পুরুষত্বহীন সমস্যা মোকাবিলায় নারীর ভমিকা

1 টি মন্তব্য

পুরুষত্বহীনতা হলো পুরুষের জীবনের একটি জটিল যৌন সমস্যা। একে জটিল বলার কারণ এটি পুরুষকে যৌনমিলন থেকে বিচ্যুত করে ফেলে। যখন কোনো পুরুষের লিঙ্গ সময় মত অর্থাৎ যৌনমিলনের সময় উত্তেজিত হয়ে উঠে না তখন তাকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলে। এর ফলে লিঙ্গ সঠিক মাত্রায় যৌনমিলনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেনা। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার দ্বারা ইদানীং পুরুষত্বহীন তার সমস্যার সমাধান শুরু হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার কারণ মানসিক এবং ১০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের পুরুষত্বহীন তার জন্য শারীরিক নানা কারণ দায়ী থাকে। পুরুষত্বহীনতা প্রাথমিক স্তরের এবং চূড়ান্ত মাত্রার হতে পারে। প্রাথমিক স্তরের পুরুষত্বহীনতার জন্যে লিঙ্গ খুব বেশি মাত্রায় উত্তেজিত হয় না এবং উত্তেজনার কিছুক্ষণ পরেই লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়। আর চূড়ান্ত মাত্রার পুরুষত্বহীনতা হলো লিঙ্গের একেবারে অসাড় অবস্থা।
প্রাথমিক পুরুষত্বহীনতা
কোনো পুরুষের প্রাথমিক পুরুষত্বহীনতা হবে তা আগে থেকে বলা যায় না। আবার কেউ অন্যকে শেখাতে পারে না লিঙ্গ উত্থানের বিষয়টি। লিঙ্গের উত্থান একটি প্রাকৃতিক  অবস্থা। রেসপিরেটোরী, সারকুলেটরী এবং স্নায়ুবিক কারণে লিঙ্গ উত্থিত হয়। কিন্ত আসল কারণটি হলো প্রাকৃতিক। তবে অনেক ক্ষেত্রে যৌন মনোদৈহিক সামাজিক কারণেও অনেকের পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। যে কারণগুলো পুরুষত্বহীনতার জন্য স্বাভাবিকভাবে দায়ী সেগুলো হলো-                                                   
  • কঠিন ধর্মীয় বিশ্বাস।     
  • যৌনতার জন্য প্রচুর শক্তি না থাকা।
  • মাতৃত্বের কঠিন চাপ।   
  • সমকামিতা পছন্দ করা।
  • নারীদেরকে ঘৃণা করা।
  • পতিতার সাথে সঙ্গমে ব্যর্থ হওয়ার পরে মনে পাপ বোধের সৃষ্টি।
চিকিৎসা
প্রায়শই পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এবং রোগের কারণ ধরতে না পারলে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রলম্বিত হতে পারে। যৌন বিশেষজ্ঞ মাস্টার এবং জনসনের মতে যৌন সঙ্গিনী বদলের ফলেও অনেক সময় এ রোগের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। নারীর উচিত পুরুষকে এব্যাপারে সাহায্য করা। স্ত্রীর উচিত স্বামীকে সাহায্য করা। নৈতিক, সামাজিক, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরুষের পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসায় বর্তমানে যে বিষয়গুলো গ্রহণ করা হয় সেগুলো হলো-
  • যৌনতার পরিপূর্ণ শিক্ষাদান।
  • সাইকোথেরাপি।
  • রোগীকে হস্তমৈথুনের দ্বারা তার লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়ানো।
  • দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রোগীকে এ্যাংজিওলিটিক্স দেয়া।
  • নিচু মাত্রার ৫০ গ্রাম টেস্টোস্টেরন ইনজেকশন সপ্তাহে তিনবার দেয়া।
  • যদি রোগীর কেবলমাত্র উত্থানজনিত সমস্যা হয় তবে রোগীকে নগ্ন নারীর সামনে উপস্থিত করা। এক্ষেত্রে পতিতাদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
  • পেপাভেরিন ইনজেকশন লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়াতে পারে।
  • রোগীর জন্য সামাজিকতার প্রয়োজন।
  • যৌন উদ্দীপক গ্রন্থ্থ পড়া উচিত।
চূড়ান্ত মাত্রার পুরুষত্বহীনতা
অনেক পুরুষের পুরুষত্বহীনতা সাময়িক। দেখা যায় যে খুব বেশি মাত্রায় উদ্বিগ্ন থাকলে বা কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে যৌনমিলনের সময় পুরুষ তার যৌন উত্তেজনা হারাতে পারে। আবার খুব বেশি মাত্রায় এলকোহল সেবনের ফলেও পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা নষ্ট হয়ে যায়। সাইকোজেনিক অথবা অর্গানিক নানা কারণে পুরুষের পুরুষত্বহীনতার সৃষ্টি হতে পারে। মনোদৈহিক যে যে কারণে পুরুষত্বহীনতার সৃষ্টি হতে পারে -
১.         দাম্পত্য সমস্যা।
২.         ধর্মীয় কুসংস্কার।
৩.        কঠিনভাবে পিতা বা মাতার অনুশাসনের নিয়ন্তণে থাকা।
৪.         পূর্বের যৌন অক্ষমতার জন্য পাপূবোধ।
৫.        অকাল বীর্যপাত।
৬.        যৌনতার ব্যাপারে অনাগ্রহ।
৭.         যৌনমিলনে সফলতা আসবে কিনা এই নিয়ে ভয় এবং দুশ্চিন্তা।
অর্গানিক কারণে সৃষ্ট পুরুষত্বহীনতা-
১.         এনাটোমিকাল
           = বড় হাইড্রোসেল
           = টেস্টিকুলার ফাইব্রোসিস
২.         কার্ডিওরেসপেরেটোরী
           = এনজিনা
           = মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন
৩. জেনিটো ইউরিনারী
           = ফাইমোসিস
          = প্রিয়াপিজম
          = প্রোসটাটিটিস
          = ইউরেথ্রিটিস
          = প্রোসটাটেকটমী
৪. এন্ড্রোক্রাইনাল
         = ডায়াবেটিস
         = থাইরোটক্সিকোসিস
         = স্থলতা
         = ইনফ্যান্টালিজম
         = ক্যাসট্রেশন
         = এক্রোমেগালি
৫. নিউরোলজিক্যাল
        = মাল্টিপোল সিরোসিস
        = অপুষ্টি
        = পারকিনসন্স অসুখ
        = টেমপোরাল লবের সমস্যা
        = সপাইনাল কর্ডের আঘাত
        = ই সি টি
৬. ইনফেকশন                                                                 
       = টিউবারকিলোসিস
       = গনোরিয়া
       = মাম্পস
৭. ড্রাগ নির্ভরতা
       = এলকোহল সেবন
       = স্নায়ু শিথিলকারী ওষুধ
       = এন্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ
       = সাইকোট্রপিকস ওষুধ। যেমন - ইমিপ্রামিন
       = ডিউরেটিক্স। যেমন - রেজারপাইন
রোগ নির্ণয়
যে কোনো ধরনের পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসার জন্য তার রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজন রয়েছে। ডাক্তারকে জানতে হয় পুরুষের ক্রমাগত যৌন সমস্যা কেন সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মনোদৈহিক কারণের চাপ শরীরের উপর এসে পড়ে এবং এই জন্য পুরুষ উত্থান সমস্যায় ভোগে। রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারকে যে বিষয়গুলো জানতে হয় -
১.         রোগীর পারিবারিক ডাক্তারী ইতিহাস।
২.         রোগীর ব্যক্তিগত ডাক্তারী ইতিহাস।
৩.        রোগীর শারীরিক পরীক্ষা।
৪.         রোগীর লিঙ্গ পরীক্ষা।
৫.        ল্যাবটেস্ট।
৬.        মিনেন সোটা মালটিফেজিক পারসোনালিটি ইনভেনটোরী।
রোগীর পারিবারিক ডাক্তারী ইতিহাস এবং রোগীর ব্যক্তিগত ডাক্তারী ইতিহাস জানা এই জন্য জরুরি যে এতে করে রোগ নির্ণয় করা সুবিধা হয়। ডাক্তার বুঝতে পারেন পুরুষত্বহীনতার এই সমস্যাটির কারণ শারীরিক নয় মানসিক। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এলকোহল সেবনজনিত কারণে পুরুষের পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয় এবং এটি স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করে। অনেকে আবার যৌনতার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে এবং অনেকের অকাল বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগীর শারীরিক পরীক্ষা নীরিক্ষার মধ্যে প্রধান বিবেচ্য বিষয় থাকে তার রেসপিরেটোরী এবং কার্ডিওভাসকুলার ঠিক মত কাজ করছে কিনা তা লক্ষ্য করা। এছাড়াও স্নায় এবং তলপেট ব্যবস্থা কতটুকু সুস্থ আছে এটিও ডাক্তারদেকে জানতে হয়। লিঙ্গ পরীক্ষার সময় ডাক্তার যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন -
  • প্রিপিউজ- ফাইমোসিসের জন্য
  • মত্রনালীর মুখ-স্টেনোসিসের জন্য
  • অন্ডথলি- হাইড্রোসেলের জন্য     
  • করপরা কেভারনোসা-যে কোনো প্রকার ফাইব্রোসিসের জন্য
ল্যাবরেটরী টেস্ট
ল্যাবরেটরীতে ডাক্তার রোগীর বিভিন্ন শারীরিক বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। এতে করে দ্রুত সমস্যা নির্ণয় করা সহজ হয়। ল্যাবরেটরিতে পুরুষত্বহীনতার জন্য যে সমস্ত টেস্ট করানো হয় সেগুলো হলো -
  • সিবিসি
  • ইএসআর
  • মত্র পরীক্ষা   
  • লিভারের এনজাইম পরীক্ষা   
  • বীর্য পরীক্ষা
  • থুথু পরীক্ষা
  • এসএম এ ১২
  • টেস্টোস্টেরন স্তর পরীক্ষা
  • প্রেল্যাকটিন স্তর পরীক্ষা
পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা
পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসার ব্যাপারে অধিকাংশ পরামর্শ এসেছে মাস্টার এবং জনসনের কাছ থেকে। তারা তিনটি বিষয়ে প্রাথমিকভাবে গবেষণা করে থাকেন যে, কেন একজন পুরুষ পুরুষত্বহীনতায় ভোগে। এই তিনটি কারণকে বিশেস্নষণ করে তারা এমন কিছু কৌশল এবং পদ্ধতির কথা বলেন যাতে করে পুরুষত্বহীনতা সমস্যা কাটানো যায়। তাদের গবেষণার বিষয় তিনটি হলো -
১. যৌনতার ব্যাপারে পুরুষ এবং নারীর ভ্রান্ত ধারণা।
২. পুরুষের পুরনো চিন্তা ভাবনা এবং উঁচু মাত্রার শারীরিক এবং মনোদৈহিক চাপ। বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার যৌনতার ব্যাপারে আলোচনা কম হওয়া। মনে রাখা উচিত স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার যৌন আলোচনা যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে পারে।
৩. পুরুষত্বহীন পুরুষের মানসিক চাপ বেশি থাকে সেই কারণে স্ত্রীর বা যৌন সঙ্গিনীর উচিত তাকে আশ্বস্ত করা যে এটি কোনো রোগ নয়।                               
মাস্টার এবং জনসনের পুরুষত্বহীনতার ব্যাপারে দেয়া পরামর্শগুলো হলো-
  • যৌন সঙ্গী এবং সঙ্গিনীর মধ্যে খোলামেলা যৌন আলোচনা করা উচিত। এটি পরসপরের যৌনানুভূতিকে চাঙ্গা করতে পারে এবং পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা সৃষ্টি  করে।
  • যৌনতার ব্যাপারে কোনো প্রকার ভ্রান্ত ধারণা পোষন করা উচিত নয়। নারী এবং পুরুষ উভয়েরই উচিত যৌনতার ব্যাপারে একজন অন্যজনকে সাহায্য করা। এর  ফলে যৌন অনুভূতি এবং পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা তৈরি হতে পারে।
  • যদি নারী বা পুরুরো যে কারো একজনের যৌনতার ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহ, ভয় ভীতি বা দুশ্চিন্তা কাজ করে তাহলে সাথে সাথে তা ডাক্তারকে জানানো উচিত। অনেক নারী যৌনতার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা খুব পছন্দ করে। হয়তো তার যৌন সঙ্গ বা স্বামী ওরাল সেক্স পছন্দ করছে অথচ নারী সেটি পছন্দ করছে না। এতে করে উভয়ের যৌন অনুভূতির মধ্যে একটা পার্থক্য তৈরি  হতে পারে। এ ব্যাপারটির দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
  • পরসপরের সাথে গভীর স্পর্শের সম্পর্ক থাকা উচিত ।    
  • পুরুষের যদি উত্তেজনা কম থাকে সে ক্ষেত্রে নারীর উচিত পুরুষকে উত্তেজিত করে তোলা। নারী বিভিন্ন ভাবে পুরুষকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। বিশেষ করে নারী তার স্তন, স্তনবৃন্ত, ক্লাইটোরিস ইত্যাদি উত্তেজক শারীরিক অংশের স্তপর্শ দ্বারা পুরুষকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে।
  • পুরুষত্বহীনতা সমস্যা মোকাবেলায় নারীর ভমিকা রয়েছে খুব বেশি। নারী পুরুষকে বিভিন্নভাবে উত্তেজিত করে আবার তাকে শিথিল করে তার লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়াতে পারে। স্ত্রী দিনে অন্তত তিন চার বার স্বামীর লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়াতে এ কাজটি করতে পারে।
  • লিঙ্গের উত্তেজনা দীর্ঘক্ষণ ধরে না রেখে পুরুষের উচিত একবার লিঙ্গ শিথিল করে আবার লিঙ্গের উত্তেজনা তৈরি করা। এতে করে পুরুষত্বহীনতার সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।   
অধ্যাপক ডাঃ এএইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি

ফেসবুকে আমি

next post @

ভালোবাসার এনাটমি (আরিফ মাহমুদ সাহবুল)



শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

ভালোবাসার এনাটমি (আরিফ মাহমুদ সাহবুল)

কোন মন্তব্য নেই

 

দৃশ্য-১: গ্রাম ছেড়ে যেদিন শহরে চলে আসলো সেদিন মোজামেমল তার প্রিয়তমা ইতিকে কথা দিয়ে আসলো যে, সে তাকে ভালোবাসে-ভালোবাসবে এবং খুব জলদিই তাকে সে নিজের করে নেবে। মোজামেমল ইতিকে সেই কবে থেকেই ভালোবাসে। ভালোবেসে সমস্ত মনপ্রাণ উজাড় করে। প্রতিমাসেই সে তার প্রিয়তমার কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠির পাতাতে মনের সব লুকানো কথা ভালোবাসার কথা লিখে পাঠায়। লিখে পাঠায় তার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার কথা-ভালোবাসার হৃদয় জুড়ানো কথা।
দৃশ্য-২: ওহ! ভালোবাসায় এত্ত বাধা। এত্ত জ্বালা-যন্ত্রণা তারপরও তুষার ভালোবাসে তার প্রিয় মনের মানুষকে। তুষার জানে ভালোবাসলে বাঁধা আসবেই। আর এই বাধা বিঘ্নতাকে উপেক্ষা করেই ভালোবাসার অমৃত সুধাকে জয় করতে হয়। ভালোবাসা সে তো সোনালী সুখের বিষয় পরম শান্তির বিষয়। তুষার জানে ভালোবাসায় সাময়িক কিছু কষ্ট করতে হয়-কষ্টের আড়ালেই তো মনের বিশাল সুখ লুকিয়ে রয়। এ সুখ তো সারা মুহর্তের সারা বেলার-সারা জীবনের।
দৃশ্য-৩: মোস্তফার মনটা শিউলীর জন্য বড়ই কাঁদে। সে যে শিউলীকে প্রচন্ড ভালোবাসে। শিউলী কি বোঝে মোস্তফার হৃদয়ে জমে থাকা ভালোবাসার কথা। শিউলী কি মোস্তফার মনের ভেতর খুঁজে দেখেছে সেখানে কত ভালোবাসা রয়েছে। মোস্তফা ভেবে পায় না কি করবে সে, কি বা তার করার আছে। মাঝে মাঝে মনটা যেন কেমন অদ্ভুতভাবে বিদ্রোহ করে। বড় কষ্ট পায়! মোস্তফা জানে কষ্ট থাকলেও ভালোবাসা সুন্দর-মহিমান্ব্বিত। মোস্তফা জানে ভালোবাসায় টাকার সুখ না থাকলেও ভালোবাসার চিরস্থায়ী সুখ ঠিকই আছে। যে সুখ মানুষকে মাধুর্যতায় পুলকতায় ভরিয়ে দিতে পারে। সুখের জন্যই তো সারা পৃথিবী ব্যাকুল। মোস্তফা শিউলীকে কোনো দিনই ভুলবে না ভুলতে পারবে না। ভালোবাসা কোনোদিনই ভোলা যায় না। কোনোভাবেই না।
দৃশ্য-৪: কলেজ লাইব্রেরীতে বসে নোট করার সময় লাকির পরিচয় হয় রফিকের সাথে। দু’জনেই ভালো স্টুডেন্ট; দারুণ মেধাবী। প্রথম পরিচয়ের দিন আপনার নাম কি? আপনি কোথায় থাকেন? এই ধরনের কয়েকটি কথার মধ্য দিয়েই পড়া শেষে দু’জনেই যার যেখানে গন্তব্য সেখানে রওয়ানা দেয়। এরপর হঠাৎ একদিন আবার রফিকের সাথে লাকির সেই কলেজ লাইব্রেরিতে দেখা হয়ে যায়। দু’জন-দু’জনাকে দেখে অজান্তেই হেসে দেয়। শুরু হয় কথা; হাজারো কথা। দু’জন-দু’জনার মাঝে জন্ম নেয় সহমর্মিতা, জন্ম নেয় বন্ধুত্ব। তাদের এই বন্ধুত্বের কোনোদিনই কোনো কারণেই ফাটল ধরেনি, সৃষ্টি হয়নি কোনো অবিশ্বাস আর ভুল বোঝাবুঝির। সুখে-দুঃখে তারা দু’জনে-দু’জনার হয়ে থাকে। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর; সময়ের গন্ডি পেরিয়ে তারা দু’জনে বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে ভালোবাসার জগতে হারিয়ে যায়। আবিষকৃত হয় দুটি মানব-মানবীর মাঝে গভীরতম ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসাই তাদেরকে নিয়ে যায় বিয়ের বন্ধনে-সারা জীবনের বন্ধনে। একজন ভালো বন্ধুই তো একজন ভালো স্বামী হতে পারে-হতে পারে ভালো স্ত্রী।
দৃশ্য-৫: মিতু ভাবতেও পারেনি জীবন চলার পথে হঠাৎ করে সে এমন একজনকে মন দিয়ে দেবে যে তার জীবনটাকে পুরোপুরি বদলে দেবে। যে তার জীবনে ছায়ার মত হয়ে আসবে। হ্যাঁ, মিতু আপনকে ভালোবেসে ফেলেছে মনের অজান্তেই। ভালোবাসা এমনই এক জিনিস যা মানুষকে বদলে দেয়-অন্য রকম করে ফেলে। মিতুর মনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে আপন ছড়িয়ে পড়েছে ভালোবাসার সুরভিত শোভা নিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে। আপনের ভালোবাসা মমতায় ভরা স্নিগ্ধতায় ছোঁয়া। আপনের ভালোবাসায় শান্তি আছে, সুখের সৌরভ আছে, আছে বিশালতা। আপনের কথা ভাবতে মিতুর ভালো লাগে, ভালো লাগে তাকে নিয়ে স্বপ্নের রঙ তুলি সাজাতে। চোখ বন্ধ করলেই আপন ভেসে ওঠে মিতুর প্রতিটি নীরবতায়, হৃদয়ের পর্দায়, ছবির মত। আনন্দতায়, বিষণ্নতায় আপনের ভালোবাসা মিতুকে শিহরিত করে প্রফুলস্নতায়-আবেশতায়-তন্ময়তায়। আপনের ভালোবাসায় মিতু আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সারাক্ষণ-সারা বেলায়। এটাই তো ভালোবাসা এটাই তো অন্তরের মাধুরতা। এরই নাম ভালোবাসা।
দৃশ্য-৬: জীবন-সাথীকে ভালোবাসে। ভালোবাসে সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে। ভালোবাসে মনে প্রাণে। ভালোবাসে পাগলের মতো করে। জীবনের তো কেউ নেই, কেউ নেই সাথী ছাড়া। সাথীই তো জীবনের সকল আশা-আকাক্ষা, কামনা-বাসনা। সাথীই তো জীবনের দেহের মাঝে; প্রাণ। সাথী তো জীবনের আত্মা, জীবনের জান। বেচারার জীবন বড়ই অসহায় সাথী ছাড়া; বড়ই একলা সে- সাথী ছাড়া। জীবন বড়ই ছটফট করে সাথীর জন্য। বড়ই তড়পায় সাথীর জন্য। সাথী ছাড়া জীবন তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবে ফুরিয়ে যাবে।
জীবনের প্রতিটি আবেগে, প্রতিটি শিহরণে, প্রতিটি স্বপ্ন সাধনায়, বাস্তবতায়, প্রতিটি আকুলতায়, প্রতিটি ব্যাকুলতায় সাথী মিশে আছে। মিশে আছে গভীরভাবে- দেহের প্রতিটি পশমে পশমে। ওহ! সাথীই তো জীবনের সব। যে জীবনে সাথী নেই সে জীবনে; জীবনের কিছুই নেই-কিছুই নেই। জীবন জানে তার সাথী মরে যাবে তবু তাকে ছেড়ে যাবে না; ধোঁকা দেবে না, ছলনা করবে না। জীবনের জীবন নষ্ট করবে না। সাথীর জন্যই তো জীবন বেঁচে আছে। আছে পথ চেয়ে...।
মনোজগতের জ্ঞান পিপাসু কৌতূহলী প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ। আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে, এবারের সংখ্যায় আপনাদের জন্য ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা, কিছু বৈজ্ঞানিক বিশেস্নষণ, কিছু অদৃশ্য মনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে। মনোজগত মানব মনের সব সাইডের বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয়, আলোচনা করে, মানব মনের অজানাকে জানার তৃষ্ণা মেটায়। মনোজগত মনকে বিকশিত করে, প্রস্ফুটিত করে জ্ঞানের ভান্ডার। আপনাদের অঢেল ভালোবাসাই মনোজগতের অমূল্য পুঁজি, অনন্য অনুপ্রেরণা। আপনাদের জন্যই মনোজগত চলছে চলবে চমৎকার গতিতে। মনোজগত জ্ঞানের পত্রিকা বিজ্ঞান ভিত্তিক মনোবৈজ্ঞানিক বিশেস্নষণ ধর্মী মনস্তাত্ত্বিক পত্রিকা।
পাঠক/পাঠিকা মহল আসুন এবার জেনে নেই ভালোবাসার কথা, হৃদয়ের কথা। ভালোবাসা আসলে কি? আপনি কি ভালোবাসেন? এই প্রশ্ন অনেকেরই তাই আসুন না ভালোবাসার জগতে হারিয়ে যাই, হারিয়ে যাই অন্তত কিছু সময়ের জন্য। এ লেখা তাদের জন্য যারা তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, যারা ভালোবাসা চায় ভালোবাসতে চায়, এ লেখা তাদের জন্য যারা বয়স হওয়া সত্ত্বেও মনের দিক থেকে তরুণ, এ লেখা তাদের জন্য যারা ভালোবাসায় বিশ্বাসী যারা ভালোবাসার মল্য বোঝে এবং যারা বোঝে না, যারা ভালোবাসায় অবিশ্বাসী তাদের জন্য এ লেখা।
ভালোবাসা কি?
ভালোবাসা হল এক রহস্যময়, আবেগময়, রোমাঞ্চময়, শিহরিত, পুলকিত সুখময় অনুভূতি-আসক্তি। ভালোবাসা মানব জীবনের এক আশ্চর্যময় জৈবিক মানসিক অনুভূতি-চাহিদা। মানুষের পারসপরিক সম্পর্কের সর্বপেক্ষা ও তীব্র আবেগময় মানসিক অবস্থাই হচ্ছে ভালোবাসা। কথায় আছে, ‘Love is heaven and heaven is love. Love is growing or full Constant light,Love is not love which alters when it alteration finds,Love is like linen often changed the sweater.'
বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধানে ভালোবাসার অর্থ করা হয়েছে এভাবে-
(১) কারো প্রতি অনুরক্ত হয়ে প্রীতিযুক্ত বা আসক্ত হওয়া।
(২) (কাউকে) শ্রদ্ধা করা, ভক্তি করা, স্নেহ করা।
(৩) (কারো সাথে) বন্ধুত্ব সৃষ্টি হওয়া এবং
(৪) কারো প্রতি প্রেম-প্রীতি, অনুরাগ বা মনের টান সৃষ্টি হওয়া।
ইংরেজি ভাষায় ভালোবাসাকে বলে ‘লাভ’ (কলিংস গেম ইংলিশ) ডিকশনারীতে ভালোবাসা বা লাভ এর অর্থ করা হয়েছে এভাবে, হ্যাভ এ গ্রেট অ্যাফ্যাকশন ফর ফিল সেক্সুয়াল প্যাশন ফর হুল হার্টেড লাইকিং ফর সামঅন বিলাভড পারশন।
ইংরেজি লাভ শব্দের বেশ কয়েকটি প্রতিশব্দ লক্ষ্য করা যায়, যেমন-অ্যাফ্যাকশন, অ্যাটাচমেন্ট, ফন্ডনেস, টেনডারনেস, ডিভৌশন, অ্যাডরেইশন, লাইকিং, পারশিঅ্যালাটি, ইনক্লাইনেশন, উঈকনেস, ইনফ্যাচুএইশন, প্যাশন ইত্যাদি।
ভালোবাসা অনেক রকমেরই হতে পারে, যেমন-ফ্রয়েডীয় লাভ, পেস্নটনিক লাভ, প্যাশি অনেট লাভ, রোমান্টিক লাভ প্রভৃতি। পৃথিবীর সেই আদিকাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত মানুষের মনে-মনে, হৃদয়ে-হৃদয়ে, অন্তরে অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে আসছে, সৃষ্টি হতে থাকবে দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত, কেয়ামত পর্যন্ত। ভালোবাসা মানব মনের এক অদৃশ্য-ইনভিসিবল, আকর্ষণ, এট্রাকশন। মন আছে বলেই তো মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। যার একটা সুন্দর মন আছে সেই তো ভালোবাসে, সেই তো ভালোবাসতে পারে। সেই তো নিজেকে অন্যের সুন্দর মনের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারে-হাসি মুখে। ভালোবাসাকে বাদ দিয়ে মানব মানবীকে ভাবাই যায় না। ভালোবাসাহীন মানুষ যেন কাগজের ফুলের মত; যার কোনো সুভাশ মাখা সুগন্ধ নেই, নেই মিষ্টি মনোরোম সৃষ্টি জাগানো অনুভূতি। ভালোবাসাহীন মানুষ যেন মরা গাছের মত, যার মাঝে প্রাণের কোনো সবুজ উজ্জীবিত সঞ্চারণ নেই, নেই মন মাতানো সজিবতা। ভালোবাসাই তো পরকে আপন করে, আপনকে আরো আপন ঘনিষ্ট করে তোলে, বন্ধুত্বের বন্ধনে। ভালোবাসা শূন্য হৃদয় তো পাথরের মতো আর পাথর মন নিয়ে মানুষ কখনোই দয়াশীল, স্নেহশীল, উদার ও করুণাদীপ্ত হতে পারে না, হতে পারে না মনে শিহরণ জাগানো ‘রোমান্টিক মানুষ’ কঠিন মনের মানুষেরা নিতান্তই নিরস পানসে। জড় পদার্থের মতো অনুভূতিহীন। ভালোবাসা শূন্য অন্তর দৃষ্টি শূন্য চোখের মতো।
ভালোবাসা মানব জীবনের সুখের ছোঁয়া এনে দেয় আর সুখ মানুষকে এনে দেয় নির্মল শান্তি সুন্দর স্বর্গীয় প্রশান্তি। ভালোবাসা একটি মানসিক চাহিদা। এই চাহিদাকে কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয় কিংবা ঠিক নয় এই চমৎকার চাহিদাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। মনোবিজ্ঞান দেখেছে যে, মানুষের মন যেমন অপরকে ভালোবাসতে চায় তেমনি প্রিয়জনের কাছ থেকে সত্য সুন্দর সুখের ভালোবাসা পেতেও চায়। মানুষের জীবনে চাহিদার কমতি নেই, অন্যান্য চাহিদা পরণের দ্বারা ভালোবাসা বঞ্চিত ব্যক্তির ভালোবাসা পাবার প্রতি আকাক্ষা মেটানো যায় না। এমনকি টাকা-পয়সা, সোনা-গহনা, বিশাল প্রতিপত্তি দিয়েও ভালোবাসা পাবার প্রতি অদৃশ্য আকাক্ষা কমানো যায় না; যদি যেত তবে অনেক ধনী কোটিপতির ঘরের সন্তান তার প্রিয় ভালোবাসার দরিদ্র্য মানুষটির হাত ধরে সব ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত না। বেরিয়ে যেত না ভালোবাসার অদৃশ্য তীব্র সুখ সন্ধানে; ছোট সুখের ঘর বাঁধতে। প্রচুর ধন সম্পত্তির মাঝে যা নেই তা আছে একটি সত্য সুন্দর নিখুঁত ভালোবাসার মাঝে। ভালোবাসার সুখ অন্যরকম সুখ, অন্য রকম অনুভূতি। মানুষের এই কঠিন বাস্তবতার জীবনে চলার পথে অর্থ সম্পদ, টাকা-পয়সার ডলার, পাউন্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অবশ্যই! কিন্তু্তু তাই বলে তা কোনোভাবেই একটি সত্য সুন্দর ভালোবাসার বিকল্প হতে পারেন না। ভালোবাসা স্নেহে পেট ভরে না ঠিকই তবে মন ঠিকই ভরে আর মন সুখী তো সব সুখী। সুখী মনে খুশী মনে সব কিছুই করা যায় অসুখী মনে হায়! কিছুই করা যায় না। ভালোবাসা সেতো স্বর্গীয় শান্তির মত বিষয়। বিজ্ঞান দেখেছে যে, ভালোবাসায় প্রচুর সুখ আছে, আছে মনের সুখ-মনের সুখই তো বড় সুখ। এই মনের সুখ পাওয়ার জন্য পৃথিবীতে কত মানুষই না দিক ভ্রান্তের মত সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু্তু এ সুখ কি আর সবার ভাগ্যে জোটে? না সবার ভাগ্যে নয় তবে যারা এর প্রকৃত মল্য বোঝে, যারা চেষ্টা করে, সাধনা করে, যারা ত্যাগ করে, তারাই মনের এই অবর্ণনীয় সুখ সুধা পেয়ে যায়। কোটি টাকা দিয়েও সত্যিকার মনের সুখ কিনে পাওয়া যায় না। যদি যেত তবে মার্কেটে মার্কেটে তা পণ্যের মতোই বেচনাকেনা হত। তখন অঢেল বিত্তবানরাই টাকার কুমীররা সামান্য মনের সুখের জন্য এত্ত অস্থির হতেন না, হতেন না বেসামাল, দিকভ্রান্ত। জগতে অর্থের দাপট আছে, আছে অন্য রকম প্রভাব, অর্থ দিয়ে অনেক কিছুই করা যায় অনেক অঘটন ঘটানো যায়, অর্থ দিয়ে বাড়ি, গাড়ি, নারী পাওয়া যায় কিন্তু্তু সত্য সুন্দর বিশুদ্ধ ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসাকে কেবল ভালোবাসা দিয়েই পাওয়া যায়; জয় করা যায়।
মনোবিজ্ঞান দেখেছে যে, প্রতিটি নারী-পুরুষের মনেই ভালোবাসা পাবার আর দেবার এক নিবিড় আকাক্ষা থাকে। আর তা পূরণ করতে না পারলে জীবন অর্থহীন, রসহীন, সুখহীন এবং অপূরণীয় হয়েই থেকে যায়। বিজ্ঞান প্রমাণ পেয়েছে যে, পেট ভরে খাইয়ে দিলেও ভালোবাসা বঞ্চিত মানুষটি ভালোবাসার কাঙ্গালই হয়ে থেকে যায়-চেতন অবচেতন মনে। সাইকোসায়েন্স দেখেছে যে, প্রতিটি নারী-পুরুষই ভালোবাসার সান্নিধ্য কামনা করে, অপরের আচরণে সাড়া দিতে পছন্দ করে, এর কারণ আমরা ভালোবাসা চাই, চাই অনুমোদন, চাই অন্যের চমৎকার সমর্থন। আমরা পুরুষরা যেমন সুন্দর সঙ্গী পেতে চাই, জীবন সাথী চাই, চাই মনের বন্ধু, চাই প্রেয়সী মমতাময়ী স্ত্রী; তেমনি নারীরাও মিষ্টি মনের প্রেমময় রোমান্টিক মনের আদরের স্বামী চায়। সত্যিকার অর্থে এসব চাওয়া বা কামনা নারী-পুরুষের অবচেতন মনের চাওয়ার মলে লুকিয়ে রয়েছে স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসা দেয়ার ও পাওয়ার ইচ্ছা অপ্রকাশিত আশা-আকাক্ষা, কামনা।
ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হয় সংগোপনে ধাপে ধাপে বা তীব্র গতিতে। প্রথমে একটু দেখা তারপর এক অজানা অদৃশ্য আকর্ষণ। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমপত্র বিনিময়, সেই অমৃত সমতুল্য লাভ লেটার শতবার পড়েও মন ভরে না। তারপর লোক চক্ষুর আড়ালে একটু আধটু দেখা, একটু উষ্ণ পরশ পুলকিত শিহরণ। এখন যুগের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের মন মানসিকতা। ভালোবাসার ব্যাপার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষা ও সভ্যতা ভালোবাসাকে করেছে কিছুটা পরিমার্জিত ও কিছুটা খোলামেলা। মজার কথা হল ভালোবাসার মল আবেদন সর্বকালে সর্ব সময়ে একই রকম আছে। তবে তা দেশ-কাল, বয়স, মিলন ও বিবাহ ভেদে ভিন্নরূপ ধারণ করে। কৈশোর শেষ হয়ে যখন তারুণ্য এসে মনে প্রাণে প্রভাব জাগায় আলোড়ন সৃষ্টি করে দেহ মনে তখন তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী তাদের ভালোবাসার মানুষটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ সময় তারা পরসপর পরসপরকে প্রচন্ডভাবে ফিল করে। কথায় কথায় মান অভিমান করতে থাকে, থেকে থেকে কথাবার্তা বন্ধ করে দেয় আবার পরক্ষণেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সান্নিধ্যের জন্য মন-প্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই ভালোবাসার কারণেই একে অন্যকে প্রাণ ভরে উপলব্ধি করে গভীরভাবে। কাছে যেতে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আর কাছে গেলেও একে অপরের দিকে চোখ তুলে বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না। মনে কেমন কেমন যেন লাগে তখন। ভালোবাসায় প্রচন্ড এক ভালোলাগার রেশ আবেশ মন-প্রাণকে পস্নাবিত করে রাখে। এই ভালোবাসার কথা কেউ কেউ তার মনের মানুষটির কাছে মুখ ফুটে প্রকাশ করে দেয়, কেউ কেউ করে না বা প্রকাশ করতে পারে না আজীবন।
ভালোবাসায় থাকে স্নায়বিক প্রেরণা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা। ভালোবাসায় মনের মানুষটির কাছাকাছি বসে থাকার ইচ্ছা জাগে। প্রিয়জনের কোমল সপর্শে একটা হাল্কা শিরশির ভাব জাগে মনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে, প্রতিটি অলিতে গলিতে, প্রতিটি কোষে কোষে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে, কথাবার্তা, আলোচনা, হাসি-কান্না মনকে প্রচ্ছন্ন করে তোলে মুগ্ধতায় আনমনায়। ঠোঁট ভারী হয়ে আসে ভালোবাসার উষ্ণ আবেশে তাইতো দু’জন দু’জনার কপালে মিষ্টি চুমো দিয়ে ভালোবাসার বিস্তারণ ঘটায়।
ভালোবাসার সরল সমীকরণ অনির্দেশ্য বহুমাত্রিক এবং আন কন্ট্রোল যা আক্ষরিক অর্থে প্রেমিক প্রেমিকাকে অন্যরকম করে দেয়। সকল শৃখল কিংবা শৃখলতাকে, পার্থিব শাসন, অনুশাসনকে ভালোবাসা ছিড়ে ফুড়ে, তুমুল বিক্ষোভে ঝড়ের দুর্নিবার শক্তিতে। ভালোবাসার অদৃশ্য টানেই স্বর্গচ্যুত মানব-মানবী নির্বাসন দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে পৃথিবী নামক এই ছোট গ্রহে নিক্ষিপ্ত হন, এভাবেই সেই আদিকাল থেকে ভালোবাসা মানুষকে আনকন্ট্রোলড করে রেখেছে রাখবে ধরণীর শেষ দিনটি পর্যন্ত। তাইতো-চধৎধফরংব ষড়ংঃ- এ বলা হয়েছে-
্তুড়ভ সধহদং ভরৎংঃ ফরংড়নবফরবহপব ধহফ ঃযব ভৎঁরঃ ড়ভ ঃযধঃ ভড়ৎ নরফফবহ ঃৎবব, ডযড়ংব সড়ৎ ঃধষ ঃধংঃব ইৎড়ঁমযঃ ফবধঃয রহঃড় ঃযব ড়িৎষফ, ধহফধষষ ড়ঁৎ ড়িব রিঃয ঃযব ষড়ংং ড়ভ বফবহ.দ
ভালোবাসা এক অতি প্রাকৃতিক দুর্বোধ্য উপলব্ধি অনুভব। ভালোবাসা জীবনের এমন এক সঞ্জীবনী জল যা জীবনকে বিচিত্র অভিধায় উদ্বুদ্ধ ও অভিষিক্ত করে, জীবনকে ব্যাপক কর্মযোগের তাড়নায় অশেষ ও অগ্রগামী অর্থময় করে তোলে। ভালোবাসা সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার মহাজাগতিক সমগ্র আন্দোলনে জীবনকে সুসংগত করে। কথায় বলে, প্রেমিক-প্রেমিকার থাকে শত চোখ আর এ চোখ হল মনের চোখ। এই মনের চোখে তারা প্রিয়জনকে দেখে উপলব্ধি করে, বোঝে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে, মায়া মমতায়, আদরে মুগ্ধ হয়। জীবনে নারী-পুরুষের প্রথম জিজ্ঞাসা ভালোবাসা এবং প্রতিনিয়তই তা অভূতপূর্ব এবং এ এক অনির্বচনীয় সত্য। জীবনের মল সূত্র ভালোবাসা, জগত সংসারের মল সূত্র ভালোবাসা। শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতার যা কিছু নিয়ামক শক্তি তার সম্পর্ণ অবকাঠামোর মল বুনিয়াদ রচনা করেছে এই ভালোবাসা। ভালোবাসা নামক চিরপরিচিত এই একটি শব্দের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে সহস্র ডাইমেনশনাল একটি অমেয় সত্য। ভালোবাসা অনন্ত আধুনিক, চিরকাল, আধুনিক এবং মানবিক একটি বিষয়। যুক্তিবাদী কোনো মহাপন্ডিতের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার বিষয় নয় এটি। পার্থিব সম্পর্ণ জ্ঞান দিয়েও একে অভিহিত করা যায় না। ভালোবাসা রোমান্টিক এক বোধ, এটি একটি সার্বক্ষণিক নিমগ্নতার ব্যাপার যা অনিঃশেষ ধৈর্য্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার চিরন্তন অঙ্গিকার। বলা হয় ভালোবাসা নাকি অন্ধ! হ্যাঁ, চর্ম চক্ষুতে অন্ধ হতে পারে বলেই তো মানুষ এত গভীরভাবে একজন আরেকজনকে ভালোবাসতে পারে, যারা সত্যিকার ভালোবাসে যারা সত্যিকারভাবে ভালোবাসতে জানে ভালোবাসতে পারে তারা তো বাইরের চোখ দিয়ে নয় ভেতরের চোখ দিয়েই মনের চোখ দিয়েই মনের মানুষটির মনের ঘরে ঢুকে যায় অবলীলায়, অনায়াসে, ছড়িয়ে যায় সমস্ত চেতনায় সমস্ত অস্তিত্বে। ভালোবাসা হল এমন মল্যবোধের বিকাশ যা কিনা মানুষকে ইতর প্রাণী থেকে পৃথক করে আলাদা করে। ভালোবাসা এক প্রকার আশ্চর্য ইন্দ্রিয়াতীত উপলব্ধি। মাইকেল মধুসদন দত্তের একটি ইংরেজি কবিতায় বলা হয়েছে-
there was a life in the smile ,there was death in thy frown .
thy voice it was sweeter then melody's own !
ভালোবাসা প্রতিটি নারী-পুরুষেরই একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ভালোবাসার সঠিক সংজ্ঞা স্থির করা সহজসাধ্য নয়। গভীর ভালোবাসায় চৎড়ঃবপঃরাব বষবসবহঃ থাকে। আমরা যাকে ভালোবাসি সে আঘাত পেলে আমরা উদাসীন হয়ে পড়ি, হয়ে পড়ি ব্যাকুল, অস্থির, উদ্বিগ্ন। ভালোবাসা যতখানি নিরাপত্তার অভাব বোধকে দূর করতে সক্ষম, ততখানিই তা মানুষকে তার বিপন্ন এবং কঠিন অবস্থায় পৃথিবী সম্পর্কে তার যে আকর্ষণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেই আকর্ষণ অনুভব করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়। খাঁটি বা সত্য ভালোবাসা যে দেয় এবং যে তা পায় দু’জনাই তাতে অনুপ্রাণিত হয়। দু’জনেই আনন্দের সাথে ভালোবাসা গ্রহণ করে এবং পারসপরিক সুখের জন্য একত্রিত হয়ে সারাটা জীবন এক সঙ্গে কাটানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে হয়ে ওঠে বেসামাল।
অনেক অসুখী স্বামী-স্ত্রী বা ভালোবাসাহীন দম্পতি তাদের দাম্পত্য জীবনের করুণ, দিনের পর দিন অবর্ণনীয় মন-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অনেকেই মনে প্রাণে ভেঙ্গে পড়ে, অনেকেই আবার মানসিক যন্ত্রণায় তিলেতিলে শেষ হয়ে যায় বা নিজেকে শেষ করে ফেলে। সাইকোলজিক্যাল সাইন্স দেখেছে যে, ভালোবাসা না পাবার করুণ বেদনা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই মানসিকভাবে মেন্টালীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আসলে ভালোবাসা ছাড়া মানুষের জীবন কখনোই সুন্দর হতে পারে না, হতে পারে না পরমতম শান্তির নির্মল ঝর্ণাধারার মত আনন্দের।
ভালোবাসার সাথে ত্যাগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, ইংল্যান্ডের রাজ সিংহাসনের অধিকারী রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তার প্রিয়তমার ভালোবাসার জন্য বিশাল রাজ সিংহাসনও অবলীলায় ত্যাগ করে দিয়েছিলেন-এ তো হল মাত্র একটা উদাহরণ। মানব মানবীর ইতিহাসে এমন শত শত ত্যাগের অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে যেখানে আদর-মমতা ভালোবাসার আকাক্ষা অন্যান্য সমস্ত আকাক্ষাকে ্নান করে দিয়েছে।
ভালোবাসাকে সংঘর্ষ হ্রাসকারী পিচ্ছিল পদার্থের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যার ব্যবহারে জীবনের পথ মসৃণ হয় অগ্রগতি থাকে অব্যাহত। ভালোবাসা হল মানুষের ‘ওহঃবৎহধষ ঢ়ড়বিৎ’ বা অন্তর্নিহিত শক্তি। ভালোবাসার শক্তি প্রকাশিত হয় ভালোবাসা পাবার ক্ষমতার ভেতর দিয়ে। অর্থাৎ কিনা ভালোবাসা পাওয়া এবং দেয়া দুটিই সমান জোরদার চাহিদা জোরদার শক্তি। সাইকোলজিক্যাল সাইন্স প্রমাণ করেছে যে, মানুষ যতটা ভালোবাসা পেয়েছে সে ততটা ভালোবাসা দিতেও পারে। এজন্য ভালোবাসা পাওয়া এবং ভালোবাসা দেয়া দুটোই মানসিক সু স্বাস্থ্যের বা মেন্টাল হাইজিনের একটি মৌলিক উপাদান।
মানব সভ্যতার সেই উষা লগ্ন থেকেই তো কবি এবং শিল্পীদের কবিতার মালা আর রঙ তুলিতে এ ভালোবাসার রাগ লহোরী তুলে গায়ক তার ভালোবাসার গীত মালায় সুর তুলে অমর; অসাধারণ ও কালজয়ী শিল্পী বনে যায়। সৃষ্টির সেই প্রথম দিন আদম আর হাওয়ার মাঝে যে ভালোবাসার স্ফুরণ ঘটেছিল তাতো আজও ঠিক একইভাবে প্রজ্বলিত হয়ে রয়েছে, থাকবে ধরিত্রীর শেষ দিনটি পর্যন্ত। তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সে কত অতীত সময় হতেই এই অনুপম হৃদয় চর্চা করে আসছেন। রোমিও জুলিয়েট, লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ, রাধা কৃষ্ণ এরা তো মন মাতানো হৃদয় রাঙানো সুন্দরতম প্রস্ফুটত গভীর ভালোবাসার অনন্য কিংবদন্তি হয়ে আছেন।
কতটা সময় পেরিয়ে গেছে কত যুগ চলে গেছে, এতটা সময় অতিক্রান্ত হবার পরেও মানুষের হৃদয়ের মাঝে লুকানো এই বিমর্ত ভালোবাসাকে কোনোভাবেই মানব হাত দ্বারা ধরা সম্ভব হয়ে ওঠেনি বা কারোর দেখারও সুযোগ ও সৌভাগ্য ঘটেনি যে, ভালোবাসলে দুটি হৃদয়ের মাঝে কি রকম মায়া-মমতা, আদর-সোহাগের ছবি ফুটে ওঠে কিংবা কি ঘটে সেই প্রেমিক-প্রেমিকার অদৃশ্য মন দুটিতে। ভালোবাসা অদৃশ্য কিন্তু্তু এর শক্তি অত্যন্ত তীব্র। আজও এটি মানুষের চর্ম চক্ষুর সামনে কেমন যেন অসপষ্ট ঢাকা-ঢাকা আর অপ্রকাশিত হয়ে রয়ে গেছে। এটি কি হৃদয়ের একটা উষ্ণ আবেগ? এটি কি মনের অন্য রকম টান? নাকি সহজাত প্রবৃত্তি? নাকি মানব সভ্যতার একটা বৈচিত্র্যময় সামাজিক ধারণা।
যেমনই হোক ভালোবাসার অনুভূতির ভালোবাসার সুখের কোনো তুলনা করা যায় না কিংবা বোঝানো যায় না। ভালোবাসাকে শুধু হৃদয় দিয়েই অনুভব করতে হয় আর বুঝে নিতে হয় জ্ঞান দিয়ে, বিবেক দিয়ে। একটা সুন্দর মনই তো আরেকটা সুন্দর মনকে বুঝতে পারে চিনতে পারে।
ভালোবাসা প্রেমিক প্রেমিকার জীবনে সঞ্জিবনী এক টনিক বিশেষ। এর গুরুত্ব অপরিসীম। মানব মন ভালোবাসা চায় ভালোবাসতে চায়। আর এই মধুরতম চাওয়া জীবনের শেষ লগ্ন পর্যন্তই চলতে থাকে বিরামহীনভাবে। বিশুদ্ধ ভালোবাসাকে বিত্ত দিয়ে ক্রয় করা যায় না-তবে ভেজালে ভরা নড়বড়ে, দিকভ্রান্ত ভালোবাসাকে বিত্ত দিয়ে অবশ্যই ক্রয় করা যায়; বারবারই কেনা যায়। ভালোবাসাকে একটা বিশুদ্ধ সুন্দর পবিত্র মন দিয়েই আজীবন রক্ষা করতে হয়। সত্যি বলতে কি, ভালোবাসা দিয়ে বহু কঠিন জিনিসও জয় করা যায়। ভালোবাসা থাকলে সব হয়-সব। পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ; ভালোবাসা থাকলে সব হয় এই কথাটি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন তাই না? অবাক হবার কিছু নেই, একটু গভীভাবে কথাটির তাৎপর্য বিশেস্নষণ করে দেখুন উত্তর আপনার মনের ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসবে।
ভালোবাসা এমনই এক ব্যাপার যা একজন মানুষকে দয়ালু ও আদর্শ মানুষ হতে উৎসাহিত করে অনুপ্রেরণা যোগায়। ভালোবাসা ম্যাজিকের মতো কাজ করে-যা হুমকি ধমকি দিয়ে করানো যায় না তা অনায়াসেই চমৎকার ভালোবাসা দিয়ে করানো সম্ভব হয়। বিশ্বাস হয় না? দেখুন পরীক্ষা করে। প্রমাণ পেয়ে যাবেন হাতে-নাতেই।
ভালোবাসা তো হয় মন দিয়ে মনে-মনে, চুপি-চুপি-নীরবে। ভালোবাসা মনকে অন্যরকম করে দেয়। মন তো একটা বিমর্ত অবয়ব। মন রহস্যময়; মনের মাঝে সৃষ্টি হয় ভালোবাসার চৌম্বকীয় আকর্ষণ। মনমনকে কাছে টানে আপন করে নেয়। সুশোভিত অমৃতসম মমতা দিয়ে-অনুরাগ দিয়ে।
ফেসবুকে আমি

Next post @ আপনি একজন গর্ভবতী মা, অতএব.. (ডা. শিমুল আখতার)

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

আপনি একজন গর্ভবতী মা, অতএব.. (ডা. শিমুল আখতার)

কোন মন্তব্য নেই
নারী জীবনে প্রথমবারের মতো যারা ‘মাতৃত্ব’ বরণ করতে যাচ্ছেন তাদের অনেক জ্ঞাতব্য ও শিক্ষণীয় বিষয় রয়ে গেছে। তাদের মনে মাতৃত্ব সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞানলাভ করার উৎসাহ জেগে ওঠে।
 
বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো মা হতে চলেছেন তাদের মাঝে অহেতুক ভয় ও লজ্জাবোধ লক্ষ্য করা যায়। মনে রাখতে হবে মাতৃত্ব একটি স্বাভাবিক জীবনাবস্থা।
মুক্ত, বিশুদ্ধ বায়ু ও সুর্যালোক
প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে দৈনিক গড়ে কমপক্ষে দু’ঘন্টা সময় ঘরের বাইরে মুক্ত, বিশুদ্ধ হাওয়া ও সুর্যালোকে কাটানো উচিত। যানবাহন ও পথচারীদের ব্যস্ত পথঘাট পরিহার করে শান্ত, নির্মল খোলামেলা পরিবেশসমৃদ্ধ বাগান অথবা পার্কে পায়চারি করতে পারেন। মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্যও প্রয়োজন বিশুদ্ধ তাজা বাতাস।
ব্যায়াম ও চিত্তবিনোদন
হাল্কা ব্যায়াম ও বিত্তবিনোদনমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। অধিক পরিশ্রমসমৃদ্ধ ব্যায়াম ও খেলাধুলা এ সময়ে পরিহার করে চলা উচিত। দারুণ ক্লান্তিকর কোনো কাজই করা ঠিক হবে না। প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটতে পারেন। হাঁটলে দেহের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় সাড়া জাগায় এবং সর্বোপরি সুখকর নিদ্রা ও বিশ্রামে সহায়তা করে। সংসারের ছোটখাটো সব ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারে। যেমন-ঘর ঝাঁট দেয়া, বিছানা পরিপাটি করাসহ অন্যান্য দৈনন্দিন করণীয় দায়িত্ব। গর্ভবতী অবস্থায় কখনো ভারী জিনিসপত্র ওঠানো বা নামানো অথবা বহন করা উচিত নয়। এতে করে গর্ভপাত ঘটতে পারে। উঁচু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা ঠিক নয়। অবিরাম দাঁড়িয়ে থাকার ফলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেক সময় পায়ের শিরাগুলো স্ফীত ও স্পষ্টতরভাবে ফুলে ওঠে ও পরিণতিতে ভেরিকোস ভেইন-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
ভ্রমণযাত্রা
গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম তিন মাস ঝুঁকিপূর্ণ পথযাত্রায় গর্ভপাত ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে বিধায় এ সময়ে ভ্রমণের ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার বত্রিশ সপ্তাহের অধিক সময়ের গর্ভবতীদের ভ্রমণের ব্যাপারে আপত্তি থাকে। আটাশ সপ্তাহের অধিক সময়ে গর্ভবতীদের উড়োজাহাজে ভ্রমণের ব্যাপারে সংশিস্নষ্ট চিকিৎসকদের ভ্রমণের উপযোগী হিসেবে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেখাতে হয় বিমান পরিবহন সংস্থাকে। কাজেই গর্ভবতী অবস্থায় দীর্ঘ ক্লান্তিকর, ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ যতোটা সম্ভব পরিহার করা উচিত।
বিশ্রাম ও ঘুম
গর্ভবতী অবস্থার দ্বিতীয় অর্ধেক সময়ে মার ওজন প্রায় ১০.৮ কেজি (২৪ পাঃ) অথবা তারও বেশি বৃদ্ধি পায়। অধিক ওজনের ফলে দিন শেষে এরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেকে পায়ে অসহ্য ব্যথা অনুভব করেন। কাজের ফাঁকে মাঝে-মধ্যে একটু বিশ্রাম অথবা অল্প সময়ের জন্য (১-২ ঘন্টা) ঘুমিয়ে নিতে পারেন। ঘুম ও বিশ্রামের স্বল্পতা মা ও গর্ভস্থিত শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। রাতে গর্ভবতী মা অন্তত ৮-৯ ঘন্টা সময় ঘুমিয়ে নেবেন। আরামদায়ক উষ্ণ পানিতে গোসল সেরে নিলে সহজেই ক্লান্তি দর হবে। এক গ্লাস হাল্কা গরম দুধ পান এ সময়ে মন্দ লাগবে না। গর্ভবতী অবস্থায় জরায়ুর আকার বৃদ্ধি ঘটে এবং গর্ভস্থিত সন্তানের ওজনের ফলে অনেকে শুয়ে অস্বস্তিবোধ করে থাকেন। ছোট, নরম ও হাল্কা বালিশ রেখে বাম ফিরে শুয়ে দেখুন অস্বস্তিবোধ অনেকটা কমে যাবে।
দৈহিক ও মানসিক শিথিলতা
প্রয়োজনীয় বিশ্রাম গ্রহণ করে গর্ভবতী অবস্থায় ও প্রসবকালে দেহ ও মনে পর্যাপ্ত শিথিলতা আনতে হবে। এ সময়ে সব ধরনের দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
পছন্দসই, আরামদায়ক পোশাক
পছন্দসই, আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা মোটেও বিলাসিতা নয়। মেটারনিটি ড্রেস পরিধান করা স্বাস্থ্যসমমত। ঘুম ও বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটায় এমন পোশাক ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কোনো অবস্থাতেই আঁটোসাঁটো পোশাক ব্যবহার করবেন না এ সময়ে। গর্ভবতী অবস্থায় ব্যবহার করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি পোশাক ব্যবহার করুন। একাধিক সন্তান জন্মদানকারী মায়ের পেটের মাংশপেশিগুলো শিথিল হয় বলে তলপেট সামনের দিকে কিছুটা ঝুলে পড়ে অনেকের। তারা প্রসব পরবর্তীকালে নির্ধারিত ব্যায়াম করে এ অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। ম্যাটারনিটি বেল্ট পাওয়া যায়, সুবিধা মনে হলে তাও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। গর্ভবতী অবস্থায় গোড়ালি উঁচু বা হাইহিল জুতো ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া গর্ভবতী অবস্থায় দৈহিক ওজন বৃদ্ধি ঘটে বলে উঁচু গোড়ালির জুতো ব্যবহারে পায়ের অসহ্য ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন।
আন্তিক পরিচর্যা
গর্ভবতী মহিলারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন প্রায়ই। এজন্য সকালে এক গস্নাস হাল্কা গরম পানি পান করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার ও হাল্কা পানীয় গ্রহণ করা উচিত। অরেঞ্জ জুস, দুধ, পানি ইত্যাদি পান করবেন। কড়া লিকারে চা পান করা উচিত নয়। কারণ ট্যানিন-এর প্রভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জি, ফলমল গ্রহণ করতে পারেন।
গর্ভবতীর মুখ ও দাঁতের যত্ন
গর্ভাবস্থায় মুখ, দাঁত ও মাড়ির বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত। মুখ ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য সার্বিকভাবে দৈহিক সুস্থতা রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখে।
গর্ভবতীর স্তনের যত্ন
প্রসবের পর নবজাত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। মনে রাখতে হবে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। স্তনের অগ্রভাগে কোনো অসুবিধা থাকলে সে ব্যাপারে সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সারিয়ে তুলতে হবে। শাল দুধ পানে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে ওঠে। এ সময়ে বিশেষভাবে তৈরি সাপোর্টিং ব্রা ব্যবহার করতে পারেন। বুকের দুধ পান করানোর সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন বুকের দুধ শিশুর নাসিকারন্ধ্রে বা চোখে গড়িয়ে না পড়ে। স্তনের চাপে অনেক সময় শিশুর শ্বাসরোধ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিশুর মুখে নিপল রেখে কখনো ঘুমিয়ে যাবেন না। দেহ অথবা স্তনের চাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু ঘটেছে এমন দুর্ঘটনাও বিরল নয়।
গোসল
ত্বকের মাধ্যমে শরীরের তরল বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে থাকে। তাই এর যত্ন নেয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী অবস্থায় আরামদায়ক টাবে গোসল সেরে নিতে পারেন। সাওয়ারেও গোসল সেরে নেয়া যেতে পারে। খুব বেশি গরম পানিতে গোসল করা উচিত নয়। এতে করে ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন। প্রতিদিনই গোসল করা উচিত।
ধুমপান
গর্ভবতী অবস্থায় ধমপান করা মোটেই সমীচীন নয়। নিকোটিন পস্ন্যাসেন্টা অতিক্রম করে গর্ভস্থিত শিশুর সমূহ ক্ষতিসাধন করে। শিশুর ওজন কমে ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পথে বাধার সমমুখীন হয়।
বৈবাহিক সম্পর্ক
এ সময়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় হওয়া উচিত। গর্ভবতী হওয়ার পর স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে হবে। যেসব মহিলা একাধিকবার গর্ভপাতের শিকার হয়েছেন তারা প্রথম দিকের কয়েক মাস অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে মেলামেশা করবেন।
নতুন নতুন উপসর্গে উদ্বিগ্নতা
নতুন গর্ভবতী মহিলা যে কোনো উপসর্গের মুখোমুখি হলেই তা সংশিস্নষ্ট চিকিৎসককে জানাবেন। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে বড়ো ধরনের সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। সামান্য পরিমাণ অনিয়মিত রক্তস্রাব, মুখ ও পা ফোলা, মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
পুষ্টি ও খাদ্য
জনগোষ্ঠীর পুষ্টিগত অবস্থা ভালো হলে গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব ও নবজাত শিশু মৃত্যুহার কম থাকে। গর্ভবতী অবস্থায় মার খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা বাড়ে। খাদ্যের পরিমাণগত চাহিদার চেয়ে গুণগত চাহিদা দেখা দেয় এ সময়ে। পুষ্টি-চাহিদার বৃদ্ধি ঘটে। কারণ বাড়ন্ত শিশুর চাহিদা মেটাতে হয়। মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হয়। প্রসবকালে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। শিশুর প্রয়োজনীয় খাদ্য বুকের দুধের চাহিদা মেটাতে হয়। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, একজন সুস্থ মাই সুস্থ শিশু লাভ করতে পারেন এবং সুন্দর মাতৃত্বরক্ষায় সচেতনতা প্রয়োজন।


Next post @

মাথার যন্ত্রণা-মাইগ্রেন (আরিফ মাহমুদ সাহাবুল)

 

ফেসবুকে আমি
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

মাথার যন্ত্রণা-মাইগ্রেন (আরিফ মাহমুদ সাহাবুল)

৩টি মন্তব্য

 

দৃশ্য-১
আপন আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কলেজেই যেতে পারছে না, পারছে না লাইব্রেরিতে যেতে। পারবেই বা কেমনে বেচারা আপনের মাথাটায় হঠাৎ করে এমন ব্যথা হচ্ছে যেন মাথাটায় কেউ কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করছে। ওহ! সে কি যন্ত্রণা ব্যথায় কাতর অথচ পড়া লেখার কত চাপ। এইতো কিছুদিন হল একটি মেয়েকে তার ভালো লেগেছে; জীবনে এই প্রথম সুন্দর প্রশান্তিময় ভালো লাগা!!
বেচারা আপন ভেবেছিল; না! মনে মনে অনুভূতি লুকিয়ে না রেখে মনের কথাটাই প্রকাশ করে ফেলি। মেয়েটি; ওহ! কতইনা ভালো মনের। কিন্তু্তু এই মাথা ব্যথাটাই যত্তসব নষ্টের মল। এই ব্যথাটা আপনকে সে মেয়েটির সাথে দেখাই করতে দিচ্ছে না। তবে সে মেয়েটির কথা ভাবলে তার কেমন যেন ভালো লাগে। এ ভালোলাগা তাকে আপস্নুত করে দেয়, শান্ত করে সুখের ঘুম আনায়, যন্ত্রণা কমায়...।
দৃশ্য-২ আজ স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল ভূবনের। সেই সকাল থেকেই ঘরের সব কাজকাম সেরে ফেলেছে। কতই না মজা! স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে যাবে অনেক দিন পর-কিন্তু্তু ওমা! এ আবার কেমন লাগছে? ভূবনের মাথার এক পাশে দপদপ করে ব্যথা শুরু হল-এ ব্যথা যেনতেন ব্যথা নয় একেবারে তীব্র প্রচন্ড ব্যথা। ভূবনের শরীরটাও যেন কেমন ক্লান্ত লাগছে, চোখের সামনে যেন কেমন ঝলমল আলোর বিন্দু ফুটে উঠছে। অবসাদে শরীর মন ভেঙ্গে আসছে। ব্যাড লাক; শেষ পর্যন্ত তার প্রিয়তম স্বামীর সাথে বেড়ানোটা আর হল না।
দৃশ্য-৩ মোজামেমল সাহেব প্রায়ই কাজে যেতে পারেন না। কিছুদিন পরপরই কয়েক দিনের জন্য তিনি অবসন্ন হয়ে পড়েন। এজন্য মাঝে মধ্যে বসের কাছে কিছুটা লজ্জিতও হতে হয়। যখন খারাপ লাগে মোজামেমলের বমি বমি ভাব লাগে-বমিও হয়ে যায় কখনও কখনো। বমির ভাবের সাথেই শুরু হয় এক অসহ্য মাথাব্যথা। এব্যথা অসহনীয় বিধ্বস্ত ব্যথা। মোজামেমল সাহেব ভাবেন ‘না আর নয় অবহেলা’ এবার ডাক্তারের কাছে যাবো। মাথাব্যথা কেন হয় তা জিজ্ঞেস করবো, ব্যথার চিকিৎসা করবো। এই ভেবে ভেবে একদিন সন্ধ্যার পর তিনি ডাক্তারের কাছে যান এবং সব খুলে বলেন। ডাক্তার তার প্রেসার মাপে, পরীক্ষা করে কিছু ওষুধ পত্র লিখে দেয়। তার দুদিন পর থেকেই মাথাব্যথাটা ধীরে ধীরে ভ্যানিস হতে শুরু করে আর তিনিও আবার তার কাজ কর্ম শুরু করেন।
সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ এতক্ষণ আপনারা উপরে বর্ণিত গল্পগুলো নিশ্চয়ই পড়েছেন। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন মাথাব্যথার বিষয় নিয়েই আজকে কিছু তথ্য জানাবো-জানাবো মাথাব্যথার সাইকোলজিক্যাল বিশেস্নষণ। উপরে গল্পে বর্ণিত সবারই মাইগ্রেন নামক মাথা ব্যথাটি হয় এবং এর কারণে তারা দারুণ কষ্ট ভোগ করে। আসুন এবার মল বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
মাইগ্রেন কি?
এটা এক প্রকার মাথাব্যথা। এই প্রকার মাথাব্যথা পুরুষ-নারী সবারই হয়ে থাকে। তবে মজার কথা হল এই মাথাব্যথায় নারীরাই বেশি ভুগে থাকেন কিছু দিন পরপর। সাধারণত-
  • মাথার অর্ধেক অংশে বা একপাশে
  • মাথার উভয় পাশে
  • মাথার বা কপালের সমমুখের অংশে
  • মাথার পেছনের দিকে কিংবা
  • সুম্পর্ণ মাথা জুড়ে হঠাৎ হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়।
এই ব্যথাটি সাধারণত দপদপ করে হয় এটাকে ঞযৎড়ননরহম ঢ়ধরহ ও বলা হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা বাল্য জীবন বা যৌবনের প্রথম দিকে শুরু হয়ে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বারবার দেখা দিয়ে বেশি বয়সের দিকে প্রশমিত বা রিকভার হয়ে আসে।
কারণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০০% সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে বংশগতভাবে অনেকের বেলাতেই মাইগ্রেন হতে পারে। এটি ক্যারোটিড ও মস্তিষক গোড়ায় অবস্থিত ভারটেবরো বেসিলার ধমনী ব্যবস্থায় অসঙ্গতির ফলেও দেখা যায় বলে ধারণা করা হয়। আরো মনে করা হয় যে মস্তিষক অভ্যন্তরের ও বাইরের উভয় প্রকার রঙ সংবহনকারী রক্তনালীর মাত্রাতিরিক্ত আক্ষেপ ও সম্প্রসারণে মাইগ্রেন হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে মনে করা হচ্ছে যে মস্তিষেকর গভীরে একটা মাইগ্রেন জেনারেটর থাকে এটি ব্রেনে বা মস্তিষেকর স্নায়ুতে কিছু ক্যামিকেল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে আর এসব ক্যামিকেল বা রাসায়নিক পরিবর্তন রক্তনালীর ওপর কাজ করে থাকে। এতে করে রক্তসংবহনকারী নালীতে প্রদাহ হয় আর এই প্রদাহজনিত কারণে ব্যথা সংবেদী স্নায়ুর সাহায্যে ব্রেইনে চলে যায় আর তখনই আমরা মাথাব্যথা দারুণভাবে অনুভব করতে থাকি।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ মাইগ্রেন জাতীয় মাথাব্যথা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও দারুণ মাথাব্যথায় আছেন; তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতে আরো নতুন কারণ আমরা জানতে পারবো আর তখন মাইগ্রেনকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবো।
মাইগ্রেন বৃদ্ধির ফ্যাক্টরগুলো-
  • দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, উৎকণ্ঠা, ভয়, আতঙ্ক
  • মজার মজার অতিরিক্ত চকোলেট খাওয়া
  • পনির বা চিজ খাওয়া (ঘন ঘন)
  • রেড ওয়াইন, মদ্যপান
  • মনোসোডিয়াম গস্নুটামেট
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ
  • সবুজ শিম (ইটালিয়ান)
  • বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, সিগারেটের নিকোটিন, পারফিউম, সেন্ট, বডি সেপ্র, কীটনাশক।
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, সারাদিনের এক ঘেয়েমি পূর্ণ কাজ, নিরস কাজ।
  • ঘুম না হওয়া, মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা
  • তীব্র ও উজ্জ্বল আলো ও আলোর ঝলকানি
  • অত্যধিক ও বিকট শব্দ, হৈচৈ, ঝগড়া, বিবাদ
  • ধোঁয়াপূর্ণ পরিবেশ
  • মেয়েদের মাসিকের সময়ে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন ইত্যাদি।
মাইগ্রেনের লক্ষণ
  • মাথার একপাশ বা উভয় পাশে তীব্রভাবে টনটনে ব্যথা হয়। পস্নাসঃ
  • সাথে বমিবমিভাব বা বমি হয়ে থাকে
  • চোখের সামনে রঙিন আলোকচ্ছটা দেখা দিতে পারে।
  • দৃষ্টি শক্তির গোলযোগ হতে পারে
  • কথা ভালোভাবে বলতে না পারা
  • শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি দেখা দেয়া
  • মাথা ঘোরানো
  • শরীরের একপাশে দুর্বলতা বা অনুভূতিহীন লাগতে পারে।
  • চিন্তা ভাবনার গন্ডগোল দেখা দিতে পারে, চিন্তা-ভাবনার অসচ্ছতা পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • স্বল্প সময়ের জন্য চোখে ঝাপসা দেখা, যে পাশে মাথাব্যথা দেখা দেবে তার বিপরীত পাশের চোখে অথবা দুই চোখেই এই অবস্থা দেখা দিতে পারে।
মাইগ্রেনের প্রকার
বিভিন্ন ধরনের মাইগ্রেন হয়ে থাকে যেমন-
১. ফেশিও পেস্নজিক মাইগ্রেন ঋধপরড়-ঢ়ষবমরপ গরমৎধরহব.
২. অপথালমোপস্ন্যাজিক মাইগ্রেন ঙঢ়ঃযধষসড় ঢ়ষবমরপ গরমৎধরহব
৩. বেসিলার আর্টারি মাইগ্রেন ইধংরষধৎধৎঃবৎু গরমৎধরহব
৪. অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন অনফড়সরহধষ গরমৎধরহব
চিকিৎসা
সাধারণত মাইগ্রেনের চিকিৎসা অনেক দিন ধরে করতে হয়। যেসব কারণে বা ফ্যাক্টরে মাইগ্রেন হয় বা বৃদ্ধি পায় তা আপনার ডাক্তার খুঁজে বের করবেন।
মাইগ্রেনের চিকিৎসা সাধারণত দুইভাগে ভাগ করে করা হয়, প্রথমত হল-মাথাব্যথা চলাকালীন সময়ে ও দ্বিতীয়ত মাথাব্যথা প্রতিরোধের চিকিৎসা।
মাইগ্রেনে ব্যবহৃত ওষুধগুলো ডাক্তার নির্বাচন করেন। এসব ওষুধ বা মেডিসিনগুলো হল-
  • এনালজেসিক
  • অ্যারগট উপাদান যেমন- অ্যারকটা, ডিএইচএ ৪৫, ইনজেকশন
  • নরট্রিপটাইলিন/এ্যামিট্রিপটাইলিন
  • জলমিট্রিপটান/ সুমাট্রিপটান
  • বেটাব্লকার ও ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার
  • ট্রাইসাইক্লিক বা এন্টিডিপ্রেসেন্টস
  • ডাইভেলপ্রোক্স সোডিয়াম
  • মিথাই সারজাইড (এটিতে বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে)।
  • ননস্টেরয়েডাল প্রদাহরোধী মেডিসিন ইত্যাদি।
শেষ কথা
মাইগ্রেন এক প্রকার মাথাব্যথার রোগ-এই ব্যথা অনেক সময় নিজে থেকেই চলে যায় অনেক সময় চিকিৎসার মাধ্যমে প্রশমিত হয় আবার অনেক সময় এই অসহ্য মাথার যন্ত্রণা বছরের পর বছর শত্রুর মতো পেছনে লেগেই থাকে। মেয়েরাই এই ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে এই ব্যথা সংক্রামক নয়।
এই রোগের আজকাল চমৎকার চমৎকার চিকিৎসা ও ওষুধ বের হচ্ছে তাই নো-টেনশন, নো ঘাবড়ানো, দুশ্চিন্তা নয় আনন্দে উপভোগ করুন জীবনকে, পৃথিবীর সৌন্দর্যতাকে, আর হ্যাঁ, সবসময় মনটাকে পানসে করে রাখার দরকার নেই, দরকার নেই ব্যথাটাকে প্রশ্রয় দেয়ার। একজন সুন্দর মনের বন্ধু খুঁজে নিন, খুঁজে নিন সুন্দর মনের জীবন সঙ্গী। আর সেই সঙ্গীর কাছে মনের ভার হাল্কা করুন, নিজেকে নিজের সব দুঃখ কষ্টকে তার কাছে শেয়ার করে নিন দেখবেন মন হাল্কা হয়ে গেছে আর মাথাব্যথা, গা বাঁচিয়ে পালিয়ে গেছে।
আর হ্যাঁ, নিজের ডাক্তারি নিজে করার মত ভুল যেন কেউ করবেন না তবে হয়ত সেই ভুলের খেসারত আপনাকে ভয়ানক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে। দিতে পারে সুন্দর জীবনটাকে অসুন্দর করে।
ফেসবুকে আমি

Next post @  মহিলাদের স্তন ক্যান্সার (ডা. শিমুল আখতার)

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

মহিলাদের স্তন ক্যান্সার (ডা. শিমুল আখতার)

কোন মন্তব্য নেই

 

ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ স্তন ক্যান্সারে ভুগছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৬০ হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। অথচ একটু সচেতন হলেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব। ক্যান্সারের এই পরিসংখ্যান প্রকৃত অর্থে আরো ভয়াবহ। কারণ এই পরিসংখ্যানে জেলা পর্যায়ে নির্ণীত ক্যান্সার রোগী, যারা পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ঢাকায় আসেন না, কিংবা ক্যান্সার ধরা পড়ার পর রেডিও থেরাপি চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যান এবং গ্রামপর্যায়ে অনেক লোক আছেন, যারা ক্যান্সারে ভুগছেন এদের কাউকে এই হিসেবে ধরা হয়নি।
ক্যান্সার কি, কেন হয়?
ক্যান্সার একটিমাত্র রোগ নয়। শরীরের বিভিন্ন প্রকৃতিতে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রকার উপসর্গ একইরকম রোগধারা ও মারাত্মক পরিণতি নিয়ে উপস্থিত হলে সৃষ্ট অবস্থাকে সমষ্ঠিগতভাবে ক্যান্সার নামে অভিহিত করা হয়।
ক্যান্সার সংক্রামক ব্যাধি নয়। এ রোগের পেছনে কোনো জীবাণুও দায়ী নয়। মানবদেহ অসংখ্য ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা গঠিত। সুস্থ দেহে এ কোষগুলো নিয়মিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কোষবিভাজন পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় করে।
হঠাৎ করে কোনো একটি কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন শুরু হয়ে তা বিরামহীনভাবে চলতে থাকলেই সে কোষের ক্যান্সার হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। সম্ভবত সেই একটিমাত্র কোষ থেকেই ক্যান্সারের উৎপত্তি। কোষের এই অনিয়ন্ত্রিত বিরামহীন বিভাজন থেকে অচিরেই সেখানে একটি পিন্ডের বা টিউমারের সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু টিউমার আছে যেগুলো কোনো ক্ষতি করে না। এগুলোকে বলা হয় বেনাইন টিউমার। বেনাইন টিউমার কোনো ক্যান্সার নয়।
ক্ষতিকারক টিউমার আশপাশের লসিকা এবং রক্তপ্রবাহের পথ ধরে শরীরের দরবর্তী বিভিন্ন স্থানে নতুন বসতি স্থাপন করে। যথাসময়ে এর বিস্তৃতিতে বাধা না দিলে ক্যান্সারের পরিণাম হয় মৃত্যু।
ক্যান্সার সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াটি যদিও অজ্ঞাত, কিন্তু্তু ক্যান্সারের কারণ হিসেবে স্বীকৃত প্রসঙ্গগুলো হচ্ছে-
১. ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, বায়ু ও পানি দষণ, অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য।
২. হরমোন। প্রজনন ও বিকৃত যৌন আচরণ।
৩. তেজস্তিক্রয়তা। সার্বক্ষণিক ঘর্ষণ, আঘাত
৪. পেশাগত ব্যাপার। অভ্যাস (ধমপান, মদ্যপান ইত্যাদি)
৫. বিভিন্ন বর্ণগত জীবনযাপন পদ্ধতি। ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব।
৬. প্যারাসাইট ও ভাইরাস
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি?
১. যেসব মহিলার বয়স পঁয়ত্রিশ-এর ঊর্ধ্বে।
২. যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান না।
৩. ত্রিশ বছর পর প্রথম সন্তান লাভ কিংবা সিঃসন্তান হলে।
৪. কম বয়সে ঋতুবর্তী হলে অথবা দেরিতে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে।
৫. স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
৬. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে।
স্তন ক্যান্সার
ক্যান্সারের সেই অনিয়ন্ত্রিত ভয়াবহ কোষ বিভাজন পদ্ধতি স্তনের ভেতর দেখা দিলেই স্তন ক্যান্সারের সূত্রপাত ঘটে। স্তনের ক্যান্সার সাধারণত স্তনের নালীর ভেতর থেকে শুরু হয় এবং তা স্তনের মেয়াদযুক্ত অংশে ছড়িয়ে যায়। ক্যান্সারের কোষ লসিকা ও রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন করে আরো ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এভাবে তার সমস্ত শরীরকে ক্যান্সার আক্রান্ত করে তোলে।
স্তন ক্যান্সার যেভাবে শুরু হয়
স্তন ক্যান্সার প্রথমে স্তনে একটি চাকা বা পিন্ড নিয়ে আবির্ভত হয়। স্তনের এই চাকা অন্য কারণেও হয়ে থাকে। স্তনে ‘ফাইব্রোএডিনেমা’ নামে এক ধরনের টিউমার হলেও স্তনে চাকা বা পিন্ড দেখা যায়। এসব টিউমার ক্ষতিকারক নয়। এক সময়ে সেগুলো এমনিতেই চলে যায়। তবে ক্যান্সারের চাকা বা পিন্ডটি দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করে এবং তা ক্রমশ বড়ো হতে থাকে। এ সময়ে আক্রান্ত স্তনটি ভারী ভারী বোধ হবে। স্তনে ব্যথাও থাকতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় স্তনে এর বেশি কোনো কিছু বোঝা যায় না। ধীরে ধীরে ক্যান্সার স্তনের ত্বকে আক্রমণ শুরু করে। এ সময় স্তনের ত্বকে পরিবর্তন সচিত হয়। স্তনের ত্বকে কমলালেবুর মতো ছোট ছোট ফোঁটার মতো দাগ দেখা দেয়।
স্তনের বোঁটা ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকে। এ সময় বগলের নিচে ছোট ছোট বিচির মতো ফুলে ওঠে। সেই সঙ্গে ক্যান্সারের সাধারণ কিছু উপসর্গও দেখা দেয়।
এ সময় ক্যান্সার শরীরের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষুধামন্দা, শরীর শুকিয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক অসুবিধা পরিলক্ষিত হতে থাকে। এরপর শেষ পর্যায়ে স্তন ফেটে ভয়ঙ্কর ঘা বা আলসার দেখা দেয়।
স্তন ক্যান্সারের সতর্কতা
অধিকাংশ স্তনের চাকা বা পিন্ড সাধারণত নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষাকালীন ধরা পড়ে। প্রতি মাসে মাসিক বন্ধ হওয়ার একদিন পর এবং ঋতু বন্ধ হওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে নির্ধারিত কোনো তারিখে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা উচিত।
গোসলের সময় আয়নার সামনে স্তন চেপে পরীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে কোথাও কোনো চাকা আছে কিনা, স্তনের আকৃতিতে পরিবর্তন, স্ফিতি কিংবা ত্বকে টোল পড়েছে কিনা।
স্তনবৃন্ত চেপে ধরে দেখতে হবে কোনো কিছুর ক্ষরণ বা স্রাব বের হয় কিনা। স্তনে কোনো চাকা কিংবা পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অধিকাংশ স্তনের চাকাই ক্যান্সার নয়, তবে চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
মেমোগ্রাফি ও স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ
স্তনের মেমোগ্রাফি করে স্তনের ক্যান্সার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। মেমোগ্রাফি একটি সহজ স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ পদ্ধতি। বাংলাদেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মেমোগ্রাফি করার ব্যবস্থা রয়েছে। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে ক্যান্সার কোষকে বায়োপসি করলে ক্যান্সারের চরিত্রগুলো ধরা পড়ে এবং ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা
শল্য চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় স্তনে সৃষ্ট চাকা কিংবা স্তন কেটে ফেলে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রত্যেক জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু আছে।
রেডিও থেরাপি
বিশেষ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ রশ্মি, যা ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলে। এই সুবিধা ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু থাকার কথা।
কেমোথেরাপি
ক্যান্সার বিধ্বংসী ওষুধ ব্যবহার। বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা নিজ উদ্যোগে এই ব্যবস্থা চালু রেখেছেন। রোগ ও রোগীর অবস্থাভেদে শল্যচিকিৎসা, রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপি এককভাবে অথবা একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা
বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার যথেষ্ট অগ্রগতি হচ্ছে। ক্যান্সার নির্ণয় এখন আর এ দেশে কোনো ঘটনাই নয়। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সরকারিজভাবে ঢাকার মহাখালীতে স্থাপিত হয়েছে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ক্যান্সারের শল্যচিকিৎসা ও কেমোথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ রেডিও থেরাপি চালু হওয়ার কথা। রেডিও থেরাপি চালু হলে ক্যান্সার চিকিৎসায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে উঠবে। কেমোথেরাপির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে অনেকেই এ চিকিৎসা গ্রহণে ব্যর্থ হন।
ক্যান্সারেও আশার আলো
ক্যান্সার মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। তারপরও ক্যান্সার নিরাময়ে আশার বাণী উচ্চারণ করছেন চিকিৎসকরা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব, এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব এবং অধিকাংশ অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সারের ব্যথা উপশম করা সম্ভব।
ফেসবুকে আমি

 

next post @ সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম

কোন মন্তব্য নেই
 
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম না হলে বা অনিদ্রা হলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। অন্য কথায় ঘুম আপনাকে যে কোনো প্রকার অসুস্থতা থেকে শতকরা ৫০ ভাগ সুস্থ করে তোলে।


রাতে ভালো ঘুম হওয়ার সাথে ভালো স্বাস্থ্যের একটা বিষয় জড়িত। যাদের ঘুম হয় না তারা কখনোই দাবি করতে পারেন না তারা সুস্থ আছেন। বহু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম না হলে বা অনিদ্রা হলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। অন্য কথায় ঘুম আপনাকে যে কোনো প্রকার অসুস্থতা থেকে শতকরা ৫০ ভাগ সুস্থ করে তোলে। আমরা এই প্রবন্ধে ঘুম নিয়ে নানান সমস্যা এবং এর পর্যায়, নানা প্রশ্নোত্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। আমার মনে হয় পাঠকদের যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে এই প্রবন্ধ আদোপান্ত পাঠের পর তারা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হবেন।
ঘুমহীন রাত কিংবা দিনের পর এই প্রবন্ধ পাঠে আশা করা যায় আপনাদের অনেকেই উপকৃত হবেন।
কেন ঘুমের প্রয়োজন হয়?
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা প্রতি ২৪ ঘন্টায় অন্তত একবার উপলব্ধি করতে হয়। এটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এটি স্বাস্থ্য এবং আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। অনেক তত্ত্বই উপস্থাপিত হয় যে কেন ঘুম দরকার। তবে সঠিকভাবে বলতে গেলে ঘুম ছাড়া মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য টিকে থাকতে পারে না।
কতটুকু ঘুম প্রয়োজন?
একেকজনের শরীরের চাহিদার ওপর এটা নির্ভর করে। কেউ কেউ আছেন যাদের দিনে রাতে পাঁচ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ঠ বলে মনে করেন। আবার কারো কারো ১৫/১৬ ঘন্টা না ঘুমালে শরীরে এবং মনে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। তবে ভালো নিশ্ছিদ্র ঘুম হলে আট ঘন্টাই যথেষ্ঠ এবং এতোটুকুই যে কারও শরীরের জন্য ভালো।
কি ধরনের ঘুম প্রয়োজন?
এটাও একেক জনের শারীরিক এবং মানসিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে।
রাতের ভালো ঘুম
রাতের ঘুম নিশ্ছিদ্র হওয়া বাঞ্ছনীয়। তা না হলে পরবর্তী দিনে আপনি শারীরিকভাবে নিজেকে অবসন্ন ভাবতে পারেন।
বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের ঘুমের অভ্যাস থাকে। অনেকেই এবং অধিকাংশই ৮ ঘন্টার দৈনন্দিন ঘুমকে উপযুক্ত এবং যথেষ্ঠ মনে করেন। কিন্তু্তু আপনার যতক্ষণ প্রয়োজন ততোক্ষণ ঘুমানোই কিন্তু্তু আদর্শ।
রাতের ভালো ঘুম মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তা না হলে দিনের বেলায় যে কোনো কাজ কর্মে আপনি মনোযোগী হতে ব্যর্থ হবেন। কেন না ঘুম না হলে মানসিক উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়। কাজেই রাতের ঘুমের প্রতি যত্নশীল এবং সতর্ক থাকা উচিত।
সাধারণ সমস্যা এবং ঘুমের অসুবিধা
অনেক কারণেই আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই সমস্যাগুলোর যে কোনো ত্রুটিতে ভুগলেও আপনার ঘুমের অসুবিধা হতে পারে এবং তখনই আপনার উচিত হবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
উদ্বিগ্নতা
এটিতে আপনার ঘুমের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। অনেক রাত আপনার হয়তো নিদ্রাহীন গেছে এই উদ্বিগ্নতার জন্য।
মানসিকতা
এর ফলেও ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ব্যথা
যে কোনো প্রকার ব্যথার চাপে আপনার ঘুম নাও হতে পারে। এটা শরীরের যে কোনো প্রকার অসুখজনিত কারণেও হতে পারে।
নাকডাকা
আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী যদি নাক ডাকে এতে করেও আপনার ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
প্রোস্টেটের সমস্যা
প্রোস্টেটের সমস্যা হলে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয় কেননা কিছু সময় পর পরই প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। এতে করেও ঘুমের সমস্যা হয়।
দাঁতের সমস্যা
দাঁত ওঠাজনিত বা পড়ে যাওয়াজনিত কোনো সমস্যায় পড়লে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া স্বাভাবিক
দুঃস্বপ্ন
অনেক সময় ঘুমের ভেতর দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে পরবর্তীতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
মাংসপেশির সংকোচন
মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা টান ধরলে অনেক সময় ঘুমের সমস্যা হয়।
পা নাচানো রোগ
এই রোগের রোগীরা ক্রমাগত পা নাচিয়ে অভ্যস্ত। তারা বিছানায় শুয়েও এই কাজটি করতে থাকেন যার ফলে ঘুমের নিদারুণ অসুবিধা ঘটে।
বিছানায় প্রস্রাব করা
অনেকে বিছানায় প্রস্রাব করার ভয়ে আতঙ্কিত থেকে ভালো করে ঘুমাতে পারে না। ফলে ঘুমজনিত সমস্যায় সে আক্রান্ত হতে পারে।
অনিদ্রা কি?
কোনো কোনো সময় সবারই ঘুমের একটা সমস্যা চলে। প্রায়শই এটা সাধারণ এবং ছোট ঘটনা বলে এটি তেমন গুরুত্ব পায় না। কিন্তু্তু ক্রমাগত এই সমস্যা চলতে থাকলে এটি ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায় এবং তখন এটি অসুখে পরিণত হয়। ক্রমাগত ঘুম না হওয়ার এই অসুখের নাম ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা।
মূলত তিন ধরনের অনিদ্রা রয়েছে- স্বল্পকালীন, ক্ষণস্থায়ী এবং ক্রনিক।
স্বল্পকালীন অনিদ্রার নানা কারণ দায়ী। যেমন- ডিভোর্স, চাকরিতে সমস্যা, গুরুত্বপূর্ণ অসুস্থতা, টাকার সমস্যা বা কোনো আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের মৃত্যুজনিত কোনো শোকের জন্য ঘুম না হওয়া।
আবার ক্ষণক্ষায়ী অনিদ্রার জন্য ঘুমের সময় বা স্থানের কিছু পরিবর্তন, অধিক চিত্তচাঞ্চল্য বা অসুস্থতা দায়ী। আর ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার জন্য নানান ডাক্তারি কারণ জড়িত থাকে।
অনিদ্রার কিছু কারণ
জীবনযাত্রার বিষয়ে
অনেকে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপানে অভ্যস্ত থাকে যার ফলে অনিদ্রার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ক্যাফেইন গ্রহণ করলেও রাতে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
পরিবেশগত বিষয়ে
কোলাহল এবং প্রতিবেশীর টেলিভিশন বা গানের আওয়াজ, উচ্চশব্দে গাড়ি চলাচল ইত্যাদি কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
শারীরিক বিষয়ে
আর্থ্রাইটিস, বুকজ্বালা, নারীদের ঋতুকাল, মাথাব্যথা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যাতেও ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।
মনোদৈহিক বিষয়ে
মানসিক অবসাদ ঘুম না হবার প্রধান কারণ। এটি একটি মনোদৈহিক সমস্যা। মানসিক অবসাদ ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
অনিদ্রার চিকিৎসা কেন করা উচিত?
ক্রমাগত ঘুম না হতে থাকলে মানসিক এবং শারীরিকভাবে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। মাঝে মধ্যে এই অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কাজেই অনিদ্রার চিকিৎসা অতি সত্বর করানো উচিত।
কখন আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?
প্রত্যেকেই অন্তত রাতে আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে চায়। ঘুম না হলে পরবর্তী দিনে যে কোনো প্রকার কাজে কর্মে মন বসানো সম্ভব নয়। ওষুধের দ্বারাও অনেক সময় অনিদ্রা দূর করা যায়।
ডাক্তারের শরণাপন্ন হবার আগে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের সমস্যাজনিত পরিবর্তনগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। পরবর্তীতে ডাক্তারের কাছে এই রিপোর্টটি দেখাবেন। এতে করে ডাক্তারের পক্ষে সুবিধা হবে আপনার অনিদ্রার কারণটি দ্রুত চিহ্নিত করা এবং এতে করে ডাক্তার অতি দ্রুত আপনার এই সমস্যাকে কাটিয়ে দিতে যথাসম্ভব চেষ্টা করতে পারবেন।
কিছু সাধারণ কর্মকান্ড যা আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়
ব্যায়াম
ব্যায়াম শরীরের জন্য অবশ্যই ভালো। কিন্তু্তু অনেকেই ঘুমের আগে ব্যায়ামে অভ্যস্ত থাকেন। যা আপনার ঘুমকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
ক্যাফেইন পান
ক্যাফেইনে যে উত্তেজক পদার্থ রয়েছে তা ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
এ্যালকোহল
এই অভ্যাসে আপনি অভ্যস্ত থাকলে আপনার ঘুমে সমস্যা হতে পারে।
বিষাদ
দিনের যে কোনো সময় যদি রাতে ঘুমাবার আগে আপনি বিষাদে আক্রান্ত হন তাহলে নিশ্চিত আপনার ঘুমের বারোটা বেজে যাবে।
ধুমপান
এর ফলেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
ওষুধ সেবন
হাঁপানি বা এ জাতীয় কিছু অসুখ আছে যার জন্য প্রায় সারা বছর ওষুধ খেতে হয় এবং এ জন্য ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
ভ্রমণ
ক্রমাগত একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমণের ফলে আপনার ঘুমের সমস্যা চাঙ্গা হতে পারে।
কাজের শিফট
যদি আপনার কাজের ধরন এমন হয় যে, এটি দিনে রাতে ঘুরে ঘুরে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে আপনার ঘুমের স্থায়ী সমস্যা হবে।
অনিয়মিত ঘুমের ধরন
একটি নির্দিষ্ট ঘুমের ধরন থাকা উচিত। নতুবা ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
অধিকক্ষণ বিছানায় কাটানো
ঘুম ছাড়াও অধিকক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকার দরুন ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
বারে বারে ঘড়ি দেখা
অনেকের অভ্যাস থাকে বিছানায় শুয়ে বারে বারে ঘড়ি দেখার। এই অভ্যাসের ফলে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
আপনার ঘুমানোর স্থান
আপনার ঘুমানোর স্থানের পরিবেশ হওয়া উচিত সুন্দর এবং স্বাভাবিক। অতিরিক্ত কোলাহল পূর্ণস্থানে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কেননা ঘুমের জন্য নিস্তব্ধতা দরকার। আবার ঘুমানোর স্থানে আলোর আধিক্যও ঘুমের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত আলো চোখে লাগলে ঘুমে ব্যাঘাত হয়।
এছাড়াও যদি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ঘুম না হয় তবে সেটার প্রভাব আপনার ওপর পড়তে পারে। কেননা আপনার পাশের নির্ঘুম ব্যক্তির ঘুমের অপ্রতুলতা আপনাকেও মানসিকভাবে কিছুটা হলেও বিপর্যস্ত করে তুলবে।
ভালো ঘুমের জন্য কিছু ব্যবস্থা করুন
 সঠিক ঘুমের সময় মেনে চলুন
 ঘুমের আগে ব্যায়াম করবেন না
 ক্যাফেইন এবং নিকোটিন বর্জন করুন
 আপনার ওষুধ সম্পর্কে সতর্ক হোন
 জীবনকে বিষাদমুক্ত ভাবুন
 রাতের শিফটের কাজ পারলে ত্যাগ করুন।
রাতের ভালো ঘুমের জন্য তৈরি হোন
কিছু রিলাক্সেশন কৌশল আছে এবং কিছু মেডিটেশন আছে যাতে করে রাতে আপনার উপযুক্ত ঘুম হতে পারে।
স্নান
রাতে বিছানায় শুতে যাবার আগে স্নানের অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে এটি আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে।
রাতের খাবার
রাতে খুব ভারী কিছু খাবেন না। হাল্কা স্ন্যাকস জাতীয় খাদ্যাভ্যাস তৈরি করুন। এতে ভালো ঘুম হবে।
ক্যাফেইন কিংবা এ্যালকোহল
এই দুটোই পুরোপুরি বর্জন করার চেষ্টা করুন। ঘুমের ব্যাপারে তবে অহেতুক টেনশন করতে হবে না।
পরিবেশ সুস্থ রাখুন
আপনার ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। ঘুমানোর পরিবেশ অবশ্যই পরিচ্ছন্ন এবং একই সাথে কোলাহলমুক্ত হওয়া উচিত।
বিছানায় যান, বাতি নেভান
 বিছানায় গিয়ে ঘুমের ব্যাপারে ভয় পাবেন না। রাতের খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট পরে বিছানায় যাওয়া ভালো।
 ঘড়ির দিকে তাকাবেন না এবং ঘড়ির কাঁটার যেন শব্দ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
 একটি নির্দিষ্ট আসনে শুয়ে পড়ূন। যেদিকে শুলে আপনার জন্য স্বস্তিকর মনে হয় সেদিকে শোন। এতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন।
ঘুম, এটা কোনো স্বপ্ন নয়
দীর্ঘদিনের অনিদ্রা অনেকের মনে ভয়াবহ রকমের দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে। তারা একটু নিশ্ছিদ্র ঘুমের জন্য উতলা হয়ে পড়ে। মনে রাখবেন, অধিকাংশ ঘুমের সমস্যাই সাময়িক। আপনি নিজের প্রতি একটু যত্নবান হলেই এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ গ্রহণ করলে আপনি এ ব্যাপারে আরো বেশি জানতে পারবেন এবং আপনার কাছে ঘুমকে স্বপ্নের মতো মনে হবে না।
ঘুমের ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ
নির্ঘুম রাতের পরে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় পরবর্তী দিনে কাজকর্মে সঠিকভাবে মন লাগাবেন। ঘুমের ব্যাপারে দু-একদিন একটু অনিয়মিত সমস্যা শুরু হতে থাকলে দেরি না করে উচিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
ডাক্তারের সাথে আলাপ-আলোচনার সময় কোনো ফাঁক রাখার অবকাশ নেই। এতে আপনার সমস্যাই বরং বাড়বে। ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলুন। একটি তালিকা তৈরি করুন যাতে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালী ডাক্তার সহজে বুঝতে পারেন। এই তালিকাতে দেয়া তথ্যে ডাক্তার বুঝতে পারবেন আপনার সমস্যাটা কোথায়। এতে করে তার পক্ষে আপনাকে পরবর্তী নির্দেশ দেয়া সহজতর হবে। কিছু কিছু কারণ রয়েছে যা ঘুমে খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেমন-
 ঘুমের অনিয়মিত অভ্যাস
 নতুন চাকরি পাবার আনন্দ, কোনো শোকে কিংবা বিষাদ
 হাঁপানি বা রক্তচাপের জন্য সারা বছর ওষুধ সেবন
 ক্রনিক কোনো রোগের ব্যথা যা রাতে বেশি হয়।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য ঘটিয়ে ঘুমের সাথে আপোস করা যেতে পারে।
ঘুমের আগে
 মদ্যপান ত্যাগ করুন
 ক্যাফেইন বর্জন করুন
 বিকেলের দিকে বা সন্ধ্যায় চা এবং নিকোটিন গ্রহণ করবেন না।
বিছানায় যাবার প্রস্তুতি
 কোলাহলমুক্ত, অন্ধকার ঠান্ডা ঘর বেছে নিন।
 বেডরুমকে শুধুমাত্র ঘুমানো এবং যৌনমিলনের জন্য ব্যবহার করুন।
 নিয়মিত বিছানায় যাবার একই সময় নির্ধারণ করুন।
 হাল্কা গান শুনতে পারেন।
 উষ্ণ স্নান গ্রহণ করতে পারেন
 ঘুম না আসলে বিছানায় না শুয়ে থেকে বরং বই পড়ূন বা হাঁটাহাঁটি করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না আবার ঘুম আসে ততক্ষণ বিছানায় যাবেন না।
ঘুমের ওষুধ
বিনা ব্যবস্থাপত্রে
অনেক সময় ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে রিলাক্সেশনের কথা উলেস্নখ করেন বা অন্যান্য মেডিটেশনের কথা বলেন। এগুলোর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এবং এর ফলে ঘুমের সমস্যা দূর হলে তা খুবই স্বাস্থ্যপ্রদ এবং আনন্দজনক হয়।
ব্যবস্থাপত্র
রোগীর ইতিহাসের ওপর ডাক্তাররা ঘুমের ওষুধ এবং এর পরিমাণ নির্ধারণ করেন। অনেক সময় রোগী যদি অন্যান্য ওষুধে অভ্যস্ত থাকেন তবে ওষুধ দেবার ক্ষেত্রে ডাক্তারকে বিশেষ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়।
যে প্রশ্নগুলো ডাক্তার আপনাকে জিজ্ঞাসা করবেন
 কতদিন যাবৎ আপনার ঘুমের এই সমস্যা?
 আপনার উপসর্গগুলো কি?
 ইদানীং কি আপনার জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন এসেছে?
 সাম্প্রতিক সময়ে আপনি কি কোনো অসুখে ভুগছেন?
 আপনি কি কোনো অসুখে এখন চিকিৎসাধীন?
 আপনি কি কোনো আত্মপ্রস্তুতি নিয়েছেন ঘুমের ব্যাপারে?
যে প্রশ্নগুলো আপনি ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করবে
 আমার সমস্যাটা কি বলে আপনি মনে করছেন?
 আমার কি কিছু পরীক্ষা করতে হবে?
 এই পরীক্ষাগুলো কে করবে?
 আমার কি একজন ঘুম বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হতে পারে?
 আপনার চিকিৎসার পরিকল্পনা জানতে পারি কি?
পুষ্টিঃ ঘুমের ব্যাপারে সাহায্যকারী
খাদ্যাভ্যাস আপনার ঘুমের নানা সমস্যা কাটিয়ে দিতে পারে। আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে প্রথমে এও দেখতে হবে আপনি কতটুকু পুষ্টি প্রতিদিন গ্রহণ করছেন। মনে রাখবেন, সবসময়ই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে তা নয়, কিন্তু্তু আপনি যা খাচ্ছেন সেগুলো যেন আপনি হজম করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
ম খাদ্য যদি ঠিকমতো হজম না হয় তবে পেটের নানান অসুখের সাথে সাথে ঘুমের বিপর্যস্ততা ডেকে আনতে পারে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো রাতের খাবার অনেক দেরিতে খাবেন না। এতে করেও ঘুমের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।
ফিটনেসঃ ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়
আপনার দৈনন্দিন জীনে ফিটনেসের প্রয়োজনীয়তা আছে ব্যাপক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনি যে সকল কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকেন, তাতে শারীরিক ফিটনেস না থাকলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না এবং এই ফিটনেস আপনার ঘুমের ব্যাপারেও সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত ঘুমের আগে মানসিক প্রশান্তি মনে নিয়ে আসুন। শারীরিকভাবে চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করুন। এতে করে ঘুমের ব্যাঘাত কিছুটা কমে আসতে পারে।
ঘুমের ব্যাপারে কিছু ভ্রান্ত ধারণা এবং সত্য কথা
ঘুমের ব্যাপারে কিছু ধারণা অনেকে পোষণ করেন। আসলে এই ধারণাগুলো মোটেই ঠিক নয়। এখানে ভ্রান্ত ধারণা এবং সত্য বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
ভ্রান্ত ধারণা
বুড়োদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন নেই
সত্য বিষয়
ঘুমের ব্যাপারে ছোট-বড় কিছু নেই। যার যতটুকু ঘুমের দরকর তার ততটুকু ঘুম না হলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়তে পারে। বরং বৃদ্ধ বয়সে মানুষের শরীর বেশি দুর্বল হয়ে যায় বলে এই সময় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বৃদ্ধরা একটু বেশি ঘুমায় বা ঘুমাতে চায়। এটা স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়ও বটে।
ভ্রান্ত ধারণা
বয়স বাড়ছে বলে ঘুম হচ্ছে না। বড়দের ব্যাপারে এই ধারণা অনেকে পোষণ করেন।
সত্য বিষয়
এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা। এটি সত্য যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের ধরন বদলাতে পারে কিন্তু্তু এর সাথে ঘুম না হবার কোনো কারণ নেই। বরং বৃদ্ধাবস্থায় পুরুষ কিংবা নারীর অধিক ঘুমের প্রয়োজন।
ভ্রান্ত ধারণা
ঘুমের অভাবে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
সত্য বিষয়
ঘুমের অভাবে নানা শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় ঘুমের স্বল্পতার জন্য শরীরের বর্তমান নানা অসুখের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
ভ্রান্ত ধারণা
ডাক ডাকার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু নেই।
সত্য বিষয়
এটি একটি শারীরিক সমস্যা। নাকের ভেতরকার টিস্যু কিছুটা ফুলে গেলে এটি হয়। এবং এই সমস্যা বৃদ্ধদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
ভ্রান্ত ধারণা
অনিদ্রার কোনো কার্যকর চিকিৎসা নেই।
সত্য বিষয়
সমস্যাটা ধরতে পারলে অনিদ্রা বা ঘুমজনিত সমস্যার নানা উপযুক্ত সমাধান রয়েছে। প্রথমত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং তার কাছে পুরো শারীরিক অবস্থার বিবরণ  দেয়া উচিত। এতে করে ডাক্তার রোগীর সমস্যা সম্বন্ধে নিশ্চিত হবেন এবং উপযুক্ত ঘুমের জন্য আদর্শ পরামর্শ দেবেন।
রাতে ভালো ঘুমের জন্য কিছু বিশেষ টিপস
 যতটুকু ঘুমে আপনি সন্তুষ্ট ততটুকু ঘুমান
 প্রতিদিন ঘুমের একটা নির্দিষ্ট সময় বের করুন
 ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত কাজ করবেন না।
 অযাচিত কোলাহল এবং আলো অপছন্দ করুন।
 ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাবেন না।
 সন্ধ্যার সময়ে ক্যাফেইন পরিত্যাগ করুন।
 এ্যালকোহল পানে বিরত থাকুন।
 সন্ধ্যার সময়ে ধমপান করবেন না।
 কর্মমুখর জীবনযাপন করুন।
 ঘুম নিয়ে সমস্যা হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক ডাঃ এএইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি

Syed Rubel @ FACEBOOK 
next   post @  জেনে নিন! বিশেষজ্ঞের প্রশ্নোত্তরে বিষণ্নতা

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

জেনে নিন! বিশেষজ্ঞের প্রশ্নোত্তরে বিষণ্নতা

কোন মন্তব্য নেই
 ১. প্রশ্নঃ ইদানীংকালে বিষণ্নতা রোগ সম্পর্কে অনেক শোনা যায় আপনি বলবেন কি বিষণ্নতা আসলে কি?
উঃ প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিষণ্নতা খুব বেশি পরিমাণে দেখা যায়। বিষণ্নতা আসলে একটি মানসিক রোগ। ইংরেজিতে একে বলা হয় ডিপ্রেশন। বিষণ্নতায় যারা ভুগে থাকেন তারা তাদের অনুভূতির ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পান। বিষণ্নতা রোগের ক্ষেত্রে কোনো কারণ থাকুক বা না থাকুক এ রোগটির জন্য আক্রান্ত নারী-পুরুষের দৈনন্দিন কাজে কর্মে দারুণ ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। রোগী ভেতরে ভেতরে খুবই কষ্ট পায়।
২. প্রশ্নঃ কোনো কিছু ভালো না লাগা ব্যাপারটি কি?
উঃ ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব এমন অনেককেই বলতে শুনবেন ‘ধুৎ! কোনো কিছু ভালো লাগছে না, সারাটা বেলা যেন কেমন কেমন লাগে’। এটিকে বলা হয় হাল্কামাত্রার বিষণ্নতা, এটিকে ডিসথেমিয়াও বলা হয়। এর মধ্যে ভালো না লাগার ব্যাপারটি অনেকদিন ধরে চলতে থাকে-তবে মজার কথা হল এই ভালো না লাগা অবস্থা তাদের কাজে কর্মে তেমন কোনো বিঘ্নতা তৈরি করে না। এই ধরনের লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে অনেক, অনেক।
৩. প্রশ্নঃ আপনি যে হাল্কামাত্রার বিষণ্নতা বা ডিসথেমিয়ার কথা বললেন এদের মধ্যে থেকেও কি কেউ পূর্ণমাত্রার বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে না?
উঃ হ্যাঁ, এদের মধ্যে থেকেও কিছু কিছু ব্যক্তির বিষণ্নতা রোগটি হতে পারে। এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
৪. প্রশ্নঃ এখন আমাদের অগণিত পাঠক/পাঠিকাদেরকে বিষণ্নতা রোগের লক্ষণগুলো জানাবেন কি?
উঃ যে কোনো রোগ হলেই সেই রোগের লক্ষণ জানা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত লক্ষণ দিয়েই তো এক একটি রোগকে চেনা যায় বা চেনার পথ সহজ হয়। বিষণ্নতার লক্ষণগুলো হল-মন সারাক্ষণ খালি খালি লাগা, কোনো কাজে উৎসাহ না লাগা, কোনো কিছুতে আগের মত আর কৌতূহল না লাগা, দীর্ঘমেয়াদি অশান্তিবোধ, দুশ্চিন্তাবোধ, খাদ্যগ্রহণে অরুচি, কোনো কোনো সময় খাদ্য গ্রহণ বেড়ে যাওয়া, ঘুম কম হওয়া, আবার কোনো কোনো সময় অধিক ঘুম হওয়া, আশাহত অনুভূতি ও নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা, সেক্স সম্পর্কে উৎসাহ কমে যাওয়া, অকারণ ক্লান্তিবোধ, কাজ-কর্মে ধীর হয়ে যাওয়া, পো হয়ে যাওয়া, মনোযোগের অভাব দেখা দেয়, অস্থিরতা ও ছটফটানি বেড়ে যায়, একটুতেই বিরক্তি লাগা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ব্যথা-বেদনা হতে থাকা, আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসা ইত্যাদি।
৫. প্রশ্নঃ জনসংখ্যার কতজন বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত?
উঃ আমাদের দেশে জনসংখ্যার শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ লোক বিষণ্নতা রোগে ভুগে থাকে।
৬. প্রশ্নঃ আচ্ছা আপনি যে বললেন জনসংখ্যার শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ ব্যক্তি বিষণ্নতা রোগে ভুগে থাকে-তাহলে এদের সবারই কি চিকিৎসার প্রয়োজন?
উঃ  অবশ্যই, অবশ্যই, কারণ ঠিকমত উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে বিষণ্নতায় আক্রান্ত অনেক লোকই আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে পারে।
৭. প্রশ্নঃ মানসিক রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা কি সবাই পায়?
উঃ পৃথিবীর কোনো দেশেই এই সংখ্যাটি বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ রোগী ডাক্তারের কাছে যায় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতই আমাদের দেশেও বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের রোগীর সংখ্যা অনেক। আমাদের মত দরিদ্র দেশে কজনই বা সব রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে। তবে আশার কথা হল বর্তমানে মানসিক রোগ সম্পর্কে যৎসামান্য হলেও অনেকেই জানতে পারছেন এবং অনেকেই বিষণ্নতা রোগের চিকিৎসা করাচ্ছেন-সুফল পাচ্ছেন।
৮. প্রশ্নঃ বিষণ্নতা রোগের কি কোনো ভাগ আছে?
উঃ হ্যাঁ, বিষণ্নতা রোগেরও ভাগ আছে। আমরা বিষণ্নতা রোগকে দুইভাগে ভাগ করতে পারি যথা-মৃদু রিয়্যাকটিভ বিষণ্নতা এবং বিষণ্নতা বা ইনডোজেনাস ডিপ্রেশন।
৯. প্রশ্নঃ মৃদু বা রিয়্যাকটিভ বিষণ্নতা কেন হয়?
উঃ এ রকমের মৃদু বিষণ্নতা পারিপার্শ্বিক কারণজনিত ব্যাপারে হতে পারে। তবে সুখের কথা হল মৃদু বিষণ্নতা রোগটি সাধারণভাবে সেরে ওঠে।
১০. প্রশ্নঃ ইন্ডোজেনাস ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উঃ এটি বড় ধরনের মানসিক রোগ। এর উৎপত্তি দেহের অভ্যন্তরে, ব্রেইনের মধ্যে। এটি একটি ব্রেইন ডিজিজ যা মানুষের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, অর্গান, নার্ভাস সিস্টেমের প্রতিটি কোষে কোষে মারাত্মক আক্রমণ করে দেহের বায়ো ক্যামিকেল পরিবর্তনের দ্বারা এর চিকিৎসা দরকার।
১১. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার লক্ষণ বলার সময় আপনি বলেছিলেন যে বিষণ্নতায় রোগীর আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে, অর্থাৎ কিনা রোগী আত্মহত্যা করে বসে, আচ্ছা এই বিষণ্নতাজনিত আত্মহত্যা কতজন করে থাকে?
উঃ বিষণ্নতা রোগটি একটি সিরিয়াস রোগ। এটা রোগীর শরীর, আবেগ, চিন্তা, চেতনায় আক্রমণ চালায়। বিষণ্নতা রোগের সাথে আত্মহত্যা শব্দটি ডাইরেক্টলি যুক্ত। আমেরিকা বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি এক মিনিটে একজন করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং প্রতি ২৪ মিনিটে ১জন করে সুইসাইডে সফল হয়। অর্থাৎ প্রতি ২৪ মিনিটে একজন বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যা করে। অতএব দেখা যাচ্ছে যে হত্যার চাইতে আত্মহত্যার সংখ্যাই বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছরে প্রায় ৫০০০০০ কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
১২. প্রশ্নঃ তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে আত্মহত্যা একটি মারাত্মক সমস্যা, আচ্ছা এটা কি রকম সমস্যা?
উঃ আত্মহত্যা একটি চিরস্থায়ী সমস্যা।
১৩. প্রশ্নঃ বিষণ্নতাজনিত আত্মহত্যার এই চিরস্থায়ী সমস্যার কি কোনো চিরস্থায়ী সমাধান নেই?
উঃ না, কোনো আপাত সমাধান দিয়ে এটা চিরস্থায়ীভাবে কমানো যাবে না।
১৪. প্রশ্নঃ প্রসবোত্তর বা বাচ্চা হওয়ার পর নাকি বাচ্চার মায়ের বিষণ্নতা হয় এই কথাটি কি ঠিক?
উঃ হ্যাঁ, এই কথাটি সঠিক। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা জন্ম নেয়ার পরে অর্থাৎ ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে দেখা যায় মায়ের কিছু ভালো লাগছে না, মন কেমন যেন লাগছে, নিজের বাচ্চাটিকেও আদর করতে ইচ্ছা হয় না, অযথা কোনো কারণ ছাড়াই কান্না পায়, বুকটা খালি খালি লাগে-এটাই প্রসবোত্তর মায়ের বিষণ্নতা। এই বিষণ্নতা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
১৫. প্রশ্নঃ এবার আমরা আপনার কাছে জানতে চাই যে ঋতুগত বিষণ্নতা রোগ কি?
উঃ আপনাদের আশপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারেন যে, অনেক ব্যক্তি ছয়টি ঋতুর যে কোনো একটি ঋতুতে বারবার বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। শীতকালে এই বিষণ্নতা রোগ বেশি হয়। তাই এটাকে শীতকালীন বিষণ্নতা রোগও বলা হয়। এই রোগটি অল্প মাত্রায় হলে দেহের এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়, ঘুম বেশি হয়, এবং মজার কথা হল মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
১৬. প্রশ্নঃ ঋতুগত বিষণ্নতা হলে এবং তা অল্প মাত্রায় থাকলে সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানাবেন কি?
উঃ যদি এ জাতীয় বিষণ্নতা দৈনন্দিন কাজ কর্মে তেমন কোনো মারাত্মক প্রভাব না ফেলে তখন সে ক্ষেত্রে সকালের উজ্জ্বল আলো বা আলোকিত স্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে বা হাঁটাহাঁটি, ঘোরাফেরা করা যেতে পারে এবং ২-৩ কাপ চা বা কফি পান ও কিছু মাত্রায় হাল্কা ব্যায়াম করলে ঋতুকালীন বিষণ্নতা রোগটি আস্তে আস্তে কমে যায়।
১৭. প্রশ্নঃ বিষণ্নতা রোগের কারণ কি?
উঃ বিষণ্নতা রোগের একক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে সমষ্টিগত বেশ কতগুলো কারণে বিষণ্নতা হতে পারে। সামাজিক কারণ, পারিবারিক কারণ, মনস্তাত্ত্বিক কারণ, জৈবিক কারণ, বংশগত কারণ। বিষণ্নতা রোগের কারণ বাইরের কোনো ফ্যাক্টরও হতে পারে। কিন্তু্তু বিষণ্নতা রোগে মস্তিষেকর বিভিন্ন সেলে বা কোষে বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং ঐ পরিবর্তন চলতেই থাকে। নতুন নতুন মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। যেমন-মনোযোগের অভাব, অশান্তি, ঘুমের সমস্যা, বন্ধু-বান্ধবের সাথে, প্রিয়জনের সাথে সম্পর্কের অবনতি, এই জাতীয় ফ্যাক্টরগুলো মগজের জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সাধনে সাহায্য করে এবং এতে আবার বিভিন্ন প্রকারের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এক কথায় এটা একটা দুষ্ট চক্রের মত কাজ করতে থাকে। এভাবেও বিষণ্নতার জাল সমস্ত মন মগজে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কিছু কিছু হরমোনের পরিবর্তনজনিত অবস্থায়ও বিষণ্নতা হতে পারে। আবার কিছু কিছু দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতায়ও বিষণ্নতা হতে পারে, আরো অনেক অনেক কারণেও বিষণ্নতা হতে পারে।
১৮. প্রশ্নঃ জেনেটিক কারণেও কি বিষণ্নতা হতে পারে?
উঃ দেখা গেছে যে, বহু ক্ষেত্রেই জেনেটিক কারণে বিষণ্নতা হয়। কারো বংশে বিষণ্নতার ধারা থাকলে চলিস্নশ ভাগ ক্ষেত্রে বিষণ্নতা পরবর্তী বংশের মধ্যেও আসতে পারে। অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিদের মাঝেও বিষণ্নতা আসতে পারে।
১৯. প্রশ্নঃ আপনি এই মাত্র বললেন যে অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিদের মাঝেও বিষণ্নতা আসতে পারে। আমরা সাধারণ অর্থে ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি বলতে বুঝি যাদের জ্ঞান অন্যান্যদের তুলনায় বেশি যেমন, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, পন্ডিত আপনি আমাদেরকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এই রকম কয়েকজন ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিদের উদাহরণ দেবেন কি?
উঃ জগৎ বিখ্যাত কতক ব্যক্তি বা ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা হলেন- নামকরা ব্যক্তিত্ব, দার্শনিক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, টিএস ইলিয়ট, জনকিটস, শেলী, চার্লস ডিকেন্স, বাংলার কবি মাইকেল মধুসদন দত্ত আরো অনেকে।
২০. প্রশ্নঃ বিষণ্নতায় নাকি বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক, ব্যক্তিগত ও শারীরিক ক্ষতি সাধন করে তা কিভাবে?
উঃ মানসিক রোগ বিষণ্নতা এই বিষণ্নতার কারণে উত্তর আমেরিকার ব্যবসায়িক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ৬০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় প্রতি বছর। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয় এবং ঠিকমত উৎপাদন না হওয়ার জন্য চলিস্নশ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিষণ্নতার ফলে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও ব্যক্তিগত কিছু মাশুলও দিতে হয়। আমাদের অনেকেই বিষণ্নতায় ভোগে। ফলে তাতে করে যে হতাশার সৃষ্টি হয় তা এতটাই দুঃষহ ও স্থায়ী যা ব্যক্তির কাজ কর্ম, সম্পর্ক ও ফিজিক্যাল হেল্‌থের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। বিষণ্নতায় যারা ভুগে সুস্থ হচ্ছেন তারা বলেন এরকম মানসিক যন্ত্রণায় ভোগায় চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। অতএব ভেবে দেখুন বিষণ্নতা কতটা ক্ষতিকর।
২১. প্রশ্নঃ বিষণ্নতা রোগে কারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে?
উঃ মহিলাদের মধ্যে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে ৩গুণ বেশি। সাধারণত অল্প বয়সী কিশোরী, তরুণী মেয়েরা এই রোগে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়।
২২. প্রশ্নঃ বৃদ্ধ বয়সে কি বিষণ্নতা রোগ হয়?
উঃ হ্যাঁ, বৃদ্ধ বয়সেও বিষণ্নতা নামক মানসিক রোগ হয়ে থাকে।
২৩. প্রশ্নঃ আপনি বললেন যে বৃদ্ধ বয়সেও বিষণ্নতা রোগ হয়ে থাকে, আচ্ছা বৃদ্ধ বয়সে বিষণ্নতা কি কি কারণে হতে পারে?
উঃ সামাজিক স্বতন্ত্রীকরণ, দৈনন্দিন কাজে সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা এবং ডিমেনশিয়া নামক জ্ঞান শক্তি কমে যাওয়ার কারণেও বিষণ্নতা রোগটি হতে পারে বৃদ্ধ বয়সে।
২৪. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার রোগী কি কাউকে মেরে ফেলতে পারে?
উঃ সাধারণত বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগী কাউকে মেরে ফেলে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে নিজেকেই নিজে মেরে ফেলে।
২৫. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার কি কোনো চিকিৎসা আছে?
উঃ সবার জন্য সুখবর হলো মানসিক রোগ বিষণ্নতার আধুনিকতম চমৎকার চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যা রোগীকে একেবারে এ্যাবনরমাল অবস্থা থেকে নরমাল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। এখন বাংলাদেশেও বিষণ্নতা রোগের আধুনিকতম চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। তবে এজন্য দরকার রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া।
২৬. প্রশ্নঃ শোনা যায় বিষণ্নতায় নাকি অনেক দিন ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়?
উঃ কথাটা সত্যি, রোগীকে এবং রোগীর পরিবারকে এই ব্যাপারে চমৎকার ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়। তবে সব ক্ষেত্রেই যে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন তাও কিন্তু্তু ঠিক নয়। আসল কথা হল রোগ ও রোগের অবস্থা বুঝেই চিকিৎসা ব্যবস্থা দেয়া হয়।
২৭. প্রশ্নঃ বিষণ্নতার কারণে কি মাথাব্যথা হতে পারে?
উঃ জীবনে মাথাব্যথা একবারও হয়নি এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষণ্নতার সাথে মাথার সম্পর্ক থাকে, তাই বিষণ্নতাজনিত মাথাব্যথা তো হতেই পারে।
২৮. প্রশ্নঃ  ভালোবাসার বিচ্ছেদেও কি বিষণ্নতা রোগ হতে পারে?
উঃ হ্যাঁ, গভীর ভালোবাসার অনাকাক্ষিত বিচ্ছেদেও বিষণ্নতা রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে বিচ্ছেদটি বিষণ্নতা সৃষ্টিতে একটি অনুঘটক বা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।
২৯. প্রশ্নঃ একজন ভালো বন্ধু বা একজন ভালোবাসার মানুষ কি বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থতায় সাহায্য করতে পারে?
উঃ কেনো পারবে না, একজন ভালো বন্ধু হৃদয়ের বন্ধু বা মনের মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত সঙ্গী বা সঙ্গিনীটিকে সঙ্গ দিয়ে তার একাকীত্বতা দূর করতে পারে। তার মনের যন্ত্রণা জানতে পারে। তাকে ভালোবাসার পরশ দিয়ে শান্ত করতে পারে এবং ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারে বাহুডোরে আবদ্ধ করে। করতে পারে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মাঝে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জাগাতে।
৩০. প্রশ্নঃ সব শেষে পাঠক/পাঠিকাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
উঃ আমার পাঠক/পাঠিকাদের প্রতি পরামর্শ হবে আপনি বা আপনাদের মাঝে যারা বিষণ্নতায় তিলেতিলে শেষ হচ্ছেন, তারা সাহস হারাবেন না। দেরি করবেন না। ডাক্তারের কাছে যান বিষণ্নতার আধুনিকতম চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করুন। ডাক্তাররা তো আপনাদের সেবার জন্যই নিয়োজিত-সদা প্রস্তুত।
৩১. প্রশ্নঃ আপনি আপনার এত ব্যস্ততার মাঝেও মল্যবান সময় দিয়ে বিষণ্নতা রোগের ওপর সাক্ষাৎকার দিলেন এজন্য আপনাকে আপনার অগণিত পাঠক/পাঠিকাদের পক্ষ থেকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
উঃ বাংলাদেশ ও দেশ বিদেশের সকল পাঠক/পাঠিকাদের আমি জানাই আমার অন্তরের পবিত্র ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।
 
 
উত্তর দিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ এএইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এফসিপিএস, এমআরসিপি, এফআরসিপি
               চিকিৎসা শাস্ত্রে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত
সাক্ষাৎকার গ্রহণেঃ আরিফ মাহমুদ সাহাবুল।


NEXT POST   দাম্পত্য কহল 
Syed Rubel @ FACEBOOK 


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

দাম্পত্য কলহ (ফাতেমা শারমিন লাকী)

কোন মন্তব্য নেই
২০-৩০ বছর বা এর বেশি বছর ধরে সংসার করার পরও তুচ্ছ ঘটনায় হুট করেই ভেঙ্গে যায় পরিবার। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, যা বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের আকার ধারণ করে আমাদের গোটা সমাজকে আক্রমণ করছে। আমরা একটি বারের জন্যও চিন্তা করি না, দাম্পত্য কলহে আমাদের সন্তানদের ওপর কি রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
 
প্রতিটি মানুষই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বোধের অধিকারী। বিবাহিত জীবন যেহেতু নারী-পুরুষের সৃষ্ট, সেহেতু সেখানে মতের অমিল, দ্বন্দ্ব, ঝগড়াঝাটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করে থাকি যে, নারী-পুরুষ একটি পারিবারিক পরিবেশে আবদ্ধ থেকেও যে যার মতো জীবনকে অতিবাহিত করছে। আর তখনই পরিবারের মধ্যে একটি অদৃশ্য দেওয়ালের সৃষ্টি হয়, যা পরিবার ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এমন কোনো বিবাহিত জীবন খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি কিংবা ঝগড়াঝাটি হয় না। এ কথা সত্যি যে, আমরা কমবেশি সবাই শান্তিপ্রিয়। তাই সহজেই ঝগড়া নামক অশান্তিতে পতিত হতে চাই না। তারপরও হয়তো কখনো কখনো ঝগড়ায় লিপ্ত হতে হয়। সদিচ্ছা, একটু চেষ্টা আর নিজেদের ত্যাগ স্বীকার করার মনোবলের কারণে আমরা সাংসারিক জীবনে এমন অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারি।
কারণ কি?
দাম্পত্য কলহ কি কারণে সৃষ্ট, এই বিষয়টি অনেকেরই বোধগম্য নয়। নারী-পুরুষের মাঝে ঝগড়াঝাটি বা দ্বন্দ্ব কোনো না কোনো কারণে সংগঠিত হয়ে থাকে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণ তুচ্ছ বা বিরাট যা-ই হোক না কেন সঠিক কারণগুলো অনুসন্ধান করে আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান করা সম্ভব। মনের মধ্যে কোনো রাগ বা ক্ষোভ পুষে না রেখে প্রকাশ করুন। মনের মাঝে যদি রাগটা পুষে রাখেন তবে এর অনেক ডালপালা গজাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্ষুদ্র রাগটাই বিশাল আকারে পরিণত হয়। তাই মনের মাঝে কোনো কারণে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি ক্ষোভ জন্মালে তার কারণ বা প্রকৃতি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। তাহলে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। আর সবক্ষেত্রেই যে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করেই কথা বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ঠান্ডা মাথায় যে কোনো কিছু আলোচনাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পন্থ্থা। দু’জনের মধ্যে একজন যদি রেগে যান, তাহলে অন্যজন নীরব থাকুন। রেগে গেলে মানুষ তার নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে সময় যদি প্রতিটি কথার উত্তর দেয়া হয় তবে তা রাগের আগুনে ‘পেট্রোল ঢালার’ মতোই কাজ করে। রাগ পড়ে গেলে সে তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। তখন নিজেই বুঝতে পারবে, যে কারণে বা ভুল বোঝাবুঝিতে সে এতো রাগারাগি করলো এতোটা না করলেও চলতো। এতোকিছু করা সম্ভব হয়েছে আপনার নীরবতার কারণে। কাজেই নীরব থেকে পরে সঙ্গীকে বোঝান।
ক্ষমা চান বা সরি বলুন
মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। সমগ্র প্রাণীকুল একমাত্র মানুষই মাত্রাতিরিক্ত ভুল করে থাকে। ভুলের মাত্রা যেমনই হোক না কেন, ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করতে পারা এমন একটি গুণ যার দ্বারা দাম্পত্য জীবনের অনেক ক্ষত উপশম হয়। ক্ষমা চাইলেই কেউ ছোট হয়ে যায় না বরং ক্ষমা চাওয়ার কারণে আপনার পরিবারে শান্তি বিরাজ করবে এবং আপনি এগিয়ে যাবেন। ক্ষমা চাওয়াটাই হচ্ছে আপনি যে অনুতপ্ত সেটা প্রকাশ করা এবং সেই সঙ্গেী নিজের ভুল স্বীকার করা, আর এমন করলে আপনার সঙ্গী-সঙ্গিনী আপনাকে অবশ্যই ক্ষমা করবে। তবে মনে রাখতে হবে, সেই ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা আর সহমর্মিতা থাকতে হবে। প্রাণহীন ক্ষমা চাওয়ার কারণে দ্বন্দ্বের কোনো সমাধান না হয়ে বরং তা আরো জটিল আকার ধারণ করে।
কি করবেন
দাম্পত্য আলাপচারিতায় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখুন। তাতে করে অনেক বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে পারবেন।
  • মন পরিষকার করে পার্টনারের কাছে ঠান্ডা মাথায় আপনার নিজের ভাষায় অভিযোগ প্রকাশ করুন।
  • ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে আপনার অনুভূতির পরিপূর্ণ প্রকাশ সুন্দরভাবে ঘটান।
  • দুই পক্ষকেই কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিত।
  • ধৈর্য ধরুন এবং অপেক্ষা করুন।
  • নিজেই নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হোন।
কি কি করবেন না বা এড়িয়ে চলবেন
  • সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ক্ষমা চাওয়ার প্রত্যাশায় বসে থাকবেন না।
  • কোনো খোঁচা বা উত্তপ্তকর কথা ব্যবহার করবেন না।
  • দাম্পত্য কলহের মাঝে অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা তুলে আনবেন না।
  • নিজেদের সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষকে টেনে কথা বলবেন না।
  • কোনো সপর্শকাতর বিষয় নিয়ে আক্রমণ করবেন না।
  • সব ভুল সঙ্গী বা সঙ্গিনীর-এমন ভাব দেখাবেন না।
২০-৩০ বছর বা এর বেশি বছর ধরে সংসার করার পরও তুচ্ছ ঘটনায় হুট করেই ভেঙ্গে যায় পরিবার। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, যা বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের আকার ধারণ করে আমাদের গোটা সমাজকে আক্রমণ করছে। আমরা একটি বারের জন্যও চিন্তা করি না, দাম্পত্য কলহে আমাদের সন্তানদের ওপর কি রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই সমস্যার কারণে তারাই বেশি অশান্তিতে ভোগে।
তাই দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে চলুন। যদি নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তা সন্তানদের সামনে প্রকাশ না করে নিজেরাই নীরবে আলোচনা করুন এবং ত্যাগ স্বীকার করুন। দেখবেন আপনি যেমন শান্তি পাচ্ছেন, তেমনি আপনার সন্তানরাও সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পারছে।

FACEBOOK ME

NEXT POST স্বাস্থ্যের জন্য চুম্বন (ডাঃ জাকারিয়া সিদ্দিকী)
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :