কুফরীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ part 1

কোন মন্তব্য নেই
কুফরীর সংজ্ঞা :
কুফরীর আভিধানিক অর্থ আবৃত করা ও গোপন করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়।কেননা কুফরী হচ্ছে আল্লাহও রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা,চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকরা হোক কিংবা না হোক। বরং তাদের ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয় ও সন্দেহ, উপেক্ষা কিংবাঈর্ষা, অহংকার কিংবা রাসূলের অনুসরণের প্রতিবন্ধক কোন প্রবৃত্তির অনুসরণ কুফরীর হুকুমে কোন পরিবর্তন আনয়ন করবেনা। যদিও তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী বড় কাফির হিসাবে বিবেচিত। অনুরূপভাবে ঐঅস্বীকারকারী ও বড় কাফির, যে অন্তরে রাসূলগণের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও হিংসাবশতঃ মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাকে। [মাজমু আল ফাতওয়া, ৩৩৫]

কুফরীর প্রকারভেদ :
কুফুরী দুই প্রকার ।
প্রথম প্রকার : বড় কুফরী
এ প্রকারের কুফুরী মুসলমান ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এটি আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত:
১* মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কুফরী:
এর দলীল আল্লাহর বাণী:
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِلْكَافِرِينَ ﴿৬৮﴾ سورة العنكبوت
‘যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে, অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকেঅস্বীকার করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামই কি এইসব কাফিরের আবাস নয়? [ সূরা আনকাবুত, ৬৮]


২* মনে বিশ্বাস রেখেও অস্বীকার অহংকারশতঃ কুফরী:
এর দলীল আল্লাহর বাণী:
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ ﴿৩৪﴾ سورة البقرة
‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম,আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সেঅমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। [সূরা বাকারা ২:৩৪]

৩* সংশয়জনিত কুফুরী:
একে ধারণাজনিত কুফরী ও বলা হয়। এর দলীল আল্লাহ তাআলারবাণী:
وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَنْ تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا ﴿৩৫﴾ وَمَاأَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُدِدْتُ إِلَى رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِنْهَا مُنْقَلَبًا ﴿৩৬﴾ قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّسَوَّاكَ رَجُلًا ﴿৩৭﴾ لَكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا ﴿৩৮﴾ سورة الكهف
‘নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সেবলল, আমার মনে হয়না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে। আর আমি মনে করিনা যে, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেয়া হয়ই, তবে তো আমি নিশ্চয়ই এর চেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তদুত্তরে তার সাথী তাকে বলল, তুমি কি তাকে অস্বীকারকরছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে? কিন্তু আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক করিনা। [সূরা কাহাফ,৩৫-৩৮]

৪* উপেক্ষা প্রদর্শন ও মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কুফরী:
এর দলীল আল্লাহর বাণী:
وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنْذِرُوا مُعْرِضُونَ ﴿৩﴾ سورة الأحقاف
‘আর কাফিররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সূরা আহক্বাফ,০৩]

৫* নিফাকী ও কপটতার কুফরী:
এর দলীল হল:
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ آَمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ ﴿৩﴾ سورة المنافق
এটা এজন্যে যে, তারা ঈমান আনবার পর কুফরী করেছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। [সূরা মুনাফিকুন, ০৩]


দ্বিতীয় প্রকার: ছোটকুফরী
এ প্রকারের কুফরী মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিস্কৃত করেনা।একে ‘আমলী কুফরী’ ও বলা হয়। ছোট কুফরী দ্বারা সে সব গোনাহের কাজকেই বুঝানো হয়েছে, কুরআন ও সুন্নায় যাকেকুফরী নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ ধরনের কুফুরী বড় কুফরীর সমপর্যায়ের নামে। যেমন আল্লাহর নিয়ামতের কুফরী করা যা নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آَمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ ﴿১১২﴾ سورة النحل
‘আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এমন এক জনপদের, যাছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। তথায় প্রত্যেক স্থান হতে আসত প্রচুর রিযিক ও জীবিকা। অতঃপর সে জনপদের লোকেরা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞা প্রকাশ করল।’ [সূরা নাহল, ১১২]

এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াও এ ধরনের কুফরীর অন্তর্গত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
سِبَابُ المُسْلمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.
‘কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী কাজ। আর তার সাথে যুদ্ধ করা কুফুরী। [বুখারী, মুসলিম]

তিনি আরো বলেন:
لَا تَرْجِعُوْا بَعْدِيْ كُفَّاراً, يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ.
‘আমার পর তোমরা পুনরায় কাফির হয়ে যেওনা, যাতে তোমরা একে অপরের গর্দান উড়িয়ে দেবে। [ বুখারী, মুসলিম ]

গায়রুল্লাহর নামে কসম ও এ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ كَفَرَ أوْ أشْرَكَ.
‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর নামে কসম করল। সে কুফরী কিংবা শিরক করল। [তিরমিযী, হাকেম]
কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকেআল্লাহ মুমিন হিসাবে গণ্য করেছেন। তিনি বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى ﴿১৭৮﴾ سورةالبقرة
‘হে ঈমানদার গণ! তোমাদের উপর নিহতদের ব্যাপারে ক্বিসাস গ্রহণ করা ফরয করা হয়েছে।’ [সূরা বাকারা, ১৭৮]

আরো পড়ুন কুফরীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ part 2

কোন মন্তব্য নেই :