পয়লা বৈশাখ - মেকি বাঙালিত্ব বনাম ইসলাম part 2

কোন মন্তব্য নেই
৩.

একজন আমলা টার্নড মুফতির ফতোয়াদেখলাম, তিনি বলেছেন - নববর্ষে অনৈসলামিক অনাচার বাদ দিয়ে সেটা পালন করা জায়েজ। এই ফতোয়া ঈদের ক্ষেত্রে খাটে -কারণ এখন ঈদে বহু ইসলাম বিরোধী আচরণ ঢুকে পড়েছে কিন্তু পয়লাবৈশাখের ক্ষেত্রে কিভাবে খাটে?কিভাবে করলাম সেটা পরের কথা, পয়লা বৈশাখকে দিন হিসেবে উদযাপন করাটাই তো অনৈসলামিক! কেন? সুনানে আবু দাউদের একটি হাদিস উল্লেখ করি যা আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি বিশুদ্ধ বলে নিশ্চিত করেছেন -

আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রসুল (সাঃ)মদিনাতে আসলেন তখন তাদের দুটি দিনে খেলা-ধূলা করতে দেখলেন, তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন এই দু’দিন কি? তারা উত্তর দিল, আমরাঅজ্ঞতার যুগে এদিনগুলোকে উদযাপন করতাম। রসুলুল্লাহ(সাঃ)বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের এদের পরিবর্তে এমন দু’টি দিন দিয়েছেন যা এর চেয়েউত্তম - আল আযহার দিন ও আল ফিতরের দিন।

লক্ষ্যনীয় যে এখানে রসুল (সাঃ)বলেছেন - إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَ

ইন্নাল্লাহা ক্বাদ আবদালাকুম বিহিমা মানে “নিশ্চয়ই আল্লাহ্তাদের বদলে”, অর্থাৎ আগে যা ছিলসেটা বদলে দিয়ে আল্লাহ্ নিজে দুটো দিন আমাদের উৎসবের জন্য নির্ধারিত করে দিলেন। এখানে কিন্তু রসুল(সাঃ) আগের দুটোকে অক্ষত রেখে নতুন দুটো ঈদ যোগ করেননি। যে মদিনাবাসী তাকে দুর্দিনে সাহায্য করেছিল, একটি মুসলিম রাষ্ট্রের সূচনা করেছিল,সেই মদিনাবাসীদেরও জাতীয় উৎসবকে ছাড় দেয়া হয়নি, বদলে দেয়া হয়েছিল। এর কারণ ব্যাখ্যায় শায়খুল ইসলামইমাম ইবনে তাইম্যিয়া ‘ইক্বতিদা আল সিরাতাল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন - উৎসবইসলামি শরিয়তের অংশ, যেহেতু মহান আল্লাহ্ সুরা মায়িদার ৪৮নম্বর আয়াতে বলেন -

তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়েরজন্য আমি নির্দিষ্ট শরিয়ত এবং নির্দিষ্ট মিনহাজ নির্ধারণ করেছিলাম।

এই মিনহাজের (পথ ও পন্থা) অংশ হিসেবে মুসলিম জাতির জন্য কিছুদিনকে আল্লাহ্ বেছে নিয়েছেন যেন সেদিন আমরা আটপৌরে জীবন থেকে মুক্তি নিতে পারি - গৎবাঁধা কাজ ফেলে আনন্দ-উল্লাসকরি, খেলা-ধূলায় মাতি। সেদিনগুলোতে আমরা স্বজন আর বান্ধবদের সাথে দেখা করি, আড্ডামারি, ভালো-মন্দ খাই। এমন দিনগুলো হল বাৎসরিকভাবে দুই ঈদের দিন এবং সাপ্তাহিকভাবে জুম’আর দিন। ইসলামের দর্শনটা কিসুন্দর লক্ষ্য করুন - আমাদের উৎসবের দিন আমরা শুধু কাছের মানুষদের সাথেই দেখা করিনা, কাছাকাছি হতে চেষ্টা করি এমন এক সত্ত্বার যাকে আমরা সব মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসি। সেই সত্ত্বাটা হলেন আল্লাহ্ !এই জন্য আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ঈদের দিন জামা’আতে যাই, শুক্রবার দিনসব কাজ ফেলে মসজিদে বসে খুতবা শুনি।

বাংলা নববর্ষ যে আসলে হিন্দুদেরএকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান তা নিয়েকারো যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে তাহলেতার জন্য উইকি থেকে কপি করে দিলাম -

পয়লা বৈশাখের দিন উল্লেখযোগ্যভিড় চোখে পড়ে কলকাতার কালীঘাটে। সেখানকার বিখ্যাত কালীমন্দিরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীভোর থেকে প্রতীক্ষা করে থাকেন দেবীকে পূজা নিবেদন করে হালখাতাআরম্ভ করার জন্য। ব্যবসায়ী ছাড়াও বহু গৃহস্থও পরিবারের মঙ্গল কামনা করে দেবীর আশীর্বাদপ্রার্থনা করতে কালীঘাটে গিয়ে থাকেন।

আমরা নির্লজ্জভাবে হিন্দুদের অনুকরণে পয়লা বৈশাখ পালন করলেওওরা কিন্তু আমাদের ঈদকে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে মনে করেনা। উৎসব আর ধর্ম যে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এটা আমরা কেন যেন বুঝতে চাইনা।

মোটকথা মুসলিমদের জন্য বছর বছরযা ঘুরে আসে এমন মাত্র দু’টি দিনউদযাপনযোগ্য। এর বাইরে যত দিবস পালিত হয় সবই পরিত্যাজ্য- সেটা ঈদে মিলাদুন্নবি বা ফাতেহা-ই-ইয়াজদ হম হোক, বাংলা/আরবি/ ইংরেজি নববর্ষই হোক আর জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা ভালোবাসা দিবসই হোক।

দিনভিত্তিক নাটুকেপনা মুসলিমরাকরেনা। ১৪ই এপ্রিলের উসিলায় পুঁজিবাদি ব্যবস্থা বাঙালিত্ব বিক্রি করে। বিক্রি করে লাল-সাদা জামা আর ইলিশ মাছ।পয়লা বৈশাখ কি আদতে আমাদের বাঙালি করে? নাকি বাঙালি হবার একটা মিথ্যা বোধ জন্ম দেয়? আমরা পড়ি ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি মাধ্যমে না), দেখি হিন্দি সিরিয়াল, ক্রিকেট খেলায় পতাকা দোলাই পাকিস্তানের, বাসন মাজতে যাই ইংল্যান্ড-অস্ট্ রেলিয়ায় আর একদিন শাড়ি-পাঞ্জাবি পড়ে পান্তা খেয়ে ঢেকুর ফেলি - ভারিবাঙালি হয়ে গেছি!

আল্লাহ্ আমাদের মাতৃভাষা দিলেনবাংলা, কিন্তু আমরা অলিগলির কোচিং সেন্টারে স্পোকেন ইংলিশ শিখতে শিখতে বাংলা বলাটাই ভুলেগেলাম। আল্লাহ্ আমাদের যে দেশেজন্ম দিলেন সেই দেশকে আমাদের কাছে জাহান্নামের মত লাগে, এখানথেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য দেশে সেটল হওয়াটাই এখন আমাদের স্বপ্ন। এই আমাদের মুখে দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের জিগির ঝুটা আবেগ ছাড়া আর কিছুই নয়।

৪.আচ্ছা তাহলে কি ‘পয়লা বৈশাখ’ পালন করা যাবেনা? একসাথে একজন মুসলিম ও একজন বাঙালি হওয়া যাবেনা?

আল্লাহ্কে স্রষ্টা ও প্রতিপালনকারী হিসেবে মেনে নিয়ে, আল্লাহ্কে একমাত্র সত্য ‘ইলাহ্’ হিসেবে স্বীকার করে মুসলিম হবার মানে নিজের ইচ্ছাকেআল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করা। ইসলাম একটি দ্বীন -পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আমার জীবনের সব ক্ষেত্রে আমি শয়তানের, আমার বা আমার মত অন্যকোন মানুষের ইচ্ছেমত চলবোনা, চলবো আল্লাহ্র ইচ্ছেমত। আরো পড়ুন........পয়লা বৈশাখ - মেকি বাঙালিত্ব বনাম ইসলাম part 3

কোন মন্তব্য নেই :