীনম্মন্য ভাবে এবং তারা অন্যদের হীনম্মন্য ভাবতে উৎসাহ দেয়।
চ. কমপেনসেশান দিয়ে হীনম্মন্যতার সমাধান হয় না। তুমি পয়সার জন্য, অবস্থানের জন্য, শক্তি এবং খ্যাতির জন্য অনেক কিছু অবৈধ করতে পার কিন্তু সেটা তোমাকে হীনম্মন্যতা থেকে রেহাই দেবে না।
ছ. এটা বোঝার চেষ্টা করবে আত্মবিশ্বাস অর্জন একটা শৈলী এবং এটা শিক্ষণীয়। কেউই আত্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কারণ আত্মবিশ্বাস জিন বলে কিছু নেই বরং তুমি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করলে সফলকাম হবে।
জ. ধর্মীয় অনুশাসন, রীতি-নীতি মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। পরিমিত আহার, সঠিক সময়ে নিদ্রাযাপন, শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি পানি গ্রহণ।
চিকিৎসা
যে কোনো পরিবারের কোনো সদস্য হীনম্মন্যতায় ভুগছে সন্দেহ হলে তাকে প্রতিরোধের জন্য উপরে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। এতেও কাজ না হলে বিশেষজ্ঞ মানসিক চিকিৎসক, সাইকোথেরাপিস্টের কাছে নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে এখন থেকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান প্যাথলজি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ধানমন্ডি, ঢাকা
Syed Rubel ON FacebooK
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
                      (
                      Atom
                      )
                    
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন