বাচ্চাদের সাথে কথা বলা part 3

কোন মন্তব্য নেই
আমি বাচ্চাদের বাসার সব কাজে জড়িত করার চেষ্টা করি যেন ওরা অনুভব করে এটা ওদের বাসা এবং এখানে সবার প্রতি এবং সবকিছুর প্রতি ওদের দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্ব ছাড়া leadership qualities গড়ে তোলা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমার বাবা বলত প্রত্যেক ব্যক্তির, সে হোক ছেলে বা মেয়ে, সবধরণের কাজ করার অভ্যাস এবং অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। আমার এস এস সি পরীক্ষার পর তিনমাসের ছুটিতে বাবা আমাকে রান্না আর কম্পিউটার রপ্ত করার জন্য বসিয়ে দিল। বাংলাদেশে এসে ঘরের renovation চলাকালীন সময় বাবা এবং মিস্ত্রীদের সাথে থেকে প্ল্যানিং, কন্সট্রাকশনের কাজ, ফার্নিচারবানানোর কাজ, ঘরবাড়ী এবং কাঠের জিনিস রঙ করা, একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা- এসব ব্যাপারে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা করতে গিয়ে শেখা হয়েছে অনেক কিছু যা পরে কাজে লেগেছে। তাই আমিও আমার মেয়েকে সব কাজ করতে দেই যেন আমাকে ফ্যাশনমাফিক বলতে না হয়, “আমার বাচ্চারা তো কিছু পারেনা!” পারবেনা কেন? প্রথমেভুল করবে, কিছু জিনিস নষ্ট করবে, খুব বেশী সুন্দর হয়ত হবেনা- তারপর একসময় ঠিকই পারবে। কিন্তু পারেনা পারেনা করে করতে না দিলে তো সে কখনোই শিখবেনা! তাছাড়া সবাই মিলে কাজ করতে করতেই তো সে শিখবে বাবামায়ের প্রতি সহানুভূতি, ভাইবোনদের প্রতি দায়িত্ব, পারিবারিক মায়ামমতা এবং সবাইমিলে কিছু শেয়ার করার আনন্দ!আজকাল এটা একটা ফ্যাশনে পরিণতহয়েছে যে বাবামা মনে করেন বাচ্চাদের বাসায় কোন দায়িত্ব দেয়া মানে তাদের প্রতি অবিচার করা। তাঁরা সবাইকে এত বেশী স্বাধীনতা দেনযে ভাইবোন পর্যন্ত একজন আরেকজনের সাথে কিছু ভাগাভাগি করতে রাজী হয়না, পরস্পরের প্রতি কোন দায়িত্ব বা সহানুভূতি অনুভব করার প্রয়োজন মনে করেনা। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে কথা বলার একটাগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেনাকাটার ক্ষেত্রে সংযম। আজকাল দেখা যায় আমরা বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব জিনিসই দেই যেন “চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে”। কিন্তু একটা বাচ্চা কিছু চাইলে তার সাথে আলাপ করা দরকার সে এটা কেন চায়, এটা দিয়ে সে কি করবে, এর উপকারীতাও অপকারিতাগুলো কি কি, জিনিসটিআদৌ তার প্রয়োজন আছে কি’না এবং এই টাকায় সে আর কি করতে পারে। এতে করে ওরা স্বার্থপর হবার পরিবর্তে needs এবং wants এর মধ্যে তফাত করতে শিখবে, অন্যের প্রয়োজনকে নিজের প্রয়োজনের ওপর অগ্রাধিকার দিতে শিখবে। সর্বোপরি আমি তাদের মৃত্যু সম্পর্কে বলি যেন তারা বুঝতে পারে যে এই জীবনের মূল্য কেবল পরবর্তী জীবনের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্যই, সুতরাং এখানে সব পেয়ে যেতে হবে বা না পেলে হতাশ হতে হবে এই ধারণা তাদের স্পর্শ করেনা।
তবে কথা বলার সবচেয়ে বড় দিক হোল শোনা। আমাদের সন্তানেরা কি বলতে চায়, কি জানতে চায়, তাদের মনে কি প্রশ্ন তা আমাদের শুনতে হবে, জানতে হবে এবং যে শিশুটির স্বভাব যেমন সেভাবেই তার সাথে কথা বলতে হবে। যেমন বাবা আমাকে ডাকত “রেহনুমা বিনত ত্যাড়া”। আমাকে সুন্দর করে বললে আমি তার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু কেউ আমার দিকে একটু বাঁকা করে তাকালো তো সব শেষ। আমার এই স্বভাব না বোঝার কারণে মা’র সাথে আমার অপূরণীয় দুরত্বের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। আমি আমার দুই সন্তানের মধ্যেই দেখি রাদিয়াওর বাবা আর বড়মামার মত নিয়ম মেনে চলা, অনুগত, ভালো মানুষ। কিন্তু রিহাম আমার মতই উচ্ছৃংখল, ত্যাড়া। সুতরাং রাদিয়াকে বোঝানো অনেক সহজ ওরকাছে আমাদের আশা-আকাংখা কি। কিন্তু রিহামকে পাম্প দিয়ে বলতে হয়, “যদি তুমি অমুক কাজটা কর তাহলে তোমাকে আম্মু স্পেশাল আদর করব আর যদি তমুক কাজটা কর তাহলে আম্মু আর তোমার সাথে কথা বলবনা”।সুতরাং বাচ্চাদের সাথে কথা বলার জন্য সময় ব্যায় করতে হবে, আগে থেকে স্ক্রিপ্ট তৈরী করে বসতে হবে যেন একটা শব্দও এদিক ওদিক না হয়, যেন ওদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব প্রস্তুতথাকে আর প্রস্তুত না থাকলে যেন আমরা সৎসাহস নিয়ে বলতে পারি, “আমি পরে জেনে তোমাকে জানাব”, ওরা যেন অবহেলিত বোধ না করে এবং সবচেয়ে বড় কথা এইকথাবার্তার মাধ্যমে যেন ওরা অনুভব করে যে ওরা ব্যাপারগুলোস্পষ্ট বুঝতে পারছে এবং ওদের বাবামা ওদের ভালোবাসে বলেই এইকথাগুলো ওদের বলা হচ্ছে।
(সংগৃহীত)

লেখিকাঃ রেহনুমা বিনত আনিস



♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন www.facebook.com/sayed.rubel3

লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

ভাল থাকুন সব সময় ।

কোন মন্তব্য নেই :