হাদীস থেকে ইজতিহাদ ও ইমাম আবু হানিফা রহ.

কোন মন্তব্য নেই
হাফেয ইলিয়াস লাহুরী
ইমামে আ’জম আবু হানিফা রহ.
আইম্মায়ে মুজতাহিদ্বীনের সর্বশীর্ষ
তালিকার শ্রেষ্ঠ নাম। যার মাযহাব
অনুসরণ করছে পৃথিবীর অধিকাংশ
মানুষ। যে বিষয়টি তাঁকে এবং তঁর
মাযহাবকে শ্রেষ্ঠত্বের স্বর্ণ
শিখরে পৌঁছে দিয়েছে তাহলো মাসআলা
ইস্তিমবাতের ক্ষেত্রে তাঁর সুনিপুন
ইজতিহাদ পদ্ধতি।
কুরআন হাদীস থেকে ফিকাহ ইস্তিমবাত
করার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার
পারঙ্গমতা ছিল সর্বজন বিদিত।
কুরআন হাদীস থেকে পূর্ণ দক্ষতা ও
বিচক্ষণতার সাথে ফিকহার অসংখ্য
আহকাম তিনি বের
করে আনতে পারতেন অবলিলায়।
কুরআন সম্পর্কে তার নীতিমালা অন্য
ইমামদের থেকে ভিন্ন ছিল না। তাঁর
মতে কুরআনের কোন আয়াত
সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামের মতানৈক্য
হওয়ার মানেই হল; কুরআনের অর্থ ও
ইঙ্গিত অনুধাবনে এবং কুরআন
থেকে মাসআলা ইস্তিমবাত করার
পদ্ধতি নির্ধারণে মতানৈক্য।
তবে হাদীস গ্রহণের ব্যাপারে তাঁর
নীতি ছিল কঠোর।
বিশুদ্ধতা নির্ধারণের জন্য সনদ ও
মতনের বিচার বিশ্লেষণকে অপরিহার্য
মনে করতেন। এই কঠোরতা ও বিচার-
বিশ্লেষণের পেছনে মূল কারণ ছিল,
সমাজের মানুষের মধ্যে জাল হাদীসের
ছড়াছড়ি। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত
কোন হাদীস তখনই গ্রহণ করতেন যখন
তা একদল থেকে অন্য দল
বর্ণনা করত। কিংবা কথিত হাদীসের
উপর আমল করার ব্যাপারে শহরের
ফকীহগণ একমত হতেন।
তিনি এও মনে করতেন যে, হাদীস
কখনোই কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক
হতে পারে না। অতএব যে বিষয়
কুরআনের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়
সে বিষয় সম্বলিত
আরবী বাক্যকে কিছুতেই হাদীস
বলা যাবে না।
সুতরাং যে হাদীস তাঁর এই শর্তের
মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নয়
সেগুলো গ্রহণ করা থেকে তিনি বিরত
থাকতেন। মূলত: একটি হাদীস গ্রহণ
করা না করা নিয়ে ফিকহার ইমামদের
মতানৈক্যের কারণ ছিল এটাই যে,
যিনি কোন হাদীসকে গ্রহণ করেছেন;
তাঁর মত ও শর্তানুপাতে তা সহীহ। আর
যিনি গ্রহণ করছেন না তা তার
বিচারে ও শর্তাবলীর
মাপকাঠিতে উর্ত্তীণ নয়। এ ধরনের
হাদীসের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য নয়।
ইমাম আবু হানীফা রহ. বলতেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নামে যারা কুরআনের বিপরীত
বা অসংগতিপূর্ণ হাদীস
বর্ণনা করে এমন সব লোকদের
বিরুদ্ধে আমার সোচ্চার হওয়ার অর্থ
(নাউযুবিল্লাহ) রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
বাণী প্রত্যাখ্যান নয় বরং এর অর্থ
হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নামে মিথ্যা হাদীস
বর্ণনাকারীকে শায়েস্তা করা।
মোটকথা হাদীস গ্রহণে তাঁর নীতি ছিল
কঠোর। তার এই কঠোরতাই
তাকে উদারভাবে কিয়াস ও ইজতিহাদ
প্রয়োগে বাধ্য করেছে।
কেননা যে বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর
বিশুদ্ধ রেফারেন্স নেই সেখানে কিয়াস
ও ইসতিহসান ছাড়া আর কোন পথই
খোলা থাকে না।
তার আরেকটি নীতি এই ছিল যে,
যে বিষয়ে সাহাবাদের একাধিক মত
রয়েছে সে ক্ষেত্রে চিন্তা ও
বিবেচনা প্রয়োগ করে ন্যায় ও সাধারণ
নীতিমালার
সাথে সবচে ঘনিষ্ঠমতকে প্রাধান্য
দেয়া।
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ফিকাহ
সংকলন ও আইন প্রণয়ন
তথা ইজতিহাদ ও ইস্তিম্বাত
পদ্ধতি সম্পর্কে তার নিজস্ব
বর্ণনাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
তিনি বলেন, যে কোন
বিষয়ে কিতাবুল্লাহর নির্দেশ পেলে তাই
গ্রহণ করি, কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ
না পেলে প্রামাণ্য বিশুদ্ধ সুন্নাহ
যা নির্ভরযোগ্য লোকদের
মাঝে ছড়িয়ে আছে তার অনুসরণ করি।
তাও না পেলে সাহাবাদের মতামত গ্রহণ
করি। সাহবাদের মতামতের মধ্যে যার
অভিমতটি অধিক যুক্তিযুক্ত ও
সমীচীন বিবেচিত হয় আমি তাই গ্রহণ
করি। তাদের সকলের মতামত পরিত্যাগ
করে আমি নতুন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করি না। সাহাবাদের কারো কোন
অভিমত না পেলে সে ক্ষেত্রেই কেবল
ইমাম নাখয়ী, শাবী, হাসান বসরী,
ইবনে সিরীন, সাঈদ ইবনে মুসায়িব
প্রমুখ তাবেয়ীনদের মতো আমিও
ইজিতিহাদ করি।
উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রেও
তিনি শাগরেদদের
সাথে আলোচনা করে নিতেন এবং গৃহিত
সিদ্ধান্তসমূহ লিখে রাখতেন। সূত্র :
(আন ইনতিকা ১৪২-১৪৪,
তাহযীবুত্তাহযীব ১/৪৫, মানাকিবু
আবী হানীফা লিলমাক্কী ৮/৮০)
প্রকৃতপক্ষে ইমাম আবু হানীফা রহ.
ছিলেন তুখোড় কিয়াসবিদ। কুরআন-
হাদীসের সুষ্ঠু সমাধান
না পেলে অতি দক্ষতা ও বিচক্ষণতার
সাথে মাসআলার সুষ্ঠু সমাধান বের
করার ক্ষেত্রে তিনি স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন
এবং এক্ষেত্রে তিনি সকলকেই
পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন। এ কারণে তার
সূক্ষতা ও তড়িত
চিন্তা সর্বমহলে স্বীকৃত ছিল।
বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য ও
বৈ সাদৃশ্যগুলো তিনি দ্রুত
সুষ্ঠুভাবে অনুধাবন করতে পারতেন। এ
ধরনের বহু ঘটনা তাঁর মানাকেব
বা প্রসস্তিমূলক
গ্রন্থগুলোতে ছড়িয়ে আছে। তাঁর
যুক্তির ক্ষুরধারতা অনুমান করার
জন্য তার সমসাময়িকদের
একটি উক্তিকেই যথেষ্ট মনে করি।
তার সমসাময়িক বিদগ্ধ জনেরা বলেন-
“এই মহান
ব্যক্তি যদি যুক্তি বলে প্রমাণ
করতে চান যে, মসজিদের এই
খাম্বাটি সোনার
তৈরী তাহলে তিনি তা পারবেন।
এতে কোন সন্দেহ নেই।”
তার কিয়াস প্রতিভার এই স্ফুরণের মূল
কারণ ছিল;
কোনো সমস্যা আদৌ সৃষ্টি হয়েছে কি
হয়নি, বাস্তব না কল্পনা এ ধরনের
প্রশ্ন তাকে মোটেই ভাবাত না। তার
নীতি ছিল সম্ভাব্য ঘটনা ঘটার আগেই
তার সমাধান
নিয়ে উলামায়ে কেরামকে প্রস্তুত
থাকতে হবে। এজন্য তিনি অসংখ্য
ফাতওয়ায়ে আরেযীও গ্রহণ করেছেন
এবং সেগুলোর উপরও তিনি ইজতিহাদের
মাধ্যমে প্রমাণ বের করেছেন।
লেখক, তাকমীল জামাতের শিক্ষার্থী,
যাত্রাবাড়ী মাদরাসা

Post by Dawtul Haq.
Blog eidtor_Syed Rubel.
ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু ,বৌদ্ধ, নাস্তিক ও দেশের নারীবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে করা সকল অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গাঁ জবাব দেখুন এই পোস্ট টি থেকে
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :