নারীর জান্নাত যে পথে →পাতা ৬←
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লা হক ে ভয় কর, তারা তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।তোমরা তাদের মালিক নও,আবার তারা তোমাদের থেকে মুক্তও নয়।তাদের কর্তব্য, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে জায়গা না দেয়া,যাদের তোমরা অপছন্দ কর।যদি এর বিপরীত করে,এমনভাবে তাদের প্রহার কর, যাতেশরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে।তোমাদের কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক তাদের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা।প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার বলেছেন।হাসান বসরিও তাই বলেছেন।অর্থাৎ যে প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়েনা।” চেহারাতে প্রহার করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,চেহারায় আঘাত করবে না।স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার :স্বামী যেমন কামনা করে,স্ত্রীতার সব দায়িত্ব পালন করবে,তার সব হক আদায় করবে,তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা,তাকে কষ্ট না দেয়া,তার অনুভূতিতে আঘাত হানেএমন আচরণ থেকে বিরত থাকা।মুসনাদে আহমদে বর্ণিত, হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল,আমাদের উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার রয়েছে? তিনি বললেন,তুমি যখন খাবে,তাকেও খেতে দেবে।যখন তুমি পরিধান করবে,তাকেও পরিধান করতে দেবে।চেহারায় প্রহার করবে না।নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার বিছানাআলাদা করে দেবে না।”অন্য বর্ণনায় আছে,“তার শ্রী বিনষ্টকরিও না।”বুখারি,মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবে আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম,তুমি দিনে রোজা রাখ,রাতে নাম াজ পড়, এ খবর কি ঠিক?আমি বললাম, হ্যাঁ,আল্লাহর রাসূল। তিনি বলেন, এমন কর না।রোজা রাখ, রোজা ভাঙ্গো।নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ তোমার উপর শরীরের হক রয়েছে,চোখ ের হক রয়েছে, স্ত্রীরও হক রয়েছে।”রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে,আর সে একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল,কিয়ামতের দিন সে একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”সম্মানিত পাঠক!আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক।এখনআমরা আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম,মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়েপ্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন।আমরা এমন না হয়ে যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে,স্ত্রীর হক উশুল করতে চায়।আমাদের উদ্দেশ্য কারো অনিয়মকে সমর্থননা করা এবং এক পক্ষের অপরাধের ফলে অপর পক্ষের অপরাধকে বৈধতানা দেয়া।বরং আমাদের উদ্দেশ্যপ্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বেরব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য সচেতন করা।
পরিসমাপ্তি
পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের কল্যাণকামী হোন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ, তাদের পা ঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও, ভেঙে ফেলবে। আররেখে দিলেও তার বক্রতা দূর হবে না, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।”
নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা দেয়া, এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া, হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া। আশা করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। দরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরের উপর। আমাদের সর্বশেষ কথা, “আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা।তিনি দু-জাহানের পালনকর্তা।”
মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ
১. সমস্ত শরীর ঢাকা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَفُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿৩১﴾(النور-৩১)
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে ঢেকে রাখে। আর তারাযেন তাদের স্বামী, পিতা , শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোন ের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীন যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”
অন্যত্র বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْلِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا ﴿৫৯﴾
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে , কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা যেনতাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন