যৌন ইচ্ছায় বাধানিষেধ /অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি E-mail : professorfiroz@yahoo.com ৩
কোন মন্তব্য নেই
যেসব নারী যৌনভাবে নির্যাতিতা হয়েছে বিশেষ করে শিশুকালীন সময়ে, সম্ভাব্য তারাই যৌন জাগরণের ক্ষেত্রে বাধানিষেধের অভিজ্ঞতা লাভ করে। তারা অসহায়ত্ববোধ করতে পারে, দোষী, লজ্জা অথবা গোস্বা অনুভব করতে পারে; এমনকি তারা সেই নির্যাতনের স্মৃতিবিভ্রম অনুভব করতেপারে। যার কারণে তাদের যৌন জাগরণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। কারণ যা-ই হোক না কেন যৌন জাগরণে বাধানিষেধের উপস্থিতিকে মনে করা হয় সেক্সুয়াল ডিসফাংশন। কল্পনা, শিথিল যৌনকেলি, যৌনসঙ্গীর সাথে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা এবং বহিরাঙ্গের যৌনখেলা বাধা-নিষেধগ্রস্ত যৌন জাগরণের নারী-পুরুষের জন্য হতে পারে অত্যন্ত শিথিল এবং এটা তাদের সাহায্য করতে পারে তাদের দুশ্চিন্তা ও বাধানিষেধের দূরীকরণে। অন্যান্য সেক্সুয়াল ডিসফাংশনের মতো এটাকেও পেশাদারি পরামর্শ দ্বারাচিকিৎসা করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সাইকোথেরাপি ও সেক্সথরাপি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা দূরীকরণের ওষুধও ভালো কাজ করতে পারে।
যদিও আমাদের মধ্যস্থ বেশিরভাগ লোকের যৌনাঙ্গ জাগরণের ডিসঅর্ডার নেই, অনেকেরই রয়েছে দুশ্চিন্তা এবং বাধানিষেধের ভয়, যা যৌন জাগরণে বাধাপ্রদান করে এতটা বেশি কষ্টকরভাবে, যাকল্পনা করা যায় না। আমাদের যৌনসঙ্গীদের সাথেখোলাখুলি আলোচনা, এই অবস্থায় দুশ্চিন্তা ও বাধানিষেধ দূর করতে সাহায্য করে।
যৌনকর্মের দুশ্চিন্তা
পারফরমেন্সের দুশ্চিন্তা হচ্ছে সঙ্গীকে সুখী করতে না পারার ভয়। পুরুষের মধ্যে এটা হচ্ছে শিশ্ন খাড়া না হওয়ার ভয়। শিশ্নের অপারগতার ভয়ের এটা হচ্ছে আর একটি কারণ। শরীর সম্বন্ধে হীনজ্ঞান, আত্মাভিমানের অভাব, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা এবং যৌনাঙ্গ নিয়ে ভয় ও দুশ্চিন্তা, যৌনকর্মের দুশ্চিন্তার সাথে যোগ হয়। একজন মানুষ যদি বিশ্বাস করে যে, মাঝেমাঝে যৌন জাগরণ না হওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার, তাহলে তার পক্ষে সেই ভয়াবহ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভবপর; যার মধ্যে রয়েছে যৌন জাগরণের বাধা-নিষেধের কারণে যৌনকর্মের দুশ্চিন্তা, বাধা-নিষেধমূলক যৌন জাগরণ।
যৌনকর্মের দুশ্চিন্তার কারণে একটা অভ্যাসগত চিন্তা এসে যেতে পারে। যার দ্বারা আসতে পারে আমাদের যৌনসঙ্গীর সাথে যৌনখেলায় মিলিত অবস্থায়, তুলনা করা, পদমর্যাদার বিবেচনা করা এবং আমাদের যৌনচালনার কর্মকে সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা। এটাকে বলা হয় Spectatoring আমরা পূর্বস্বীকৃত সেপক্টেটরিং দ্বারা আবিষ্ট হতে পারি যা আমাদের যৌন জাগরণের বাধা হিসেবে এসেছে।ক্রিয়াকর্মের দুশ্চিন্তার সেপক্টেটরিংকে মনে হয় অনেক বেশি নারী ও পুরুষেরমধ্যেই সাধারণ; কিন্তু এটাও হতে পারে যে পুরুষেরলিঙ্গ শক্ত না হওয়াটা নারীর যৌন জাগরণ না হওয়ারচেয়ে অনেক বেশি সপষ্ট।
আমাদের বেশিরভাগ লোকই বাধানিষেধগ্রস্ত যৌন জাগরণের অভিজ্ঞতা লাভ করব সময়ে সময়ে। এটা খুবই জরুরি যে, আমরা এটাকে আমাদের যৌন জীবনের সাধারণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করব এবং আমরা এ নিয়ে মোটেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হব না যে, আমরা প্রয়োজনেরচেয়ে অনেক কম আনন্দের সাথে যৌনতায় মিলিত হচ্ছি।
বাধাপ্রাপ্ত শীর্ষ যৌনপুলক
শীর্ষ যৌনপুলক না পাওয়া হচ্ছে নারীদের মধ্যে অতি সাধারণ এবং পুরুষের মধ্যে অসাধারণ। নারীদের জন্য সেক্সথেরাপি তালাশ করা অত্যন্ত সাধারণ কারণ। প্রায় এক-তৃতীয়াংশনারীই শীর্ষ যৌনপুলক পেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রায় ১০% পর্যন্ত নারীরা জীবনে কখনোই যৌন শীর্ষপুলকের অভিজ্ঞতা লাভ করে না। এটাকে বলা হয়অ্যানোরগ্যাসমিয়া। বেশিরভাগ যৌন শীর্ষপুলকেবাধাপ্রাপ্ত নারীদের পূর্ব অভিজ্ঞতায় যৌনসঙ্গমের সময় যৌন শীর্ষপুলক লাভ করেছে, কিন্তু এখন আর লাভ করতে পারে না। তারা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে একটা যৌন শীর্ষপুলক লাভ করতে সমর্থ হতে পারে, কিন্তু তাদের সঙ্গীদের সাথে যৌনসঙ্গমের মাধ্যমেপায় না। অনেক নারী এমনকি জানতেও পারে না যে একটা শীর্ষ যৌনপুলক তারা লাভ করতে পারে। অনেক নারীর অ্যানোরগ্যাসমিয়া থাকা সত্ত্বেও তারা যৌনতার অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে এবং অনুভব করে না যে যৌনানন্দের জন্য অর্গাজমের প্রয়োজন আছে। যৌনসঙ্গমের সময় প্রায় নারীরাই শীর্ষ যৌনপুলক লাভ করতে অসমর্থ হয়, তার কারণ যৌনসঙ্গম বা মিলন দীর্ঘস্থায়ী হয় না, শিশ্নদ্বারা উত্তেজনা প্রদান কার্যকর হয় না অথবা হাত দিয়ে ভগাঙ্কুরের যথেষ্ট উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হয় না-নারী বা তার সঙ্গী কারো দ্বারাই হয় না। বাধানিষিদ্ধ শীর্ষ যৌনপুলক হচ্ছে যথেষ্ট উত্তেজনা দেয়া সত্ত্বেও শীর্ষ যৌনপুলক অনুভব করতে ব্যর্থ হওয়া।
বাধানিষেধপূর্ণ পুরুষের অর্গাজমকে বলা হয় রিটার্ডেট বা ডিলেভ এজাকুলেশন অর্থাৎ দেরিতেবীর্যপাত হওয়া। এগুলো কিছুটা বিভ্রান্তিকর সংজ্ঞা। যাই হোক যেহেতু বীর্যপাত ও শীর্ষ যৌনপুলক দুটো আলাদা ঘটনা যদিও সাধারণত দুটো ব্যাপারই একই সাথে সংঘটিত হয়। প্রকৃতপক্ষে দেরিতে বাধাপ্রাপ্ত বীর্যপাত ঘটা কিছু মানুষের বীর্যপাত ছাড়াই শীর্ষ যৌনপুলক হয়ে থাকে। বাধানিষেধপূর্ণ বীর্যপাত ও চরমপুলক উভয় সঙ্গীর জন্যই অত্যন্ত নিরাশাব্যঞ্জক হতে পারে।এটা একজন পুরুষকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত দেরিতে বীর্যপাত ঘটাতে পারে। কিছু লোকের জন্য বীর্যপাত মোটেই হয় না। ইনহিবিটেড অর্গাজম যে সব পুরুষের হয় তারা অনেক কষ্টে চেষ্টা করে অর্গাজমও বীর্যপাত ঘটাতেপারে। এটাতে ব্যাপারটাকেআরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বাধানিষিদ্ধ বীর্যপাত স্ট্রেট পুরুষদের চেয়ে গাই পুরুষদের মধ্যে অনেক বেশি সাধারণত দেখা যায়।
কিছু নারী ও পুরুষ যাদের ইনহিবিটেড (বাধা-নিষেধজনিত) শীর্ষ যৌনপুলক বা অর্গাজম আছে তারা বিশ্বাস করে যে, যৌনখেলার জন্য বা তাদের সঙ্গীদের সুখী করার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে কৃত্রিম শীর্ষ যৌনপুলকেরসৃষ্টি করা। সবশেষে দেখা যায় যে, এই ধরনের ধোঁকাবাজির ফল কখনো শুভ ওস্বাস্থ্যকর হয় না, বিশেষকরে প্রতিশ্রুত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো নয়ই। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে যে, তাতে শেষ পর্যন্ত আনন্দ সম্পূর্ণ মাটি হয়ে যায় এবং ফেকার বা ধোঁকাবাজকারীর সঙ্গী কখনো জানতেও পারে না যে কীভাবে তাকে শীর্ষ যৌনপুলকে পৌঁছতে সাহায্যকরা যায়।
কতগুলো নারী ও পুরুষের মধ্যে ওষুধপত্রের ব্যবহার ও শারীরিক অবস্থার কারণেও শীর্ষপুলক আসতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

আরো
পড়তে থাকুন ৪

কোন মন্তব্য নেই :