পয়লা বৈশাখ - মেকি বাঙালিত্ব বনাম ইসলাম part1

কোন মন্তব্য নেই

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

১.

আজ “পয়লা বৈশাখ” ওরফে “শুভ নববর্ষ”। আমাদের স্বভাবটা জানিকেমন - অন্য মানুষের জিনিসকে আমরা নিজেদের বলে চালাতে ভারি ভালোবাসি। কোথাকার কোন দিল্লিরসম্রাট আকবর প্রজা শোষণের সুবিধার্থে, কৃষকদের গলায় গামছা বেঁধে উৎপাদিত ফসলের ভাগছিনিয়ে নিতে চালু করলো তারিখ-ই-ইলাহি। তাও যদি ব্যাপারটাতে একটু স্বকীয়তা থাকতো! মুসলিমদের হিজরি সালকে (বর্তমানে ১৪৩২) মন্ত্র পড়িয়ে, গলায় পৈতে ঝুলিয়ে করা হল সৌরবছর। সেই তারিখ-ই-ইলাহি- ই আজকের তথাকথিত বঙ্গাব্দ (বর্তমানে ১৪১৮)। এই মুঘল বাদশার চরম আক্রোশ ছিল বাংলার প্রতি। স্বাধীন বাংলাকেকব্জা করতে সে সেনাপতি মানসিংহকে ৫০টি কামান দিয়ে পাঠায়। সোনারগাঁর ঈশা খান সমানে সমানে লড়ে যান তার বিশাল বাহিনীর বিপক্ষে। শেষমেশদন্দ্বযুদ্ধে মানসিংহকে পরাজিতকরার পরেও তিনি হত্যা নাকরে ছেড়ে দেন। বিজয়ী বীরের মহানুভবতা দেখে মানসিংহের স্ত্রী অনেক অনুরোধ করে দিল্লিতে নিয়ে আসে ঈশা খানকে।কিন্তু সেখানে কি হল? আকবর দ্য গ্রেট ঈশা খানকে বন্দী করে ছুড়ে ফেলে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে। পরে নাকি অবশ্য মহানআকবর তার ভুল বুঝতে পেরে বাংলার সিংহপুরুষকে দয়া করে মুক্তি দেয়! এই সেই সম্রাট আকবর যে ‘দ্বীনে ইলাহি’ নামে একটি নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেছিলো - যাতে ইসলাম ধর্মের খারাপ জিনিসগুলো বাদ দিয়ে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের ভালোজিনিস যোগ করা হয়েছিল! যে দিল্লিপতির হানাদারবাহিনী বার বার বাংলার মাটি লাল করেছে আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্তে - তারই চালু করা ফারসি ভাষার সাল গণনাকে আমরা ‘বঙ্গাব্দ’ বলে চালিয়ে ভারী গর্ববোধ করি।

এতো গেল বছর শুরু হবার হিসেবের কথা। পয়লা বৈশাখ যাকে বাঙালি সর্বজনীন উৎসবের দাবী করা হয় তা উদযাপনের শুরুর ইতিহাস কি আমরা জানি? প্রথম ঘটা করে নববর্ষ পালন হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। ব্রিটিশরাজের বিজয় কামনা করে ১৯১৭ সালের পয়লা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করেকলকাতার হিন্দু মহল। আবার যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজলো, স্বাধীনতাকামী সুভাষ বসুব্রিটিশ তাড়াতে আজাদ-হিন্দ ফৌজগঠনের জন্য করতেদুনিয়া চষে বেড়াতে লাগলেন তখন হিন্দু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ১৯৩৮ সালে উৎসব করে পয়লা বৈশাখ পালন করলো আবার। পুজায় পূজায় সাদা চামড়ার প্রভুদের জন্য বিজয় কামনা করলো[1]তাইতোইংরেজরা যখন ভারতবর্ষকে চুষেছেতখন ছিবড়াটা জুটেছে এদের কপালেই।অথচ এই ব্রিটিশরা সিপাহি বিপ্লবের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করে লাশ রাজপথের ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে রেখেছিলদেশবাসীকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। এরপরেও আতেঁল বুদ্ধিজীবিরা পয়লা বৈশাখের ইতিহাস জেনেশুনে গোপন করে একে বাঙালির প্রাণের অনুষ্ঠান বলে দাবী করে! এসব দালালরা জেনে রাখুক - আমরা মিরজাফরের বংশধর নই। বেঈমানি করার নাম বাঙালিয়ানা হলে সেই বাঙালিয়ানা আমাদের দরকার নেই।

২.

এরপর দেশ ভাগ হল। মাথামোটা আইয়ুব খান ইসলামের যোশে যোশে পূর্ববাংলায় রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলো। তাতে কি লাভ হল? এপারের সুফি বাউল আর ওপারের রবীন্দ্রনাথ - দুয়ের আক্বিদা তো একই - সর্বেশ্বরবাদ; সবকিছু ঈশ্বর আর ঈশ্বরই সবকিছু। তাই গানের সুর আর ভাব বাউলদের, ভাষারবীন্দ্রনাথের। কলকাতার জমিদারবাবু দিনে লোক ঠেঙিয়ে, রাতে বজরায় বসে যে গান লিখতেন তার নিষেধাজ্ঞায় পূর্ববাংলার চুশীল সমাজ ক্ষেপে উঠলো। এর প্রতিবাদে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট শুরু করলো প্রকৃতিপূজার নবধারা। রবিবাবুর লেখা প্রার্থনাগীতিতে তারা কামনা করলো বৈশাখ যেন মূমুর্ষেরে দেয়উড়ায়ে।

আফসোস, আফসোস। যে অশিক্ষিত মানুষ মাজারের কাছে গিয়ে বাবাবাবা বলে ডাকতে থাকে তার ব্যাপারে না হয় একটা ব্যাখ্যাআছে, কিন্তু শিক্ষিত মানুষ যখন বৈশাখকে ডাকে তখন আমার আসলেই মাথা কূটতে ইচ্ছা করে। বৈশাখেরকি কান আছে? সে কি শোনে? তাকে ডাকলে কি আর না ডাকলেই বা কি? সেকি ষাঁড় যে সামনে যা পাবে শিং দিয়ে গুঁতিয়ে উড়িয়ে দেবে? সে কি লোটাস কামাল যে দেশের মূমুর্ষদের টাকা উড়িয়েবেনামি একাউন্টে পাচার করে দেবে? সে কি সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি যে ১৪ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমা হওয়া ১০০টন আবর্জনা সাফ করবে?আরে আজকে যদি শেখ হাসিনা ঘোষণা দেয় যে এখন থেকে ১৫ই এপ্রিল নববর্ষ হবে তবেই বেচারা বৈশাখেরআসা একদিন পিছিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানী কোন উপদেষ্টা যদি প্রকৃতি-প্রত্যয ় বিশ্লেষণ করে আবিষ্কার করে যে বৈশাখের নাম এসেছে বিশাখা থেকে, তারপর ৭২এর সংবিধানে ফেরার মত করে আবদার করে তাহলে বেচারা বৈশাখের নাম বদলে বিশাখা হয়ে যেতেও পারে; বেচারার কিছু করারও থাকবেনা। আর এই অবলা বৈশাখের আগমন উপলক্ষ্যে সব কড়া শিক্ষিত-আলোকপ্র াপ্ত মানুষেরা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে, রাস্তায় মুখোশ আর মূর্তি নিয়েমিছিল করে অমঙ্গল তাড়িয়ে বেড়ায়।়। হায় কপাল, আর এরাই বলেবেড়ায় ইসলাম নাকি আনুষ্ঠানিকতার ধর্ম! হিটলারের উপর একটা ডকুমেন্টারিতে জার্মান এক উৎসবের মিছিলের ছবি দেখেছিলাম - একদম একই রকম সব মুখোশ, পশুপাখির ডামি আর হিন্দু সোয়াস্তিকার চিহ্ন! যুগে যুগেপ্রকৃতিপূজকদের এত্ত মিল হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস হয়না!

আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ্র সৃষ্ট প্রতিটি দিনই সমান। কোন দিনের নিজস্ব কোন ভাল-মন্দের ক্ষমতা নেই। আমরা কোন দিনকে “শুভ” হিসেবে নির্ধারণ করিনা। আমরা আল্লাহ্রব্যাপারে বছরে প্রতিটি দিনই সুধারণা পোষণ করি - আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ্ আমাদের জন্য প্রতিটি দিনই মঙ্গলময় করেরেখেছেন। নববর্ষে ভালো খেলেসারাবছর ভালো খাওয়া মিলবে এই কুসংষ্কার আমাদের না। আল্লাহ্ আমাদের যে রিযক্ দিয়েছেন তা দিয়ে আমরা বছরের সব দিন সাধ্যমত ভালো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি, ওপারের দাদাদের মত কিপটামি করে ভাল খাবার বছরের শুরুর দিনের জন্য রেখে দেইনা।

আরো পড়ুন...........পয়লা বৈশাখ - মেকি বাঙালিত্ব বনাম ইসলাম part 2

কোন মন্তব্য নেই :