কবর যিয়ারত ও কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন
কোন মন্তব্য নেই
বর্ণনা : এ কিতাবটিতে কবর যিয়ারতের পদ্ধতি, বৈধ ও অবেধ অসীলা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে লেখক ওসীলা ও দো‘আ সংক্রান্ত প্রচলিত কতিপয় প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, এমনকি কুতুব, গাউস ও পূণ্যবান ব্যক্তিদের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।

শিরোনামঃ কবর যিয়ারত ও কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন
লেখক : আহমদ ইবন আব্দুল হালীম ইবন তাইমিয়্যাহ

অনুবাদ: মো: আব্দুল কাদের
সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

সূচীপত্র

পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

[মূল প্রশ্ন]
ইমাম আহমাদ ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করে ও কবরবাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে কোনো রোগের জন্য অথবা ঘোড়ার আরোগ্যের জন্য অথবা কোনো বাহনের জন্য,তার মাধ্যমে রোগ দূরীকরনের প্রার্থনা করে,আর সে বলে,হে আমার নেতা;আমি তোমার আশ্রয়ে আছি,আমি তোমার ছত্র-ছায়ায় আছি, অমুক আমার ওপর যুলুম করেছে,অমুক আমাকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছা করেছে। সে আরও বলে,কবরবাসী আল্লাহ ও তার মাঝে মাধ্যম হবে। আবার তাদের কেউ কেউ ওলীদের মসজিদ খানকা ও তাদের জীবিত ও মৃত পীরদের নামে টাকা,উট,ছাগল,ভেড়া,তেল প্রভৃতি মানত করে। সে বলে, যদি আমার সন্তান সুস্থ হয় তবে আমার পীরের জন্য এটা,এটা এবং অনুরুপ কিছু। আবার তাদের কেউ কেউ তার পীরের দ্বারা উদ্ধার প্রার্থনা করে ঐ অবস্থায় তার অন্তর যেন দৃঢ় থাকে। আবার কেউ কেউ তার পীরের কাছে আসে এবং কবর স্পর্শ করে এবং তার কবরের মাটিতে চেহারা ঘর্ষণ করে, হাত দ্বারা কবরকে মাসেহ করে ও তা দিয়ে তার মুখ মাসেহ করে, অনুরূপ আরো অন্য কিছুও করে থাকে। আবার তাদের কেউ কেউ তার প্রয়োজন পূরণের ইচ্ছা করে তার পীরের কবরের কাছে গিয়ে বলে, হে অমুক!আপনার বরকতে (তা হোক) অথবা বলে আমার প্রয়োজনটা আল্লাহ এবং পীরের বরকতে পূর্ণ হয়েছে। আবার তাদের কেউ কেউ শামা গানের আমল করে এবং কবরের কাছে যায়,অতঃপর পীরের সামনে মাথা নত করে ও মাটিতে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে। আবার তাদের কেউ কেউ বলে থাকে, সেখানে বাস্তবেই কোনো পূর্ণ গাউছ কুতুবের অস্তিত্ব আছে। সুতরাং আপনি আমাদেরকে ফাতওয়া দিন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন আর এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
[জবাবের সূচনা]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. জবাবে বলেন,
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রবের জন্য, যে দীন নিয়ে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন তা হলো: একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোনো শরীক নেই। আর তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর ওপর ভরসা করা। আর তার কাছে কল্যাণ লাভের জন্য এবং অনিষ্ট দূরীকরণের জন্য দো‘আ করা। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿تَنزِيلُٱلۡكِتَٰبِمِنَٱللَّهِٱلۡعَزِيزِٱلۡحَكِيمِ١إِنَّآأَنزَلۡنَآإِلَيۡكَٱلۡكِتَٰبَبِٱلۡحَقِّفَٱعۡبُدِٱللَّهَمُخۡلِصٗالَّهُٱلدِّينَ٢أَلَالِلَّهِٱلدِّينُٱلۡخَالِصُۚوَٱلَّذِينَٱتَّخَذُواْمِندُونِهِۦٓأَوۡلِيَآءَمَانَعۡبُدُهُمۡإِلَّالِيُقَرِّبُونَآإِلَىٱللَّهِزُلۡفَىٰٓإِنَّٱللَّهَيَحۡكُمُبَيۡنَهُمۡفِيمَاهُمۡفِيهِيَخۡتَلِفُونَۗإِنَّٱللَّهَلَايَهۡدِيمَنۡهُوَكَٰذِبٞكَفَّارٞ٣﴾ [الزمر: ١،٣]
“এ কিতাব পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হওয়া। নিশ্চয় আমরা আপনার কাছে এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। কাজেই আল্লাহর ইবাদাত করুন তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। জেনে রাখুন, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে,  আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে।হ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে সে ব্যাপারে ফয়সালা করে দেবেন।”[সূরা আয-যুমার, আয়াত:১-৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَنَّٱلۡمَسَٰجِدَلِلَّهِفَلَاتَدۡعُواْمَعَٱللَّهِأَحَدٗا١٨﴾ [الجن: ١٨]
“আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। কাজেই আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত:১৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْوُجُوهَكُمۡعِندَكُلِّمَسۡجِدٖوَٱدۡعُوهُمُخۡلِصِينَلَهُٱلدِّينَۚكَمَابَدَأَكُمۡتَعُودُونَ٢٩﴾ [الاعراف: ٢٩]
“আর আমার রব নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের। আর তোমরা প্রত্যেক সাজদাহ বা ইবাদতে তোমাদের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ কর এবং তাঁরই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাক।[সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত:২৯]
আর আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿قُلِٱدۡعُواْٱلَّذِينَزَعَمۡتُممِّندُونِهِۦفَلَايَمۡلِكُونَكَشۡفَٱلضُّرِّعَنكُمۡوَلَاتَحۡوِيلًا٥٦أُوْلَٰٓئِكَٱلَّذِينَيَدۡعُونَيَبۡتَغُونَإِلَىٰرَبِّهِمُٱلۡوَسِيلَةَأَيُّهُمۡأَقۡرَبُوَيَرۡجُونَرَحۡمَتَهُۥوَيَخَافُونَعَذَابَهُۥٓۚإِنَّعَذَابَرَبِّكَكَانَمَحۡذُورٗا٥٧﴾ [الاسراء: ٥٦،٥٧]
“বলুন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে কর তাদেরকে ডাক, অতঃপর দেখবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার বা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই,তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, আর তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার রবের শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত:৫৬-৫৭]
সালফে সালেহীনদের একদল বলেন, কিছু সম্প্রদায় মসীহ,উযাইর ও ফিরিশতাদেরকে ডাকতো।আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঐ সব যাদেরকে তোমরা ডেকে থাক তারা তো আমারই বান্দা,যেমনি তোমরা আমার বান্দা।তারা আমার অনুগ্রহ চায়,যেরূপে তোমরা আমার রহমত কামনা কর। তারা আমার শাস্তিকে ভয় পায় যেমনিভাবে তোমরা আমার আযাবকে ভয় কর।আর তারা আমার নৈকট্য চায় যেভাবে তোমরা আমার নৈকট্য চাও। অতঃপর যখন যারা নবীগণ ও ফেরেশ্তাগণের কাছে প্রার্থনা করে তাদের অবস্থা এমন, তাহলে অন্যদের অবস্থা কেমন হবে?
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَحَسِبَٱلَّذِينَكَفَرُوٓاْأَنيَتَّخِذُواْعِبَادِيمِندُونِيٓأَوۡلِيَآءَۚإِنَّآأَعۡتَدۡنَاجَهَنَّمَلِلۡكَٰفِرِينَنُزُلٗا١٠٢﴾ [الكهف: ١٠٢]
“যারা কুফুরী করেছে তারা কি মনে করেছে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? আমরা তো কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১০২]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿قُلِٱدۡعُواْٱلَّذِينَزَعَمۡتُممِّندُونِٱللَّهِلَايَمۡلِكُونَمِثۡقَالَذَرَّةٖفِيٱلسَّمَٰوَٰتِوَلَافِيٱلۡأَرۡضِوَمَالَهُمۡفِيهِمَامِنشِرۡكٖوَمَالَهُۥمِنۡهُممِّنظَهِيرٖ٢٢وَلَاتَنفَعُٱلشَّفَٰعَةُعِندَهُۥٓإِلَّالِمَنۡأَذِنَلَهُۥۚ٢٣﴾ [سبا: ٢٢،٢٣]
“বলুন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা আসমানসমূহে অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, যমীনেও নয়। আর এ দুটিতে তাদের কোনো অংশও নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সহায়কও নয়। আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন, সে ছাড়া তাঁর কাছে কারো সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না। অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় বিদূরিত হয়, তখন তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তোমাদের রব কী বললেন? তার উত্তরে তারা বলে, ‘যা সত্য তিনি তা-ই বলেছেন।’ আর তিনি সমুচ্চ, মহান।” [সূরা সাবা, আয়াত:২২-২৩]
সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব হতে ফিরিশতা, মানুষ ও অন্য যাদের ডাকা হয়, নিশ্চয় তারা বিন্দু পরিমাণ তার রাজত্বের মালিক নয়।আর তার রাজত্বে কোনো শরীকও নেই; বরং তিনি পবিত্র সত্ত্বা আর তারইরাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। আর নিশ্চয় তার কোনো সাহায্যকারী নেই, যে তাকে সাহায্য করবে, যেরূপ রাজার বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতাকারী থাকে। আর তার নিকট শাফা‘আতকারী তো একমাত্র তিনিই হবেন, যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট। ফলে এর মাধ্যমে শির্কের সকল দিককে নিষেধ করা হয়েছে।
কেননা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ডাকা হয় তারা হয়ত কোনো কিছুর মালিক হবেন অথবা মালিক হবেন না, আর যদি মালিক না হোন তখন তারা হয়তো(সে জিনিসে) অংশীদার হবেন অথবা অংশীদার হবেন না,আর যদি অংশীদার না হোন তবে হয়তো সাহায্যকারী হবেন অথবা হবেন(সে জিনিসের) যাচ্ঞাকারী-প্রার্থনাকারী (সুপারিশকারী)।
উপরোক্ত প্রথম তিন প্রকার অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কোনো কিছুর মালিক হওয়া, তাঁর অংশীদার হওয়া ও তাঁর সাহায্যকারী হওয়া নিষিদ্ধ। আর চতুর্থটি অর্থাৎ সুপারিশ তাঁর অনুমতি ব্যতীত হবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَنذَاٱلَّذِييَشۡفَعُعِندَهُۥٓإِلَّابِإِذۡنِهِۦۚ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?”  [সূরা আল-বাকারা, আয়াত:২৫৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَكَممِّنمَّلَكٖفِيٱلسَّمَٰوَٰتِلَاتُغۡنِيشَفَٰعَتُهُمۡشَيۡ‍ًٔاإِلَّامِنۢبَعۡدِأَنيَأۡذَنَٱللَّهُلِمَنيَشَآءُوَيَرۡضَىٰٓ٢٦﴾ [النجم: ٢٦]
“আর আসমানসমূহে বহু ফিরিশ্তা রয়েছে; তাদের সুপারিশ কিছুমাত্র ফলপ্রসূ হবে না, তবে আল্লাহর অনুমতির পর; যার জন্য তিনি ইচ্ছে করেন ও যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত:২৬]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَمِٱتَّخَذُواْمِندُونِٱللَّهِشُفَعَآءَۚقُلۡأَوَلَوۡكَانُواْلَايَمۡلِكُونَشَيۡ‍ٔٗاوَلَايَعۡقِلُونَ٤٣قُللِّلَّهِٱلشَّفَٰعَةُجَمِيعٗاۖلَّهُۥمُلۡكُٱلسَّمَٰوَٰتِوَٱلۡأَرۡضِۖثُمَّإِلَيۡهِتُرۡجَعُونَ٤٤﴾ [الزمر: ٤٣،٤٤]
“তবে কি তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সুপারিশকারী ধরেছে? বলুন, তারা কোনো কিছুর মালিক না হলেও এবং তারা না বুঝলেও বলুন, সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন, আসমানসমূহ ও যমীনের মালিকানা তাঁরই।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত:৪৩-৪৪]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿ٱللَّهُٱلَّذِيخَلَقَٱلسَّمَٰوَٰتِوَٱلۡأَرۡضَوَمَابَيۡنَهُمَافِيسِتَّةِأَيَّامٖثُمَّٱسۡتَوَىٰعَلَىٱلۡعَرۡشِۖمَالَكُممِّندُونِهِۦمِنوَلِيّٖوَلَاشَفِيعٍۚأَفَلَاتَتَذَكَّرُونَ٤﴾ [السجدة: ٤]
“আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও উভয়ের অন্তর্বর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। তারপর তিনি‘আরশেরউপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত:৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَأَنذِرۡبِهِٱلَّذِينَيَخَافُونَأَنيُحۡشَرُوٓاْإِلَىٰرَبِّهِمۡلَيۡسَلَهُممِّندُونِهِۦوَلِيّٞوَلَاشَفِيعٞلَّعَلَّهُمۡيَتَّقُونَ٥١﴾ [الانعام: ٥١]
“আর আপনি এর দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করুন, যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রব-এর কাছে সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী,যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হয়।”[সূরাআল-আন‘আম, আয়াত:৫১]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿مَاكَانَلِبَشَرٍأَنيُؤۡتِيَهُٱللَّهُٱلۡكِتَٰبَوَٱلۡحُكۡمَوَٱلنُّبُوَّةَثُمَّيَقُولَلِلنَّاسِكُونُواْعِبَادٗالِّيمِندُونِٱللَّهِوَلَٰكِنكُونُواْرَبَّٰنِيِّ‍ۧنَبِمَاكُنتُمۡتُعَلِّمُونَٱلۡكِتَٰبَوَبِمَاكُنتُمۡتَدۡرُسُونَ٧٩وَلَايَأۡمُرَكُمۡأَنتَتَّخِذُواْٱلۡمَلَٰٓئِكَةَوَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَأَرۡبَابًاۗأَيَأۡمُرُكُمبِٱلۡكُفۡرِبَعۡدَإِذۡأَنتُممُّسۡلِمُونَ٨٠﴾ [العمران: ٧٩،٨٠]
“কোনো ব্যক্তির জন্য সঙ্গত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হেকমত ও নবুওয়াত দান করার পর তিনি মানুষকে বলবেন, আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা আমার দাস হয়ে যাও, বরং; তিনি বলবেন, তোমরা রব্বানী হয়ে যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর , অনুরূপভাবে ফেরেশ্তাগণ ও নবীগণকে রব রূপে গ্রহণ করতে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দেন না। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফুরীর নির্দেশ দেবেন?” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত:৭৯-৮০]
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যখন ফিরিশতাগণ,নবীগণকে রব হিসেবে গ্রহণ করা শির্ক ও কুফুরী বলে সাব্যস্ত করেছেন, তখন তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের লোক পীর-মাশাইখদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করা কী হবে তা সহজেই অনুমেয়?
ব্যাখ্যামূলকবক্তব্য:বান্দা (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও কাছে) যদিএমন সব বিষয় চায় যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ দিতে সক্ষম নয়।যেমন,মানুষ বা জীব জন্তুর রোগের আরোগ্য  প্রার্থনা অথবা কোনো সুনির্দিষ্ট উৎস ব্যতীত দেনা পরিশোধ অথবা তার পরিবার পরিজনের ক্ষমা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের অন্যান্য বিপদ মুসীবত অথবা শত্রুর ওপর বিজয়ী হওয়া অথবা অন্তরের হিদায়াত ও গুনাহের ক্ষমা অথবা তার জান্নাতে প্রবেশ অথবা জাহান্নাম থেকে মুক্তি অথবা কোনো ইলম ও কুরআন শিক্ষালাভ করা অথবা অন্তরের সুস্থতা এবং চরিত্রের সৌন্দর্য অথবা অন্তরের পরিশুদ্ধি ইত্যাদি, এগুলো হচ্ছে এমন সব কর্মকাণ্ডের উদাহরণ যার কোনোটিই আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের কাছে চাওয়া বৈধ নয়।কোনো ফিরিশতা,নবী,পীরের কাছে চাওয়া, চাই তিনি জীবিত হোন অথবা মৃত,তাদের কাছে এ বলা জায়েয নয় যে,আমার পাপ ক্ষমা করুন,আমাকে আমার শত্রুর ওপর বিজয়ী করুন,আমার রোগ সুস্থ করুন,আমাকে ক্ষমা করুন অথবা আমার পরিবার-পরিজনকে বা আমার সওয়ারীকে নিরাপত্তা দিন, অনুরূপ বিষয় সমূহ।তাই যে এসব কিছু কোনো সৃষ্ট-জীবের কাছে চায় তাহলে সে তার রবের সাথে অংশীদার স্থাপন কারী সে সব মুশরিকদের ন্যায়,যারা ফিরিশতা,নবীগণ ও মূর্তির আকৃতি তৈরি করে তাদের ইবাদত করে।অনুরূপ তারা নাসারাদের ন্যায়, যারা মসীহ ও তার মাকে ডাকে।আল্লাহতা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذۡقَالَٱللَّهُيَٰعِيسَىٱبۡنَمَرۡيَمَءَأَنتَقُلۡتَلِلنَّاسِٱتَّخِذُونِيوَأُمِّيَإِلَٰهَيۡنِمِندُونِٱللَّهِۖ١١٦﴾ [المائ‍دة: ١١٦]
“স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ বলেন, হে ‘ঈসা ইবন মারইয়াম আপনি কি মানুষদের বলেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার মাকে দুই ইলাহ হিসেবে গ্রহণ কর?” [সূরা আল মায়েদা, আয়াত:১১৬]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿ٱتَّخَذُوٓاْأَحۡبَارَهُمۡوَرُهۡبَٰنَهُمۡأَرۡبَابٗامِّندُونِٱللَّهِوَٱلۡمَسِيحَٱبۡنَمَرۡيَمَوَمَآأُمِرُوٓاْإِلَّالِيَعۡبُدُوٓاْإِلَٰهٗاوَٰحِدٗاۖلَّآإِلَٰهَإِلَّاهُوَۚسُبۡحَٰنَهُۥعَمَّايُشۡرِكُونَ٣١﴾ [التوبة: ٣١]
“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগিদেরকে তাদের রবরূপে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়াম-পুত্র মসীহকেও। অথচ এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই তারা আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তা থেকে তিনি কত না পবিত্র!” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত:৩১]
পক্ষান্তরে যে ব্যাপারে কোনো বান্দা সামর্থ্যবান তার কাছে কিছু কিছু অবস্থায় চাওয়া জায়েয আছে। কেননা সৃষ্ট-জীবের কাছে চাওয়া কখনও জায়েয করা হয়েছে, আবার কখনও তা নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِذَافَرَغۡتَفَٱنصَبۡ٧وَإِلَىٰرَبِّكَفَٱرۡغَب٨﴾ [الشرح: ٧،٨]
“অতএব, আপনি যখনই অবসর পান তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হোন, আর আপনার রবের প্রতি গভীর মনোযোগী হোন।” [সূরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত:৭-৮]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন,
«إذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله»
“যখন তুমি চাইবে তখন আল্লাহর কাছে চাইবে। যখন তুমি কোনো সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন সে সাহায্য তাঁর
কাছেই একমাত্র চাইবে।”[1]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের একটি অসীয়ত করেছেন যে,তারা যেন মানুষের কাছে কিছু না চায়,আর তাই সাহাবীগণের কারও কারও হাত থেকে লাঠি পড়ে গেলেও কারও কাছে বলতেন না যে, ‘আমাকে এটি উঠিয়ে দাও’। (সহীহ বুখারী ও মুসলিমের) হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يدخل الجنة من أمتي سبعون ألفا بغير حساب، وهم الذين لا يسترقون، ولا يكتوون، ولا يتطيرون، وعلى ربهم يتوكلون»
“আমার উম্মতের মধ্যে বিনা হিসেবে সত্তর হাজার মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হলো: যারা ঝাঁড়-ফুক চেয়ে বেড়ায় না, সেঁকা লাগায় না এবং পাখি উড়ায়ে ভাগ্য নির্ণয়ে বিশ্বাস করে না। আর তারা তাদের রবের ওপর ভরসা করে।”[2]
ইসতেরকা হলো: ঝাঁড় ফুক চাওয়া,আর এটি এক প্রকারের চাওয়া বা যাচ্ঞা।এতদসত্বেও রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামথেকেসাব্যস্তহয়েছে, তিনি বলেন,
«ما من رجل يدعو له أخوه بظهر الغيب دعوة إلا وكل الله بها ملكاً كلما دعا لأخيه دعوة، قال الملك: ولك مثل ذلك»
“তোমাদের কোনো লোকের জন্য তার ভাই যখন তার অনুপস্থিতিতে দো‘আ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করেন,যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দো‘আ করে, তখনইফিরিশতা বলে: তোমার জন্যও অনুরূপ হোক।”[3]
আর দো‘আর ক্ষেত্রে অন্যতম শরী‘আতসম্মত পদ্ধতি হলো,অনুপস্থিত ব্যক্তি কর্তৃক অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করা। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর সালাত (দুরূদ) পাঠ করতে এবং আমাদের ওপর তার জন্য (আল্লাহর কাছে) ওসীলা (নামক মর্যাদাটি) প্রাপ্তির দো‘আ করতে আদেশ করেছেন।আর এর মাধ্যমে যে প্রতিদান পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে অবহিতও করেছেন। তিনি বলেছেন,
«إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ يُؤَذِّنُ فَقُولُوا كَمَا يَقُولُ، وَصَلُّوا عَلَىَّ، فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُصَلِّى عَلَىَّ صَلاَةً إِلاَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا، وَسَلُوا اللَّهَ لِىَ الْوَسِيلَةَ، فَإِنَّ الْوَسِيلَةَ مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ، لاَ يَنْبَغِى أَنْ تَكُونَ إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَهُ، وَمَنْ سَأَلَهَا لِى حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ».
“যখন তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনতে পাও তখন মুয়াযযিন যা বলে অনুরূপ বলো, অতঃপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করো। কেননা যে কেউ আমার ওপর একবার দুরূদ পড়ে তার ওপর আল্লাহ দশবার দুরূদ পড়েন। আর তোমরা আমার জন্য ওসীলা (নামক মর্যাদাটি) প্রাপ্তির দো‘আ করবে, কারণ তা জান্নাতের এমন এক স্তর যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল একজনের জন্যই থাকা সমীচীন, আর আমি আশা করবো যে, আমিই হবো সে বান্দাটি। সুতরাং যে কেউ আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ওসীলা নামক মর্যাদাটির প্রার্থনা করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধতা পাবে”।[4]
আর একজন মুসলিমের জন্য বৈধ হবে দো‘আ চাওয়া। হতে পারে যার কাছে দো‘আ চাওয়া হয়েছে সে তার চেয়ে বড় অথবা ছোট। কারণ, বড়ের কাছ থেকে ছোট ব্যক্তির কাছে দো‘আ করতে বলার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উমরা আদায় করতে যাওয়ার সময় বিদায় জানাতে গিয়ে বলেন,
«لَاتَنْسَنَايَاأُخَيَّمِنْدُعَائِكَ»
“হে ভাই, আমাকে তোমার দো‘আয় ভুলো না”[5]। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে তার জন্য দুরূদ পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার জন্য ওসীলা (নামক মহান মর্যাদা) লাভের দো‘আ করতে বলেছেন, তখন বলেছেন, যে কেউ তার ওপর একবার সালাত পড়বে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ওপর দশবার সালাত পড়বে। আর যে ব্যক্তি তার জন্য ওসীলা নামক মহান মর্যাদা প্রাপ্তির জন্য দো‘আ করবে, তার জন্য কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশ বৈধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তাঁর এ চাওয়ার দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করাই উদ্দেশ্য। আর কেউ কোনো কিছু চাওয়া দ্বারা প্রার্থিত ব্যক্তির উপকার করা, আর কোনো কিছু চাওয়া দ্বারা কেবল নিজের উপকার সাধন হওয়া কামনা করা, এ দু’য়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। অনুরূপভাবে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াইস আল-ক্বারনীর কথা উল্লেখ করে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন,
«فَإِنِاسْتَطَعْتَأَنْيَسْتَغْفِرَلَكَفَافْعَلْ»
“যদি তাকে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলতে পারো, তবে বলবে”[6]
অনুরূপভাবে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মাঝে কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য হয়েছিল, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, “আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন”। তবে হাদীসে এসেছে, “আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোনো বিষয় নিয়ে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ওপর রাগ করেছিলেন।”
তদ্রূপভাবে হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “কোনো কোনো সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ঝাঁড়-ফুক চাইতেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ঝাঁড়-ফুক করতেন।”।
তাছাড়া সহীহ বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত আছে যে, মানুষ যখন অনাবৃষ্টিতে পড়ত তখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের জন্য বৃষ্টির প্রার্থনা করতে বলতেন, অতঃপর তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন ফলে বৃষ্টি হতো।
বুখারী ও মুসলিমে আরো এসেছে “উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা বৃষ্টির প্রার্থনা করতেন, ফলে তিনি দো‘আ করতেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
«اللهم إنا كنا إذا أجدبنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا فيسقون»
“হে আল্লাহ! আমরা যখন অনাবৃষ্টি হতো তখন আপনার নবীর মাধ্যমে দো‘আ করতাম, ফলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দিতেন। আর এখন আমরা আপনার নিকট নবীর চাচার দো‘আর মাধ্যমে চাচ্ছি সুতরাং আপনি আমাদের বৃষ্টি দিন, ফলে বৃষ্টি হতো।”[7]
অনুরূপভাবে সুনানের গ্রন্থসমূহে এসেছে, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে বলল, আমাদের কষ্ট হচ্ছে, আর পরিবার পরিজন ক্ষুধার্ত রয়েছেএবংমালধ্বংসহয়েছে, সুতরাং আপনিআমাদেরজন্যআল্লাহরনিকট দো‘আ করুন।নিশ্চয়আমরাআপনারকাছে আল্লাহরদ্বারাসুপারিশকরছিএবংআল্লাহর কাছে আপনারদ্বারা সুপারিশ করছি।তখনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাগান্বিতভাবে) তাসবীহপাঠ (আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা) করলেন এমনকি এ বিষয়টি সাহাবীগণের চেহাবায়ও ফুটে উঠল। তারপর তিনি বললেন,
«ويحك إنه لا يستشفع بالله على أحد، إن الله أعظم من ذلك»
“তোমার জন্য আফসোস হচ্ছে, (তুমি কি জান না যে) আল্লাহ তা‘আলার দ্বারা কোনো সৃষ্টিজীবেরকাছে সুপারিশ চাওয়া যায় না? মহান আল্লাহর মর্যাদা তার চেয়ে অনেক মহান।”[8]
এ হাদীসে দেখা যায় যে, তিনি তার বক্তব্য “আল্লাহর কাছে আপনারদ্বারা সুপারিশ করছি” এ কথাটির স্বীকৃতি দিলেন, কিন্তু “আমরাআপনারকাছে আল্লাহরদ্বারাসুপারিশকরছি” এ কথাটি অস্বীকার করলেন। কেননা সুপারিশকারী সুপারিশকৃত সত্ত্বার কাছে কোনো কিছু কামনা করে। আর বান্দা তো শুধু আল্লাহর কাছেই চায় এবং তাঁর নিকটই সুপারিশ কামনা করে। আর মহান রব কোনো বান্দার কাছে চায় না এবং তার দ্বারা (কারও কাছে) সুপারিশও কামনা করা যায় না।আরো পড়ুন 

আপনি পড়ছেন ইসলামী বাংলা বইঃ কবর যিয়ারত ও কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন


[1]তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং (১/৩০৭ ও ১০/২৯৩,৩০৩)
[2]সহীহ বুখারী,(৮/১২৪); সহীহ মুসলিম(১/১৯৭)।
[3]সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ২৭৩২; আবু দাউদ,হাদীস নং ১৫৩৪; মুসনাদে আহমাদ (৬/৪৫২)।
[4]সহীহ বুখারী (১/১৫২); সুনান নাসাঈ (২/২৭); আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৯;  মুসনাদে আহমাদ(৩/৩৫৪)।
[5]আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৯৮। শাইখ আলবানী বলেন, হাদীসটি দুর্বল।
[6]সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪২।
[7]সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০১০।
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫০৭।

কোন মন্তব্য নেই :