পর্দা: নারীর দুর্গ ও রক্ষাকারী ঢাল

কোন মন্তব্য নেই

আবু দাউদ শরীফসহ বেশ কিছু হাদীসের কিতাবে এসেছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
لاَ تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللَّهِ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে (স্ত্রীদেরকে) মারধোর করো না। (আবু দাউদ)
একবার রাসুল (সাঃ) এর বাড়ীতে প্রচুর সংখ্যক মহিলা (বায়হাকী শরীফে এসেছে ৭০জনের কথা) এসেছিলেন স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমার স্বামী আমাকে প্রহার করে। পরের দিন সকাল বেলা রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করে দিলেন, গতরাতে আমার পরিবারের কাছে অনেক মহিলা এসেছিলেন তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে মারধোর করার অভিযোগ নিয়ে। শুনে রাখ! আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তিরা ভাল নয়। (ওরা ঠিক কাজ করেনি) (আবু দাউদ, বায়হাকী, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান,মুসনাদে শাফেয়ী, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক )
কথায় কথায় অনেকে স্ত্রীকে প্রহার করে প্রমাণ দেখায় যে, আল্লাহ নাকি তাদেরকে প্রহারের অনুমতি দিয়েছেন। আমি তাদেরকে বলব আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন- আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে প্রহার করার অনুমতি দিয়েছেন স্বাভাবিক অবস্থায় চুড়ান্ত চিকিৎসা হিসেবে। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নয়। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সংশোধন করার জন্য যে পন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন তা উপরোক্ত আয়াতে বর্ণনা করেছেন। উপরোক্ত আয়াতে শুধুমাত্র মৃদু প্রহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-এমনভাবে প্রহার করবে যেন তাতে ব্যথা না লাগে কিংবা শরীরে কোন প্রতিক্রিয়া না করে।
আমাদের এলাকার একজন লোক তার স্ত্রীকে খুব মারধোর করে থাকে। দয়ামায়াহীন ভাবে মারধোর করে। একবার সামান্য একটা কারণে (হয়ত বাড়ী এসে দেখেছে ভাত রান্না হয়নি কিংবা কারো কাছ থেকে তার নামে কোন অভিযোগ পেয়েছে এমন কিছু একটা হবে অথবা, গালাগালি ও পাল্টা জবাব এর থেকে বেশী অপরাধ করে নি) তার স্ত্রীকে বেদম মারধোর করল। মারধর করার কারণে স্ত্রীর হাত ভেংগে গেল। হাত ভাংগার পর তাকে ডাক্তারখানায় নিতে হবে। ডাক্তার যদি জানতে চায় কেমন করে হাত ভেংগেছে তখন তো কিছু একটা জবাব দিতে হবে। তাই, ওয়াইফকে বলে দিল- তখন যেন সে বলে হাটতে গিয়ে উঠানে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, ডাক্তার যখন ঠিক ঠিকই এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল তখন শেখানো বুলি আওড়ালো উক্ত মহিলা ও তার শাশুড়ী (মহিলার শাশুড়ী)। কিন্তু, ডাক্তার কি পাগল যে, যে যা বলবে তাই বিশ্বাস করবে? ডাক্তারের আসল রহস্য বুঝতে কষ্ট হয়নি।
হায়রে অবস্থা! স্ত্রীর সামান্য এ অপরাধটুকু ক্ষমা করে দিলে কি হত? মানুষের একটু মনুষত্ববোধও তো থাকা দরকার। এ লোককে কি মানুষ বলা যায়? স্বাভাবিক অপরাধের কারণে মৃদু প্রহারই তো হওয়া উচিত সর্বশেষ ঔষধ।
পক্ষান্তরে, আসুন! আমরা দেখে নিই একজন নেককার দম্পতির জীবনের একটি চিত্র। আশা করি তাদের দাম্পত্য জীবনের সেই চিত্রকে আমরা আদর্শ হিসেবে গ্রহন করতে পারব।
আমরা সকলেই জানি শুরাইহ নামক একজন বিচারক ছিলেন হযরত আলী (রাঃ) এর যুগে। তিনি ছিলেন ন্যায় বিচারের একজন মুর্ত প্রতীক। আলী (রাঃ) সেই দেশের খলীফা (রাষ্ট্রপ্রধান) থাকাকালে তিনি একবার আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধেও বিচারে রায় দিয়েছিলেন। তার দাম্পত্য জীবনের শুরুতে একটা ঘটনা খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। উক্ত ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
তিনি বনী তামীম গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। বিবাহ পরবর্তী একান্ত সাক্ষাতের দিনের কথা প্রসংগে তিনি বললেন:
সেদিন আমি ওজু করলাম। তিনিও (স্ত্রী) ওজু করলেন। আমি নামাজ পড়লাম তিনিও আমার সাথে নামাজে দাড়ালেন। নামাজ শেষ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া করলাম তিনি যেন তার মধ্যে বরকত দিয়ে দেন এবং তার মধ্যকার সকল অনিষ্ট থেকে আমাকে হেফাজত করেন।
তিনি (স্ত্রী) আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুল (সাঃ) এর উপর দরুদ (হামদ ও সানা) পড়ে কথাবার্তা শুরু করলেন। তাদের কথোপকথন নিম্নে উপস্থাপিত হল।
স্ত্রী: আমি আপনার নিকট একজন অপরিচিত মেয়ে। আমি জীবনে কখনো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পথ ছাড়া অন্য কোন পথে চলি নাই। আর আপনিও আমার কাছে অপরিচিত। আমি আপনার স্বভাব সম্বন্ধে জানি না। আপনি কি কি পছন্দ করেন আর কি কি অপছন্দ করেন তা আমার জানা নেই। সুতরাং, সে বিষয়গুলো আমাকে বলে দিলে আমি আপনার পছন্দানুযায়ী কাজ করব এবং, অপছন্দনীয় কাজ বা জিনিস থেকে দূরে থাকব।
কাজী শুরাইহ: (গুনে গুনে বলে দিলেন) আমি অমুক অমুক জিনিস, কথা, কাজ ও খাদ্যকে পছন্দ করি। আর অমুক অমুক জিনিস, কথা, কাজ ও খাদ্যকে অপছন্দ করি।
স্ত্রী: আপনি আপনার শশুর বাড়ীর আত্মীয়দের সম্বন্ধে বলুন। আপনি কি চান যে, তারা আপনার বাড়ীতে বেড়াতে আসুক?
কাজী শুরাইহ: আমি বিচারক মানুষ। আমি চাই না যে, তারা আমাকে বিরক্ত করুক। (বিরক্তির পর্যায়ে না গেলে সমস্যা নেই )
স্ত্রী: আপনার প্রতিবেশীর মধ্যকার কাদেরকে আপনার বাড়ীতে আসতে অনুমতি দিবেন?
কাজী শুরাইহ: অমুক আসতে পারে। (এক এক করে সব বর্ণনা করে দিলেন)
কাজী শুরাইহ বলেন: আমি ঐ দিন শ্রেষ্ঠ রাত অতিবাহিত করলাম। তার নিকট ৩ দিন থেকে কোর্টে (বিচারিক কাজে) গেলাম। এরপর থেকে এমন কোন দিন পাইনি যে দিনটা আগের দিনের চেয়ে উত্তম নয়।
এভাবে একবছর অতিবাহিত হল। কাজী শুরাইহ দেখলেন তার বাড়ীতে একজন বৃদ্ধা মহিলা আদেশ ও নিষেধমুলক (উপদেশ ও নসীহত) কথাবার্তা বলছে।
কাজী শুরাইহ: (স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে) যায়নাব! এই বৃদ্ধা লোকটি কে?
স্ত্রী: আমার শ্রদ্ধেয় মা জননী।
কাজী শুরাইহ: (শাশুড়ীকে উদ্দেশ্য করে) আমাদের বাড়ীতে আপনাকে স্বাগতম।
শাশুড়ী: হে, আবু উমাইয়া! (কাজী শুরাইহীর উপাধী, অর্থ হল উমাইয়ার পিতা। আরবদের বৈশিষ্ট্য হল- বড় সন্তানের নাম ধরে পিতাকে ডাকে) আপনারা কেমন আছেন? কেমন যাচ্ছে আপনাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন?
কাজী শুরাইহ: আলহামদুলিল্লাহ, খুব সুন্দরভাবেই চলছে আমাদের জীবনযাপন।
শাশুড়ী: আপনার স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন?
কাজী শুরাইহ: আলহামদুলিল্লাহ, আমি তাকে একজন অত্যন্ত উত্তম স্ত্রীরূপে পেয়েছি। তাকে পেয়েছি জীবনের উত্তম সংগীনী হিসেবে। আপনারা তাকে উত্তমরূপেই মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। তাকে উত্তমভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছেন।
শাশুড়ী: মহিলাদেরকে দুই অবস্থায় কখনো মন খারাপ থাকে না। প্রথমটি হল-স্বামীর কাছ থেকে কিছু পেলে এবং অপরটি হল-যখন পুত্র সন্তান প্রসব করে। যদি এমন কোন বিষয় দেখেন যা আপনাকে ক্রোধান্বিত করে তার ঔষধ হচ্ছে-প্রহার করা।……
কাজী শুরাইহ বলেন আমার বাড়ীতে আমার শাশুড়ী প্রতি বছর একবার করে আসতেন। আমাদের বাড়ীতে এসে তার কলিজার টুকরা সন্তানকে বিভিন্ন উপদেশ এবং নসীহত করে যেতেন।
তিনি বলেন: আমি এ স্ত্রীর সাথে গত বিশ বছর অতিবাহিত করলাম অথচ, তার উপর আমি কখনো রাগ করিনি(রাগান্বিত হওয়ার মত কিছু পাইনি)। অন্য কথায় বলা যায়-আমাদের ভিতর বিগত বিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন মনমালিন্যের ঘটনা সংঘটিত হয়নি। তবে, শুধুমাত্র একদিন আমি তার উপর রাগান্বিত হয়েছিলাম। তবে, সেদিনকার পরিস্থিতির জন্য আমি নিজেই দোষী ছিলাম। বরং, আমিই তার উপর জুলুম করেছিলাম। বাস্তবে তার কোন দোষ ছিল না।
এখান থেকে আমরা আদর্শ দাম্পত্য জীবন গঠনের একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন পাই। এভাবে দাম্পত্য জীবন গঠন করতে পারলে আমাদের জীবন স্বর্নোজ্জ্বল হবেই ইনশাল্লাহ। জীবনে অশান্তির কালো মেঘ বাসা বাধতে পারবে না। জীবনটা সফল হবেই।
লিখেছেন: ইসমাইল জাবীহুলাহ
আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর।



শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :