জন্মনিরোধ নিয়ে সবকিছু

কোন মন্তব্য নেই
সংকলিত প্রতিবেদন
গোপনে ফিসফিস করার দিন আর নেই। আজ সবাই জানেন, উপযুক্ত নিরোধকের অভাবে বিপর্যয় ঘটতেই পারে। জীবনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে ক্ষুন্ন করবেন না। জেনে নিন, কোন নিরোধক কেমন, এর মধ্যে কোনটি আপনার উপযোগী। জেনে নিন সংশ্লিষ্ট অন্য অন্য বিষয়ও। সব বয়সের সব মেয়েদের জন্য অতি যুগোপযোগী এই প্রবন্ধটি মনোজগত পাঠকদের জানা-অজানা নানা চাহিদা পুরণ করতে সম হবে আশা করি।
একটি ডায়রির পাতা
২০ জুন-সকাল সাড়ে দশটা আউটডোরে পেসেন্ট দেখা শুরু করেছি। এক মহিলা, নাম রেণু, বয়স ৪৭-তাঁকে দেখা আরম্ভ করব। বললেন, ওর পিরিয়ড ৬ মাস বন্ধ। বুঝলাম মেনোপজের দিকে যাচ্ছেন। স্টাফ নার্সকে বললাম ব্লাডপেশারটা দেখতে। ভদ্র মহিলাকে বললাম, আপনার কি আজকাল বেশি রাগ হয়? কান্না পায়? কান থেকে আগুন বেরোচ্ছে এমন মনে হয়? উনি হ্যাঁ-না গোছের একটা খাপছাড়া উত্তর দিলেন। মেনোপজের অস্বস্তি কমানোর কিছু ওষুধ লিখতে যাচ্ছি, হঠাৎ মনে হল পারঅ্যাবডোমেন একবার দেখে নেই। গম্ভীরমুখে পেটে হাত দিয়েই আমি হেসে ফেলেছি। আমার স্টাফও হাসছেন। ভদ্রমহিলা ২৪ সপ্তাহ অর্থাৎ ৬ মাস গ্রেগন্যান্ট। বুঝতেও পারেননি। একটি মাত্র মেয়ের বয়স সাতাশ, তার বড় বড় ছেলে মেয়ে আছে। মহিলার দিশাহারা অবস’। বললাম, সাবধান হননি কেন? উত্তর এল ‘আমি তো জানি না। চিরকাল উনিই ব্যবস্থা নেন, আর এই বয়সে এসব হবে ভাবিইনি’। ভদ্র মহিলা নিতান্ত অশিতি নন, মধ্যবিত্ত গৃহবধু, তবু নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেনও না, সচেতনও নন।
অদ্ভুত অনুভূতি হল। সত্যিই তো, আমাদের দেশের মহিলারা অনেকেই এসব ব্যাপারে সচেতন নন, স্বামীর কথাই শেষ কথা। আবার রোগী দেখতে আরম্ভ করেছি। আট দশজনের পরে এবার একটি ছোট মেয়ে, বয়স ১৮, অবিবাহিতা। সে বলছে, চার-পাঁচ মাস আগে তার ডায়রিয়া হয়েছিল, তারপর থেকে পিরিয়ড বন্ধ। মেয়েটিকে দেখেই সন্দেহ হল। এমন অন্তত ভাষণ শোনা আমাদের অভ্যাস আছে। পরীক্ষা করে দেখলাম সে পূর্ণ পাঁচ মাসের গর্ভবতী। শুনেই সে আতঙ্কিত হয়ে বলল, ‘ না, না, না’ এবং বলল শুনে তার ‘ভয় পাচ্ছে’। এরকম ঘটনা হামেশাই ঘটে। সামান্য সাবধানতা অবলম্বন করলেই এমন বিপদ এড়ানো যায়। আমরা কি এইটুকু সাহায্য মেয়েদের করতে পারি না?
কন্ট্রাসেপশনঃ কি এর সংজ্ঞা
নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও দায়িত্ব নিয়ে স্বেচ্ছায় কোনো দম্পতি যখন পরিবারের স্বাস্থ্যের কল্যাণে, সামাজিক উন্নতির স্বার্থে পরিবারকে সীমিত রাখার পন্থা অবলম্বন করে, তখন তাকেই বলে ফ্যামিলি প্ল্যানিং তথা কন্ট্রাসেপশন। এর কয়েকটি উদ্দেশ্য আছে-
১। অবাঞ্ছিত সন্তানের জন্ম এড়ানো
২। কাঙ্খিত সন্তানের জন্ম
৩। দুটি সন্তানের জন্মের অন্তবর্তী ব্যবধান নিয়ন্তিত করা
৪। মা-বাবার বয়স এবং সন্তানের জন্মের মধ্যে সমতা নির্ণয় করা
৫। একটি পরিবারের সন্তান সংখ্যা নির্ণয় করা।
বেসিক হিউম্যান রাইট বা মৌলিক মানবাধিকার
১৯৬৮ সালে তেহরানে ‘ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন হিউম্যান রাইটস’-এ স্থির করা হয় যে কন্ট্রাসেপশন একটি বেসিক হিউম্যান রাইট। এরপর ১৯৭৪ সালে বুখারেস্টে ‘পৃথিবীর জনসংখ্যা’ সংক্রান্ত সমেমলনের কার্যপদ্ধতিতে বলা হয়, প্রতিটি দম্পতি বা প্রতিটি মানুষের ন্যায্য মানবাধিকার আছে তার কটি সন্তান হবে এবং দুটি সন্তানের মধ্যবর্তী ব্যবধানই বা কত হবে তা স্থি’র করার। এই সিদ্ধান্ত নিতে যে বিদ্যা, প্রযুক্তি ও তথ্যের প্রয়োজন তা অর্জন করাও একটি বেসিক হিউম্যান রাইট।
আন্তর্জাতিক নারী বর্ষে ১৯৭৫ সালে ওয়ার্ল্ড কনফারেন্সে স্বীকৃত হয় যে, প্রত্যেক নারীর ন্যায্য অধিকার আছে সে কিভাবে তার পরিবারকে সীমিত রাখবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের। এইভাবে পরিবার পরিকল্পনা আর শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর শোরওয়ার ঘরের ফিসফাসে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা হয়ে ওঠে এক আন্তর্জাতিক প্ল্যান, যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে পরিবারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ।
ফ্যামিলি প্ল্যানিং ও কন্ট্রাসেপশন বা বার্থ কন্ট্রোল
সত্যি বলতে কি ‘ফ্যামিলি প্ল্যানিং’ কথাটি ‘বার্থ কন্ট্রোল’ কথাটির চেয়ে অনেক বৃহত্তর অর্থে ব্যবহৃত হয়। সন্তানের জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনায় জড়িয়ে থাকে বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে উপদেশ, মা-বাবার শিা, সেক্স এডুকেশন, স্বামী-স্ত্রীর প্রজননতন্তের কোনো রোগ থাকলে তার নির্ণয় ও চিকিৎসা, জেনেটিক কাউন্সিলিং, বিবাহতপূর্ব পরামর্শ ও তৎকালীন স্বাস্থ্যপরীক্ষা, প্রেগনেন্সি টেস্ট, বিবাহ সম্পর্কিত উপদেশ, একটি দম্পতিকে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম সম্পর্কে অবহিত করা, অবিবাহিতা মায়েদের রাবেণ, পুষ্টি ও পারিবারিক অর্থনীতির শিক্ষা, দত্তক সন্তান গ্রহণের পরামর্শ ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার কার্যনীতি বিভিন্ন রকম-তবে এইগুলোই আধুনিক ‘ফ্যামিলি প্ল্যানিং’-এর মূল ভিত্তি।
মায়ের স্বাস্থ্য
প্রেগন্যান্সি বা গর্ভাবস্থা কোনো কোনো মায়ের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে, এমনকি মায়ের স্বাস্থ্যহানি এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। উন্নতিশীল দেশগুলোতে গর্ভাবস্থার কারণে মায়েদের মৃত্যুর হার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। এই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায় যখন মায়ের বয়স ৩০ এর বেশি হয়ে যায় বা সেই মায়ের যদি চারটির বেশি বাচ্চা থাকে। পরিবার পরিকল্পনা করলে এই ভয়গুলো চলে যায়, তখন মায়েরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোন বয়সে ক’টি বাচ্চা কত বছর ব্যবধানে জন্ম নেবে। এইভাবে মায়ের মৃত্যুহার কমে। সঠিক উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে কমে যায় অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের সংখ্যা। এর ফলে একটি অপরিণত অল্পবয়সী বালিকা বা কিশোরীকে কোয়াক ডাক্তারের কাছে গিয়ে গর্ভপাত করাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয় না। অবিবাহিত মায়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এরকমও দেখা গেছে যে তারা এই ধরনের পাশবিক সামাজিক পীড়নের শিকার হয়ে শেষ পযন্ত মানসিক অবসাদের রোগীতে পরিণত হয়েছে।
মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর আশঙ্কা তিনটি সন্তানের পর বেড়ে যায়। পাঁচটি সন্তানের পর তো বিশেষ বিপদের ভয় থাকে। আশঙ্কাগুলোর মধ্যে প্রধান হল প্রি-এক্যাম্পটিক টক্সিমিয়া (গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি ও বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে যাওয়া), এক্লাম্পসিয়া (হাত-পায়ে খিঁচুনি হয়ে মা মারা যেতে পারে), প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (জরায়ুতে বাচ্চার আগে প্লাসেন্টা বা ফুলের অবস্থান)। এছাড়াও বেশি সন্তানের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দেখা দেবে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া, মৃত সন্তানের জন্ম দেয়ার আশঙ্কাও যাবে বেড়ে। পরিবার পরিকল্পনাই এইসব ধরনের শারীরিক অসুবিধা থেকে মেয়েদের বাঁচাতে পারেশ
যোগ্য দম্পতি কাকে বলে
যে সমস্ত স্ত্রীর বয়স ১৫ থেকে ৪৪ বছর (চাইল্ড রেয়ারিং এজ) সেইসব দম্পতির কন্ট্রাসেপশন সম্পর্কিত উপদেশ দরকার। এদেরই বলে এলিজিবল কাপল বা যোগ্য দম্পতি। প্রতি ১০০০ জনসংখ্যায় এমন দম্পতির সংখ্যা কমপক্ষে ১৫০ থেকে ১৮০।
বিভিন্ন গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা
(ফর্টিলিটি রেগুলেটিং মেথড)
প্রতিরোধক ব্যবস্থায় মহিলারা অবাঞ্ছিত গর্ভসঞ্চার এড়াতে পারেন তাকেই বলে কন্ট্রাসেপটিভ মেথডস।
আদর্শ কন্ট্রাসেপটিভ বলতে বোঝাবে এমন কোনো উপায় যা নিরাপদ, কার্যকরী, সহজে গ্রহণযোগ্য, স্বল্পমূল্যের।
বন্ধ করলেই আবার বাচ্চা হতে অসুবিধা নেই, অনায়াসেই দেয়া যায়। দৈহিক মিলনে যা বাধা হয় না। দীর্ঘস্থায়ী এবং যে ব্যবস্থায় ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার পড়ে না।
যে পদ্ধতি এক দম্পতির জন্য আদর্শ, সকলের জন্য যে তা আদর্শ নয় এ কথা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন মানুষের আচার-আচরণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাও ভিন্নতর হয়। সেই অনুযায়ী এখন যে কথাটি প্রচলিত তা হল ‘কাফেটেরিয়া চয়েস’-অর্থাৎ দম্পতির সামনে সব কটি ব্যবস্থা মেলে ধরা হয়, যার পক্ষে যেটি উপযুক্ত সে সেটি বেছে নেয়।
কনভেনশনাল কন্ট্রাসেপটিভবলা হয় সেইগুলোকে যেগুলো কেবলমাত্র শারীরিক মিলনের সময়েই ব্যবহারযোগ্য যেমন কনডম, জেলি ইত্যাদি। প্রত্যেক গর্ভরোধক ব্যবস্থারই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে।
আর একভাবে ভাগ করা যায়-
সাময়িক পদ্ধতি
স্বামী যা ব্যবহার করতে পারেন
(১) কনডম
(২)  নির্গমন বা বীর্য স্ত্রীর শরীরে না প্রবেশ করানো
স্ত্রী যা ব্যবহার করতে পারেন
(১) ওরাল পিল
(২) কপারটি বা ইউটেরাসের ভেতরে পরা যায় এমন উপকরণ
(৩) ডায়াফ্রাম ও জেলি
(৪) গর্ভনিরোধক জেলি বা ক্রিম
(৫) অভন্তরে ব্যবহার্য কোনো ট্যাবলেট
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারেন
(১) নিরাপদ সময়ে মিলন
(২) চিরস্থায়ী পদ্ধতি
(১) স্বামীর ভ্যাসেকটমি
(২) স্ত্রীর বন্ধ্যাকরণ বা টিউবেকটমি বা লাইগেশন
(৩) আইনসম্মত গর্ভপাত
প্রতিবন্ধক পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে জীবিত শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে দেয়া হয় না। ওরাল পিল এবং কপারটি এই জাতীয় পন্থায় কাজ করে। এগুলো খুবই জনপ্রিয়। শুধুমাত্র কন্ট্রাসেপশন ছাড়াও এই পদ্ধতিগুলো সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজের থেকে খানিকটা রা করে। মেয়েদের তলপেটের নানা রকম অসুখ কিছু কিছু কন্ট্রাসেপটিভের ব্যবহারে খানিকটা কমতে পারে। এছাড়া মেয়েদের সারভাইক্যাল (জরায়ুর মুখ) ক্যান্সার থেকেও সম্ভবত কিছুটা নিরাপত্তা দেয়।
কনডম
প্রতিবন্ধক পদ্ধতির মধ্যে সারা পৃথিবীতে কনডম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। ভারতে কনডম ‘নিরোধ’ নামেই বেশি পরিচিত যা একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ প্রতিরোধ করা। এটি খুবই নিরাপদ, ঝামেলাবিহীন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। কন্ট্রাসেপশন ছাড়াও কনডম নারী ও পুরুষ উভয়কেই সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ থেকে সুরতি রাখে। কনডম মূলত দু ধরনের-ল্যাটেক্স ও স্কিন। ল্যাটেক্স কনডমের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি। একটি মাত্র কনডম মাত্র একবারই ব্যবহার করা চলে। কনডমে পুরুষের বীর্য স্ত্রীজননতন্ত্রে আসতে পারে না। অধিক সাবধানতা অবলম্বনের জন্য কনডমের সঙ্গে মহিলারা স্পারমিসাইডাল (শুক্রাণু বিনাশকারী) জেলি ব্যবহার করতে পারেন। আমেরিকায় কনডমের মধ্যে স্পারমিসাইডাল জেলিও লাগানো থাকে। কনডম সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এটি খুবই নিরাপদ ও কার্যকরী পদ্ধতি। কনডমের অসাফল্যের হার খুব কম। অতি সামান্য কয়েকটি অসাফল্য দেখা যায় ঠিকমত ব্যবহার করা হয় না বলে।
ফিমেল কনডম
মেয়েদের ব্যবহারের জন্য কনডম হয় নরম অথচ শক্ত, স্বচ্ছ আচ্ছাদন। যোনিদ্বারের ভেতরে এটি রাখতে হয়। ফলে শুক্রাণু ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না, বাধার সৃষ্টি করে। অবশ্যই আরও একটা উপকার হবে যৌন সংক্রমণগুলোও একই সঙ্গে ঠেকানো যাবে। এই আচ্ছাদনটি সিলিকন দিয়ে আগেই পিচ্ছিল করে রাখা হয়। একটি মাত্র কনডম একবারই ব্যবহারযোগ্য। সব বয়সেই এই কনডম ব্যবহার করা যায়। পুরুষরা যেখানে কনডম ব্যবহার করতে চান না (বেশিরভাগই অপছন্দ করেন) অথবা গর্ভনিরোধক বড়ি যেখানে সহ্য হচ্ছে না, সেখানে এই মহিলাদের কনডম ব্যবহার করা যায়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পলিইউরেথেন দিয়ে তৈরি, সেইভাবে কোনো এ্যালার্জির খবর পাওয়া যায়নি।
পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশে এই ফিমেল কনডম দিয়ে পড়াশোনা হয়েছে। ভারতেও এইচআইভি, এইডস যে সব প্রোগ্রাম হয়েছে তাতে এই কনডমের কথা বারবার আলোচিত হয়েছে। সমস্যা একটাই। আমাদের দেশে মেয়েদের ওপর আর কত বোঝা চাপানো হবে? আর নিজেদের জন্য নিত্যনতুন ব্যবস্থার কথা ভাবার সময় আজকের মেয়েদের কি আছে? তবে পশ্চিমবঙ্গে ফিমেল কনডম নিয়ে খুব একটা হইচই হয়নি। তার তুলনায় অন্য ব্যবস্থাগুলো আলোচিত হয়েছে অনেক বেশি। যেহেতু জরায়ুর মুখ (সারভিক্স) আর প্রসবদ্বারের সংক্রমণ মেয়েদের জননস্বাস্থ্যের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করে, সেহেতু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এই পদ্ধতি নেয়া দরকার।
কনডমের সুবিধা
১) সহজে পাওয়া যায়
২) নিরাপদ ও মূল্যের
৩) সহজে ব্যবহার করা যায়
৪) ডাক্তারি উপদেশ ও তত্ত্বাবধান লাগে না
৫) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
৬) হাল্কা, ছোট ও সহজে ফেলে দেয়া যায়
৭) এসটিডি থেকেও নিরাপত্তা দেয়।
কনডমের অসুবিধা
১) ঠিকমত ব্যবহার না হলে ছিড়ে গিয়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
২) শারীরিক মিলনে কারও কারও অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ হতে পারে। কনডম ভারতে তৈরি হয় তিরুঅনন্তপুরম এবং চেন্নাইতে। ভারতীয় কনডমের দৈর্ঘ্য ১৭.৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্ত ৪.৪ থেকে ৫.৪ সেন্টিমিটার।
ডায়াফ্রাম
ডায়াফ্রাম মহিলাদের প্রসবদ্বারে বাধা হিসেবে কাজ করে, যার ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটতে পারে না। ১৮৮২ সালে এক জার্মান চিকিৎসক এটি আবিষকার করেন। ডায়াফ্রাম একটি অগভীর পেয়ালার মতো দেখতে, তৈরি হয় কৃত্রিম রবার বা প্লাস্টিক দিয়ে। এর ব্যাস হয় ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। এর নিচের দিকে একটি নমনীয় স্প্রিং জাতীয় জিনিস লাগানো থাকে। বিভিন্ন মহিলার ডায়াফ্রাম হবে বিভিন্ন সাইজের, সাইজটি মহিলাকে পরীক্ষা করে নির্ণয় করে নেয়া হয়। শারীরিক মিলনের ঠিক আগে মহিলাকে ডায়াফ্রাম পরে নিতে হবে এবং তারপর আরও অন্তত ৬ ঘন্টা পরে থাকতে হবে।
ডায়াফ্রামের সঙ্গে সবসময় ব্যবহার করতে হয় স্পারমিসাইডাল জেলি। এর মুশকিল হল এটি কেমন করে পরতে হবে তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য প্রথমে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ দরকার। তা ছাড়া পরা, খোলা, রাখা ইত্যাদির ঝামেরার জন্য আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা একেবারেই নেই।
স্পঞ্জ
কয়েকশ বছর আগে যোনিপথে ভিনিগার বা অলিভ অয়েলে ভেজানো সপঞ্জ রেখে সন্তান সম্ভাবনা আটকাবার চেষ্টা করা হত। কিন্ত অনেক ক্ষেত্রেই তা সফলতা লাভ করত না। পরে এই পদ্ধতিকে ভিত্তি করে আমেরিকায় ‘টু ডে’ নাম দিয়ে এক ধরনের গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা চালু হয়। একটি ৫ সেন্টিমিটার বাই ২.৫ সেন্টিমিটার পলিইউরেথেন ফোম ভেজানো থাকে নোনোজাইনাল-নাইন নামক সপারমিসাইডাল দিয়ে। এই পদ্ধতি যে শতকরা ১০০ ভাগ কার্যকরী, তা মোটেই বলা যায় না। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, যে কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই না নেয়ার থেকে যা হোক কিছু ব্যবহারেরও কিছু ফল আছে।
কেমিক্যাল মেথড
১৯৬০ সালের আগে যখন ওরাল পিল ও লুপ বা কপার টি’র এত বহুল ব্যবহার প্রচলিত হয়নি, তখন ভ্যাজাইনাল কেমিক্যাল কন্ট্রাসেপটিভের খুব চল ছিল। এগুলোও সপারমিসাইডাল, অর্থাৎ শুক্রাণুকে মেরে ফেলাই এদের কাজ। এগুলো নানাভাবে ব্যবহৃত হয় যেমন- ফোম, ক্রিম, জেলি, পেস্ট, সাপোজিটরি, সলিউবল ফিল্ম ইত্যাদি। এই পদ্ধতির কয়েকটি অসুবিধা আছে যেমন- অসাফল্যের হার খুব বেশি। শারীরিক সম্পর্কের অব্যবহিত আগে ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা দরকার। কারও কারও একটু জ্বালা বা অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ হতে পারে। এইসব কারণে বিশেষজ্ঞরা সপারমিসাইডাল ব্যবহারের পরামর্শ আজকাল আর দেন না।
লুপ, কপার’টি
(ইউটেরাসের আভ্যন্তর গর্ভনিরোধক) ১৯২৮ সালে জার্মানিতে ভন গ্রাফেনবার্গ জরায়ুর মধ্যে রুপোর রিং লাগিয়ে গর্ভনিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ইউটেরাসে প্রদাহ ও অন্য নানা রকম উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। পরে প্লাস্টিক শিল্পের খুবই অগ্রগতি হওয়ায় উন্নত মানের পলিথিন রিং ব্যবহার করা যায় কিনা এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়। ১৯৫৯ সালে ডা. মারগুইলি একটি খুব সরু পলিথিনের সাহায্যে একটি ছোট প্লাস্টিকের রিং জরায়ুতে ঢুকিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। ১৯৬২ সালে আমেরিকা থেকে ডা. লিপ্পি একটি পলিথিনের লুপ জাতীয় জিনিস আবিষকার করেন যার নিচে খুব সরু চুলের মতো দুটো লেজ জরায়ুর মুখ থেকে বেরিয়ে থাকে। এই উপকরণ যতদিন জরায়ুর মধ্যে দেয়া থাকবে ততদিন গর্ভসঞ্চার হবে না। তবে এ কথা মানতেই হবে, এই পলিথিনের লুপ কিভাবে গর্ভনিরোধ করে তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। বলা যেতে পারে, এটি জরায়ুর ঝিল্লিতে বা মাংসপেশিতে এমন কিছু বদল আনে যে উর্বর ডিম্বাণু (ফারটিলাইজড ওভাম) জরায়ুতে এলেও স্থাপিত হয়ে বাসা বাঁধতে পারে না। লুপের চেয়ে আরও উন্নততর ব্যবস্থা হল কপার’টি। কাপার’টি এখন নানা ধরনের পাওয়া যায়। রাখা যায় ৩ থেকে ৫ বছর। পরাতে কোনো ব্যথা লাগে না। অজ্ঞান বা অসাড় করারও দরকার পড়ে না। কপার’টির নিচের দিকে চুলের মত সরু নাইলনের দুটি সুতো থাকে। গ্রহীতা এই সুতো দুটি আঙ্গুল দিয়ে মাঝে মাঝে অনুভব করলে বুঝতে পারেন যে কপার’টি যথাস্থানে আছে কি না। কপার’টি দেয়ার আগে মহিলাকে ভালো করে পরীক্ষা করে নিতে হবে। মহিলার সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বয়স, কটি বাচ্চা আছে এগুলো জানা বিশেষ জরুরি। এখনকার উন্নত ধরনের কপার’টিতে বিশেষ কোনো উপসর্গ হওয়ার কথা নয়। খুব অল্প ক্ষেত্রে যদি হেভি পিরিয়ড বা তলপেটে ব্যথাবোধ হয় তা হলে ডাক্তারকে তৎক্ষণাৎ দেখিয়ে নিতে হবে।
সুবিধা
সহজে পরানো যায়, পরতে ৪/৫ মিনিট লাগে। হাসপাতালে থাকতে হয় না। দীর্ঘদিন রাখা যায়, খরচ খুব বেশি নয়, খুলে দিলে আবার গর্ভসঞ্চারে অসুবিধা নেই। তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না পিল যেমন রোজ খেতে হয়, ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এতে তা নেই-একবার পরে নিলেই হল।
অসুবিধা
নব বিবাহিতাকে দেয়া হয় না যাদের হেভি পিরিয়ডের ধাত তাদের না দেয়াই ভালো। ইউটেরাসে টিউমার বা অন্য কোনো অসুখ থাকলেও দেয়া যাবে না।
কপার’টির জন্য আদর্শ কারা
যেসব মায়ের অন্তত একটি বাচ্চা আছে
তলপেটে কোনো প্রদাহ জাতীয় অসুখ নেই
যাদের প্রতিমাসে স্বাভাবিক পিরিয়ড হয়
যেসব মহিলার শারীরিক সম্পর্ক শুধু একটি মাত্র পুরুষের সঙ্গে।
ওরাল পিল
অনেকেরই জানার ইচ্ছা হয় যে পিল খেলে কেমনভাবে গর্ভসঞ্চার আটকে যায়। জরায়ু থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন নামে দুটি হরমোন বের হয়। বাইরে থেকে ট্যাবলেটের সাহায্যে এই দুটি হরমোন একত্রে পরিমিত মাত্রায় নারী শরীরের ওপর প্রয়োগ করতে পারলে ডিম্বাণু নির্গমন (ওভিউলেশন) রোধ করা সম্ভব।
ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময়ে স্বাভাবিক ডিম্বাণু নির্গম ব্যাহত হলে গর্ভসঞ্চার হয় না। সাধারণ পিলের নিয়ম হল পিরিয়ডের পঞ্চম দিন থেকে আরম্ভ করে ২১ দিনে ২১টি বড়ি খেতে হয়। তারপর ২৫ দিনে ট্যাবলেট শেষ হলে তার ৩-৪ দিন পর পিরিয়ড শুরু হয়। আজকাল অত্যাধুনিক পিলগুলো অবশ্য পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকেই খাওয়ার নির্দেশ থাকে এবং বন্ধ করতে হয় না। এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
পিল খাওয়ার সময়
ওভিউলেশনের দিন হিসাব করে জন্মনিরোধক পিল খাওয়ার সাধারণ নিয়ম।
কি থাকে ওরাল পিলে
বেশিরভাগ ওরাল পিলই ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন হরমোনের সমন্বয় তৈরি। আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেক্রেই এই হরমোন কৃত্রিম নানা রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। বিভিন্ন পিলে হরমোনের মাত্রা আলাদা হয়।
ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন কি করে
এই দুটি হরমোন শরীরকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ইস্ট্রোজেনের জন্য সামান্য গা বমি ভাব, মাথা ধরা, স্তন একটু ভারী হওয়া, ওজন বাড়া, ত্বকে কালচে ভাব ইত্যাদি অসুবিধা হতে পারে। পিল খেতে ভুলে গেলে পিরিয়ডের অন্তর্বর্তী সময়ে সামান্য ব্লিডিং হওয়া সম্ভব। প্রজেস্টেরোন অংশের জন্য স্রাব কমে যেতে পারে, মুখে ব্রণ হতে পারে, ওজন বাড়তে পারে। সেইজন্য মেয়েদের শারীরিক গঠন ও অবয়ব অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ও মাত্রার ওষুধ দেয়া উচিত। মোটা মেয়েদের এক রকম পিল। আবার রোগা মেয়েদের অন্যরকম পিল। যাদের হেভি পিরিয়ড হয় তাদের পিলের রকম হবে আলাদা, তেমনি যাদের মুখে একটু সূক্ষ্ম গোঁফের রেখা আছে তাদের পিলও অন্য। যাদের একটু ভারী স্তন তাদের সেই গঠনের কথা ভেবে হবে পিল নির্বাচন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিনিয়ত উন্নততর গবেষণায় আজ যে সমস্ত আধুনিক কম হরমোনের পিল তৈরি করা গেছে সেগুলো খুবই নিরাপদ এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভীষণ রকম কম।
পিল কি ভালো?
পিলের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে ডিম্বাণু নির্গমনে বাধা সৃষ্টি করে গর্ভনিরোধ করা সম্পর্কে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, বছরের পর বছর নারীদেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে এইভাবে অবদমিত করে রাখা কি শরীরের পক্ষে ভালো? এই ওষুধ ব্যবহারের কি অসুবিধা? দীর্ঘদিন এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা লিভারের অসুখ হতে পারে কি?
পরীক্ষা, সমীক্ষা ও অভিজ্ঞতার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, হরমোনের মিশ্র বড়ি কপার’টি, কনডম, ক্রিম বা জেলির থেকে উৎকৃষ্ট। তবে ওষুধ খেতে এক আধদিন ভুল হয়ে যেতে পারে, তাতে এর কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটে ও অসময়ে স্রাব দেখা দিতে পারে। কাজেই মনে করে প্রতিদিন ওষুধ খেতে হবে। নিয়মিত খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে যায়। পিল একটানা কিছুদিন খেয়ে মাঝে মাঝে বা কতদিন বাদ দিতে হবে অথবা আদৌ বাদ দিতে হবে কি না সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের মতই শেষ কথা। পিল খাওয়া উচিত প্রতিদিন রাতে শোওয়ার সময় একই নিয়মে, কোনোদিন ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে তৎক্ষণাৎ খেয়ে নেয়া উচিত, আবার পরের দিনের পিলটিই যথা সময়ে খেয়ে নিতে হবে।
ওরাল পিলঃ কয়েকটি বিশেষ তথ্য
পিল সাধারণত অল্পবয়সী মেয়েদেরই দেয়া হয়। ৩৫-এর ওপরে বয়স হলে অন্য কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয় আর ৪০ পার হওয়া মহিলাদের কখনই পিল দেয়া হয় না কারণ তাতে দেখা গেছে সেই সব মহিলাদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। যে সমস্ত পিলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি সেইগুলো সদ্য মা হওয়া মহিলাদের বুকের দুধ কমিয়ে দেয়। কাজেই সেই সময়টা অন্য উপায় অবলম্বন করতে না পারলে এমন পিল দিতে হবে যাতে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম।
পিল সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। সেগুলো সঠিকভাবে বুঝিয়ে বলার জন্য মাস মিডিয়াগুলোতে এই ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশি করে হওয়া উচিত। চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণা ও অগ্রগতি নিরন্তর। প্রায়শই নতুন নতুন তথ্য আবিষকৃত হচ্ছে। আজ যা গ্রহণযোগ্য, কাল তার আ্মূল পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। একথা শুধু পিল নয়, সব রকম গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা যা সমগ্র চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কেই খাটে। ডাক্তারি শাস্ত্রে মতদ্বৈধ থাকবেই। তবে আমাদের এই আখ্যানের উদ্দেশ্য জনসাধারণের উপকারে লাগা-তর্কবিতর্কের জন্য মেডিকেল জার্নাল আছে।
মেল পিল
পুরুষদের জন্য কন্ট্রাসেপটিভ পিল তৈরির চেষ্টা চলছে ১৯৫০ সাল থেকে। আদর্শ মেল পিল হবে সেইটিই যা শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেবে কিন্ত পুরুষ শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা থাকবে অক্ষুণ্ন। কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই প্রতিরোধক ব্যবস্থায় সপার্ম কাউন্ট যেমন কমছে তার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ হরমোনের মাত্রাও কমে যাচ্ছে। তার ফলে পুরুষের দৈহিক সংসর্গ করার ইচ্ছা যাচ্ছে কম হয়ে। তার ওপর দীর্ঘদিন এই ওষুধ ব্যবহারের পর দেখা যাচ্ছে পুরুষ হয়তো পাকাপাকিভাবে শুক্রাণুবিহীন হয়ে পড়ছে। সুতরাং এর ব্যবহার শুরু করে লাভ কিছু হচ্ছে না।
কন্ট্রাসেপটিভ ইনজেকশন
ডিএমপি বা ডিপো মেড্রক্সিপ্রজেস্টেরোন অ্যাসিটেট ব্যবহৃত হচ্ছে ১৯৬০ সাল থেকে। প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০ মিলিগ্রাম ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দেয়া হয়। এটি ৯৯ শতাংশ সার্থক। এটিও ওরাল পিলের মতো মেয়েদের ডিম্বাণু নির্গমন বা ওভিউলেশন বন্ধ করে দেয়, ফলে সন্তান সম্ভবনাও হয় না। এই ইনজেকশন খুবই নিরাপদ ও কার্যকরী। আর একটি সুবিধা হল এটি ব্রেস্ট মিল্ক কমিয়ে দেয় না। কাজেই সন্তানের জন্মের পরে পরেই এটি দেয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য একটু অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে, তাতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। বিশেষত ৩৫ বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রেই (যাদের পরিবার সম্পূর্ণ) এই ইনজেকশন খুবই গ্রহণযোগ্য। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে এই পদ্ধতি গৃহীত হয়নি তার কারণ ইনজেকশন বন্ধ করার অনেক দিন পর পযন্ত সন্তান সম্ভাবনা ঘটে না। এই ইনজেকশন ব্যবহারে হৃদরোগ বাড়ে বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের সংখ্যা বাড়ে এমন কোনো পরিসংখ্যান আজ অবধি পাওয়া যায়নি।
গ্রামে গঞ্জেও এই ইনজেকশন যথেষ্ট জনপ্রিয়। গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ফ্যামিলি হেল্‌থ প্ল্যান স্কিমে এগুলো দেয়া হয়ে থাকে।
নেট এন (এনইটিইএন)
নর এথিস্টেরন ইন্যানটেট-এটিও একটি কন্ট্রাসেপটিভ ইনজেকশন, প্রতি দু’মাস পরপর ২০০ মিলিগ্রাম ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন নিতে হয়। এর থেকে ডিএমপি-র কার্যকারিতা আরও বেশি বলে প্রথমটির বলই বেশি। উপরোক্ত দুটি ইনজেকশনেরই প্রথম ডোজ দিতে হবে পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে।
সাবডারমাল ইমপ্ল্যান্ট (প্যাচ)
নিউইয়র্কের পপুলেশন কাউন্সিল এনেছে এক নতুন ধরনের কন্ট্রাসেপটিভ, যার নাম নরপ্ল্যান্ট। এটি একটি লং টার্ম গর্ভনিরোধক পদ্ধতি। এতে ৬টি সাইলাস্টিক (সিলিকন রাবার) ক্যাপসুল থাকে এবং প্রতি ক্যাপসুলে দেয়া থাকে ৩৫ মিলিগ্রাম লিভোনরজেসট্রেল। আরও আধুনিক পনহায় এই লিভোনরজেসট্রেল থাকে দুটি ছোট রডে। তাকে বলা হচ্ছে নরপ্ল্যান্ট (আর টু)। সেগুলো ব্যবহার করা অপোকৃত সহজ। এই সাইলাস্টিক ক্যাপসুল বা রড বাহুর ভেতরের দিকের চামড়ার নিচে বসিয়ে দেয়া হয়। এতে ৫ বছরের জন্য সন্তান সম্ভাবনা ঘটবে না। প্যাচ খুলে নিলে আবার বাচ্ছা হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এই পদ্ধতি তেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি কারণ খরচ প্রচুর (৮ থেকে ১০ হাজার টাকা), তা ছাড়া লাগানো ও খোলা প্রায় অপারেশনের মতো। সর্বোপরি এত কান্ড করেও এতে পিরিয়ডের নানা গন্ডগোল হয়, তাতে মহিলারা ভয় পেয়ে যান। আর ওষুধটি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশে অবশ্য এখন তৈরির প্রস্তুতি চলছে।
পোস্ট কনসেপশনাল কন্ট্রাসেপটিভ
১) মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশন- মাসিক বন্ধের ৬ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে যদি জরায়ুর মধ্যকার জিনিসগুলো বের করে দেয়া হয় তাহলে গর্ভাবস্থা আর থাকবে না, একে বলা যেতে পারে মিনি অ্যাবরশন। তবে এটি গর্ভপাত নয় কারণ অত অল্পদিনে গর্ভসঞ্চার একেবারে নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল হতে পারে। এই সময়ে ‘ডি’ অ্যান্ড ‘ই’ (ডায়ালেটেশন অ্যান্ড ইভ্যাকুয়েশন) অর্থাৎ এই নগণ্য গর্ভপাতকে গর্ভপাত আইনের আওতায় ফেলা অসুবিধাজনক। ১২-১৪ সপ্তাহ বা তার বেশি সময়ের প্রেগন্যান্সির থেকে মাত্র ৭-১০ দিনের গর্ভের পাত অনেক সহজ ও বহুলাংশে নিরাপদ।
নানাবিধ
১) কয়টাস ইন্টারাপটাস
এটি খুবই পুরনো পনহা। এর মূল কথা হল, বীর্য নারীর শরীরে প্রবেশ না করা। এটি অনেক ক্ষেত্রেই অসাফল্য লাভ করে। তার কারণ পুরুষের প্রিকয়টাল সিক্রিশন অর্থাৎ সঙ্গমপূর্ব ক্ষরণেও শুক্রাণু থাকতে পারে এবং সামান্যতম বীর্যেও সন্তান সম্ভাবনা ঘটতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও বলা যায়, কোনো উপায় অবলম্বন না করার চেয়ে সামান্য কিছু সতর্কতাও বহু গর্ভাবস্থা আটকাতে পারে।
২) সেফ পিরিয়ড
একে বলে ‘ক্যালেন্ডার মেথড’। ১৯৩০ সালে এই পদ্ধতি প্রথম আলোচিত হয়। ডিম্বাণু নির্গমন হয় পিরিয়ডের ১২তম দিন থেকে ১৬তম (পিরিয়ড শুরুর দিন ধরা হয় প্রথম বা ১ম দিন) দিনের মধ্যে যে কোনো দিন। তারও এধার ওধার আরও কদিন ছাড় দিলে (অর্থাৎ ১০তম দিন থেকে ১৮তম দিন) সেই কদিনই হল ফার্টাইল পিরিয়ড বা গর্ভধারণের সময়। সেই কয়েকটা দিন বাদ দিয়ে মিলিত হলে আর সন্তান সম্ভাবনার ভয় নেই। ওই কটা দিন পুরুষ কনডম ব্যবহার করতে পারেন। সোজা কথায় বলতে গেলে যে সব মহিলার ঋতুচক্র নিয়মিত (অর্থাৎ প্রতি মাসে মোটামুটি আগের মাসের তারিখের দু-একদিন আগে পিরিয়ড শুরু হয়) তারা প্রথম দিন থেকে নবম দিন পর্যন্ত কোনো সাবধানতা ছাড়াই মিলিত হতে পারেন। আবার ও দিকে ১৯তম দিন থেকে ২৮তম দিন পর্যন্তও কোনো সাবধানতার দরকার নেই।
নিয়মিত ২৮ দিনের ঋতুচক্রে সেফ পিরিয়ড
যদি ঋতুচক্র খুবই অনিয়মিত হয়, তা হলে এই পদ্ধতি চলবে না। আর এই পদ্ধতি শিতি, সচেতন ও দায়িত্বশীল দম্পতি ছাড়া মানা সম্ভব নয়। নিরাপদ সময় ছাড়া মাসের অন্যান্য দিনগুলোতে মিলিত না হওয়া বা ঠিক ওই সময়টিতে হিসেব-নিকেশ করে অন্য পদ্ধতি নেয়া, যাকে বলে ‘প্রোপ্র্যামড সেক্স’ তা অনেক সময় সম্ভব নাও হতে পারে। বাচ্চা হওয়ার ঠিক পরে পরেও এই পদ্ধতি চলবে না।
ব্রেস্ট ফিডিং
অনেকে মনে করেন বাচ্চার জন্মের পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাসগুলোতে যখন কিছুদিন পিরিয়ড বন্ধ থাকে, তখন মিলিত হলে সন্তান সম্ভাবনা ঘটবে না। এই সময়টিকে বলে ল্যাক্টেশনাল অ্যামেনোরিয়া। এই সময়ে ওভিউলেশন হয় না। স্বাভাবিকভাবে হরমোনগুলো নিঃসৃত হয় না। কিন্তু প্রশ্ন হল, সত্যিই কি এই সময়টি নিরাপদ? বলা যেতে পারে ১০০টি মহিলার প্রসবোত্তর ৬ মাসের মধ্যে ২ জনের গর্ভাবস্থা হতে পারে। তার বেশি সংখ্যক মহিলার গর্ভবতী হওয়ার আশঙ্কাও কম নয়। আমরা আমাদের দৈনন্দিন প্র্যাক্টিসে অনেক সময়েই দেখি, কোলে ৭ মাসের বাচ্চা নিয়ে যে মা চেক-আপে এসেছে সেই মা আবার ৫ মাসের গর্ভবতী। সে বুঝতেই পারেনি ব্যাপারটা, ভাবছে বাচ্চা হওয়ার পর দুধ খাওয়ানোর সময় কারও কারও যেমন পিরিয়ড বন্ধ থাকে তেমনই বন্ধ আছে। কাজেই এই ধরনের অবস্থার ওপর ভরসা না করে এই সময়ে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া যেসব মা চাকরি করেন (এখন বেশিরভাগই তাই) তারা তো আর বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না? মায়ের যদি কোনোক্রমে এইচআইভি, এইডস থাকে তা হলে তো বুকের দুধই বাচ্চাকে দেয়া চলবে না। তখন?
বার্থ কন্ট্রোল ভ্যাকসিন
এই ভ্যাকসিন তৈরির অনেক চেষ্টা ও গবেষণা চলছে কিন্তু এখনও আশানুরূপ ফলাফল হয়নি।
এমারজেন্সি কন্ট্রাসেপশন
হঠাৎই অসাবধানে মিলিত হওয়ার পর যদি গর্ভসঞ্চারের ভয় থাকে তা হলে এই ব্যবস্থার কথা ভাবা যেতে পারে। অবৈধভাবে গর্ভসঞ্চারের আশঙ্কা থাকলেও এই পদ্ধতি নেয়া যায়। মিলনের ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই বড়ি খেতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে তার পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন মতো এই ওষুধ খেতে হবে। এই ওষুধ কৃত্রিম উপায়ে তৈরি, দামও অনেক। তৃতীয় বিশ্বে, বিশেষত ভারতে এই বড়ি দেয়ার আগে মহিলাদের শরীর পঙ্খনুপুঙ্খুভাবে পরীক্ষার দরকার।
স্টেরিলাইজেশন অপারেশন লাইগেশন
স্থয়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা বন্ধ্যাত্ব এনে দেয় মহিলাদের শরীরে। জরায়ুর সংলগ্ন দুধারে দুটি ফ্যালোপিয়ান টিউব থাকে। এই নল দুটির যে দিকটায় শেষ দিক, সেই দিকের একটু আগে অর্থাৎ সমগ্র নলটিকে চার ভাগ করলে তৃতীয় ভাগের জায়গায় কেটে সুতো দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। এই অপারেশন খুবই নিরাপদ ও সহজ। আগে পেট কেটে এই অপারেশন করা হত, সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে। আজকাল অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করা হয় ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে, পেট সামান্য ফুটো করে। অজ্ঞান করতে লাগে না লোকাল অ্যানেস্থেসিয়াতেই করা যায়। রোগী সেই দিনই বাড়ি ফিরতে পারে সেলাই কাটার ব্যাপার নেই। ৩/৪ দিনেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসা যায়। প্রসবের অব্যবহিত পর বাচ্চা নষ্ট করিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাইগেশন করানো অনেক নিরাপদ। সবার জানা উচিত, যখন পেটে সন্তান নেই, তখন প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিলে অনেক উপসর্গ এড়ানো যায়।
অপরিণত মন নিয়ে অনুরোধ বা টাকার লোভে অল্পবয়সী (২০ থেকে ২৫ বছর) মেয়েদের ১টি বাচ্চার পরেই এই অপারেশন করানো ঠিক নয়। এত কম বয়সে সন্তান ধারণের মতা ব্যাহত হলে মানসিক অবসাদ, জরায়ু ও ওভারির কাজে বাধা ইত্যাদি অসুবিধা দেখা দিতে পারে। সাধারণত লাইগেশন অপারেশনে রোগীর বয়স ৩০-এর এধার ওধার হওয়া উচিত। যে মেয়ের দুটি বাচ্চা আছে এবং দ্বিতীয় বাচ্চাটিকে সব কটি সংক্রামক অসুখের টিকা দেয়া হয়ে গেছে (অর্থাৎ তার বয়স বছর দেড়েক) সেই মাকে অপারেশনের উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা হয়েছে, লাইগেশনের পর মায়ের দুটি বাচ্চাই মারা গেছে। সে ক্ষেত্রে রিক্যানালাইজেশন অপারেশন করে টিউব আবার জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। স্বামীর অজ্ঞাতসারে বা অবিবাহিতা মহিলার কখনওই লাইগেশন করা উচিত নয়। আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে যেখানে পেট খুলতেই হচ্ছে, সেখানে দম্পতির অনুমতি নিয়ে লাইগেশন করে দেয়াই ভালো। অনেক সময় দেখা যায় স্বামীর রোজগার নেই, চাকরি চলে গেছে, স্বামীকে না জানিয়ে মহিলা লাইগেশন করে নিলেন। সে ক্ষেত্রে আইনের দিকটিও ভাবতে হবে। তবে আশার কথা, মেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আইন এখন অনেকটাই মেয়েদের দিকে। লাইগেশন কররে শরীর কমজোরি হয়ে যায়, কর্ম ক্ষমতা কমে যায়, যৌনমতা লোপ পায়-এমন অনেক ভিত্তিহীন ধারণা আমাদের সমাজে আছে যার কোনোটিই ঠিক নয়। বরং নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবন মেয়েদের শরীর-মনে আলাদা আনন্দের স্বাদ এনে দেয়, নতুন করে বাঁচার রসদ জোগায়।
গর্ভনিরোধের ইতিহাস
সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় গর্ভনিরোধের ভাবনার সূত্রপাত। যদি মেয়েরা ভাবে আমি মা হব কখন এবং কবে, এটা তাদেরই চিন্তাভাবনার বিষয় হওয়া উচিত-এইভাবে চিন্তা শরু হয়েছিল। আরও পরে ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডে ও নাইট সোস্যালিস্টদের মধ্যে গর্ভনিরোধের ভাবনার উদয় হয়েছিল আর সেটা সারা পৃথিবীতে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৮৫০ সালে মধু, গঁদের আঠা, কুমিরের বিষ্ঠা মেয়েদের শরীরে ঢুকিয়ে রাখা হত গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে। তখনকার দিনে মায়েরা দুধ অনেক দিন ধরে খাইয়ে যেতেন পুনরায় গর্ভসঞ্চার বন্ধ করার জন্য। ২০ শতকের প্রথম দিকে মারি স্টোপস গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার কথা বিশেষভাবে ভাবেন। ১৬০০ সালে ডা. কনডম -এর কথা ভেবেছিলেন।
শোনা যায় বহু আগে শুকনো গোবর আর মধু যোনিদ্বারে রাখা হত গর্ভসঞ্চার বন্ধ করার জন্য। এও শোনা যায় ভারতে নাকি গাজরের বীজ খেতে দেয়া হত গর্ভনিরোধক বড়ি হিসেবে।
১৪০০ শতাব্দীতে লেখা হয়েছে-কোনো মহিলা যদি মৌমাছি খেয়ে নেয় তা হলে সে গর্ভবতী হবে না।
৪০০০ বছর আগে পুরনো কাহুন প্যাপিরাস (গাছের পাতা) হল সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত নিদর্শন। এতে লেখা আছে জন্মসংকোচন ব্যবস্থার ওপর। এখানেও কুমিরের বিষ্ঠার উল্লেখ আছে।
আরবেরা প্রথম আইইউডি (ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস) প্রবর্তন করেছে মেয়ে উটদের জরায়ুতে ছোট পাথর ঢুকিয়ে দিয়ে-যাতে মরুভূমিতে উট হঠাৎ গর্ভবতী না হয়।
কনডম পুরাকালে ছিল ভেড়া, ছাগল এমনকি সাপের চামড়া দিয়ে তৈরি। পাতলা কাপড়ের কথাও শোনা যায়।
পাতি লেবুর রসে কাপড় ভিজিয়ে যোনিদ্বারে রাখার কথাও পাওয়া গেছে। এখনও কোনো কোনো প্রত্যন গ্রামে শোনা যায় এই প্রক্রিয়া। শুঁটকি মাছের লেজও ব্যবহৃত হত।
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন যাত্রার যেমন পরিবর্তন হয়েছে, আয়ুও তেমন বাড়ছে। জনবিস্ফোরণের সমুদ্রের ঢেউ কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। সর্বণেই মেয়েদের ওপর বলির খাঁড়া-গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা তাকেই নিতে হবে। এত যে আনর্জাতিক মানের সমীক্ষা হচ্ছে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে পরিবারগতভাবে প্রতিটি মহিলা জন্মসূত্রে তার জননস্বাস্থ্যের জন্য এই কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবস্থার মধ্যে থাকছে। জন্মের হার, পরিবারের মাপ, জনবিস্ফোরণ নির্ভর করে জলবায়ু, পুষ্টির মান, জনস্বাস্থ্য, বিয়ের বয়স, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, পুত্র সন্তানের চিন্তা, সম্পত্তির আইনগত দিক, ধর্ম, রাজনীতি, যুদ্ধের সমস্যা, শিক্ষার মান, সর্বশেষে শিশু মৃত্যুর হারের ওপর।
যেখানে স্বামী বা স্ত্রীর কোনো অসুখ আছে সেখানে তখন সেই সময় গর্ভসঞ্চার না হওয়াই ভালো।
মেয়েটির যদি টিউবারকিউলোসিস, নেফ্রাইটিস, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদযন্তের অসুখ, মানসিক বৈকল্য, থ্যালাসিমিয়া ইত্যাদি থাকে, তা হলে গর্ভাবস্থা ও প্রসব মেয়েটির জীবনের আশঙ্কা এনে দেয়। বার বার গর্ভপাত, সিজারিয়ান সেকশন, জরায়ুতে টিউমার, এপিলেপসি- মেয়েটি যদি এই সবের শিকার হয় তবে পুনরায় গর্ভবতী হওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই দরকার। ছোট বয়সে বিয়ে হলে তাড়াতাড়ি সন্তান কিছুতেই নয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় সন্তান ধারণ সম্পর্কে মেয়েটির কোনো ধারণাই নেই। সেই জন্য তরুণ-তরুণীদের প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে আজকাল এত জোর দেয়া হচ্ছে। মেয়েদের অ্যাসিমিয়ার চিকিৎসাও আজ জনস্বাস্থ্যের মধ্যে পড়ে।
অনেক সময় ছোট মেয়েরা অনৈতিকভাবে গর্ভপাত করানোর জন্য ডাক্তারের কাছে আসে-তাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সব বুঝিয়ে বলা দরকার।
যে কোনো মেয়ে বা মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হওয়া (মেনার্ক) থেকে বন্ধ হওয়া (মেনোপজ) পর্যন্ত গর্ভসঞ্চারের ভয় থেকেই যায়। অবাঞ্ছিত গর্ভসঞ্চারের হাত থেকে বাঁচতে হলে চাই পরিবার, স্বামী, সমাজ ও চিকিৎসকের সাহায্য, ওষুধের অপব্যবহার সেখানে সাহায্যের মাপকাঠি নয়।
প্রশ্ন  উত্তর
পিল খেলে শোনা যায় ক্যান্সার হয়? সত্যি?
পিল খাওয়ার সঙ্গে জরায়ু বা স্তনের ক্যান্সারের প্রত্য কোনো সম্বন্ধ নেই। প্রজেস্টেরোন হরমোন আসলে ক্যান্সার রোধ করতেই সাহায্য করে। এ পর্যন্ত গর্ভনিরোধক পিলের হরমোন মানুষ বা জন্তুজানোয়ারের ক্যান্সার সৃষ্টি করে এমন প্রমাণ মেলেনি।
পিল খেলে লিভারের নাকি দফারফা?
হাজারে একটি বা দুটি ক্ষেত্রে লিভারের বিভিন্ন এনজাইমের পরিবর্তন হয়ে পিত্ত নিঃসরণ ব্যাহত হলেও হতে পারে। প্রায় ক্ষেত্রেই এ ঝুঁকি নেই-আর ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিলে আর কোনো অসুবিধা নেই।
ডায়াবেটিস থাকলে পিল খাওয়া যায়?
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীকে পিল না দিয়ে অন্য উপায় অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়।
পিল খেলে কি সন্তান সম্ভাবনা হ্রাস পায়?
না। পিল বন্ধ করার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার গর্ভসঞ্চার হয়।
পিল খেলে কি পিরিয়ডের গন্ডগোল হতে পারে?
পিল খেতে ভুল হলে ঋতুচক্রের মাঝখানে আবার ব্লিডিং শুরু হতে পারে। সেরকম হলে পিলের ডোজ বাড়িয়ে একটির বদলে দুটি খেয়ে নেয়া উচিত এবং সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে জানিয়ে রাখা উচিত।
কপার-টি পরলে কি ব্লিডিং বেশি হয়?
খুব কম ক্ষেত্রে হতে পারে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে নিলেই সমাধান হয়ে যাবে।
লাইগেশন করানোর পর নাকি অনেক মহিলা মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েন? সত্যি?
দম্পতির মানসিক ও শারীরিক অবস্থা যাচাই করে তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই অপারেশন করা হয়-কাজেই অপারেশনের পর মনের রোগের প্রশ্নই ওঠে না। তবে হ্যাঁ, দুটি সন্তানই যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংঘাতিক অশান্তি, বিধবা বা ডিভোর্সি মহিলার পুনর্বার বিবাহের সম্ভাবনা হলে তবেই মনের ওপর চাপ পড়তে পারে।
বিয়ের পরে পরেই যদি প্রেগন্যান্সি হয়ে যায়, প্রথম বাচ্চা কি নষ্ট করা উচিত?
সাধারণভাবে প্রথম বাচ্চা নষ্ট না করার পরামর্শ ডাক্তার মাত্রেই দিয়ে থাকেন। প্রথম গর্ভাবস্থায় ইউটেরাসের মুখ এত নরম ও সরু থাকে যে, যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রসারিত করার সময় জরায়ুমুখ বা জরায়ুর পেশি ছিড়ে গিয়ে রক্তস্রাব, প্রদাহ হতে পারে। স্বামী বললেও মেয়েদের বাবা-মাকে না জানিয়ে কখনই এই সময়ে গর্ভমোচনে রাজি হওয়া উচিত নয়। এছাড়া কোনোভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউবে সংক্রমণ হলে পরে টিউব ব্লক হয়ে ভবিষ্যতে সন্তান নাও হতে পারে।
তবে অবিবাহিত মেয়ের ক্ষেত্রে সবদিক ভেবে দেখে উপায় না থাকলে অ্যাবরশন করতেই হবে। অবশ্যই উপযুক্ত শিতি ডাক্তারের কাছে করাতে হবে। হাতুড়ে বা অশিক্ষিত ডাক্তারের কাছে গেলে ফুল বা ভ্রূণের অংশ জরায়ুর মধ্যে থেকে যেতে পারে, জরায়ুর মুখ ছিড়ে যেতে পারে, জীবাণু আক্রান্ত হয়ে পেরিটোনাইটিস হতে পারে, আভ্যন্তর রক্তস্রাবের কারণে মায়ের কোলাপস ও শক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। দেশ পাড়া গাঁয়ে আজ এই অত্যাধুনিক যুগেও অনেক মেয়ে গুণিন বা ওই জাতীয় চিকিৎসায় (জরায়ুতে শিকড় বা কাঠি ঢুকিয়ে গর্ভমোচনের চেষ্টা) মারা যায়।
পিল দেয়ার আগেকার চেকলিস্ট
নিম্নলিখিত বিষয়গুলো দেখতে হবে
  • বয়স চল্লিশের বেশি কি না
  • বয়স ৩৫ এবং মহিলা সিগারেট খান কি না
  • এপিলেপসি আছে কি না
  • পায়ের পেশিতে কোনো ব্যথা আছে কি না
  • বুকে কোনো ব্যথা আছে কি না
  • হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হয় কি?
  • মাথাব্যথা হয় কি?
  • ব্রেস্টফিডিং করায় কি?
  • পিরিয়ড বন্ধ আছে কি?
  • জন্ডিস কাছাকাছি সময়ে হয়েছিল কি?
  • রক্তচাপ কত?
  • পায়ে ফোলা আছে?
  • সব রকম পরীক্ষা করে দেখে তবেই ডাক্তার পিল দেবেন। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শে পিল খেলে ভয়ের কিছু নেই।


  মনোজগত  : সেপ্টেম্বর, ২০০৪ 

 আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ।
 বিষয়ঃ  সেক্স গাইড

 এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :