হযরত মুহাম্মাদ[১] সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

কোন মন্তব্য নেই
জন্ম
হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান
সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর
কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম
বংশে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচলিত
ধারনা মোতাবেক, উনার জন্ম ৫৭০
খৃস্টাব্দে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা
মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০
সনই ব্যবহার করেছেন। তবে উনার
প্রকৃত জন্মতারিখ বের করা বেশ
কষ্টসাধ্য। তাছাড়া মুহাম্মদ(সা.)
নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন
বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমান
পাওয়া যায়নি. এজন্যই এ নিয়ে ব্যাপক
মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি জন্মমাস
নিয়েও ব্যপক মতবিরোধ পাওয়া যায় ।
[৩] যেমন, এক বর্ণনা মতে, উনার
জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২
শে এপ্রিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী,
সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ
পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য
বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ
থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক,
নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের
ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট
নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০
বছর পূর্তি ছিল এ
নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।
শৈশব ও কৈশোর কাল
তত্কালীন আরবের রীতি ছিল
যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায়
বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ
দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য
জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর
কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের
কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময়
পর আবার ফেরত নিতেন। এই
রীতি অনুসারে মোহাম্মদকেও
হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর
নাম হালিমা সাদিয়া)
হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এই
শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায়
হালিমার
সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্র
কে সঠিকভাবে লালনপালন
করতে সমর্থ হন। তখনকার
একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য - শিশু
মোহাম্মদ কেবল হালিমার একটি স্তনই
পান করতেন এবং অপরটি তার অপর
দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর
লালনপালনের পর হালিমা শিশু
মোহাম্মদকে আমিনার
কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই
মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু
মুহাম্মাদকে হালিমার
কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও
চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে।
এতে তার আশা পূর্ণ হল।
ইসলামী বিশ্বাসমতে এর কয়েকদিন
পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে -
একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার
একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের
পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন
করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি ইসলামের
ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা
হিসেবে খ্যাত।
এই ঘটনার পরই
হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার
কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ
হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের
সাথে কাটান। এই সময় একদিন আমিনার
ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন।
সম্ভবত কোন আত্মীয়ের
সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর
জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল।
আমিনা ছেলে, শ্বশুর এবং দাসী
উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০
কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায়
পৌঁছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময়
অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায়
ফেরার পথে আরওয়া নামক
স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ
হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ
করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল
মোত্তালেব শিশু
মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর
পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের
দেখাশোনা করতে থাকেন। মোহাম্মদের
বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন
তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর
আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে
মোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান।
আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন
এবং আরবদের নিয়ম
অনুযায়ী বছরে একবার
সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদের বয়স
যখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার
সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য
বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার
কারণে আবু তালিব আর নিষেধ
করতে পারলেননা। যাত্রাপথে বসরা
পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু
ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের
রোম অধিকৃত রাজ্যের
রাজধানী বসরা অনেক দিক
দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে
জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী
ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই
অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার
গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার
মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ
সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ
নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফুজ্জারের
যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স
১৫ বছর। এই
যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত
ব্যথিত হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার
ছিলনা। সে সময় থেকেই তিনি কিছু
একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন।
নবুয়ত-পূর্ব জীবন
মূল নিবন্ধ: নবুওয়তের
পূর্বে মুহাম্মাদ
আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা,
খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দ
মনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক
একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুহাম্মাদ এতে যোগদান করেন এবং এই
সংঘকে এগিয়ে নেয়ার
ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় তরুণ
বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোন
পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন
বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন।
সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন
সেগুলো ছিল বনি সা'দ গোত্রের। কয়েক
কিরাত পারিশ্রমিকের
বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত
বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন।
এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন।
মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই
একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন।
এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার
উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল
সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ
হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং
সত্যবাদী। ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি
সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে
বেশ কয়েকবার সফর করেন।
মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন
খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত
হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য
সফরে যাবার অনুরোধ জানান।
মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন
এবং খাদীজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার
অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।
খাদীজা মাইছারার মুখে মুহাম্মাদের
সততা ও ন্যায়পরায়ণতার
ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন।
এছাড়া ব্যবসায়ের
সফলতা দেখে তিনি তার
যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক
পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করার
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয়
বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের
কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের
কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার
কাছ

কোন মন্তব্য নেই :