প্রতিদিন ১ চামচ মধু খাওয়ার ১২টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

কোন মন্তব্য নেই

মধু তার অসাধারণ ঔষধি গুনের কারনে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক দিকের জন্যই নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।
সর্বগুন সম্পন্ন এই মধুর গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা, সৌন্দর্য চর্চা- কোথায় নেই মধুর ব্যবহার? আসুন দেখে নেয়া যাক মাত্র এক চামচ মধু কি কি অসাধারণ উপকারে লাগতে পারে আপনার।
১) মধু হিউম্যাকটেন্ট যৌগে সমৃদ্ধ। এই যৌগটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে এবং ত্বকের উপরিভাগের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। হিউম্যাকটেন্ট যৌগটি ত্বককে নমনীয় করতেও সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে দীর্ঘদিন বার্ধক্যের ছাপ মুক্ত। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু রঙ চা কিংবা দুধের সাথে খেতে পারেন। সেই সাথে আপনার রোজকার ফেস প্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন মাত্র এক চামচ মধু। মধু ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে ও মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে।
২) মধু শরীরের ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। মধুতে মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। কোথাও পুরে, কেটে গেলে ক্ষত স্থানে মধুর একটি পাতলা প্রলেপ দিয়ে দিন। ব্যথা কমবে ও দ্রুত নিরাময় হবে। মধুতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পূঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।
৩) মধুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ছত্রাক ও অন্যান্য কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে ঠিক করতে সাহায্য করে ও নতুন ত্বক গঠনে ভূমিকা রাখে। চর্মরোগ হলে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে মধু লাগান। এক চামচ মধুর সাথে অল্প পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
৪) মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরের চামড়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে মধু। রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধুর সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেস প্যাকের মতন লাগান। রোদে পোড়া জনিত কালো দাগ দূর হয়ে চেহারা হবে ঝলমলে।
৫) মধুতে বিদ্যমান গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং শর্করা শরীরে শক্তি সবরাহের কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ মধু সারাদিনের জন্য দেহের পেশীর ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে ও আপনাকে রাখে এনার্জিতে ভরপুর।
৬) প্রতিদিন ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে। এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে মধু রক্তস্বল্পতা রোগকে প্রতিরোধ করে।
৭) মধু ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ঠোঁটে মধু লাগান। ঠোঁট হয়ে উঠবে নজর কাড়া সুন্দর।
৮) মধুর ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, সি কপার , আয়োডিন ও জিংক দেহে এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে মধু কোলেস্টেরল সংক্রান্ত রোগ থকে দেহকে মুক্ত রাখে। দিনে অন্তত এক চামচ মধু খেয়ে নিন,যেভাবে আপনার ভালো লাগে।
৯) সাইনাসের কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসের যে কোন সমস্যা থেকে মধুর প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ দেহকে মুক্ত রাখে। চা কিংবা উষ্ণ পানির সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
১০) প্রতিদিন মধু খাওয়া হলে দেহের ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি হয়। ফলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সহজে অসুখ বিসুখ ও জীবাণুর সংক্রমণ হয় না।
১১) মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে আমাদের হজম শক্তি বাড়ে ও ফলে খাবারের ক্যালোরি দ্রুত ক্ষয় হয়। এতে ওজন কমে যায়। চিনির বদলে মধুর ব্যবহার মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে।
১২) যাদের খুসখুসে কাশির সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিন এক চামচ আদার রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। দ্রুত আরোগ্য হবে।
তথ্যসূত্র: প্রিয় লাইফ

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ।

 এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :

মেনোপজ: নারীর মধ্য বয়সের সমস্যা

কোন মন্তব্য নেই
মধ্য বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার সময় নারী দেহে কিছু কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বা ঋতুস্রাব বন্ধের আগে এসব পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে। এ সব পরিবর্তন সাধারণ ভাবে ৪৫ এর পর নারীরা অনুভব করতে থাকেন। সাধারণত গড়ে ৫১ বছর বয়সে মেনোপজ হয়ে থাকে, তবে কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে তা ৪০ বছরে আবার কারো ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সে তা ঘটতে পারে। মেনোপজ কোন অসুখ নয় বরং এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। শারীরিক অসুস্থতা না হলেও যদি এর উপসর্গগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই এর চিকিৎসা করাতে হবে।
মেনোপজ কী
সাধারণত শেষ মাসিক আবর্তনের ১২ মাস পরের সময়কেই মেনোপজ বলে। এর ফলে মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং গর্ভবতীও হওয়া যায় না। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেনোপজের বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, শক্তির ক্ষয় হয় এবং মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
মেনোপজের ধাপ
মেনোপজের দুইটি ধাপ আছে। যেমন :
পেরিমেনোপজ (Perimenopause) :এক্ষেত্রে মাসিক চলতে থাকে তবে এর সাথে মেনোপজের উপসর্গও দেখা দেয়। হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে উঠা-নামা করে। এছাড়া অতিরিক্ত গরম লাগা (Hot flash) ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। Perimenopause ৪-৫ বছর বা এর বেশি সময় স্থায়ী হয়। এসময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও তা খুব বেশি দেখা যায় না।
পোস্টমেনোপজ (Postmenopause) : শেষ মাসিক হবার ১২ মাস পর পোস্ট মেনোপজ হতে দেখা যায়। এসময় ডিম্বাশয় (Ovary) থেকে খুব কম ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progestarone) উৎপাদিত হয়।
মেনোপজের লক্ষণ ও উপসর্গ
মাসিক শেষ হবার এক বছর হওয়ার দীর্ঘ সময় পর সাধারণত মেনোপজের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন :
অনিয়মিত মাসিক
অনুর্বরতা (Decreased fertility)
যোনিপথ শুষ্ক থাকা
অতিরিক্ত গরম লাগা (Hot flash)
অনিদ্রা বা ঘুমে ব্যাঘাত
মেজাজ উঠা-নামা করা (Mood swings)
মেদ বৃদ্ধি পাওয়া
চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
স্তন ছোট হয়ে যাওয়া
কখন ডাক্তার দেখাবেন
মেনোপজ সংক্রান্ত বিষয়ে যখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে:
মেনোপজ হতে পারে এমন সময়ে (পেরিমেনোপজ) এবং মেনোপজের পরবর্তী সময়গুলোতে (পোস্টমেনোপজ) নিবৃত্তিমূলক শারীরিক যত্ন এবং বয়সজনিত স্বাস্থ্যের যত্নের জন্য
মেনোপজ শুরু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না হলে এবং তার আগের মাসে মাসিক বন্ধ থাকলে
মেনোপজ চলা অবস্থায় যোনিপথে রক্ত গেলে
কোথায় চিকিৎসা করাবেন
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
জেলা সদর হাসপাতাল
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র
বেসরকারি হাসপাতাল
কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
রক্তের পরীক্ষা। রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের হরমোনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
মেনোপজের জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী নিচের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে :
হরমোন চিকিৎসা (Hormone therapy)
স্বল্পমাত্রার বিষাদ প্রতিরোধক (Antidepressants) ওষুধ সেবন

জীবনযাপন পদ্ধতি
নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং অতিরিক্ত গরম যাতে না লাগে এমন কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকা
বিশ্রাম বা আরাম করা । এক্ষেত্রে দীর্ঘশ্বাস নেয়া, মাংসপেশি শিথিল করা বেশ ফলদায়ক
তলপেট ও শ্রোণীদ্বার এর মাংসপেশির ব্যায়াম করা
শাকসবজি, ফলমূল সমৃদ্ধ সুসম খাদ্য গ্রহণ ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা
নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন. ১. মেনোপজের ফলে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর . মেনোপজের ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে :
হৃদযন্ত্র ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগ (Cardiovascular Disease) হয়
শরীরের হাড় ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে যায় (Osteoporosis)
মূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসামর্থ্যতা (Urinary incontinence) দেখা দেয়
ওজন বৃদ্ধি পায়
প্রশ্ন. ২. মেনোপজ হওয়ার কারণগুলো কী কী ?
উত্তর. মেনোপজ হওয়ার কারণগুলো হল :
মাসিক প্রাকৃতিকভাবে যখন বন্ধ হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই ডিম্বাশয় (Ovaries) কম হরমোন ( Estrogen এবং Progesterone) তৈরি করে। প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন হরমোন (reproductive hormones) গুলোর হ্রাসের (decline) কারণে মেনোপজ হয়।
অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু এবং ডিম্বাশয় অপসারণের ফলে মেনোপজ হয়ে থাকে।
ক্যান্সারের চিকিৎসা যেমন- কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি করালে মেনোপজ হতে পারে।‌‌‌‌
৪০ বছর বয়সের আগে অনেক সময় ডিম্বাশয় (ওভারি) থেকে স্বাভাবিকমাত্রার জনন হরমোন (reproductive hormones) উৎপন্ন না হলে মেনোপজ হতে পারে।
প্রশ্ন.৩. রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোন সর্ম্পকে কোন বিষয়গুলো জানা যায়?
উত্তর. রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোন সর্ম্পকে যে বিষয়গুলো জানা যায় সেগুলো হলো:
ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ (Follicle-Stimulating Hormone (FSH)
ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ (Estrogen)
থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ (Thyroid-Stimulating Hormone)

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ।

 এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :