পুরুষের জন্য নারীর প্রয়োজন কেন? চন্দন সরকার
কোন মন্তব্য নেই
সবচেয়ে গভীর রহস্যগুলোর একটি হচ্ছে মানব-মানবীরসম্পর্ক। কেন একজন পুরুষের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন? এই বন্ধনের সূত্র কি? বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু এর গভীর তল সপর্শ কি সম্ভব হয়েছে? মার্কিন অর্থনীতিবিদ হার্বার্ট স্টেইন অত্যন্ত সাধারণভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি প্রতিদিন পথ চলতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি। তিনি খুঁজতে চেয়েছেন এ বন্ধনেরউৎস কোথায়। হার্বার্ট স্টেইন কি খুঁজে পেয়েছেন তা জানা যাক তাঁর ভাষায়-
প্যারিসের পেভমেন্ট ক্যাফেগুলোতে বসে থাকা আমার ফ্যান্টাসি। এ ফ্যান্টাসি আমাকে নিয়ত তাড়িত করে কোনো না কোনো কিছু লেখার বিষয়। তা কোনোক্রমেই পদার্থবিদ্যা বা অর্থনীতির বিষয় নয়। তবে তা হতে পারে উপন্যাস অথবা কবিতা কিংবাদর্শন সম্পর্কিত কোনো বিষয়। ক্যাফের সামনে বসে থাকতে অথবা পথ চলতে গেলে আরও একটি অভ্যাস আমাকে তাড়িত করে এবং তা হচ্ছে পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকানো। এ ফ্যান্টাসি কিন্তু আমার আগে ছিল না। ওয়াশিংটনের রাস্তায় বানিউইয়র্কের কেনেডি সেন্টারের কোনো রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে এমনটি হতো না। তবে আমি খেতে বসেশুধু খাই না। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি এবং পথ চলতি পথিকদের পর্যবেক্ষণ করি। আগেই বলেছি আমি পাশ কাটানো পথ চলতি মেয়েদের পর্যবেক্ষণ করি। তবে তারা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে না। বরং আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে বিবাহিত দম্পতিরা। বিশেষ করে বিবাহিতা মহিলারা। তাদের যে মোহনীয় হতে হবে এমন কোনো কথানেই। তাদের যে মেরিলিন মনরো হতে হবে এমন কোনো কথাও নেই। আমিযাদের পর্যবেক্ষণ করি তাদের কেউ হয়ত সুন্দরী। কিন্তু তাদেরঅধিকাংশ সাধারণ। অতি সাধারণ। এদের কেউ কেউ হয়ত যাচ্ছেন কেনেডি সেন্টারে নাটক দেখতে, অথবা অপেরায় কিংবা কেউ হয়ত যাচ্ছেন কনসার্ট শুনতে।
অনেকে ভাবতে পারেন তারা হয়ত উঁচুমাপের সংস্কৃতিবান। হতেও পারে। আবার নাও হতে পারে। তবে একান্তই সাধারণ মাপের। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়। মহিলাটি যে পুরুষের বাহুলগ্না হয়ে যাচ্ছেন সে পুরুষটি কিন্তুঅত্যন্ত গর্বিত। তার কাছে ঐ মহিলা কিন্তু সাধারণ নন। ঐ পুরুষের কাছে বাহুলগ্না মহিলা বা তার স্ত্রী যেন সারাটি পৃথিবী।
বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায়ে বলা হয়েছে এবং মহাপিতা ঈশ্বর বলেছেন, ‘মানুষ একা থাকবে তা উত্তম নয়, তার মনের মতো একজন সঙ্গী আমি সৃষ্টি করব’ এবং তাই, ‘তার জন্য একজন স্ত্রীলোক তৈরি করলাম। এতে কিছু বলা হয়নি যে একজন সুন্দরী বা বুদ্ধিমতী নারী তৈরি করেছেন তিনি। অথবা এমন কোনো নারী তৈরি করেননি যিনি বিশেষণে বিশেষায়িত। তিনি কেবল একজন স্ত্রীলোক তৈরি করেছেন এবং কেবল স্ত্রীলোক। আরতাই প্রশ্ন আসে একজন স্ত্রীলোককেন পুরুষের জন্য এত মূল্যবান?এর তিনটি কারণ রয়েছে-
প্রথম
তিনি বিছানায় একজন উষ্ণ শরীরেরঅধিকারী। আমি কিন্তু এখানে যৌনব্যাপারস্যাপারে কিছু বলছি না।ও বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি অন্য বিষয়ে বলছি। বিষয়টি আরো আদিম মানবীয় সম্পর্কের ব্যাপারে। ধরা যাক, একটি শিশু তার দোলনা খাটে কাঁদছে। সে কি কোনো আলাপ-আলোচনার জন্য? অথবা স্বর্ণের আংটির জন্য? নিশ্চয়ই তা নয়। আসলে সে কাঁদছে কেউ তাকেকোলে নিক, অথবা তাকে আদর সোহাগ করুক সেজন্য। অর্থাৎ সে কারো সংসপর্শে আসতে চাচ্ছে। এই সংসপর্শ সম্পূর্ণ শারীরিক সংসপর্শ। প্রাপ্তবয়স্করাও এর বাইরে নয়। তাদেরও প্রয়োজন শারীরিক সংসপর্শ। তারা পরসপরকেজড়িয়ে ধরতে চায়। তারা এটা চায় একটি ভিন্ন ধরনের আবহে। বলা যায় শীতল পারিপার্শ্বিক অবস্থায় একটু উষ্ণতা পাবার আশায়। কিংবা সামান্য আরাম পাবার জন্য। একজন সাধারণ পুরুষএবং একজন সাধারণ নারী পরসপর এমন করেন বা জড়িয়ে ধরেন একে অপরকে এ জন্যই। তাদের অন্তর্গতআকাঙ্খা বাঙ্ময় হয়ে ওঠে এভাবেই।
দ্বিতীয়
প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীদের বেলায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পারসপরিক কথোপকথন। কোনো দম্পতি হয়ত ত্রিশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পরস্পর কথা বলছে। আপনারা ভাবতে পারেন কি এমন কথা! অথবা হেন কোনো কথা নেইযা তারা বলতে বাকি রাখে। কিন্তু তারপরও তারা কথা বলে যায় পরসপর। এমনকি পথে চলতে চলতেও তারা পরসপর কথা বলে যায়। এমন কথা যা তারা অন্য কারো সঙ্গে বলতে পারে না। পুরুষটি তার সঙ্গিনীর কাছে অকপটে তার ভালো মানুষি কথা বলতে পারে। এখানে তার কোনো ধরনের ভীতি থাকে না। সে বুঝতে পারে এমন একজনের কাছে সে তার মনের ভাব প্রকাশ করছে যে অত্যন্ত সহৃদয়তার সঙ্গে তার কথাগুলো শুনছে। একই সঙ্গে পারছে তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে। কিন্তু এইযে কথোপকথন-তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য কি? এ প্রশ্ন আসতে পারে। উত্তর খুব সহজ। এর উদ্দেশ্য একটি বিষয়, তোমার কাছেই এবং তুমিও এখানে আছ, আমারকাছেই।
তৃতীয়
নারী নরকে তার প্রয়োজন মেটায়। বিকল্পভাবে নরও নারীর প্রয়োজন মেটায়। এটা সম্পূর্ণ পারসপরিক।যদি আপনাকে কারো প্রয়োজনই না পড়ে তাহলে আপনার মূল্য কোথায়? এ ক্ষেত্রে হয়ত আপনার চাকরিদাতা, ছাত্র, পাঠক বলতে পারে আপনাকে তাদের প্রয়োজন। কিন্তু এ ধরনের সম্পর্ক পারসপরিক সমতা বিধান করে না। হয় আপনি কারও কাছে শ্রদ্ধার পাত্র, নতুবা আপনার কাছে কেউ শ্রদ্ধার পাত্র। অর্থাৎ সমীহ করার বিষয়টি থাকে। কিন্তু আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কেরবিষয়টি তা নয়। এখানে সমীহ করার কিছু নেই। এটাই আপনাকে আত্মমর্যাদায় অভিষিক্ত করে। প্রতিদিনের বৈরী পৃথিবীকে মোকাবিলা করার উৎসাহ ও সাহস যোগায়। একজন নরের জন্য একজন নারীর উপস্থিতি এখানেই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই ‘সাধারণ’ একজন নারী-কোটির একজন হয়েও আপনার কাছে অসাধারণ কেউ হয়ে যায়। স্বামীর কাছে স্ত্রী অনন্য হয়ে ওঠেন। এখানে আমি একজন পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করছি। প্রসঙ্গটি তাই বলে এখানেই স্থির নয়। আমি এও মনে করি না যে সম্পর্কটি একতরফা। বরং সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবেই পারসপরিক। আরো প্রশ্ন আসতে পারে, একজন অর্থনীতিবিদ হয়ে আমি এতসব জানলাম কিভাবে? কথাটি মিথ্যা নয়। কিন্তু এও তো সত্য যে আমি ও আমার স্ত্রী জীবনে অনেকবার এ পথে পা ফেলেছি একসঙ্গে। আর আমি এসব হৃদয় দিয়েই অনুভব করেছি।
সুত্রঃ রিডার্স ডাইজেস্ট

♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3

কোন মন্তব্য নেই :