যৌনতার অজানা কথা ১| অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি
কোন মন্তব্য নেই
যৌন অনীহা
আন-অরগ্যাজমিয়া এমনই এক সমস্যা যাতে নারী ও পুরুষউভয়ই পরিপূর্ণ যৌন সুখ উপভোগ করতে পারেনা। এ সমস্যাটি দু’রকমের। যথা -
প্রাইমারি আন-অরগ্যাজমিয়া এবং
সেকেন্ডারি আন-অরগ্যাজমিয়া
প্রাইমারি আন-অরগ্যাজমিয়া
এতে আক্রান্ত ব্যক্তিটি পূর্বে কখনই চরম সুখ উপভোগ করতে পারেনি।
সেকেন্ডারি আন-অরগ্যাজমিয়া
এতে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশ কিছুদিন সবকিছু ভালোভাবে চলার পর ক্রমশঃ যৌন সুখের অনুভূতির হ্রাস হতে শুরু করে এবং পরে তা থেকে এক প্রকার হতাশার সৃষ্টি হয়।
কৈশোর ও প্রথম যৌবনের ভুলশিক্ষা ও নারী-পুরুষের সম্পর্কে সামাজিক বা পারিবারিক ভয়ভীতি থেকে অনেক সময় এ জাতীয় সমস্যারসৃষ্টি ঘটতে পারে। ফলে নারী-পুরুষ নিজের দেহ ও দেহের অনুভূতিগুলোকে অপছন্দ করতে শুরু করে এবংতাদের মাঝে সৃষ্টি হয় আত্মবঞ্চনা।
সেকেন্ডারি সমস্যার সৃষ্টির ক্ষেত্রে সাধারণত নারী-পুরুষের পারসপরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্কের অবনিবনা দায়ী।আবার মাত্রাতিরিক্ত আত্মনিয়ন্ত্রণ বা অতিরিক্ত সংযমী মনোভাবও এ সমস্যাটি সৃষ্টি ঘটাতে পারে। আবার অনেক সময় মিলনবিমুখীতা বা অত্যধিক কর্মব্যস্ততাও এ সমস্যাটি ডেকে আনতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৪৬% নারীদের অরগ্যাজম স্তরে পৌঁছতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় এবং ১৫% নারী এ পর্যায়ে বা স্তরে পৌঁছতে ব্যর্থ হন। বিবাহিত জীবনের প্রথম কয়েকটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যৌনতা এক প্রকারনিত্য-নৈমিত্তিক যান্ত্রিক অভ্যাসে পরিণতহয়, ফলে সেক্স সম্পর্কে তখন দেখা দেয় আগ্রহহীনতা। অনেক সময় উদরের নীচের অংশের যন্ত্রণা, কষ্ট, অস্বস্তিও বিভিন্ন রকমের গাইনি সমস্যা দেখা দেয় এতে করে অতিরিক্ত মানসিক টেনশন দেখা দেয়। আবার নারী অনেকসময়ই তার স্বামীর অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হন আবার ভালোবাসার মুহূর্তে স্বামীর স্বার্থপরতা বা ভালোবাসার ঘাটতি ইত্যাদিঅনুভব করেন। ফলে বঞ্চিতা স্ত্রীর স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা কমতে থাকে। এর থেকে ভুল বোঝাবুঝি দেখা দেয় আর তাতে করে স্বামী ওস্ত্রীর মাঝে সৃষ্টি হয় দূরত্বের। ধীরে ধীরে এ দূরত্ব ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায় এবং তা অনেক সময় দাম্পত্য সম্পর্কের ফাটলধরায়। উপরোক্ত কারণসমূহ নারীর মাঝে সেক্স অনীহা সৃষ্টি করে- দেখা দেয় সেকেন্ডারি আন-অরগ্যাজমিয়া।
সমস্যা সমাধানে করণীয়
সমস্যাটির শারীরবৃত্তীয় কোনো কারণ আছে কিনা তা প্রথমে খতিয়ে দেখতে হবে।
এছাড়া প্রাইমারি আন-অরগ্যাজমিয়ার ক্ষেত্রে নারীর মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতেহবে এবং সেক্স বা যৌনতা সম্পর্কে কোনো বদ্ধমূল ভ্রান্তি থাকলে তার পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং ধীরে ধীরে আক্রান্ত নারীর মধ্যে নারীত্ব ও তার চাওয়া-পাওয়ার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর মধ্যে দিয়ে সমস্যাটিকে দূর করতে হবে। আর সেকেন্ডারি সমস্যার ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীকে একসঙ্গে রেখে তাদের সমস্যার খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন। স্বামীর মনে তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা এবং সহানুভূতি জাগানো প্রয়োজন এবং স্ত্রীর মন-মানসিকতার আত্মবিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে সমস্যাটির বিদায় ঘটানো সম্ভব। প্রয়োজনে সেক্স-স্পেসিয়ালিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। সাইকোথেরাপি, ফ্যামিলি থেরাপি দিয়ে তিনি উভয়ের মাঝে ভালোবাসা ও যৌন আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, কামনা ফিরিয়ে আনবেন। দূর করবেন যৌনমিলনে অনীহা। তাই দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যৌনমিলন অনীহা দেখা দিলে বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
পুরুষের যৌন অনীহা
পুরুষাঙ্গের বিভিন্ন উত্থানজনিত সমস্যা বাড়তেথাকে পুরুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে। এ সময় পুরুষদের মাঝে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে অসন্তোষ ক্রমেই দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। মায়োক্লিনিকের গবেষকবৃন্দরা বলেন যে যেসব বয়স্ক ব্যক্তিরা বয়সজনিত কারণে সেক্স বা যৌন অনীহায় ভোগেন তাদের যৌনতার উৎকর্ষতার ব্যাপারে পুনঃবিবেচনার প্রয়োজন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত জার্নাল অব আমেরিকান জেরিয়াট্রিক সোসাইটির মায়ো গবেষকবৃন্দ ৪০-৭৯ বছরের কিছু পুরুষের সেক্স বা যৌনতা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন। সে গবেষণারমূল কথাগুলো হলো -
যৌনমিলন বা যৌন সঙ্গম নিয়ে তৃপ্তি।
যৌন ফাংশন সম্পর্কে দুর্ভাবনা টেনশন।
যৌন ইচ্ছা বিশেষ করে মাস্টাবেশন করার ইচ্ছা।
যৌনভাবে উদ্দীপিত হলে লিঙ্গ উত্থানের ক্ষমতা।
পরবর্তী বছরের তুলনায় যৌন কর্মের ক্রিয়ার পরিবর্তন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়সের পার্থক্যের কারণে যৌন আকাঙ্খা, ইচ্ছা, সামর্থ্য প্রভৃতি পরিবর্তিত হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, শতকরা প্রায় ২৫ভাগ পুরুষ তাদের যৌনতা সম্পর্কে দুশ্চিন্তায় ছিলেন দারুণভাবে। বয়স যাদের ৭০ এর উপরে ছিল তাদের শতকরা ৪৭ভাগ পুরুষ এ রকম মেন্টাল প্রবলেমে আক্রান্ত ছিল। মায়ো গবেষকরা জানান যে, সেক্স বা যৌনতা সম্পর্কে স্বচ্ছ বা স্পষ্ট ধারণা থাকলে যৌনতার অনীহাজনিত সমস্যা খুব সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায়। প্রবীণদের মাঝে যৌন অনীহা দেখা দিলে প্রয়োজন মনোচিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।

কোন মন্তব্য নেই :