প্রতিবেশীর অধিকার ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব

কোন মন্তব্য নেই
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার
করতে ভুলবেন না
আমরা আজ যে সমাজ ব্যবস্থায়
অভ্যস্ত তাতে আমাদের
অনুভূতিগুলোও দিন দিন যান্ত্রিক
হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অবিশ্বাস আর
সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখাই যেন
আজকালকার যুগের সবার
চিন্তাধারার একটি অংশ
হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট পাথরের
দালানে থাকা আমরাও যেন
অনুভূতিহীন কলের পুতুল। পাশের
দরজার প্রতিবেশীর বিপদে আপদে,
তাদের সুখ দুঃখের
সঙ্গী হওয়া তো আজকাল দুরের কথা,
কেউ কাউকে চিনিই না অনেক সময়।
এরপরও
কি আমরা দাবী করতে পারি আমরা সত্যিকারের
মুসলমান? আসুন দেখি প্রতিবেশীদের
অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ
তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল
আমাদেরকে কি বলেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ﻭَﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ
ﺷَﻴْﺌًﺎ ۖ ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﻭَﺑِﺬِﻱ
ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻴَﺘَﺎﻣَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ
ﻭَﺍﻟْﺠَﺎﺭِ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﺠَﺎﺭِ
ﺍﻟْﺠُﻨُﺐِ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺣِﺐِ ﺑِﺎﻟْﺠَﻨﺐِ ﻭَﺍﺑْﻦِ
ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ ۗ ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﻣَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺨْﺘَﺎﻟًﺎ
ﻓَﺨُﻮﺭًﺍ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর
উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর
অংশী করো না, এবং পিতা-মাতা,
আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন,
অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয়
প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী,
পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত
দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।
( সূরা নিসা: ৩৬)
এই সম্পর্কিত হাদিস সমূহ-
১) ইবনে উমার ও আয়েশা (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“জিব্রাইল আমাকে সব সময়
প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত
করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল
যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস
বানিয়ে দেবেন।” (সহীহুল
বুখারী ৬০১৪ ও মুসলিম ২৬২৪)
২) আবূ যার (রাঃ) বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
“হে আবূ যার! যখন তুমি ঝোল
(ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন
তাতে পানির পরিমান বেশী কর।
অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর
বাড়িতে রীতিমত পৌছে দাও। (মুসলিম
২৬২৫) ৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন,
নবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর কসম!
সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর
কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।
আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন
নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন
ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’
তিনি বললেন, “যে লোকের
প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ
থাকে না।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৬)
৪) মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ
ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না,
যার অনিষ্ট থেকে তার
প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে মুসলিম
মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন
তার অপর প্রতিবেশিনীর
উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে;
যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হক
না কেন। (সহীহুল বুখারী ২৫৬৬ ও
মুসলিম ১০৩০)
৫) উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
কোন প্রতিবেশী যেন তার
প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ
ইত্যাদি) গারতে নিষেধ না করে।
অতঃপর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন,
কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রসূল
(সাঃ)-এর সুন্নাহ থেকে মুখ
ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম!
নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের
ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ
কথা বলতে থাকব)। (সহীহুল
বুখারী ২৪৬৩,৫৬২৭ ও মুসলিম
১৬০৯)
৬) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের
প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার
মেহেমানের খাতির করে।
এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও
পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে,
সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ
থাকে।” (সহীহুল
বুখারী ৬০১৮,৩৩৩১, মুসলিম
৪৭, ১৪৬৮)
৭) আবূ শুরায়হ খু্যায়ী (রাঃ) কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের
প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন
প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার কর।
যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের
প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার
মেহেমানের খাতির করে।
এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও
পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে,
সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব
থাকে।” (সহীহুল
বুখারী ৬০১৯,৬১৩৫, মুসলিম
৪৮)
৮) আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি বললাম,
“হে আল্লাহর রসূল! আমার দু’জন
প্রতিবেশী আছে।(যদি দু’জনকেই
দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে)
আমি তাঁদের মধ্যে কার নিকট
হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’
তিনি বললেন, “যার দরজা তোমার
বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)
।” (সহীহুল বুখারী ৬০২০,২২৫৯,
আবূ দাউদ ৫১৫৫)

কোন মন্তব্য নেই :