জেনে নিন! বিশেষজ্ঞের প্রশ্নোত্তরে বিষণ্নতা

কোন মন্তব্য নেই
 ১. প্রশ্নঃ ইদানীংকালে বিষণ্নতা রোগ সম্পর্কে অনেক শোনা যায় আপনি বলবেন কি বিষণ্নতা আসলে কি?
উঃ প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিষণ্নতা খুব বেশি পরিমাণে দেখা যায়। বিষণ্নতা আসলে একটি মানসিক রোগ। ইংরেজিতে একে বলা হয় ডিপ্রেশন। বিষণ্নতায় যারা ভুগে থাকেন তারা তাদের অনুভূতির ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পান। বিষণ্নতা রোগের ক্ষেত্রে কোনো কারণ থাকুক বা না থাকুক এ রোগটির জন্য আক্রান্ত নারী-পুরুষের দৈনন্দিন কাজে কর্মে দারুণ ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। রোগী ভেতরে ভেতরে খুবই কষ্ট পায়।
২. প্রশ্নঃ কোনো কিছু ভালো না লাগা ব্যাপারটি কি?
উঃ ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব এমন অনেককেই বলতে শুনবেন ‘ধুৎ! কোনো কিছু ভালো লাগছে না, সারাটা বেলা যেন কেমন কেমন লাগে’। এটিকে বলা হয় হাল্কামাত্রার বিষণ্নতা, এটিকে ডিসথেমিয়াও বলা হয়। এর মধ্যে ভালো না লাগার ব্যাপারটি অনেকদিন ধরে চলতে থাকে-তবে মজার কথা হল এই ভালো না লাগা অবস্থা তাদের কাজে কর্মে তেমন কোনো বিঘ্নতা তৈরি করে না। এই ধরনের লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে অনেক, অনেক।
৩. প্রশ্নঃ আপনি যে হাল্কামাত্রার বিষণ্নতা বা ডিসথেমিয়ার কথা বললেন এদের মধ্যে থেকেও কি কেউ পূর্ণমাত্রার বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে না?
উঃ হ্যাঁ, এদের মধ্যে থেকেও কিছু কিছু ব্যক্তির বিষণ্নতা রোগটি হতে পারে। এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
৪. প্রশ্নঃ এখন আমাদের অগণিত পাঠক/পাঠিকাদেরকে বিষণ্নতা রোগের লক্ষণগুলো জানাবেন কি?
উঃ যে কোনো রোগ হলেই সেই রোগের লক্ষণ জানা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত লক্ষণ দিয়েই তো এক একটি রোগকে চেনা যায় বা চেনার পথ সহজ হয়। বিষণ্নতার লক্ষণগুলো হল-মন সারাক্ষণ খালি খালি লাগা, কোনো কাজে উৎসাহ না লাগা, কোনো কিছুতে আগের মত আর কৌতূহল না লাগা, দীর্ঘমেয়াদি অশান্তিবোধ, দুশ্চিন্তাবোধ, খাদ্যগ্রহণে অরুচি, কোনো কোনো সময় খাদ্য গ্রহণ বেড়ে যাওয়া, ঘুম কম হওয়া, আবার কোনো কোনো সময় অধিক ঘুম হওয়া, আশাহত অনুভূতি ও নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা, সেক্স সম্পর্কে উৎসাহ কমে যাওয়া, অকারণ ক্লান্তিবোধ, কাজ-কর্মে ধীর হয়ে যাওয়া, পো হয়ে যাওয়া, মনোযোগের অভাব দেখা দেয়, অস্থিরতা ও ছটফটানি বেড়ে যায়, একটুতেই বিরক্তি লাগা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ব্যথা-বেদনা হতে থাকা, আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসা ইত্যাদি।
৫. প্রশ্নঃ জনসংখ্যার কতজন বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত?
উঃ আমাদের দেশে জনসংখ্যার শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ লোক বিষণ্নতা রোগে ভুগে থাকে।
৬. প্রশ্নঃ আচ্ছা আপনি যে বললেন জনসংখ্যার শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ ব্যক্তি বিষণ্নতা রোগে ভুগে থাকে-তাহলে এদের সবারই কি চিকিৎসার প্রয়োজন?
উঃ  অবশ্যই, অবশ্যই, কারণ ঠিকমত উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে বিষণ্নতায় আক্রান্ত অনেক লোকই আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে পারে।
৭. প্রশ্নঃ মানসিক রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা কি সবাই পায়?
উঃ পৃথিবীর কোনো দেশেই এই সংখ্যাটি বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ রোগী ডাক্তারের কাছে যায় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতই আমাদের দেশেও বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের রোগীর সংখ্যা অনেক। আমাদের মত দরিদ্র দেশে কজনই বা সব রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে। তবে আশার কথা হল বর্তমানে মানসিক রোগ সম্পর্কে যৎসামান্য হলেও অনেকেই জানতে পারছেন এবং অনেকেই বিষণ্নতা রোগের চিকিৎসা করাচ্ছেন-সুফল পাচ্ছেন।
৮. প্রশ্নঃ বিষণ্নতা রোগের কি কোনো ভাগ আছে?
উঃ হ্যাঁ, বিষণ্নতা রোগেরও ভাগ আছে। আমরা বিষণ্নতা রোগকে দুইভাগে ভাগ করতে পারি যথা-মৃদু রিয়্যাকটিভ বিষণ্নতা এবং বিষণ্নতা বা ইনডোজেনাস ডিপ্রেশন।
৯. প্রশ্নঃ মৃদু বা রিয়্যাকটিভ বিষণ্নতা কেন হয়?
উঃ এ রকমের মৃদু বিষণ্নতা পারিপার্শ্বিক কারণজনিত ব্যাপারে হতে পারে। তবে সুখের কথা হল মৃদু বিষণ্নতা রোগটি সাধারণভাবে সেরে ওঠে।
১০. প্রশ্নঃ ইন্ডোজেনাস ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উঃ এটি বড় ধরনের মানসিক রোগ। এর উৎপত্তি দেহের অভ্যন্তরে, ব্রেইনের মধ্যে। এটি একটি ব্রেইন ডিজিজ যা মানুষের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, অর্গান, নার্ভাস সিস্টেমের প্রতিটি কোষে কোষে মারাত্মক আক্রমণ করে দেহের বায়ো ক্যামিকেল পরিবর্তনের দ্বারা এর চিকিৎসা দরকার।
১১. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার লক্ষণ বলার সময় আপনি বলেছিলেন যে বিষণ্নতায় রোগীর আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে, অর্থাৎ কিনা রোগী আত্মহত্যা করে বসে, আচ্ছা এই বিষণ্নতাজনিত আত্মহত্যা কতজন করে থাকে?
উঃ বিষণ্নতা রোগটি একটি সিরিয়াস রোগ। এটা রোগীর শরীর, আবেগ, চিন্তা, চেতনায় আক্রমণ চালায়। বিষণ্নতা রোগের সাথে আত্মহত্যা শব্দটি ডাইরেক্টলি যুক্ত। আমেরিকা বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি এক মিনিটে একজন করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং প্রতি ২৪ মিনিটে ১জন করে সুইসাইডে সফল হয়। অর্থাৎ প্রতি ২৪ মিনিটে একজন বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যা করে। অতএব দেখা যাচ্ছে যে হত্যার চাইতে আত্মহত্যার সংখ্যাই বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছরে প্রায় ৫০০০০০ কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
১২. প্রশ্নঃ তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে আত্মহত্যা একটি মারাত্মক সমস্যা, আচ্ছা এটা কি রকম সমস্যা?
উঃ আত্মহত্যা একটি চিরস্থায়ী সমস্যা।
১৩. প্রশ্নঃ বিষণ্নতাজনিত আত্মহত্যার এই চিরস্থায়ী সমস্যার কি কোনো চিরস্থায়ী সমাধান নেই?
উঃ না, কোনো আপাত সমাধান দিয়ে এটা চিরস্থায়ীভাবে কমানো যাবে না।
১৪. প্রশ্নঃ প্রসবোত্তর বা বাচ্চা হওয়ার পর নাকি বাচ্চার মায়ের বিষণ্নতা হয় এই কথাটি কি ঠিক?
উঃ হ্যাঁ, এই কথাটি সঠিক। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা জন্ম নেয়ার পরে অর্থাৎ ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে দেখা যায় মায়ের কিছু ভালো লাগছে না, মন কেমন যেন লাগছে, নিজের বাচ্চাটিকেও আদর করতে ইচ্ছা হয় না, অযথা কোনো কারণ ছাড়াই কান্না পায়, বুকটা খালি খালি লাগে-এটাই প্রসবোত্তর মায়ের বিষণ্নতা। এই বিষণ্নতা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
১৫. প্রশ্নঃ এবার আমরা আপনার কাছে জানতে চাই যে ঋতুগত বিষণ্নতা রোগ কি?
উঃ আপনাদের আশপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারেন যে, অনেক ব্যক্তি ছয়টি ঋতুর যে কোনো একটি ঋতুতে বারবার বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। শীতকালে এই বিষণ্নতা রোগ বেশি হয়। তাই এটাকে শীতকালীন বিষণ্নতা রোগও বলা হয়। এই রোগটি অল্প মাত্রায় হলে দেহের এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়, ঘুম বেশি হয়, এবং মজার কথা হল মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
১৬. প্রশ্নঃ ঋতুগত বিষণ্নতা হলে এবং তা অল্প মাত্রায় থাকলে সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানাবেন কি?
উঃ যদি এ জাতীয় বিষণ্নতা দৈনন্দিন কাজ কর্মে তেমন কোনো মারাত্মক প্রভাব না ফেলে তখন সে ক্ষেত্রে সকালের উজ্জ্বল আলো বা আলোকিত স্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে বা হাঁটাহাঁটি, ঘোরাফেরা করা যেতে পারে এবং ২-৩ কাপ চা বা কফি পান ও কিছু মাত্রায় হাল্কা ব্যায়াম করলে ঋতুকালীন বিষণ্নতা রোগটি আস্তে আস্তে কমে যায়।
১৭. প্রশ্নঃ বিষণ্নতা রোগের কারণ কি?
উঃ বিষণ্নতা রোগের একক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে সমষ্টিগত বেশ কতগুলো কারণে বিষণ্নতা হতে পারে। সামাজিক কারণ, পারিবারিক কারণ, মনস্তাত্ত্বিক কারণ, জৈবিক কারণ, বংশগত কারণ। বিষণ্নতা রোগের কারণ বাইরের কোনো ফ্যাক্টরও হতে পারে। কিন্তু্তু বিষণ্নতা রোগে মস্তিষেকর বিভিন্ন সেলে বা কোষে বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং ঐ পরিবর্তন চলতেই থাকে। নতুন নতুন মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। যেমন-মনোযোগের অভাব, অশান্তি, ঘুমের সমস্যা, বন্ধু-বান্ধবের সাথে, প্রিয়জনের সাথে সম্পর্কের অবনতি, এই জাতীয় ফ্যাক্টরগুলো মগজের জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সাধনে সাহায্য করে এবং এতে আবার বিভিন্ন প্রকারের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এক কথায় এটা একটা দুষ্ট চক্রের মত কাজ করতে থাকে। এভাবেও বিষণ্নতার জাল সমস্ত মন মগজে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কিছু কিছু হরমোনের পরিবর্তনজনিত অবস্থায়ও বিষণ্নতা হতে পারে। আবার কিছু কিছু দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতায়ও বিষণ্নতা হতে পারে, আরো অনেক অনেক কারণেও বিষণ্নতা হতে পারে।
১৮. প্রশ্নঃ জেনেটিক কারণেও কি বিষণ্নতা হতে পারে?
উঃ দেখা গেছে যে, বহু ক্ষেত্রেই জেনেটিক কারণে বিষণ্নতা হয়। কারো বংশে বিষণ্নতার ধারা থাকলে চলিস্নশ ভাগ ক্ষেত্রে বিষণ্নতা পরবর্তী বংশের মধ্যেও আসতে পারে। অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিদের মাঝেও বিষণ্নতা আসতে পারে।
১৯. প্রশ্নঃ আপনি এই মাত্র বললেন যে অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিদের মাঝেও বিষণ্নতা আসতে পারে। আমরা সাধারণ অর্থে ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি বলতে বুঝি যাদের জ্ঞান অন্যান্যদের তুলনায় বেশি যেমন, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, পন্ডিত আপনি আমাদেরকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এই রকম কয়েকজন ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিদের উদাহরণ দেবেন কি?
উঃ জগৎ বিখ্যাত কতক ব্যক্তি বা ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা হলেন- নামকরা ব্যক্তিত্ব, দার্শনিক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, টিএস ইলিয়ট, জনকিটস, শেলী, চার্লস ডিকেন্স, বাংলার কবি মাইকেল মধুসদন দত্ত আরো অনেকে।
২০. প্রশ্নঃ বিষণ্নতায় নাকি বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক, ব্যক্তিগত ও শারীরিক ক্ষতি সাধন করে তা কিভাবে?
উঃ মানসিক রোগ বিষণ্নতা এই বিষণ্নতার কারণে উত্তর আমেরিকার ব্যবসায়িক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ৬০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় প্রতি বছর। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয় এবং ঠিকমত উৎপাদন না হওয়ার জন্য চলিস্নশ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিষণ্নতার ফলে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও ব্যক্তিগত কিছু মাশুলও দিতে হয়। আমাদের অনেকেই বিষণ্নতায় ভোগে। ফলে তাতে করে যে হতাশার সৃষ্টি হয় তা এতটাই দুঃষহ ও স্থায়ী যা ব্যক্তির কাজ কর্ম, সম্পর্ক ও ফিজিক্যাল হেল্‌থের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। বিষণ্নতায় যারা ভুগে সুস্থ হচ্ছেন তারা বলেন এরকম মানসিক যন্ত্রণায় ভোগায় চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। অতএব ভেবে দেখুন বিষণ্নতা কতটা ক্ষতিকর।
২১. প্রশ্নঃ বিষণ্নতা রোগে কারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে?
উঃ মহিলাদের মধ্যে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে ৩গুণ বেশি। সাধারণত অল্প বয়সী কিশোরী, তরুণী মেয়েরা এই রোগে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়।
২২. প্রশ্নঃ বৃদ্ধ বয়সে কি বিষণ্নতা রোগ হয়?
উঃ হ্যাঁ, বৃদ্ধ বয়সেও বিষণ্নতা নামক মানসিক রোগ হয়ে থাকে।
২৩. প্রশ্নঃ আপনি বললেন যে বৃদ্ধ বয়সেও বিষণ্নতা রোগ হয়ে থাকে, আচ্ছা বৃদ্ধ বয়সে বিষণ্নতা কি কি কারণে হতে পারে?
উঃ সামাজিক স্বতন্ত্রীকরণ, দৈনন্দিন কাজে সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা এবং ডিমেনশিয়া নামক জ্ঞান শক্তি কমে যাওয়ার কারণেও বিষণ্নতা রোগটি হতে পারে বৃদ্ধ বয়সে।
২৪. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার রোগী কি কাউকে মেরে ফেলতে পারে?
উঃ সাধারণত বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগী কাউকে মেরে ফেলে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে নিজেকেই নিজে মেরে ফেলে।
২৫. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার কি কোনো চিকিৎসা আছে?
উঃ সবার জন্য সুখবর হলো মানসিক রোগ বিষণ্নতার আধুনিকতম চমৎকার চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যা রোগীকে একেবারে এ্যাবনরমাল অবস্থা থেকে নরমাল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। এখন বাংলাদেশেও বিষণ্নতা রোগের আধুনিকতম চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। তবে এজন্য দরকার রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া।
২৬. প্রশ্নঃ শোনা যায় বিষণ্নতায় নাকি অনেক দিন ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়?
উঃ কথাটা সত্যি, রোগীকে এবং রোগীর পরিবারকে এই ব্যাপারে চমৎকার ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়। তবে সব ক্ষেত্রেই যে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন তাও কিন্তু্তু ঠিক নয়। আসল কথা হল রোগ ও রোগের অবস্থা বুঝেই চিকিৎসা ব্যবস্থা দেয়া হয়।
২৭. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার কারণে কি মাথাব্যথা হতে পারে?
উঃ জীবনে মাথাব্যথা একবারও হয়নি এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষণ্নতার সাথে মাথার সম্পর্ক থাকে, তাই বিষণ্নতাজনিত মাথাব্যথা তো হতেই পারে।
২৮. প্রশ্নঃ  ভালোবাসার বিচ্ছেদেও কি বিষণ্নতা রোগ হতে পারে?
উঃ হ্যাঁ, গভীর ভালোবাসার অনাকাক্ষিত বিচ্ছেদেও বিষণ্নতা রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে বিচ্ছেদটি বিষণ্নতা সৃষ্টিতে একটি অনুঘটক বা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।
২৯. প্রশ্নঃ একজন ভালো বন্ধু বা একজন ভালোবাসার মানুষ কি বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থতায় সাহায্য করতে পারে?
উঃ কেনো পারবে না, একজন ভালো বন্ধু হৃদয়ের বন্ধু বা মনের মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত সঙ্গী বা সঙ্গিনীটিকে সঙ্গ দিয়ে তার একাকীত্বতা দূর করতে পারে। তার মনের যন্ত্রণা জানতে পারে। তাকে ভালোবাসার পরশ দিয়ে শান্ত করতে পারে এবং ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারে বাহুডোরে আবদ্ধ করে। করতে পারে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মাঝে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জাগাতে।
৩০. প্রশ্নঃ সব শেষে পাঠক/পাঠিকাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
উঃ আমার পাঠক/পাঠিকাদের প্রতি পরামর্শ হবে আপনি বা আপনাদের মাঝে যারা বিষণ্নতায় তিলেতিলে শেষ হচ্ছেন, তারা সাহস হারাবেন না। দেরি করবেন না। ডাক্তারের কাছে যান বিষণ্নতার আধুনিকতম চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করুন। ডাক্তাররা তো আপনাদের সেবার জন্যই নিয়োজিত-সদা প্রস্তুত।
৩১. প্রশ্নঃ আপনি আপনার এত ব্যস্ততার মাঝেও মল্যবান সময় দিয়ে বিষণ্নতা রোগের ওপর সাক্ষাৎকার দিলেন এজন্য আপনাকে আপনার অগণিত পাঠক/পাঠিকাদের পক্ষ থেকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
উঃ বাংলাদেশ ও দেশ বিদেশের সকল পাঠক/পাঠিকাদের আমি জানাই আমার অন্তরের পবিত্র ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।
 
 
উত্তর দিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ এএইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এফসিপিএস, এমআরসিপি, এফআরসিপি
               চিকিৎসা শাস্ত্রে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত
সাক্ষাৎকার গ্রহণেঃ আরিফ মাহমুদ সাহাবুল।


NEXT POST   দাম্পত্য কহল 
Syed Rubel @ FACEBOOK 


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :