যৌনতার অজানা কথা ২| অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি
কোন মন্তব্য নেই
যৌনমিলনের রকমারি কথা
যৌন বিজ্ঞানী ডাঃ কিনসে ওহ্যাভলক এলিসের মতে, সব নারী যৌন আবেদনে সমানভাবে সাড়া দিতে পারেনা। এমন হাজার হাজার নারী আছে, যারা স্বামীকে কাছে পাওয়া মাত্র বা যৌন আবেদন মাত্র উত্তেজনা অনুভব করে। আবার এমন অনেকনারী আছে, যারা দীর্ঘ সময়যৌন ক্রিয়ায়ও খুব বেশি উত্তেজনা অনুভব করেনা। কোনো কোনো নারী কামাবেগে হয়তো মৃদুভাবে উত্তেজিত হয়। কিন্তু চরম তৃপ্তির মুহূর্তে পৌঁছতে পারেনা।আবার এমন অনেক নারী আছে, যারা যৌন ক্রিয়ায় প্রচন্ডভাবে উত্তেজনা অনুভব করে এবং দ্রুত চরম তৃপ্তি লাভ করে। এমন নারীও আছেন যারা সারা জীবনে একবারও চরমতৃপ্তি লাভ করেনি। আসল কথা হলো যৌন উত্তেজনা ও চরম তৃপ্তি লাভের ব্যাপারে মানসিক অবস্থাই বেশি দায়ী। সাধারণভাবে যৌনমিলনে কিছুটা আনন্দ প্রায় সবাই পায়, কিন্তু চরম তৃপ্তিজনিত আনন্দের সঙ্গে কখনোই তার তুলনা হয়না। মিলনের পর পুরুষের যে স্খলন হয়, ঐ স্খলিত বীর্য নারীর যোনি অভ্যন্তরস্থ দেওয়ালে যেসব উত্তেজিত স্নায়ু থাকে, তাদের কিছুটা শান্তকরে। কিন্তু যেসব নারী নিয়মিত চরম তৃপ্তি লাভ করতে অভ্যস্ত, তারা শান্তির বদলে অশান্তি লাভ করে বেশি।
যারা কখনোই চরম তৃপ্তির আনন্দময় পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনা তারাও এক প্রকার আনন্দ বোধ করে। এই আনন্দবা তৃপ্তিবোধ আসে মানসিক আবেগের জন্য। এইসব স্ত্রীরা স্বামীর সুখের জন্য নিজেকে সমর্পণ করে অথবা দাম্পত্য জীবনের কর্তব্য ভেবে এ জাতীয় তৃপ্তিবোধ করেন। বিভিন্নগবেষণায় দেখা গেছে যে, শিক্ষিত এবং আধুনিক স্ত্রীদের অনেকেই সহজেই তৃপ্তি লাভ করে। ম্যারি ওকলডেরন এর মতে, প্রায়শই কোনো নারীই প্রকৃত পক্ষে যৌন জড়তা নয়। যেসব পুরুষ স্ত্রীকে মিলনের যথাযথভাবে উত্তেজিত করতেপারে, সেসব স্ত্রীরা যৌন মিলনে যথেষ্ট আনন্দ পান, চরম তৃপ্তি না পেলেও।
যৌনমিলনের অব্যবহিত পরেইনারী-পুরুষ কিছুটা ক্লান্তিবোধ করলেও যৌনমিলনে অংশগ্রহণ করায় মানসিক বা দৈহিক স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয়না। দেহ যখন সত্যিই ক্লান্ত বা অসুস্থ থাকে তখন নিজ থেকেই নারী-পুরুষ যৌনমিলনে অংশগ্রহণ করার তাগিত বোধ করেনা। স্বাভাবিক ও সুস্থ নারী-পুরুষ যৌন সঙ্গমে এক প্রকার মানসিক সুখ বা তৃপ্তি লাভ করে। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিলনে অংশ গ্রহণ বা রুটিন মাফিকমিলনে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়ে যায়। আবার কারও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার ফলে যৌনমিলনে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় বা হ্রাস পায়, এ অবস্থার দ্রুত চিকিৎসা না করা হলেমানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হয়। সুস্থ ও স্বাভাবিক নারী-পুরুষের ঘন ঘন যৌনমিলনে দৈহিক বা মানসিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
যৌন বিজ্ঞানীরা বলেন যে, যৌনমিলনে পুরুষের দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার এমন কোনো সহজ পদ্ধতি নেই। যাতে স্ত্রীর চরম তৃপ্তি লাভের সঙ্গে পুরুষের চরম ক্ষণ আসে। এ সমস্যা সর্বজনীন, যুগ-প্রাচীন, পৃথিবীর হাজার হাজার পুরুষ এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করেছেন। যৌন বিজ্ঞানীরা দম্পতিদের এ সম্পর্কে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।এগুলো হলো -
স্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতা এবং যৌন জীবনে উৎসাহ।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক প্রেম-প্রীতি ও ঐক্য।
নিয়মিত অভ্যাস, যৌন জীবনেযেসব দম্পতি নিয়মিত, অনেকসময় ধরে চেষ্টা দ্বারা তারা নিজেদের যৌন মিলনকাল দীর্ঘ করতে পারেন।
আমার ধারণা এই যে, যেসব স্ত্রীরা মিলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে এবং যাদের স্বামীরা স্ত্রীর তৃপ্তিকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তারা মিলনে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। মিলন ভঙ্গীও অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে সাহায্যকরে। স্ত্রী উপরে, এ ভঙ্গি স্ত্রীকে বেশি স্বাধীনতা দেয় এবং পুরুষের উত্তেজনাকে তীব্র হতে সময় দেয়। মিলনকালে মাঝে মাঝে ভঙ্গী অদল বদল করে এবং স্বল্প বিরতি দিয়ে পুরুষ দীর্ঘক্ষণ মিলনে স্থায়ী হয়ে স্ত্রীর তৃপ্তি সাধনে সক্ষম হতে পারে। পুরুষের যৌন ক্ষমতা কতদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এ সম্পর্কে এক কথায় উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। স্ত্রীর দৈহিক স্বাস্থ্য, চারিত্রিক ব্যবহার, পুরুষের মানসিক অবস্থা এসব কিছু অনুকুলে হলে সাধারণত ৭০ বছর পর্যন্ত পুরুষ যৌন জীবনে মোটামুটি সক্ষম থাকতে পারে। ইআর, ম্যারি ও কলজরন কিছুকাল আগে তার গ্রন্থ Release from sexual tensions এ এক ৮০ বছর বয়স্ক পুরুষের সম্পর্কে বলেছেন যে, সে ৮০ বছর বয়সেও পরিপূর্ণ যৌন জীবন-যাপন করতে পারে। ডাঃ স্টোন এর মতে শতকরা ৭০জন পুরুষ ৭০-৭২ বছর বয়স পর্যন্ত যৌন জীবনে অংশ গ্রহণ করতে সমর্থ থাকে। অবশ্য পুরুষের বয়স যত বাড়তে থাকে, ততই যৌনমিলনের পরিমাণ কমতে থাকে এবং বিরতির সময় বড় হতে থাকে। ডাঃ কিনসের গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে, যেসব পুরুষের বয়স ২০-২৯ বছরের মধ্যে তারা সপ্তাহে গড়ে ৩ বার মিলিত হয়। এর পরের বয়সে যৌনমিলনের হার কমতে থাকে,সপ্তাহে ২ বার বা তারও কম, ৫০-৬০ বছরের মধ্যে যাদের বয়স, তারা দু’সপ্তাহে ১ বার মিলিত হয়। আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, শেষ বয়সের দিকে পুরুষের যৌনমিলনের ক্ষমতা বৃদ্ধিপায়। এদেশে ২০-৩৫ বছর বয়সের পুরুষ সপ্তাহে গড়ে ৪ বার, ৩৫-৫০ বছর বয়সের পুরুষেরা সপ্তাহে গড়ে ২ বার পর্যন্ত মিলিত হয়। আমাদের দেশের পুরুষরা সাধারণত গড়ে ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত যৌন জীবনে সক্রিয় থাকে।
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি
E-mail : professorfiroz@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই :