গর্ভাবস্থায় মায়েদের আলট্রাসনোগ্রাফি

কোন মন্তব্য নেই

গর্ভাবস্থায় এক বিশেষ প্রক্রিয়ার
মধ্য দিয়ে মায়ের গর্ভে ভ্রূণ
বেড়ে ওঠে। আর গর্ভস্থ শিশুর
বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের
অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য
আলট্রাসনোগ্রাফি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা।
পরীক্ষাটি নিরাপদ,
এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই,
সহজলভ্য এবং এটি বর্তমানে বেশ
জনপ্রিয়।
সাধারণত যেসব
কারণে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়
গর্ভধারণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত
করা হয় আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে।
পূর্ববর্তী মাসিকের সাড়ে চার
সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাশয়ের
থলে এবং পাঁচ সপ্তাহের
মধ্যে গর্ভাশয়ের থলের
মধ্যে আরেকটি ক্ষুদ্র থলে (ইয়ক
স্যাক) দেখে শনাক্ত করা যায়
গর্ভধারণ হয়েছে কি না। আর
সাড়ে পাঁচ সপ্তাহ পর ভ্রূণ দেখা যায়।
হৃৎপিণ্ডের চলাচল পর্যবেক্ষণ
গর্ভধারণ করার পর ছয় সপ্তাহের
মধ্যে পালস ডপলার সনোগ্রাফির
মাধ্যমে ভ্রূণের হৃৎপিণ্ডের চলাচল
বোঝা যায় এবং সাত সপ্তাহের
মধ্যে সাধারণ গ্রে-স্কেল
আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্রেও (যার
মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন
অঙ্গ ও টিস্যু দেখা হয়) ধরা যায়।
আবার সাত মিলিমিটার উচ্চতার
ভ্রূণের হৃৎপিণ্ডের চলাচল
বুঝতে না পারলে ভ্রূণের মধ্যে প্রাণ
নেই বলে সন্দেহ করতে হবে।
তবে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এর
সাত থেকে ১০ দিন পর পুনরায়
আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ভ্রূণের
হৃৎস্পন্দন আছে কি না তা নিশ্চিত
হওয়া উচিত। এখানে বলে রাখা দরকার,
আধুনিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন
আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্রের
সাহায্যে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের ভ্রূণ
শনাক্ত এবং সঙ্গে হৃৎস্পন্দনও
বোঝা যায়।
ভ্রূণের বয়স নির্ধারণ
ভ্রূণের উচ্চতা, মাথার দুই প্রান্তের
দূরত্ব, পায়ের বড় অস্থি ভ্রূণের
বয়সের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট সামঞ্জস্য
রেখে বৃদ্ধি পায়। আর
আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে এই
পরিমাপগুলো নিয়েই ভ্রূণের বয়স
নির্ধারণ করা হয়। পেটের পরিধির মাপ,
পায়ের বড় অস্থি এবং মাথার দুই
প্রান্তের দূরত্ব দিয়ে ভ্রূণের ওজন
সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়।
গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন বিকৃতি
আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে গর্ভস্থ
শিশুর বিকৃতি নির্ণয় করা যায়। যেমন,
মাথায় অতিরিক্ত পানি জমা,
মাথাবিহীন ভ্রূণ, খর্বাকৃতি,
মেরুদণ্ডের বিকৃতি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা,
প্রস্রাবের থলের বা নালির সমস্যা,
ঠোঁট ও মুখের তালুর সমস্যা ইত্যাদি।
গর্ভফুলের অবস্থান জানা
গর্ভকালীন সময়ে তৈরি হয় গর্ভফুল,
যা জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে লেগে থাকে।
মা ও ভ্রূণের যোগাযোগ এই গর্ভফুলের
মাধ্যমে হয়। গর্ভফুল জরায়ুর কোন
অবস্থানে আছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভফুল জরায়ুর নিচের দিকে থাকলে এ
অবস্থাকে বলা হয়
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
এসব ক্ষেত্রে গর্ভকালীন প্রচুর
রক্তপাত হতে পারে। গর্ভফুল নিজেই
স্বাভাবিক প্রসবের রাস্তা বন্ধ
করে দিতে পারে।
আলট্রাসনোগ্রাফি করে গর্ভফুলের
অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
ভ্রূণের সংখ্যা নির্ণয়
ভ্রূণের সংখ্যা এক, দুই, তিন বা এর
চেয়ে বেশি হতে পারে।
আলট্রাসনোগ্রাফি করেই ভ্রূণের
সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।
গর্ভাশয়ের পানির পরিমাণ বের করা
গর্ভাশয়ের থলে তরল দিয়ে পূর্ণ থাকে।
এই তরলকে বলা হয় অ্যামনিয়টিক
ফ্লুইড। এই তরলের মধ্যেই ভ্রূণ
ডুবে থাকে। গর্ভাশয়ের থলের তরলের
পরিমাণ খুব
কমে গেলে বা বেশি হয়ে গেলে তা
ক্ষতিকর। আলট্রাসনোগ্রাফির
সাহায্যে এই পানির পরিমাণ নির্ধারণ
করা যায়।
এগুলো ছাড়াও গর্ভস্থ শিশুর
প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংখ্যা,
হৃৎস্পন্দনসহ ভ্রূণের বাহ্যিক অবস্থা,
জরায়ুর ভেতরই ভ্রূণের মৃত্যু
(আইইউএফডি), জরায়ুর বাইরে ভ্রূণের
অবস্থান, ব্লাইটেড ওভাম (গর্ভাশয়ের
থলের ব্যাস ২৫ মিলিমিটার বা এর
বেশি কিন্তু ভ্রূণের অনুপস্থিতি)
ইত্যাদিও
আলট্রাসনোগ্রাফি করলে বোঝা যায়।
ডপলার আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা
এটি হচ্ছে বিশেষ ধরনের
আলট্রাসনোগ্রাফি, যার
মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্তের প্রবাহের
দিক এবং রক্তের গতিপ্রকৃতি নির্ণয়
করা যায়। এর মাধ্যমে সাধারণত
ভ্রূণের রক্তনালিগুলো পর্যবেক্ষণ
করা হয়, যেমন হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ট,
হৃৎপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনি,
মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহকারী ধমনি,
জরায়ুর ভেতরের রক্তনালি, বড় শিরা,
যা হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। হৃৎপিণ্ডের
ত্রুটি, রক্তশূন্যতা, অক্সিজেন-
স্বল্পতা ডপলার অতিশব্দ পরীক্ষার
মাধ্যমে বোঝা যায়। ত্রিমাত্রিক ও
চতুর্মাত্রিক সনোগ্রাফির
মাধ্যমে ভ্রূণের ত্রিমাত্রিক
ছবি মনিটরে দেখা যায়।
কখন
আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করতে হবে
গর্ভাবস্থায়
আলট্রাসনোগ্রাফি বা অতিশব্দ
পরীক্ষা করার কোনো নির্ধারিত
সময়সূচি নেই। কোনো সমস্যা বা সন্দেহ
থাকলে পরীক্ষাটা করতে হবে।
গর্ভধারণ করার সাত সপ্তাহ পর
আলট্রাসনোগ্রাফি করলে গর্ভস্থ
শিশুকে দেখা যায় এবং হৃৎপিণ্ডের
চলাচল বোঝা যায়। ১১ থেকে ১৪
সপ্তাহের মধ্যে নাকের হাড়
এবং ঘাড়ের পেছনের দিকের পানিপূর্ণ
থলে দেখা হয়, যার মাধ্যমে মানসিক ও
শারীরিক ত্রুটিযুক্ত শিশু প্রসবের
আশঙ্কা থাকলে তা বোঝা যায়। ১৮
থেকে ২০ সপ্তাহের দিকে ভ্রূণের
গঠনগত ত্রুটিগুলো ভালো বোঝা যায়।
৩২ সপ্তাহের সময় সাধারণত ভ্রূণের
বৃদ্ধি, ওজন, বাহ্যিক অবস্থা দেখা হয়।
আগে করা সনোগ্রাফিগুলোতে কোনো
ত্রুটি সন্দেহ করলে এ
পর্যায়ে তা মিলিয়ে দেখা হয়। ২৪
সপ্তাহের পর গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ
নির্ধারণ করা যায়। তবে চিকিৎসা-
সংক্রান্ত বিশেষ কারণ ছাড়া লিঙ্গ
উল্লেখ না করাই ভালো। বিশ্বের
অনেক দেশেই গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ
উল্লেখ না করার বিষয়ে আইন প্রণয়ন
করা হয়েছে।
আছে কিছু ক্ষতিকর দিক
এক্স-রে, সিটিস্ক্যান
ইত্যাদি পরীক্ষায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন
রশ্মি ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের
জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু
আলট্রাসনোগ্রাফিতে অতিশব্দ তরঙ্গ
ব্যবহার করা হয়। এই তরঙ্গের
উল্লেখ করার মতো ক্ষতিকর দিক
এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এটাও
বলে রাখা ভালো যে সনোগ্রাফির
মাধ্যমে তথ্য পাওয়ায়
ক্ষেত্রে একটা ভালো যন্ত্র
থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ,
তেমনিভাবে যিনি পরীক্ষাটি করছেন
তাঁর দক্ষতাও রোগ নির্ণয়ের
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
বলে গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন
আলট্রাসনোগ্রাফি করা ঠিক নয়।
নির্দিষ্ট কারণে বা কোনো তথ্যের
প্রয়োজন হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ
নিয়ে পরীক্ষাটি করানো উচিত।
মো· তারিকুল ইসলাম
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিশেষজ্ঞ
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতাল, সিলেট


সূত্রঃ বাংলা হেলথ ।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :