জহুর আলীর ফাঁদে ৫০ নারী
কোন মন্তব্য নেই
: ছেলের চাকরি চাইতে গিয়ে সম্ভ্রম হারানো এক মায়ের অভিযোগে মৌলভীবাজারের ডিবি পুলিশের হাতে আটক জহুর আলীর লালসার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৫০নারী। চাকরি দেয়ার নামে ওই নারীদের সম্ভ্রম লুটে নেয় সে। মৌলভীবাজারের সাবেক সিভিল সার্জন শফিক উদ্দিনের ভাতিজা পরিচয়ে নৈশপ্রহরী হয়েও দাবড়ে বেড়িয়েছে সিভিল সার্জন অফিসসহ হাসপাতালের সব ক’টি দপ্তরে। তার লালসার শিকার ৫০ নারীর মধ্যে ৯ জনকে বিয়ে করলেও ১০-১১ বছর ধরে সংসার করছেন কমলগঞ্জের পৌর এলাকার রামপাশা গ্রামের মরহুম সৈয়দ আলীর মেয়ে শাহানা বেগমকে নিয়ে। বর্তমানে শাহানার ঘরে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। লম্পট জহুরের এ বিয়ে ছিল ৪র্থ। শাহানাকে বিয়ের আগে আরও ৩ বিয়ে করলেও সে বিয়ের কথা গোপন রেখে জহুর দরিদ্র ঘরের সুন্দরী কন্যাশাহানাকে বিয়ের পর থেকেই ঘরজামাই হিসেবে রামপাশা গ্রামে বসবাস করছিল। রামপাশা গ্রামের সবাই জহুরকে ডাক্তার হিসেবেই চিনে। তার বাড়ি কমলগঞ্জের মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামে। ওই গ্রামের মরহুম আবদুল জলিলের ছেলে জহুর আলী। আবদুল জলিলের ২ মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সে সবার ছোট। চাকরি করতেন হাসপাতালের নৈশপ্রহরী পদে। নৈশপ্রহরী হিসেবে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। শাহানাকে বিয়ের পর নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে একে একে আরও ৫ বিয়ে করেন। প্রতিটি বিয়ের পিছনে রয়েছে নানাকাহিনী। লম্পট জহুর আলী প্রথম বিয়ে করেন কমলগঞ্জের শমশেরনগরে রোকিয়া বেগম নামে এক মহিলাকে। ওই সংসারে রয়েছে ২ ছেলে। এর পর বিয়ে করেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ৩য় বিয়ে করেন কুলাউড়ার টিলাগাঁও এলাকায়। রামপাশা গ্রামের শাহানাকে বিয়ের পর একে একে বিয়ে করেন কমলগঞ্জের সরইবাড়ি গ্রামের সুরুজ মিয়ার স্ত্রী রুশনা বেগম, জালালীয়া গ্রামের কবিরুননেছা, আদমপুরের জুলেখা বেগম, শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা বাগান ও বড়লেখা হাসপাতাল সংলগ্নএক বাড়িতে।রামপাশা গ্রামের শাহানাকে বিয়ের পর একে একে বিয়ে করেন কমলগঞ্জের সরইবাড়ি গ্রামের সুরুজ মিয়ার স্ত্রী রুশনা বেগম, জালালীয়া গ্রামের কবিরুননেছা, আদমপুরের জুলেখা বেগম, শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা বাগান ও বড়লেখা হাসপাতাল সংলগ্নএক বাড়িতে।সরইবাড়ি গ্রামের রুশনা বেগমকে বিয়ের পর চাকরির অসুবিধার কথা জানায় স্ত্রী রুশনাকে। স্বামীর বিপদের কথা ভেবে সরল মনে রুশনা তার নামের ২ একর জমি বিক্রি করে সব টাকা তুলেদেয় স্বামী জহুর আলীর হাতে। টাকা নিয়ে যাওয়ার পর আর স্ত্রী রুশনার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখেনি জহুর আলী। হাসপাতালের বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে বহু লোকজনের কাছ থেকে সে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। সদর হাসপাতালে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার গ্রাম রামেশ্বরপুরের সৈয়দ আলীর কাছ থেকে নেয় ৫০ হাজারটাকা। একইভাবে মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফা এলাকার সোহাগ নামে এক যুবককে চাকরি দেয়ার কথা বলে সোহাগের মায়ের কাছ থেকে নেয় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু কাউকেই চাকরি দেয়নি সে। চাকরির প্রলোভনআর অবিবাহিত পরিচয়ে সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের ভোগ করতো চতুর জহুর আলী। তাদের সম্ভ্রম লুটে কৌশলে গোপনে নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতো। ছেলের চাকরির জন্য ২ বছর আগে মৌলভীবাজারের কলিমাবাদের এক মহিলা ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন জহুর আলীকে। ছেলের চাকরির পরিবর্তে ওই মহিলাকে জিম্মি করেসম্ভ্রম লুটে নগ্ন ছবি তুলে রাখে। ওই ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে গত ৯ মাস ধরে ওই মহিলার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিল সে। প্রতি মাসের ২-৩ তারিখ পরিশোধ করা হতো ধার্যকৃত চাঁদার টাকা। বিষয়টি ১লা নভেম্বর মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার অফিসে লিখিতভাবে জানান ওই মহিলা। বিষয়টি তদন্তেরজন্য পুলিশ সুপার ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেন। ২রা নভেম্বর ওই মহিলা কমলগঞ্জ হাসপাতালের সামনের এক দোকানে বসে চাঁদার টাকা দেয়ার সময় বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে জহুর আলীকে আটক করে ডিবি পুলিশের তদন্তকারী দল। এ সময় তার কাছ থেকে বেশ কিছু নগ্ন ছবি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। জহুরের স্বীকারোক্তিতে মৌলভীবাজারের ডেউপাশা থেকে তার অপর সহযোগী ফয়জুলকে আটক করে পুলিশ।এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজি ও মৌলভীবাজার সদর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, লম্পট জহুর কমপক্ষে ১৭-১৮টি বিয়ে করেছে। সে যেখানে চাকরিতে গেছে সেখানেই ৩-৪টি বিয়ে করেছে।বিভিন্ন প্রলোভনে সে বহু নারীর জীবন নষ্ট করেছে। অভিযোগ রয়েছে প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে শ্রীমঙ্গল হাসপাতাল থেকে তাকে হবিগঞ্জের বানিয়াচং হাসপাতালে বদলি করা হয়। বদলির আদেশ ঠেকাতে সে একটি প্রভাবশালীমহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। কমলগঞ্জহাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গৌরমনি সিনহা জানান, জহুর আলী খারাপ চরিত্রের লোক। সে যেখানে চাকরিতে গেছে সেখানেই একাধিক বিয়ে করেছে। বড়লেখা হাসপাতালে চাকরিকালে তার বিরুদ্ধে ৩-৪টি বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে। মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. গোলাম আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী জহুর আলী প্রেষণে সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করে বলেন, জহুর একটি লম্পট চরিত্রের লোক। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই :