প্রসবোত্তর মায়ের মানসিক সমস্যা

কোন মন্তব্য নেই
সন্তান প্রসব একজন নারীর
জীবনে অতি কাঙ্ক্ষিত ব্যাপার।
প্রসবের সাথে সাথে নারী দীর্ঘদিনের
গর্ভধারণে পরিবারের সাথে গর্ভকালীন
নানা দৈহিক হরমোনাল পরিবর্তনের
পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রসব করার
কাজটিও বেশ পরিশ্রমের। সন্তান
প্রসবের পর পর মায়ের দেহে দ্রুত
পরিবর্তন ঘটায় তার মধ্যে কিছু
শারীরিক ও মানসিক
অসুস্থতা দেখা দেয়।
এ সময়ের মানসিক
অসুস্থতাগুলোকে তিনটি ভাগে বর্ণনা
করা যায়।
১. মেটারনিটি ব্লু
২. পারপিউরাল সাইকোসিস
৩. পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন
১. মেটারনিটি ব্লুঃ শতকরা ৫০-৭০
ভাগ মা এ সমস্যায় ভোগেন। প্রসবের
তিন-চার দিন পর অসুস্থতা দেখা দেয়।
এ সময় মায়ের মেজাজ
খিটখিটে হয়ে যায়। তার মুডে ত্বরিত
পরিবর্তন হয় এই খুশি, এই দুঃখ;
মাঝে মধ্যে অকারণেই কেঁদে ফেলে, সব
কিছুতে কেমন ঘোলা ঘোলা ভাব।
এ অবস্থার জন্য তেমন
কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না।
কয়েক দিনের মধ্যেই
প্রসূতি স্বাভাবিক অবস্থায়
ফিরে আসে। এ অসুস্থতার
একটা সামাজিক গুরুত্ব আছে। বিশেষত
পুত্রসন্তান চাচ্ছেন এমন
মা কন্যাসন্তান প্রসব করলে তার
আশপাশের লোকজন এ
অসুস্থতাকে ‘পুত্র’সন্তানের জন্য মন
খারাপ বলে মনে করেন। এ রকম
ভাবনা প্রসূতির পরিচর্যায় ব্যাঘাত
ঘটাতে পারে।
২.
পারপিউরাল সাইকোসিসঃ প্রসবোত্তর
মানসিক সমস্যার মধ্যে এ রোগটিই
মানুষের কাছে বেশি পরিচিত।
প্রতি হাজার প্রসূতির মধ্যে এক
থেকে দু’জন এ রোগে আক্রান্ত হন।
সাধারণত প্রসবোত্তর প্রথম
বা দ্বিতীয় সপ্তায় এ
রোগটি দেখা দেয়। এ রোগের প্রধান
উপসর্গগুলো ঘুম না হওয়া, বিরক্তি,
খিটখিটে মেজাজ, খাওয়া-দাওয়া ও
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার
প্রতি উদাসীন, আবোল-তাবোল বলা,
বাড়ির বাইরে এদিক-ওদিক
চলে যেতে চাওয়া, অযথা ভয় পাওয়া,
সন্তানটির যত্ন না নেয়া, যেমন-
নবজাতক সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাস এ
সন্তান আসলে একটা শয়তান বা খারাপ
কিছু, একে মেরে ফেলাই ভালো।
চিকিৎসাঃ বৈদ্যুতিক চিকিৎসা (ইসিটি)
এ রোগের অতি কার্যকর চিকিৎসা।
এন্টিসাইকোটিক ওষুধের
দ্বারা রোগটির চিকিৎসা করা হয়।
কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ
রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিছু কিছু রোগীর
অসুস্থতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে।
৩. পোস্ট পার্টাম
ডিপ্রেশনঃ প্রসবোত্তর বিষণ্নতার
প্রকোপ কম নয়, প্রায়
শতকরা ১০-১৫ জন
প্রসূতি প্রসবোত্তর বিষণ্নতায়
ভোগেন। সাধারণত প্রসবের দুই সপ্তাহ
পর এ সমস্যা শুরু হয়।
রোগিণী অত্যন্ত ক্লান্তবোধ করেন,
অহেতুক দুশ্চিন্তা করেন
এবং অযথা ভয়ভীতি পান, মেজাজ
খিটখিটে হয়ে যায়, মন বিষণ্ন থাকে। এ
সময় প্রসূতির মনে এমন ভ্রান্ত
বিশ্বাস জন্ম নিতে পারে যে সদ্যজাত
সন্তানের কোনো শারীরিক বা মানসিক
খুঁত আছে, সন্তানটি তিনি মানুষ
করতে পারবেন না, অতএব
একে মেরে ফেলাই ভালো।
প্রসূতি নিজেও আত্মহত্যার
চেষ্টা করতে পারেন।
চিকিৎসাঃ সাইকোথেরাপি, সামাজিক
সচেতনতার উন্নয়ন ও
বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ দ্বারা এ রোগের
চিকিৎসা করা হয়।
প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক চিকিৎসা (ইসিটি)
ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাদের প্রসবোত্তর মানসিক
সমস্যা বেশি হয়ঃ
যেকোনো প্রসূতির প্রসবোত্তর
মানসিক সমস্যা হতে পারে। তবে কিছু
কিছু বিষয় এ ধরনের মানসিক
সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
যেমন কম বয়সী মা, আগে যার মানসিক
অসুস্থতা হয়েছিল, যার পরিবারের
মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস আছে,
তা সদ্যজাত সন্তানের যত্নের জন্য
মায়ের ওপর যে চাপ থাকে তা লাঘবের
পারিবারিক বা সামাজিক
ব্যবস্থা না থাকা, মানসিক চাপ,
দাম্পত্য অশান্তি ইত্যাদি।
প্রতিরোধঃ
যেসব কারণে সদ্যপ্রসূতির মানসিক
সমস্যার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সেসবের
প্রতিবিধান করতে পারলে এসব
মানসিক রোগ প্রতিরোধ
করা অনেকাংশে সম্ভব। এ জন্য
দরকার বিশ বছর বয়সের
আগে মা না হওয়া, সদ্যপ্রসূতির
শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের
ব্যবস্থা করা, সদ্যজাত শিশুর যত্নের
জন্য পারিবারিক ও সামাজিক
ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, দাম্পত্য কলহ
মিটিয়ে ফেলা। তার পরও মানসিক
সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব
তার চিকিৎসা নিতে হবে। এতে রোগীর
সুস্থতা নিশ্চিত হবে আর মানসিক
অসুস্থতার জটিলতাও কম থাকবে।
————————-
ডা. জিল্লুর কামাল
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, জাতীয়
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট,
শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।


সূত্রঃ বাংলা হেলথ ।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :