পর্দা: নারীর দুর্গ ও রক্ষাকারী ঢাল →পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই
২য় পাতার পর ।

*. (৩) বিবাহ-বিচ্ছেদঃ

বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিবাহপূর্ব সহবাস এবং ‘Live Together’ -এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬০ সালে জন্ম গ্রহণকারী বৃটেনের নারীদের প্রায় অর্ধেক প্রাক-বিবাহ সহবাসের অভিজ্ঞতা অর্জনকরে। এর পক্ষে তাঁদের যুক্তি ছিল যে, এর ফলে নর-নারী একে অপরকে ভালোভাবে জানতে পারে এবং এর পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তা স্থায়ীত্ব লাভ করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইংল্যাণ্ডেই সর্বাধিক বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে থাকে। ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যে যেখানেএক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে, ১৯৯৪ সালে তার সংখ্যা দাঁড়ায় এক লক্ষ পয়ষট্টি হাজারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল সাত লক্ষ আট হাজার, আর ১৯৯০ সালে তা দাঁড়ায় এগার লক্ষ পঁচাত্তর হাজারে। পক্ষান্তরে,বিবাহের হারে তেমন কোনো উল্ল্যেখযোগ্য-সংখ্যক পরিবর্তন হয়নি।
*. (৪) কুমারী-মাতৃত্ব ও একক-মাতৃত্বঃ
পশ্চিমা-বিশ্বের তথাকথিত “নারী স্বাধীনতার” আরেক অভিশাপ হলো কুমারী-মাতৃত্ব। বৃটেনে এক জরিপে দেখা যায় যে,১৯৮২ সালে যেখানে কুমারী-মাতার সংখ্যা ছিল নব্বই হাজার,১৯৯২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই লক্ষ পনের হাজারে। ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের ৩১% ছিল অবিবাহিতা মাতার সন্তান। এই অবিবাহিতা বা কুমারী-মাতাদের মধ্যে আড়াই হাজারের বয়স ১৫ (পনের) বছরের নীচে। বৈধ বিবাহের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর তুলনায় অবৈধ শিশুর জন্মের হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে, অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর দায়ভার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বর্তাচ্ছে কুমারী-মাতা বা একক-মাতৃত্বের (single mother) উপর। নারীর উপর কুমারী-মাতৃত্বের এই দায়ভার পশ্চিমা-বিশ্বে নারী-নিপীড়নের এক নিষ্ঠুর উদাহরণ।
*. (৫) মদ্যপান ও ধুমপানঃ
পশ্চিমা ধাঁচের নারী-পুরুষের সমানাধিকার নারী সমাজের মধ্যেঅনেক মন্দ অভ্যাসের জন্ম দিয়েছে। একসময় মদ্যপান ও ধূমপানকে কেবল পুরুষের বদঅভ্যাস হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু আজ নারীও তাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। The Sunday Times – এর এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, নারীরা“নির্দ্ধারিত মাত্রার” চাইতে অধিক পরিমাণে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আর ধুমপানের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা এবং পরিমাণ পুরুষের সমান সমান।
(৬) বিজ্ঞাপনে ও পর্নোগ্রাফীতে:
তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার নামে নারীকে আজ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন-সামগ্রী এবং পর্নোগ্রাফীতে। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী যেন আজএকটি অপরিহার্য বিষয়। সম্প্রতি দি ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকার বরাত দিয়ে আমাদের ঢাকার দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিতএক প্রতিবেদনে বলা হয়,
“আমেরিকার মেয়েরা যৌন-আবেদনময়ী হওয়ার পরিবেশেই বড় হচ্ছে। তাঁদের সামনে যেসব পণ্য ও ছবি তুলে ধরা হচ্ছে তাতে তাঁরা যৌনতার দিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে। মার্কিন সংস্কৃতি, বিশেষ করে প্রধাণ প্রধাণ প্রচার-মাধ্যমে মহিলা ও তরুনীদের যৌন-ভোগ্য-পণ্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (এপিএ) টাষ্ক ফোর্স অন দ্যা সেক্সুয়ালাইজেশন অব গার্লস-এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে একথা বলা হয়। রিপোর্টের প্রণেতাগণ বলেন, টিভি-শো থেকে ম্যাগাজিন এবং মিউজিক-ভিডিও থেকে ইণ্টারনেট পর্যন্ত প্রতিটি প্রচার-মাধ্যমেই এই চিত্রই দেখা যায়। …………. প্রণেতাদের মতে, যৌনরূপদান তরুনী ও মহিলাদের তিনটি অতি সাধারণ মানসিকস্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো হলো পেটের গোলযোগ, আত্মসম্মানহানিবোধ এবং মনমরা ভাব। …………….. লিজ গুয়া নামের একজন মহিলা বলেন, তিনি তাঁর ৮ (আট) বছরের মেয়ে তানিয়ার উপযোগী পোশাক খুঁজে পেতে অসুবিধায় রয়েছেন। প্রায়ই সেগুলো খুবই আঁটসাঁট, নয়তো খুবই খাটো। যৌন-আবেদন ফুটিয়ে তোলার জন্যই এ ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।” ( দৈনিক জনকন্ঠ , ২৪ ফেব্রুয়ারী , ২০০৭)
এতক্ষণ পর্যন্ত তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা-জগতের ঘুনেধরা সমাজের একটি ভয়ঙ্কর চিত্র আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাস্তবচিত্র তার চাইতেও আরো অনেক বেশি ভয়াবহ। অর্থনৈতিক চাকচিক্য আর প্রযুক্তিগত উন্নতির আড়ালে তথাকথিত ‘আধুনিক’ বিশ্বের সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় আজ ধ্বস নেমেছে। নারী-স্বাধীনতা ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার নামে নারী আজ পদে পদে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হচ্ছে, ব্যবহৃত হচ্ছে’ ভোগের সামগ্রী হিসাবে। এথেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলামের প্রকৃতশিক্ষা ও জীবন-নির্ধারণের সঠিক ও পূর্ণ অনুসরণ।

আরো পড়ুন......→পর্দা: নারীর দুর্গ ও রক্ষাকারী ঢাল→পাতা ৪←

কোন মন্তব্য নেই :