তিন মাসে ২০০ সন্ত্রাসী মুক্তি পেয়েছে
কোন মন্তব্য নেই
Daily Manab Zamin | তিন মাসে ২০০ সন্ত্রাসী মুক্তি পেয়েছে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

কিছু প্রয়োজনীয় "যৌনসঙ্গম" এর ছবি দেখুন।

২টি মন্তব্য


পোস্ট টি পড়ে নিন>>>
 কিছু প্রয়োজনীয় "যৌনসঙ্গম" স্টাইল *<<<
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

ইসলাম ধর্ম নিয়ে তথ্য।

কোন মন্তব্য নেই
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
 
 
ইসলাম (আরবি ভাষায়: الإسلام আল্‌-ইসলাম্‌) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। "ইসলাম" শব্দের অর্থ "আত্মসমর্পণ", বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পন। খ্রিষ্টিয় সম্তম শতকে আরবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা মুহাম্মদ (সাঃ) এই ধর্ম প্রচার করেন। কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। কুরআন আল্লাহর বাণী এবং তার কর্তৃক মুহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়।
ইহুদিখ্রিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও আব্রাহামীয়[১] মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১৪০ কোটি ও তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী[২] মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।[৩] বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়া পত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান |অনারব এবং আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান সংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ বিশভাগ।[৪] যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।[৫][৬]

পরিচ্ছেদসমূহ

ধর্মবিশ্বাস

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মুল ভিত্তি আল্লাহ্‌র একত্তবাদ। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ মানবজাতির জন্য তাঁর বাণী ফেরেস্তা জীব্রাইল (আঃ) মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট অবতীর্ণ করেন। কুরআনে বর্নীত "খতমে নবুয়্যত" এর ভিত্তিতে মুসলমানরা তাঁকে শেষ বাণীবাহক (রাসূল) বলে বিশ্বাস করেন। তারা আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নিখুঁত, অবিকৃত ও মানব এবং জিনজাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে।
মুসলমানদের বিশ্বাস, আদম (আঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ্-প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই আব্রাহামের শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে "আহলে কিতাব" বলে সম্বোধন করা হয়েছে এবং বহুদেবতাবাদীদের থেকে আলাদা করা হয়েছে। এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ কুরআনেও রয়েছে, তবে অনেকক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের অনুসারীগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন; ইহুদিগণ তৌরাতকে (তোরাহ) ও খ্রিস্টানগণ ইনজিলকে (নতুন বাইবেল)। মুসলমানদের বিশ্বাস ইসলাম ধর্ম আদি এবং অন্ত এবং স্রষ্টার নিকট একমাত্র গ্রহনযোগ্য ধর্ম।

আল্লাহ

মূল নিবন্ধ: আল্লাহ
মুসলমানগণ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকরতাকে 'আল্লাহ' বলে সম্বোধন করেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ। ইসলাম পরম একেশ্বরবাদী ও কোনোভাবেই আপেক্ষিক বা বহুত্ববাদী নয়। আল্লাহর একত্ব ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম, যাকে বলা হয় শাহাদাহ। এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে, (এক) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং (দুই) মুহাম্মদ [স.] তাঁর প্রেরিত বাণীবাহক বা রাসূল সুরা এখলাছে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে [قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ] {الاخلاص:1-4}
"বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।"১১২:১-৪[৭]
ব্যুৎপত্তিগতভাবে আল্লাহ শব্দটি "ইলাহ" থেকে আগত। খ্রিস্টানগণ খ্রিস্ট ধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলমানগণ খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদ (trinity) বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন, এই বিশ্বাসকে বহু-ঈশ্বরবাদী ধারণা বলে অস্বীকার করে। ইসলামি ধারণায় ঈশ্বর সম্পূর্ণ অতুলনীয়, যার কোনোপ্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব ও পৌত্তলিকতার সমতুল্য। এধরনের অবয়বহীনতার ধারণা ইহুদি ও কিছু খ্রিস্টান বিশ্বাসেও দেখা যায়। মুসলমানরা তাদের সৃষ্টিকরতাকে বর্ণনা করেন তাঁর বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে।

ফেরেশতা

মূল নিবন্ধ: ফেরেশতা
ফিরিশতা বা ফেরেশতা ফারসী শব্দ। ফেরেশতা আরবী প্রতিশব্দ হলো 'মালাইকা'। ফেরেশতায় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসের একটি মূল নীতি। এরা অন্য সকল সৃষ্টির মতই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি। তাঁরা মুলত আল্লাহ্‌র দুত। ফেরেশতারা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তারা সর্বদা ও সর্বত্র আল্লাহ্‌র বিভিন্ন আদেশ পালনে রত এবং আল্লাহর অবাধ্য হবার কোন ক্ষমতা তাদের নেই। ফেরেশতারা নূর তথা আলোর তৈরি। রূহানিক জীব বলে তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না। তারা সুগন্ধের অভিলাষী এবং পবিত্র স্থানে অবস্থান করেন। তারা আল্লাহর আদেশ অনুসারে যেকোন স্থানে গমনাগমন ও আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন।
ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত। ইসলামে তাদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা না হলেও চারজন গুরুদায়ীত্ব অর্পিত প্রধান ফেরেশতার নাম উল্লেখযোগ্য:
হযরত জীব্রাইল (আঃ) – ইনি আল্লাহর দূত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। এই ফেরেশতার নাম তিনবার কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা ২:৯৭; ৯৮, ৬৬:৪)। সূরা ১৬:১০২ আয়াতে জিবরাইল ফেরেশতাকে পাকরূহবা রুহুল ক্বুদুস বলা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এবং সংবাদ আদান-প্রদান যেসব ফেরেশতার দায়িত্ব, জিব্রাইল তাদের প্রধান। জিব্রাইল-ই আল্লাহর বাণী নিয়ে নবীদের কাছে গমনাগমন করেন।
হযরত মিকাইল (আঃ) – কুরআনের ২:৯৭ আয়াতে এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি বৃষ্টি ও খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। হযরত ইসরাফিল (আঃ) – এই ফেরেস্তা আল্লাহ্‌র আদেশ পাওয়া মাত্র শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার মাধ্যমে কিয়ামত বা বিশ্বপ্রলয় ঘটাবেন। তার কথা কুরআন শরীফে বলা না হলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আজরাইল (আঃ) বা মালাক আল-মাউত – ইনি মৃত্যুর ফেরেস্তা ও প্রাণ হরণ করেন। বিশেষ শ্রেণীর ফেরেশতা যাদেরকে কুরানে 'কিরামান কাতিবিন' (অর্থ- সম্মানিত লেখকগণ) বলা হয়েছে তাঁরা প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ কাজের হিসাব রাখেন। কবরে মুনকির ও নাকির নামের দুই ফেরেশতা মানুষকে তার কৃত কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মালিক নামের ফেরেশতা নরক বা জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং রিদওয়ান নামের আরেক ফেরেশতা জান্নাত বা বেহেশতের দেখভাল করেন। ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্ম ছাড়া হিন্দু ধর্মেও ফেরেশতা তথা স্বর্গীয় দূতদের অস্তিত্ত্বের কথা বলা হয়েছে।

কুরআন

মূল নিবন্ধ: কুরআন
হাত্তাত আজিজ এফেন্দির হস্তলিখিত - কুরআনের প্রথম সুরা।
কুরআন মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ। তাদের বিশ্বাসে কুরআন স্রষ্টার অবিকৃত, হুবহু বক্তব্য। এর আগে স্রষ্টা প্রত্যেক জাতিকে বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোকে বিকৃত করা হয়। বাংলায় কুরআনকে আরো বলা হয় "আল-কুরআন" বা "কুরআন শরীফ"। "কুরআন"-এর জায়গায় বানানভেদে "কোরআন" বা "কোরান"ও লিখতে দেখা যায়।
ইসলাম ধর্মমতে, জীব্রাইল ফেরেস্তার মাধ্যমে মুহাম্মদের (সাঃ) নিকট ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬ই জুলাই, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু অবধি বিভিন্ন সময়ে স্রষ্ঠা তাঁর বাণী অবতীর্ণ করেন। এই বাণী তাঁর অন্তস্থ ছিলো, সংরক্ষণের জন্য তাঁর অনুসারীদের দ্বারা পাথর, পাতা ও চামড়ার উপর লিখেও রাখা হয়।
অধিকাংশ মুসলমান কুরআনের যেকোনো পাণ্ডুলিপিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন, স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করে নেন। কুরআন জীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় না, বরং পুড়িয়ে ফেলা হয় বা পরিষ্কার পানিতে ফেলে দেয়া হয়।
অনেক মুসলমানই কুরআনের কিছু অংশ এর মূল ভাষা আরবিতে মুখস্ত করে থাকেন, কমপক্ষে যেটুকু আয়াত নামাজ আদায়ের জন্য পড়া হয়। সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্তকারীদের হাফিজ (সংরক্ষণকারী) বলা হয়। মুসলমানরা আরবি কুরআনকেই কেবলমাত্র নিখুঁত বলে বিশ্বাস করেন। সকল অনুবাদ মানুষের কাজ বিধায় এতে ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং বিষয়বস্তুর মূল প্রেরণা ও সঠিক উপস্থাপনা অনুবাদকর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারে বিধায় অনুবাদসমূহকে আরবি কুরআনের কখনোই সমতুল্য ও সমান নিখুঁত গণ্য করা হয় না।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম

মূল নিবন্ধ: মুহাম্মদ
মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন তৎকালীন আরবের বহুল মর্যাদাপুর্ন কুরাঈশ বংশের একজন। নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে তাঁর বিশেষ গুনের কারনে তিনি আরবে "আল-আমীন বা "বিশ্বস্ত" উপাধিতে ভূষিত হন। স্রষ্টার নিকট হতে নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায় বা উম্মাহ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ বাণীবাহক (নবী) হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা হয়। মুসলমানরা তাঁকে একটি নতুন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে দেখেন না। তাঁদের কাছে মুহাম্মদ (সাঃ) বরং আল্লাহ প্রেরিত নবী-পরম্পরার শেষ নবী, যিনি আদম (আঃ), ইব্রাহিম (আঃ) ও অন্যান্য নবী (আঃ) প্রচারিত একেশ্বরবাদী ধর্মেরই, যা বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়েছে, ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন এবং ইসলামকে শেষ প্রেরিত ধর্ম হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেন।
ইসলাম ধর্মমতে, তিনি চল্লিশ বছর বয়স হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৩ বছর যাবৎ ফেরেশতা জীব্রাইল (আঃ) মারফত ঐশ্বী বাণী লাভ করেন। এই বাণীসমূহের একত্ররূপ হলো কুরআন, যা তিনি মুখস্ত করেন ও তাঁর অনুসারীদের (সাহাবী) দিয়ে লিপিবদ্ধ করান। কারণ, তিনি নিজে একজন অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ ছিলেন। সকল মুসলমান বিশ্বাস করেন মুহাম্মদ (সাঃ) এই বাণী নির্ভুলভাবে প্রচার করেছেন:
"সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করতো, তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তাঁর গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।" ৬৯:৪৪-৪৭ [৭]
মুহাম্মদ (সাঃ) ও সর্বোপরি সকল নবী (সাঃ) কখনো ভুল করেননি, এমন বিশ্বাস সুন্নি মতে না থাকলেও শিয়ারা এমন বিশ্বাস সকল নবী ও তাদের ইমামদের ক্ষেত্রে পোষণ করে। মুহাম্মদের (সাঃ) ভুল করা বা আল্লাহর নিকট অসন্তোষজনক কাজ করার উদাহরণ হিসেবে নিম্নলিখিত আয়াতটি আলোচনা করা হয় [৮]:
"হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করেছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্য তা নিজের উপর হারাম করছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।" ৬৬:১ [৭]
এভাবে কুরআনের আরও কয়েক জায়গায় মুহাম্মদের (সাঃ) কাজ শুধরে দেয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলো আল্লাহর বাণী নির্ভুল এবং অপরিবর্তিতভাবে প্রচার করার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কারণ নির্ভুলভাবে প্রচারের ইচ্ছা না থাকলে নিজের অসম্মান হয় এমন কিছুই তিনি প্রচার করতেন না। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, মানুষ হিসেবে সিদ্ধান্ত দিতে হলে মুহাম্মদ (সাঃ) ভুল করতেন, কিন্তু ঐশ্বিক বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি কখনও ভুল করেননি।
মুসলমানদেরকে শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে "সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম" বলতে হয়। এর অর্থ: তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। একে বলা হয় দুরুদ শরীফ। এছাড়াও আরও অনেক দুরুদ হাদীসে বর্ণীত আছে। তাঁর মধ্যে এটাই সর্বপেক্ষা ছোট। কোনো এক বৈঠকে তাঁর নাম নিলে দুরুদ একবার বলা অবশ্য কর্তব্য (ওয়াজিব)। এছাড়াও যতবার তাঁর নাম উচ্চারিত হবে, ততবার দুরুদ বলা বা মনে মনে বলা সুন্নত। ইসলাম এভাবেই মুসলমানদেরকে দোয়া'র শিক্ষা দেয়।

হাদিস

মূল নিবন্ধ: হাদিস
'হাদীস' (اﻠﺤﺪﻴث) আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- কথা, বাণী, কথা-বার্তা, আলোচনা, কথিকা,সংবাদ, খবর, কাহিনী ইত্যাদি। [আধুনিক আরবি বাংলা অভিধান, ড.ফজলুর রহমান,রিয়াদ প্রকাশণী ২০০৫]ইসলামী পরিভাষায় মুহাম্মদের (সাঃ) কথা, কাজ ও অনুমোদন এবং তাঁর দৈহিক ও চারিত্রিক যাবতীয় বৈশিষ্ট্যকে হাদীস বলে। [ মুহাম্মদের (সাঃ) জীবদ্দশায় তাঁর সহচররা তাঁর হাদীসসমূহ মুখস্থ করে সংরক্ষণ করতেন। তখনও হাদীস লেখার অনুমতি ছিলো না, যাতে হাদীস এবং কোরআন পরস্পর মিলে না যায়।
মুহাম্মদের (সাঃ) কথা-কাজসমূহের বিবরণ লোকপরম্পরায় সংগ্রহ ও সংকলন করে সংরক্ষণ করা হলে তাঁর বক্তব্যসমূহ পরবর্তি প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত হয়। বিভিন্ন বিখ্যাত পন্ডিতেরা এই কাজে ব্রতী ছিলেন। তাঁদের সংকলিত সেসব হাদিস সংকলন গ্রন্থের মধ্যে ছয়খানা গ্রন্থকে 'বিশুদ্ধ হাদিস সংকলন' (সিয়াহ সিত্তাহ) আখ্যা দেয়া হয়। তাই বলে এটা ভাবা ভুল হবে যে, এই ছয়খানা গ্রন্থের বাইরে আর কোনো বিশুদ্ধ হাদিস নেই। এর বাইরেও বহু বিশুদ্ধ হাদিসের সংকলন রয়েছে। হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো সনদ বা "হাদিস প্রাপ্তির সুত্র" যাচাই।

কেয়ামত

কেয়ামতে বা শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস ইসলামের মূল বিশ্বাসগুলির একটি| ইসলাম ধর্মে কেয়ামত বা কিয়ামত হলো সেই দিন যে দিন এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আল্লাহ সৃষ্ট সকল জীবকে পুনরুত্থান করা হবে বিচারের জন্য| সকল জীবকে তার কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্যে এবং তার কৃতকর্মের ফলাফল শেষে পুরস্কার বা শাস্তির পরিমান নির্ধারণ শেষে জান্নাত/বেহেশত/স্বর্গ কিংবা জাহান্নাম/দোযখ/নরক এ পাঠানো হবে|

ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহ

ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভ রয়েছে। এগুলো হলো-

ধর্মগ্রন্থ

মূল নিবন্ধ: কুরআন
মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থের নাম কুরআন। এটি একটি আসমানী গ্রন্থ। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) নিকট অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা বা অধ্যায় আছে। আয়াত বা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৬,৬৬৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবর্তীর্ণ হয়। আল্লাহ তা'আল সূরা আল হিজর এ বলেছেনঃ
আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। --- (আয়াত ৯)[৯]

তথ্যসূত্র

  1. Vartan Gregorian (2003). Islam: A Mosaic, Not a Monolith. প্রকাশক: Brookings Institution Press. (Washington D.C.). পৃষ্ঠাসমূহ- p. ix. ISBN 0-8157-3283-X.
  2. Teece, Geoff (2005). Religion in Focus: Islam. প্রকাশক: Smart Apple Media. পৃষ্ঠাসমূহ- p. 10.
  3. Nelson, Lynn Harry. Islam and the Prophet Muhammad
     
    . প্রকাশক: Kansas University। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-17.
    - "One must remember that we are talking about the Muslim expansion, not Arab conquests. The expansion of Islam was as much, or perhaps much more, a matter of religious conversion than it was of military conquest."
  4. John L Esposito (2002). What Everyone Needs to Know About Islam. প্রকাশক: Oxford University Press US. পৃষ্ঠাসমূহ- p. 2. ISBN 0-19-515713-3.
  5. Office for National Statistics (2003-02-13). Religion In Britain
     
    । সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-27.
  6. BBC (2005-12-23). Muslims in Europe: Country guide
     
    । সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-28.
  7. ৭.০ ৭.১ ৭.২ পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর). প্রকাশক: খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প. ১৪১৩ হিজরী. পৃষ্ঠাসমূহ- ১৪৮০ পাতা.
  8. The Sinlessness of the Prophets in Light of the Qur'an
     
    , by R. Azzam, USC-MSA Compendium of Muslim Texts, March 27, 2000, retrieved March 27, 2006
  9. altafsir.com
     
    কুরাআনের বাংলা অনুবাদ।




শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার ধর্ম নয়

কোন মন্তব্য নেই

farhad_careerist_1272617999_2-1193348148292kqh

“সাম্প্রদায়িকতা” এই শব্দটির সাথে আমরা কম বেশী সবাই পরিচিত। অনেকে কথায় কথায় বলে ফেলেন ইসলাম সামপ্রদায়িক!.. । কোন ব্যক্তির সাম্প্রদায়িতার জন্য ইসলাম কে সাম্প্রদায়িক বলা উচিৎ নয়। ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার ঘোরতর বিরোধী। ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই, একথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যেমন..
হযরত শুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুশুম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা আমাদের উদ্দেশ্য ভাষণ দিলেন। অতঃপর বললেন তোমাদের মধ্য সেই ব্যক্তিই উত্তম যে নিজ গোত্রের অন্যায় অপরাধকে দমন করে ততক্ষণ পর্যন্ত সে অপরাধ না করে। মিশকাত ৪৬৮৭/২৬৭
ইমাম আবূ দাউদ (র) হাদীসটি বর্ণনা করেন
হযরত জুবায়ের ইবনে মুতয়িম (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি স্বজনপ্রিতী ও সাম্প্রদায়িকতার দিকে লোকজনকে আহবান করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। যে ব্যক্তি নিছক সাম্প্রদায়িকতার কারনে যুদ্ধ করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি স্বজনপ্রিতীর উপর মৃত্যূবরন করে সেও আমাদের দলভূক্ত নয়। মিশকাত ৪৬৮৮/২৬৮ ইমাম আবূ দাউদ (র) হাদীসটি বর্ণনা করেন।
উল্লেখিত হাদীসের আলোকে একথা র্নিদ্বিধায় বলা
যায় ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা এবং স্বজনপ্রিতীর স্হান নেই। কেও যদি ইসলামের নাম ভাঙিয়ে সাম্প্রদায়িক এবং স্বজনপ্রিতী করেন তাহলে বুঝতে হবে সে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলাম কে ব্যবহার করছে।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

কবীরা গুনাহ বা মহা পাপ

কোন মন্তব্য নেই

লিখেছেন: ত্বায়্যিব উল্লাহ নাসিম
“إن تجتنبو كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سيئاتكم و يدخلكم مدخلا كريما”(النساء-31)
কুরানে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,তোমরা যদি সেই মহা পাপ সমূহ থেকে বিরত হও যা হতে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে,তা হলেই আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবো এবং তোমাদের সন্মানপ্রদ গন্তব্যস্থানে প্রবিষ্ট করবো।(নিসা-৩১)
বর্ণীত আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় এবং নিজ দায়িত্বে ঐব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জামিন হয়েছেন যে ব্যক্তি কবিরা গুনাহ সমূহ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে।কেননা সগিরা গুনাহগুলো জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের রোজা ইত্যাদী দ্বারা মাফ হয়ে যায়। হাদীস শরীফে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা থেকে অন্য জুমা ও এক রমজান থেকে অন্য রমজান-মধ্যবর্তি সময়ের সগিরা গুনাহ সমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ,যদি বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।(মুসলিম)অর্থাৎ বান্দা যদি নিজেকে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে,তবে এক নামাজ থেকে দ্বিতীয় নামাজের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কোন সগিরা হয়ে থাকলে তা দ্বিতীয় নামাজ আদায়ের দ্বারাই মাফ হয়ে যাবে।এমনিভাবে জুমা ও রমজানের দ্বারাও তার মধ্যবর্তি গুনাহ মাফ হবে।
এ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাথে আরো একটি বিষয় দ্রষ্টব্য যে উলামায়ে কিরামের ভাষ্যানুযায়ি কবিরা গুনাহ যেমন তাওবা ও ইস্তেগফারের পর কবিরা গুনাহ থাকেনা অর্থাৎ মাফ হয়ে যায় তেমনিভাবে সগিরা গুনাহ ও বার বার করার দ্বারা সগিরা গুনাহ থাকেনা,তা কবিরা গুনাহে রূপান্তরীত হয়ে যায়।সুতরাং কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে প্রথমত কবিরা গুনাহকে জানতে হবে এবং সেগুলো চিনতে হবে।কেননা না চিনলে তা থেকে নিজেকে বাঁচাবো কিভাবে।এ প্রসংগেই হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ বলেন,মানুষ রাসূল সাঃ কে ভাল কাজের ব্যপারে প্রশ্ন করতো,অথচ আমি মন্দ কাজের ব্যপারে জেনে নিতাম,এ ভয়ে যে খারাপ যেন আমাকে না পেয়ে বসে।
কবীরা গুনাহের পরিচয়
অনেকেই মনে করে থাকেন যে কবিরা গুনাহ শুধুমাত্র সাতটি, যা হাদীসে কাবায়েরে(কবিরা গুনাহ সম্পর্কিত হাদীস)উল্লেখ আছে।কিন্তু এ ধারণাটি সঠিক নয়।কেননা এ সাতটি কাজ কবিরা গুনাহ ঠিকই,কিন্তু এ হাদীসের মধ্যে কবিরা গুনাহ কে এ সাতটির মধ্যে সিমাবদ্ধ করা হয়নি।অর্থাৎ এ হাদীসে রাসূল সাঃ এসাতটির মধ্যে কবিরা গুনাহকে সিমাবদ্ধ করেননি,সাতটি ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহের বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র।এ প্রসংগেই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,কবিরা গুনাহ গণনা করলে সত্তরটি পর্যন্ত হয়।আর এসাতটি ঐ সত্তরটিরই অংশ।(বর্ণনায়-ইমাম ত্বাবারী)
আল্লামা শামছুদ্দীন যাহবী রাঃ বলেন,হাদীসে কাবায়ের এর সাতটি গুনাহের মধ্যে কবিরা গুনাহের সিমাবদ্ধতা নেই।
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহঃ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরাম বলেন,”কবীরা গুনাহ হল প্রত্যেক ঐ গুনাহ যার জন্য দুনিয়াতে শাস্তির বিধান রয়েছে অথবা আখিরাতে শাস্তির ধমকি বা হুসিয়ারি দেয়া হয়েছে” আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহঃ একটু বাড়িয়ে এও বলেছেন,যে গুনাহের জন্য ঈমান চলে যাওয়ার ধমকি এসেছে কিংবা লানত(বদ দোয়া)ইত্যাদী করা হয়েছে তাও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত।আর এ কবীরা গুনাহকে  উলামায়া কিরাম গণনা করে সত্তর বা ততধিক পেয়েছেন।
 কবীরা গুনাহের বর্ণনা   
নিম্নে যে কবিরা গুনাহ গুলোর বর্ণনা পেশ করছি সে গুলো কবিরা গুনাহ হওয়ার পক্ষে কুরান ও হাদীসে একাধিক প্রমান রয়েছে।এখানে এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।
১-আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক করা
২-মানুষ হত্যা করা
৩-যাদু করা(ভান, টোনা মেরে মানুষের ক্ষতি করা
৪-নামাজ না পড়া
৫-জাকাত আদায়ে অস্বিকার করা
৬-কোন বৈধ কারণ ছাড়া রমজানের রোজা না রাখা
৭-শক্তি ও সামর্থ থাকা সত্বেও হজ্ব না করা
৮-পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া
৯-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করা
১০-জিনা বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া
১১-সমকামিতা বা মহিলার পেছন পথে সংগম করা
১২-সুদ খাওয়া
১৩-এতিমের সম্পদ ভক্ষণ(ভোগ)করা
১৪-আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যা আরোপ করা
১৫-জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা
১৬-রাষ্ট্র প্রধান কতৃক প্রজাদের সম্পদ ও অধিকার আত্মসাত এবং প্রজাদের উপর অত্যাচার করা
১৭-অহংকার
১৮-মিথ্যা স্বাক্ষি দেয়া
১৯-মদ পান করা
২০-জুয়া
২১-সতি সাধবী মহিলার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া
২২-যুদ্ধ লব্দ মাল থেকে আত্মসাত করা
২৩-চুরি করা
২৪-ডাকাতি করা
২৫-মিথ্যা কসম বা শপথ
২৬-জুলুম বা অত্যাচার
২৭-চাঁদাবাজি
২৮-হারাম মাল ভক্ষণ এবং যে কোন ভাবে তা ব্যবহার করা
২৯-আত্মহত্যা করা
৩০-মিথ্যা বলা
৩১-আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধানে বিচার কার্য সম্পাদন করা
৩২-ঘুষ খাওয়া এবং ঘুষ নিয়ে কারো পক্ষে রায় দেয়া
৩৩-পোষাক পরিচ্ছেদ,চলা ফেরা ইত্যাদীতে নারী পুরুষের রূপ ধারণ করা কিংবা পুরুষ নারীর রূপ ধারণ করা
৩৪-দু জনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা এবং (দাইয়ূছ)যে নিজের পরিবারের অপকর্ম কে উদারমনা হয়ে সমর্থন করে
৩৫-হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয়েছে(স্ত্রী কে তিন তালাক দেয়ার পর স্বামির জন্য ঐ স্ত্রী হারাম হয়ে যায়।কিন্তু ঐ মহিলার দ্বিতীয় কোথাও স্বাভাবিক বিয়ে হওয়ার পর যদি ঐ স্বামি তাকে তালাক দেয় তবে এই মহিলা তার প্রথম স্বামির জন্য হালাল হয়।পূণরায় বিয়ে করে তাকে গ্রহন করতে পারে।অথচ এখন দেখা যায় স্বামি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার চুক্তি ভিত্তিক হিল্লা বিয়ে দেয়া হয় কিছু সময়ের জন্য।যখন চুক্তি মাফিক চুক্তি বিয়ের স্বামি মহিলাকে
তালাক দেয়,প্রথম স্বামি পূণঃ বিয়ে পড়ে তাকে গ্রহন করে।এটা শরিয়ত সন্মত নয়।এখানে চুক্তি ভিত্তিক স্বামি হল হালাল কারী আর প্রথম স্বামি হল যার জন্য হালাল করা হয়েছে।এখানে উভয়েই এই কবিরা গুনায় সমান অংশিদার।)
৩৬-প্রস্রাব থেকে পরিচ্ছন্ন না থাকা(এটা খৃষ্টান্দের একটি সংস্কৃতি)
৩৭-চতুস্পদ প্রাণীর মুখে লোহা দিয়ে চিহ্ন দেয়া
৩৮-দুনিয়া হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে দ্বিনী এলেম শিক্ষা করা এবং এলেম শিক্ষা করে তা প্রচার ও প্রকাশ না করে লুকিয়ে রাখা
৩৯-গচ্ছিত মাল বা আমানতের খেয়ানত করা
৪০-কারো উপর দয়া,অনুগ্রহ,দান বা উপকার করে খোঁটা দেয়া
৪১-তাক্বদীর বা ভাগ্য কে অস্বিকার করা
৪২-চুপি চুপি লুকিয়ে মানুষের গোপন কথা শ্রবণ করা
৪৩-চোগলখোরি বা বিবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এক জনের কথা অন্যের নিকট আদান প্রদান করা
৪৪-কাউকে লানত বা গালিগালাজ করা
৪৫-অঙ্গীকার,ওয়াদা বা চুক্তি ভঙ্গ করা
৪৬-জ্যোতিষি গনক বা যাদুকরকে বিশ্বাস করা
৪৭-স্ত্রী স্বামির অবাধ্য হওয়া
৪৮-মূর্তি বানানো বা প্রাণীর নোংরা ছবি,পেইন্টিং বানানো
৪৯-বিপদের সময় চিৎকার করে কান্নাকাটি করা,বুক বা মুখ চাবড়ানো,পরিধেয় পোষাক ছিঁড়ে ফেলে,মাথা ন্যড়া করা,চুল ছিঁড়ে ফেলা,নিজেদের জন্য ধ্বংশ ইত্যাদী ডেকে বিলাপ করা
৫০-বিদ্রোহ করা বা অতিরঞ্জিত করা
৫১-দুর্বল অধিনস্ত দাস দাসী,স্ত্রী কিংবা কোন প্রাণীর উপর হাত উঠানো বা প্রহার করা
৫২-প্রতিবেশী কে যেকোন ভাবে কষ্ট দেয়া
৫৩-কোন মুসলমান কে কষ্ট বা গালি দেয়া
৫৪-অহংকার বা সন্মানবোধ থেকে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা
৫৫-স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যের পাত্রে আহার বা পান করা
৫৬-পুরূষ রেশমি কাপড়(সিল্ক)বা স্বর্ণ পরিধান করা
৫৭-গোলাম বা দাস মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া(দাস এযুগে নেই)
৫৮-আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে প্রাণী জবাই করা যেমন শয়তানের নামে যাদু করার জন্য,মূর্তির নামে,পীর সাহেবের নিয়তে ইত্যাদী
৫৯-জেনে শুনে পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে মানা বা দাবী করা
৬০-ঝগড়া বিবাদ,কারো সাথে নিজের ব্যাক্তিত্ত্ব প্রকাশ বা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দ্যেশ্যে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া
৬১-অতিরিক্ত পানি বেঁধে রাখা।যেমন কারো বাগান বা জমি উঁচু জায়গায় আর কারো নীচুতে।বৃষ্টি,ঝর্ণা,নদীর পানি উঁচু থেকে প্রবাহিত হয়ে নীচের দিকে আসে।উঁচু বাগান বা জমির মালিক তার জায়গায় পানি পর্যাপ্ত হওয়ার পরও অতিরিক্ত পানি যাতে নীচের দিকে প্রবাহিত হতে না পারে সে জন্য বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা
৬২-মাপে কম দেয়া(এটা খুব বেশি দেখা যায় আমাদের দেশের গোশ্ত বিক্রেতাদের মাঝে।এছাড়া অন্যরা ও করে থাকে।)
৬৩-আল্লাহ তাআলার পাকড়াও ও হস্তক্ষেপ থেকে নিশ্চিন্ত ও নির্ভয় হওয়া
৬৪-মৃত প্রাণীর গোস্ত এবং প্রাণীর রক্ত ও শুকরের গোস্ত খাওয়া
৬৫-কোন ওজর(শরীয়ত স্বিকৃত সমস্যা)ছাড়া জুমার নামাজ বা জামাত ছেড়ে দিয়ে একাকী নামাজ আদায় করা
৬৬-আল্লাহ তাআলার রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নৈরাশ হওয়া
৬৭-কোন মুসলমান কে কাফির বলা
৬৮-ধোকাবাজী করা ও ঠকানো
৬৯-মুসলমানদের মধ্যে গোয়েন্দাগিরী ও তাদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অবগত হওয়া(বিবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে)
৭০-সাহাবাদের কাউকে গালি দেয়া
৭১-অসৎ বা বিচারক
৭২-বংশ নিয়ে একে অপরকে তিরস্কার বা ধিক্কার দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করা
৭৩-মৃত ব্যাক্তির উপর চিৎকার করে আহাজারি করা,বুক চাবড়িরা,বুক চাবড়িয়ে জামা কাপড় ছিড়ে বিলাপ করা
৭৪-রাস্তার চিহ্ন বা মাইলফলক সরিয়ে ফেলা(মিটিয়ে দেয়া)
৭৫-কোন অসৎকাজ প্রতিষ্ঠা কিংবা মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করা
৭৬-মহিলারা নিজের চুলের সাথে নকল চুল মিলানো এবং চেহারার লোম ইত্যাদী উঠানো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য
৭৭-কোন ধাতব বা ধারাল বস্তু অন্যের দিকে উঁচু করা বা আঘাতের লক্ষ্যে নিশানা বানানো
৭৮-পবিত্র হারাম শরিফে(মক্কায়)বা হারামের সিমানার মধ্যে অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত হওয়া।
এখানে কবিরা গুনাহের বর্ণনা সমাপ্ত।নীচে সম্ভাব্য কিছু কবিরা গুনাহ উল্লেখ করছি,যা উলামায়ে কিরাম মূল গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেননি।
সম্ভাব্য কবিরা গুনা
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেনঃ-
১-যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে বা দাস কে স্বামি ও মালিকের বিরুদ্বে উস্কে দিল সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়
২-ভায়ের সাথে এক বৎসর সম্পর্ক ছিন্ন রাখা তাকে হত্যা করার সমতুল্য
৩-যে ব্যক্তির সুপারিশে আল্লাহ প্রদত্ত কোন শাস্তি রহিত হল সে যেন একাজ দ্বারা আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল
৪-তোমরা মুনাফেক্বকে(সাইয়েদুনা)আমাদের নেতা বলোনা।মুনাফেক্বকে নেতা বললে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন
৫-যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে উঁকি মেরে দেখল,ঐ পরিবারের জন্য তার চক্ষু নষ্ট করে দেয়া বৈধ
৬-যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করেনা সে আল্লাহ তাআলার প্রতি ও অকৃতজ্ঞ।

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

স্ত্রীর সাথে ইন্টারনেটে চ্যাট করে পুলকিত হওয়া প্রসংগে

কোন মন্তব্য নেই

প্রশ্ন: আমি সৌদি আরবে কাজ করি। আলহামদু লিল্লাহ, আমি যথাসাধ্য সুন্নতের পাবন্দ থাকার চেষ্টা করি। আমি রীতিমত মসজিদে নামাজ আদায় করি। এই প্রথমবার আমি আমার ফ্যামিলিকে দেশে রেখে আসি বাচ্ছাদের পড়াশোনার প্রয়োজনে। আমি যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলি, অডিও এবং  ভিজুয়াল উভয় পদ্ধতিতে, আমি তখন মাঝে-মধ্যে স্ত্রীকে তার দেহের বিশেষ অংশ দেখাতে বলি। এর দ্বারা আমি যৌন উত্তেজনা অনুভব করি, যা ঠেকিয়ে রাখা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। অতঃপর আমি হস্তমৈথুন করে নিজেকে শান্ত করি। স্ত্রীর আশ্রয়  ব্যতীত অন্য কোনোভাবে যৌনক্ষুধা মেটানো যাবে না বলে সূরা মুমিনুনে (আয়াত:২৩:৬)  যে বাণী রয়েছে আমার এ কর্ম কি তার আওতায় পড়বে? আমি জানি হস্তমৈথুন হারাম। তবে সে তো আমার স্ত্রী যার প্রতি আমি তাকাচ্ছি। আমার কি করণীয় আসা করি জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন।
উত্তর
আল হামদুলিল্লাহ।
চ্যাট প্রোগ্রামে স্ত্রীর সাথে কথা বলে অথবা তাকে দেখে তৃপ্তি আস্বাদন বৈধ রয়েছে। তবে শর্ত হল অন্য কেউ যেন স্বামী-স্ত্রীর আলাপচারিতা শুনতে না পায় অথবা  স্ত্রীর শরীরের কোনো অংশ দেখতে না পায় সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন।
হস্তমৈথুনের ব্যাপারে সাধারণ ব্যাকরণ হল যে, তা হারাম। তবে যদি কেউ যিনায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বোধ করে তবে তার কথা ভিন্ন।
শায়খ ইবনে উসাইমিন রা. একবার জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন যে, স্বামী-স্ত্রীর জন্য টেলিফোনে সেক্স বিষয়ে আলাপ করা এবং একে অন্যকে এমনভাবে উত্তেজিত করা যে উভয়ের হস্তমৈথুন ব্যতীতই তৃপ্ত হয়ে যায়, এরূপ করা কি বৈধ হবে? প্রশ্নকারী বলেন, এরূপ করার পেছনে কারণ হল; আমার স্বামী প্রায়শঃ সফরে থাকেন। ফলে আমরা কেবল প্রতি চার মাস পরপর মিলিত হতে পারি।
উক্ত প্রশ্নের উত্তরে শায়খ বলেছিলেন: এরূপ করায় কোনো সমস্যা নেই। এটা বরং অনুমোদিত।
উল্লিখিত অবস্থায় হস্তমৈথুন যুক্ত হলে তার হুকুম কি ? শায়খকে প্রশ্নকারী এ বিষয়েও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন: হস্তমৈথুনের বিষয়টি অধিক আলোচনার দাবি রাখে। তবে সংক্ষেপে বলা যায়, হস্তমৈথুন কেবল তখনই বৈধ  যখন কোনো ব্যক্তির যিনায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্নকারী আরো জিজ্ঞাসা করেছিলেন: যদি হস্তমৈথুন যুক্ত না হয় তবে তো কোনো সমস্যা নেই। শায়খ বলেছিলেন: না, কোনো সমস্যা নেই। স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নিবিড়ভাবে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে কল্পনা করে তবে এতে দোষের কিছু নেই।
 সমাপ্ত

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

পীরের মুরীদ হওয়া কতটুকু জরুরী?

কোন মন্তব্য নেই


অনেকে প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকেন পীরের মুরীদ হওয়া নিয়ে। কেউ কেউ বলেন-তারা শুনেছেন পীরের মুরীদ হওয়া ছাড়া বেহেশতে যাওয়া যাবে না। এজন্য তাদের কাছে কুরআন ও হাদীস থেকে বিষয়টা ক্লিয়ার করা দরকার।
আসলে পীর শব্দটা আরবী ভাষার নয়। কুরআন হাদিসের কোথাও রাসুল (সাঃ)ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির নির্দেশ সর্বাবস্থায় বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।তাকে অনুসরণ কিংবা তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যাবে শুধুমাত্র সে সকল ক্ষেত্রে যখন তা কুরআন ও হাদিসের অনুকুলে হয়।
পীরকে অনুসরণ কিংবা তার কথা শোনা যাবে ততটুকুই যতটুকু কুরআন ও হাদিসের অনুকুলে হয়।তবে,কোন পীর যদি ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞানী হন তাহলে,শিক্ষাগ্রহণের জন্য তার কাছে যাওয়া যেতে পারে।
কোন পীরের কাছে যাওয়ার পরিবর্তে অন্য কোন আলেমের কাছেও শিখতে যাওয়া যেতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:”তোমরা যদি না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।”(সুরা নাহল:৪৩)
আর এ কাজটা যেকোন জ্ঞানী আলেমের কাছে গেলেই হবে।হোকনা সে পীর কিংবা অন্য কোন আলেম।তবে,যে পীর প্রকাশ্যে ইসলামবিরোধী কাজ করেন তাকে কস্মিনকালেও যে অনুসরণ করা যাবে না;এ কথাটা বলাই বাহুল্য।
অনেকে বলে থাকে “যার পীর নেই তার পীর শয়তান”।আসলে এ ধরণের কথা হয়ত কোন পীরভক্তের আবেগ প্রসুত কথা হতে পারে যার সাথে কুরআন হাদীসের কোন সম্পর্ক নেই।
অথচ,কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
১. وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থাৎ,যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)এর অনুগত্য করবে,তাকে আল্লাহ তায়ালা এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে,সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।আর এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সুরা নিসা: ১৩)
২.আল্লাহ বলেন:
وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقاً
অর্থাৎ,যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে তারা নবী,সিদ্দীক,শহীদ ও সৎকর্মশীল তথা যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পুরস্কৃত করেছেন তাদের সাথী হবে। এরা কতই না চমৎকার সংগী।(সুরা নিসা: ৬৯)
৩. وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ অর্থাৎ,যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম মেনে চলে,আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে,ওরাই সফলকাম। (সুরা নুর: ৫২)
৪. وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيماً অর্থাৎ,আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে সে নিশ্চিত সফলকাম হয়েছে। (সুরা আহযাব: ৭১)
৫. وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَن يَتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَاباً أَلِيماً অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহমান থাকবে।আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে আল্লাহ তাকে মর্মান্তিক আযাব দেবেন। (সুরা ফাতহ:১৭)
উপরের আয়াতগুলো থেকে আমরা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারি যে,কারও মুরীদ হোক বা না হোক কুরআন ও হাদীসানুযায়ী আমল করলেই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ।
কিয়ামতের দিনটা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ এটা আমাদের সবারই জানা।অনেক পীর সাহেব নাকি মুরীদদেরকে বলে থাকেন:আমার কাছে মুরীদ হও।তাহলে,আমি তোমাদেরকে হাত ধরে ধরে বেহেশতে নিয়ে যাব।
আমার প্রশ্ন হল- যে পীর সাহেব মুরীদকে বেহেশতে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন সে পীর সাহেব নিজে যে বেহেশতে যাবেন এর কোন গ্যারান্টি কি তার কাছে আছে? তিনি কোথায় এ ধরণের কথা বলার অথরিটি পেলেন?
আসুন! দেখে নিই কুরআনের আলোকে পীর সাহেবের এ কথাটা কতটুকু কুরআন- হাদিস সম্মত?
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
فَالْيَوْمَ لَا يَمْلِكُ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ نَّفْعاً وَلَا ضَرّاً وَنَقُولُ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّتِي كُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ
অর্থাৎ, আজকে (কিয়ামতের দিন) তোমাদের কেউ কাউকে উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারবে না। আর আমি অপরাধীদেরকে বলব-জাহান্নামের আগুনের স্বাদ গ্রহণ কর দুনিয়ায় যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ। (সুরা সাবা: ৪২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَوْمَ لَا يُغْنِي مَوْلًى عَن مَّوْلًى شَيْئاً وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
অর্থাৎ, সেটি এমন দিন যেদিন কোন নিকটতম প্রিয়জনও কোন নিকটতম প্রিয়জনের কাজে আসবে না। আর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। (সুরা দুখান:৪১)
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئاً وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِلَّهِ
অর্থাৎ, সেদিন এমন একটি দিন যখন কারও জন্য কোন কিছু করার সাধ্য থাকবে না। ফায়সালার ভার সেদিন একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতেই থাকবে। (সুরা ইনফিতার:১৯)
অতএব, এ আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় যে সমস্ত পীররা এ রকম দাবী করে থাকেন তাদের দাবী সম্পুর্ণ অযৌক্তিক, ও অগ্রহনযোগ্য। সবাইকে এসমস্ত লোকদের সংস্পর্শে আসার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
কষ্ট করে পোষ্টটি পড়ার জন্য আন্তরিক মোবারকবাদ। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
লিখেছেন: ইসমাইল জাবীহুলাহ
আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর।
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

একই মুহূর্তে একাধিক স্বামী গ্রহণ নারীর জন্য হারাম কেন?

কোন মন্তব্য নেই
প্রশ্ন -
একজন নারীর জন্য তিনজন অথবা চারজন পুরুষ বিয়ে করা কেন বৈধ নয়, অথচ পুরুষের জন্য তিনজন অথবা চারজন বিয়ে করা বৈধ?
উত্তর-
আলহামদুলিল্লাহ
প্রথমত কথা হল বিষয়টি আল্লাহর প্রতি ইমানের সাথে সম্পৃক্ত। কেননা সকল ধর্মই এ-ব্যাপারে একমত যে নারীর সাথে একমাত্র তার স্বামীই কেবল যৌনমিলনে লিপ্ত হতে পারবে। এসব ধর্মের কিছু হলো আসমানী; যেমন ইসলাম, আসল ইহুদি ধর্ম, আসল খ্রীষ্ট ধর্ম। তাই আল্লাহর প্রতি ইমানের দাবি হলো তার হুকুম ও বিধি-বিধান নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ। মানুষের জন্য কোনটা উপকারী এবং কোনটা অপকারী সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সুপরিজ্ঞাত। আল্লাহর হুকুমের পশ্চাৎগত হেকমত কি তা আমাদের বুঝে আসতেও পারে, নাও আসতে পারে।
পুরুষে জন্য বহুবিবাহের বৈধতা এবং নারীর জন্য তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে বলা যায় যে এ-ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে যা সবার কাছেই পরিষ্কার। আল্লাহ তাআলা নারীকে করেছেন পাত্র। পুরুষ এর বিপরীত। যদি কোনো নারী গর্ভবতী হয় এমতাবস্থায় যে কয়েকজন পুরুষ তার সাথে মিলিত হয়েছে, তাহলে গর্ভজাত সন্তানের পিতা অজ্ঞাত থেকে যাবে। আর এভাবে মানুষের বংশধারা পরস্পরে মিশে যাবে। সংসার ভেঙ্গে যাবে, শিশুরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়বে। আর নারী ছেলে-সন্তানের ভারে নুজ্ব্য হয়ে পড়বে। সে না পারবে তাদের শিক্ষা-দীক্ষা দিতে। না পাড়বে তাদের খরচ চালাতে। এমনকী নারীরা হয়ত নিজেদের বন্ধ্যা বানাতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় মানবপ্রজন্মের ধারাবাহিকতা রহিত হয়ে যাবে।
আর বর্তমানে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের ভাষ্যানুযায়ী এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে এইডসের মতো মারাত্মক ধরনের ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো একই নারীর সাথে একাধিক পুরুষের যৌনমিলন। নারীর জরায়ুতে নানা পুরুষের বীর্যের সংমিশ্রণ এধরনের মরণ ব্যাধি সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে।
এজন্য আল্লাহ তাআলা তালাকপ্রাপ্তা অথবা বিধবা নারীর জন্য ইদ্দত নির্ধারণ করেছেন, যাতে পূর্বের স্বামীর সকল প্রভাব থেকে নারী তার জড়ায়ু ও এর রগরেশাকে পরিষ্কার করে নিতে পারে। নারীর মাসিক স্ত্রাবেরও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। এতটুকু ইঙ্গিতেই বিষয়টি বোধগম্য হওয়ার কথা। আর যদি প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গবেষণাপত্র তৈরি করা, অভিসন্দর্ভ তৈরি করা তাহলে বহুবিবাহ ও তার হেকমত সংক্রান্ত বইপুস্তক পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আল্লাহই তাওফিক দাতা


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :

সাধারণ ও ইসলামী শিক্ষা: কী এবং কেন?

কোন মন্তব্য নেই
 
1332849889
লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব, সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
আলোচনার সুবিধার্থে চলুন প্রথমেই শিক্ষা বলতে কী বুঝায় সে ব্যাপারে সংক্ষেপে ধারণা নেয়া যাক। নিম্নে সাধারণ ও ইসলামী শিক্ষার কিছু সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো।
শিক্ষা কী?
শুরুতেই আগে শিক্ষার সাধারণ ধারণাটি উপস্থাপন করা যাক। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্য প্রসঙ্গগুলোয় আসা যাবে। শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ education। আর এর সংজ্ঞায় অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা হয়েছে­ : education means a process of teaching, training and learning, especially in schools, or colleges, to improve knowledge and develop skills.
জন মিল্টন বলেছেন­, Education is the harmonies development of mind, body and soul.
হারম্যান হর্ন লিখেছেন, ‘শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে মুক্ত সচেতন মানবসত্তাকে সৃষ্টিকর্তার সাথে উন্নত যোগসূত্র রচনা করার একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া, যেমনটি প্রমাণিত রয়েছে মানুষের বৃদ্ধিবৃত্তিক, আবেগগত ইচ্ছাশক্তি সম্বন্ধীয় পরিবেশ’।
বিশিষ্ট দার্শনিক সক্রেটিস শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,­ ‘নিজেকে জানার নামই শিক্ষা’।
আমেরিকান শিক্ষাবিদ জন ডেউয়ে বলেছেন, ­‘প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ ও মৌলিক মেজাজ প্রবণতা বিন্যাস করার প্রক্রিয়াই শিক্ষা।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মানবধর্ম’ নামক গ্রন্থে বলেছেন,­ ‘মানুষের অভ্যন্তরীণ সত্তার পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই হচ্ছে শিক্ষা।’
কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘মানুষের খুশির বা রূহের উন্নয়নই আসল শিক্ষা।’ [১]

ইসলামী শিক্ষা বলতে কী বুঝায় ?

সালাফে সালেহীন বা পূর্বতন মনীষীবৃন্দ ইসলামী শিক্ষার জন্য কোনো সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন নি। তাঁরা নানা শব্দে ইসলামী শিক্ষাকে বুঝিয়েছেন। এ কারণে বর্তমান যুগে ইসলামী শিক্ষার অগ্রপথিক ও কর্ণধার আলিমগণ এর সংজ্ঞা নির্ধারণে বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে তাঁদের সবার বক্তব্যে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে সাযুজ্য দেখা যায়। আর সবার দৃষ্টিভঙ্গি, বৈশিষ্ট্য ও অভিরুচিগত পার্থক্যের কারণেই সংজ্ঞা নির্ধারণে এ মত ভিন্নতা দেখা দেয়। আলিম, পণ্ডিত ও ইসলামী শিক্ষার গবেষক ও লেখকগণ ইসলামী শিক্ষার কয়েকটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন। নিম্নে তার কিছু সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
আবদুর রহমান নিহলাওয়ী বলেন,
” هي التنظيم النفسي والاجتماعي الذي يؤدي إلى اعتناق الإسلام وتطبيقه كليا في حياة الفرد والجماعة ، أو بمعنى آخر هي تنمية فكر الإنسان وتنظيم سلوكه وعواطفه على أساس الدين الإسلامي بقصد تحقيق أهداف الإسلام في حياة الفرد والجماعة في كل مجالات الحياة .”
‘ইসলামী শিক্ষা হলো ব্যক্তিক ও সামষ্টিক ব্যবস্থা যা ইসলামকে গ্রহণ এবং তা ব্যক্তি ও গোষ্ঠি জীবন পর্যায়ে প্রয়োগের দিকে নিয়ে যায়। অন্য কথায়, তা হলো, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মানুষের চেতনার উন্নয়ন এবং তার আবেগ ও আচরণকে দীনে ইসলামের ভিত্তির ওপর নির্মাণ করা।’ [আবদুর রহমান নিহলাওয়ী, উসুলুত তারবিয়্যাতিল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা : ২৭]
শায়খ আমীন মুহাম্মদ আউয বলেন,
“هي تنمية جميع جوانب الشخصية الإسلامية الفكرية والعاطفية والجسدية والاجتماعية وتنظيم سلوكها على أساس مبادئ الإسلام وتعاليمه بغرض تحقيق أهداف الإسلام في شتى مجالات الحياة “
‘তা হলো ইসলামী ব্যক্তিত্বের চৈন্তিক, শারীরিক ও সামাজিক সকল দিকের উন্নয়ন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষা অনুযায়ী তার আচরণকে সুন্দর করা।’ [শায়খ আমীন মুহাম্মদ আউয, আসালিবুত তারবিয়া ওয়াত তালীম ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা : ৩৪]
জগলূল নাজ্জার বলেন,
التربية الإسلامية  هي النظام التربوي القائم على الإسلام بمعناه الشامل قال تعالى : (إنّ الدين عند الله الإسلام)
‘ইসলামী শিক্ষা হলো ইসলামের ব্যাপকতর অর্থে ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ব্যবস্থা। আল্লাহ যেমন ইসলামের ব্যাপকার্থ প্রকাশে বলেন, আল্লাহর কাছে মনোনীত দীন একমাত্র ইসলাম।’ [জগলূল নাজ্জার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ৭৯]
এ ছাড়াও পরিসর বেড়ে যাবার আশংকায় আরও অনেকেরই সংজ্ঞা এখানে তুলে ধরা গেল না। তবে সবগুলোতেই যে কথাটা পাওয়া যায় তা হলো, এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সৎ ব্যক্তি তৈরি, ইসলামী শরী‘আর প্রধান উৎসগুলোর আলোকে দুনিয়া ও আখিরাতের দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানস গঠন নিশ্চিত করা হয়।

সাধারণ শিক্ষার উদ্দেশ্য :

প্রথমেই দেখা যাক, শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মনীষীরা কে কী বলেছেন।  জন ডিউই বলেছেন, ‌শিক্ষার উদ্দেশ্য আত্ম উপলদ্ধি।
প্লেটোর মত হলো : শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
প্লেটোর শিক্ষক সক্রেটিসের মতে : শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিষ্কার।
এরিস্টোটল বলেছেন : শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করা।
শিক্ষাবিদ জন লকের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন প্রতিপালনের নীতিমালা আয়ত্বকরণ।
বিখ্যাত শিক্ষাবিদ হার্বার্ট বলেছেন : শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিশুর সম্ভবনা ও অনুরাগের পূর্ণ বিকাশ ও তার নৈতিক চরিত্রের প্রকাশ।
কিন্ডার গার্টেন পদ্ধতির উদ্ভাবক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রোয়েবেল এর মতে : শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য ও পবিত্র জীবনের উপলব্ধি।
কমেনিয়াসের মতে : শিশুর সামগ্রিক বিকাশই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আর মানুষের শেষ লক্ষ্য হবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে সুখ লাভ করা।
পার্কার বলেছেন : পূর্ণাঙ্গ মানুষের আত্ম প্রকাশের জন্যে যেসব গুণাবলি  নিয়ে শিক্ষার্থী এ পৃথিবীতে আগমন করেছে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সেসব গুণাবলির যথাযথ বিকাশ সাধন।
জীন জ্যাক রুশোর মতে : সৎ অভ্যাসে গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।
বার্ট্রান্ড রাসেল এর মন্তব্য হলো :
…The education system we must aim at producing in the future is one which gives every boy and girl an opportunity for the best that exists.
স্যার পার্সিনান বলেছেন : শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো, চরিত্র গঠন, পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রস্তুতি এবং ভালো দেহ ভালো মন গড়ে তোলা।
ডা. হাসান জামান বলেছেন, প্রত্যয় দীপ্ত মহত জীবন সাধনায় সঞ্জিবনী শক্তি সঞ্চার করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।
ড. খুরশীদ আহমেদের মতে : স্বকীয় সংস্কৃতি ও আদর্শের ভিত্তিতে সুনাগরিক তৈরি করা………এবং জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন হওয়া উচিত শিক্ষার উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইকবালের মতে : পূর্ণাংগ মুসলিম তৈরি করাই হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য। [২]

ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য :

ইসলামী শিক্ষা বলতে আসলে কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষাকেই বুঝানো হচ্ছে। আর বলাবাহুল্য যে এ শিক্ষার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বেসর্বা আল্লাহর পরিচয় লাভ করা। আল্লাহর পরিচয় এবং তাঁর কাছে জবাবদিহিতার ভয় তথা তাকওয়াই পারে মানুষকে মানুষ বানাতে। একজন মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু ব্যক্তি লোকসমাজে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যা বলেই গণ্য হোন না কেন, তাঁর হাতে কেউ অনিষ্টের শিকার হবে না। তিনি যেদিকেই যাবেন শুধু আলোই ছড়াবেন। তাঁর হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশি ও প্রাণীকুল- সবই নিরাপদ থাকবে। তাঁর মহানুভতার কাছে হার মানবে উদ্ধত স্বৈরাচারি থেকে নিয়ে বনের বাঘ ও সরিসৃপরা পর্যন্ত।
মিকদাদ ইয়ালজিন বলেন,
” إعداد المسلم إعداداً كاملاً من جميع النواحي في جميع مراحل نموه للحياة الدنيا والآخرة في ضؤ المبادئ والقيم وطرق التربية التي جاء بها الإسلام “.
’ইসলামের আনীত আকীদা, মূল্যবোধ ও শিক্ষাদান পদ্ধতির জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের জন্য সব দিক থেকে মুসলিমকে পরিপূর্ণরূপে গড়ে তোলা।’ [মিকদাদ ইয়ালজিন, পৃষ্ঠা : ২০]
আবদুর রহমান নকীব বলেন,
” ذلك النظام التربوي والتعليمي الذي يستهدف إيجاد إنسان القرآن والسُنة أخلاقاً وسلوكاً مهما كانت حرفته أو مهنته ” .
‘ইসলামী শিক্ষা বলতে ওই শিক্ষা ব্যবস্থা যার লক্ষ্য কুরআন ও সুন্নাহর চরিত্র তৈরি করা, যার অল্পেরই তা পেশা হয়ে থাকে।’ [আবদুর রহমান নকীব, ১৭]

দুইয়ের মধ্যে ফারাক :

ইসলামী তথা কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে জানা, তাঁর একত্ববাদ তথা তাওহীদকে জানা, এককভাবে তাঁর ইবাদত করার পদ্ধতি শেখা। এ লক্ষ্যেই দুনিয়া এবং এর মধ্যস্থিত সবকিছুকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আধুনিক জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য, ওই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম হিসেবে নশ্বর বস্তুবাদী সুবিধা অর্জন। আর এ দুই উদ্দেশ্যের মাঝে ফারাক ইউসুফ আলাইহিস সালামকে ক্রয় ও গুটিকতক দিরহামের মাঝে যে তফাৎ সে তফাৎ। এ দুটির ফারাক হলো, আল্লাহর যিকর ও তাঁকে ভালোবাসা এবং পানাহার ও পরিধানের মাঝে যতটুকু তফাৎ ঠিক ততটুকু। দ্বিতীয়টি, আল্লাহ্ যাদেরকে ভালোবাসেন অথবা যাদেরকে ভালোবাসেন না, সবাই পেতে পারে। কিন্তু প্রথমটি কেবল আল্লাহ যাদেরকে ভালোবাসেন তারাই পেয়ে থাকে। এতেই বুঝা যায় কোন জ্ঞান অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য? এবং দুটির মর্যাদার তারতম্য কতটুকু?
হ্যা, মুসলিমকে প্রয়োজনীয় আধুনিক জ্ঞানও শিখতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করাও তার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। সুতরাং তার উচিত উল্লেখিত হবে তারতম্যটাকে মাথায় রেখে এ দুটোর ওপরই গুরুত্ব দেয়া। উদাহরণত যদি কোনো ছাত্র গণিত, কৃষিশিক্ষা ও রসায়ন অধ্যয়নে এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে তাহলে কুরআন, হাদীস ও ফিকাহ অধ্যয়নে তার ন্যূনতম দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা উচিত। এর বিপরীতটা করা সমীচীন হবে না। অর্থাৎ অগ্রাধিকার দিতে হবে ইসলামী তথা দুনিয়া ও আখিরাত- উভয় জগতের কল্যাণদাতা কুরআন ও সুন্নাহ কেন্দ্রীক জ্ঞানকে। ফরয ইলম অর্জন সবাইকেই করতে হবে। আর বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে হবে কতিপয়কে। অনুরূপ জাগতিক স্বার্থ ও কল্যাণ সংক্রান্ত জ্ঞানেও কিছু লোককে প্রাজ্ঞতা ও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। যারা ফরয ইলম অর্জন করে মানুষের খেদমত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে নিজের মেধা ও শ্রম দেবেন জাগতিক প্রয়োজন পূরণে যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণা-আবিস্কারের পেছনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাই মুসলিমদের সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে অবশ্যই প্রয়োজন পরিমাণ ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইসলামের শিক্ষাশূন্য কোনো ব্যবস্থা মুসলিমের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সাধারণ শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা উঠিয়ে দেয়ার কুফল

ছাত্র সে যে স্তরেরই হোক না কেন, ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দিয়ে শুধু বৈষয়িক শিক্ষায় তার সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করবে, এ চিন্তাও করা যায় না। ইদানীং ইউরোপ ও আমেরিকার অধিবাসী পাশ্চাত্যের জাতিসমূহের অনুকরণে মুসলিম বিশ্বে যেসব বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে সেগুলোতে এমনই হচ্ছে। এর ফলে ছাত্ররা কল্যাণকর জ্ঞান ও নেক আমল থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ মানবাত্মা নগদের প্রতিই বেশি আগ্রহী; বিশেষত সে নগদটা যদি পার্থিব কিছু হয়। আর বাকির প্রতি বিরাগী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
[ كَلَّا بَلۡ تُحِبُّونَ ٱلۡعَاجِلَةَ ٢٠ وَتَذَرُونَ ٱلۡأٓخِرَةَ ٢١ ﴾ [القيامة: ٢٠،  ٢١] 
‘কখনো না, বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে ভালোবাস। আর তোমরা ছেড়ে দিচ্ছ আখিরাতকে।’ [সূরা কিয়ামাহ, আয়াত : ২০-২১]
এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের হাফেজকে মুখস্তকৃত অংশটাকে বিরতহীনভাবে বারবার পাঠ করার প্রতি জোর তাকিদ দিয়েছেন। যেহেতু কুরআনে কারীম লাগামের জন্য প্রস্তুতকৃত উটের চেয়েও অবাধ্য। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« بِئْسَمَا لأَحَدِهِمْ يَقُولُ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ بَلْ هُوَ نُسِّىَ اسْتَذْكِرُوا الْقُرْآنَ فَلَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ بِعُقُلِهَا ».
‘তাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে বলে অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কুরআন স্মরণ রেখ। কারণ উট যেমন তার রশি থেকে পালিয়ে যায় কুরআন তার চেয়েও দ্রুত চলে যায় মানুষের বক্ষ থেকে।’ [বুখারী : ৫০৩২; মুসলিম : ১৮৭৭]
হ্যাঁ, পরিপূর্ণভাবে পার্থিব জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা তাদের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে যাদের জন্য আখেরাতে কোনো প্রাপ্তি নেই, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে না। যারা পার্থিব জীবন নিয়ে যারা সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত। আর মুমিন, যিনি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রত্যাশী, তার তো সে সুযোগ নাই। যেহেতু মুমিন এমন এক ব্যবসায় আশ্বাসী যে ব্যবসাতে লোকসান নাই।
মুসলিমরা জাগতিক জ্ঞান নিয়ে যতই মগ্ন থাকুক না কেন, কল-কারখানা ও পরীক্ষাগারে জাগতিক জ্ঞানের যতই প্রয়োগ ঘটাক না কেন, কোনো অবস্থাতে কোনো সময়ে ফরয ইবাদত আদায়ের ব্যাপারে তাদের গাফেল হওয়ার সুযোগ নেই। আর ইলমে দীন তাদেরকে তাদের ইবাদত-বন্দেগী আদায়ের সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে। বিশেষভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা বলতে হয়। সালাত হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। কোনো গবেষণা ল্যাবে অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অথবা অফিস-আদালতে থেকে সালাত পরিত্যাগ করার কোনো সুযোগ নাই।

মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্যই কি শিক্ষা ?

বাংলাদেশের নাগরিক মাত্রেই হয়তো খেয়াল করেছেন যে দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজের দরজা বা দেয়ালে লিখে দেওয়া হয় : ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য মনুষ্যত্ব অর্জন’ এবং ‘শেখার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও’। আমি যখনই কোনো বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে পথ অতিক্রম করি, বাক্যদুটি যেন আমাকে ভাবিত, দ্বিধান্বিত এমনকি ব্যথিত করে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি মনুষ্যত্ব অর্জনই হয় তাহলে পশুত্ব ও পাশবিকতার এমন জয়জয়কার কেন চারদিকে? মনুষ্যত্বের এত অভাব কেন সর্বত্র? সেবার জন্যই জন্য শিক্ষিত, সার্টিফিকেটপ্রাপ্তরা বেরিয়ে এসে থাকেন তাহলে কেন সমাজের প্রতিটি স্তরে মানুষ ঠকাবার হরেক আয়োজন? নিরেট সেবাখাতগুলোতেও কেন সেবা হয়ে উঠছে সোনার হরিণ?
বাক্যদ্বয় সঠিক হলে শিক্ষিতের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনাচার না কমে শুধু বেড়েই চলেছে কেন? সামাজিক নানা অপরাধ ক্রমশ বৃদ্ধিই পাচ্ছে কেন? সভ্যতা যত ওপরে উঠছে কেন ততধিক নিচে নামছে মানুষ। আগে মানুষ অন্যায় করে নিজেকে অপরাধী ভাবত, অন্যায়কারীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস, সম্মান তলানিতে গিয়ে ঠেকত। কিন্তু এখন কেন তার উল্টো হচ্ছে? দেদারছে অপরাধ করছে আবার দিব্যি বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছে অনাচারিরা। সৎ ও নিষ্ঠাবান লোকের প্রতি অবহেলা ও অনাদর প্রদর্শন করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে অসৎ, প্রতারক ও অশিষ্ট জনদের সালাম ঠুকা হচ্ছে! মনুষ্যত্বহীন মানবদলের জন্য কি নিচের চরণগুলো অবমাননাকর? নাকি নিঠুর সত্যের সাহসী উচ্চারণ ? কুরআনের আলো বঞ্চিত শিক্ষিতদের আচরণে বিরক্ত ও ব্যথিত কবি তাই লিখেন :
মডার্ন যুগের মানুষ
নিজকে সবাই চালাক ভাবে পরকে ভাবে বোকা,
চিন্তা সবার কেমনে দেবে অন্য জনে ধোঁকা।
লৌকিকতার প্রদর্শনী সবার কথায় কাজে,
নিজকে ভাবে সম্মানী আর পরকে ভাবে বাজে।
যত বড় মিথ্যাবাদী তত বড় চতুর,
সত্যবাদী প্যাচে পড়ে হচ্ছে নিয়ত ফতুর।
দিল ভুলানো কথার বাহার মন মাতানো হাসি,
হিংসা মনে বলছে মুখে তোমায় ভালোবাসি।
সামনে এলে কয় জ্বী হুজুর পশ্চাতে কয় শালা,
হায়রে মডার্ন যুগের মানুষ সবার হৃদে তালা!
ফলবতী গাছকে আমরা দেখি মাটির দিকে নুয়ে আসতে, কিন্তু ডিগ্রির বস্তা কাঁধে নুয়ে আসা মানুষগুলোকে বৃথা আস্ফালনে উদ্ধত হতে দেখি কেন? কথায় কথায় অহংকার, চলাফেরা কিংবা পোশাক-আশাকই বাদ যাবে কেন। সবখানেই গর্ব, মেকি আভিজাত্য আর অহংকারের ছাপ। লৌকিকতা, বাগাড়ম্বর ও অপরের প্রতি হেয় ভাব।
ধরুন কোনো বিদ্যালয়ের সামনে একটি দুর্ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী আহত বা নিহত হলো, তারপর কি হবে তা বুঝি সচেতন কোনো নাগরিককেই বলে দিতে হবে না। তুমুল ভাংচুর শুরু হয়ে যাবে। ওই রাস্তা দিয়ে যতগুলো যানবাহন যাবে সবগুলোকেই এ দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি পেতে হবে। লাখো কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনিচ্ছায় সংঘটিত ঘটনার দায় নিয়ে হাজার হাজার যাত্রীকে এর জন্য দুর্ভোগ সইতে হবে। শুধু দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন হয়? কোনো শিক্ষকের সামান্য ভুল বা বিচ্যুতি হলেও তাদের ভাগ্যে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী কর্তৃক নানা লাঞ্ছনা ও অবমাননাকর উক্তি বা আচরণ বরদাশত করতে হয়।
সংবাদপত্রের পাতা ওল্টালেই রোজ দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তপনার নিত্যনতুন কৌশলের খবর দেখি। ডিজিটাল যুগে ফাইল আটকানো, মানুষকে ঠকানো ও প্রতারিত করার নানা কলা-কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। ডিজিটাল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সুদ-ঘুষ, নারী নির্যাতন, পুরুষ পীড়ন আর কটু-কাটব্য তো এনালগ যুগের মানুষদের দিয়ে হচ্ছে না। হচ্ছে আধুনিক শিক্ষিত সুটেড-বুটেড ভদ্রলোকদের দিয়েই। কৃতিত্বের সঙ্গে এদের উৎরে আসা বিদ্যালয়গুলোর দেয়াল বা দরজায় কি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা অঙ্কিত ছিল না?
যখন কোনো আধুনিক নির্মাণ সামগ্রী ছিল না, উচ্চতর প্রযুক্তি ছিল না, তখনকার বানানো তাজমহল, পিরামিডগুলো যুগযুগান্তরের বিস্ময় হয়ে এখনো টিকে আছে। অথচ যথারীতি শিক্ষা ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত আধুনিক নির্মাণ কৌশল ও সামগ্রী সজ্জিত এ যুগের স্থাপত্যবিদদের বানানো দালান ভেঙে পড়ে ফি বছর মানুষকে জীবন দিতে হয়। এভারেস্টকে পদানত করা, ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগকে জয় করা এবং মহাকাশে যাত্রা করা মানুষগুলোই পারে না পাশের বাড়ির মানুষকে, পেছনে দৌড়াতে থাকা ইতর প্রাণীটিকে সুখী করতে?
একদিন এক দূরপাল্লার গাড়িতে ভদ্রবেশি যুবক কন্ডাক্টরকে দেখলাম সাদামাটা একজন গ্রাম্য মুরুব্বির সঙ্গে অভব্য ভাষায় তর্ক করতে। মনে মনে ভাবছিলাম অশিক্ষিত দারিদ্রক্লিষ্ট হেলপার কন্ডাক্টরের ভাষা এর চেয়ে ভালো আর কী হবে? কিন্তু খানিক বাদেই সে পাশের সিটের এক যুবক যাত্রীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে জানালো সে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে! গাড়িটি তার নিজের। ছুটির দিন ছিল বলে সে নিজেই এসেছে কন্ডাক্টরকে রেখে। অকস্মাৎ ওই গ্রাম্য মুরুব্বির তীর্যক মন্তব্য শুনতে পেলাম। ‘বাবা, আমি নিজে অশিক্ষিত হলেও ছেলেটাকে শিক্ষিত করার জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢালছি। কিন্তু এই কি সেই শিক্ষিত মানুষের ভাষা? এর চেয়ে তো আমার মতো চাষাদের আচার-ব্যবহারও ভালো।’ এমন ওজস্বী বাক্য শুনে আমিসহ আশপাশের সিটের ভদ্রলোকেরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
পাশের বাসার ক্লাস নাইনে পড়ুয়া এক মেয়ের কিছু কথা শুনে অনেকদিন পর ওই গ্রাম্য মুরুব্বির কথা আবার মনে পড়ল। রাজধানী ঢাকার একটি শীর্ষস্থানীয় নামকরা স্কুলের সাধারণ একজন কর্মকর্তা মাকে সে মুখের ওপর বলে দেয়, ‘আমার স্কুলে আপনি গিয়ে আপনার পরিচয় দেবেন না। আমি তাতে সবার কাছে ছোট হয়ে যাব। আপনি সবার সামনে আমাদের পরীক্ষার হলে স্যারদের ফুটফরমাশ খাটবেন দেখলে আমার মাথা হেঁট হয়ে যাবে।’ নিজের গর্ভধারিনী মাকে এমন কথা বলেছে জেনেই তাকে মন্দ ঠাওরালে অন্যায় হবে। একটু পেছনের ইতিহাসও সংক্ষেপে জানতে হবে। মনুষ্যত্বের পাঠ নিয়ে আমরা কত বড় অমানুষ হচ্ছি তা বুঝাতে এর উল্লেখই যথেষ্ট হতে পারে।
মেয়েটির বাবা মারা গেছেন এক ছেলে এক মেয়ে রেখে। তিনি ছিলেন হাইকোর্টের একজন ডাকসাইটে এ্যাডভোকেট। যুবতী মা তখন এতিম দুই সন্তানকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়ে যান। দেবর-ভাসুররা অস্বীকার করেন এতিম দুই ভাইপো ভাইজিকে তাদের পিতার হিস্যা দিতে। শ্বশুর মহোদয়ও মুখের ওপর  বলে দেন, ‘তোমাকে কিছু দেয়া নিরাপদ নয়, না জানি কবে কার সঙ্গে ভেগে চলে যাও।’ জনমদুখী এই মাকে তখন তাঁরই গর্ভধারিনী মা বলেন, ‘দেখ সন্তানদের দিকে তাকিয়ে তোর জীবনসংগ্রামে নামার দরকার নাই। আজকালকার যা ছেলে-মেয়ে, ওরা তোর জন্য কিছু করবে না। বুড়োকালের কথা কল্পনা কর হলেও তুই আমাদের দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দে।’ কিন্তু এতিম দুই সন্তানের কথা ভেবে মা জননী অন্য কারও মায়াজালে জড়ান নি।
ঢাকায় এসে বহু কষ্টে দেশের সেরা ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে বৈধব্য জয়ের মিশনে নামেন। নিজে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নামি-দামি স্কুলে ভর্তি করান। সুবহে সাদিকের আগে উঠেন। ওদের জন্য সারাদিনের খাবার তৈরি করে কাকডাকা ভোরেই ছোটেন কর্মস্থলে। সন্ধ্যায় কর্মক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে রোজই তাকে চেচামেচি করতে হয় ওদের পেছনে। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নাই। পড়াশোনাতেই নেই মন। স্টাফের সন্তান হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ থাকলেও ছেলেটি নিজের মান-সম্মান যাবে ভেবে মায়ের সেই নামী স্কুলে ভর্তি হয়নি। আর মেয়েটির হয়েছে ভিন্ন গতি। একই ক্লাসে এবার তার দ্বিতীয় পরীক্ষা। এবার এ বার্ষিক পরীক্ষায় ফেলও তার মোটামুটি নিশ্চিত। পড়াশোনার খবর নেই। টিভি দেখা আর প্রসাধন চর্চা চলছে অবিরাম।
পাশের স্কুলে পড়ে বলে মা সহজেই স্যারদের কাছ থেকে মেয়ের পরীক্ষার খাতার খবর নিতে পারেন। ওই স্কুলের অনেক খাতা তাঁর স্কুলের স্যারদেরও অনেক সময় দেখতে হয়। তিনি ভেবেছিলেন মেয়ের পরিচয় দিলে হয়তো কোনো স্যার দয়ার্দ্র হয়ে তাকে পাশ নাম্বার দেবেন। সে বিবেচনায় কেবল মেয়েকে বললেন, ‘মা, আমি কি তোর খাতার খোঁজ-খবর নিয়ে স্যারের কাছে সুপারিশ করব?’ অমনি সে দুধ-কলা দিয়ে পোষা জীবনহরণকারী সাপের মতো ফণা তুলে ওই উত্তর দেয়। আমার স্ত্র্রী মারফত জেনেছি ওই দুখীনি মা সারাদিন কষ্টে কিছু খেতে পারেন নি। লজ্জা, বেদনা ও অপমানে তিনি সারাদিন কেবলই বোবা কান্নায় অতীত হাতড়েছেন।
আশা করি আর বলার দরকার নেই, সন্তানের জনক-জননী বলতেই ওই ব্যথিত মায়ের করুণ রোদন শুনতে পারছেন। হায় আল্লাহ, এ কেমন মনুষ্যত্বের নমুনা! এ কেমন অকৃতজ্ঞতা! এমন কৃতঘ্নতা দেখে পশুরাও বুঝি লজ্জা না পেয়ে পারে না।
পাঠক, এতক্ষণে বুঝি আমাকে আধুনিক শিক্ষাবিরোধী কিংবা প্রযুক্তিবিমুখ সেকেলে ভেবে নিশ্চিত হয়েছেন। আসলে তা নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি শিক্ষানুরাগী এবং প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ। বিদ্যা আহরণেই কাটে আমার দিনমান। আর প্রযুক্তির সঙ্গেই আমার দিবসরাতি। সত্যকে পাশ কাটানোর সুযোগ নেই বলেই এসব ঘটনার অবতারণা। সবার অনুভূতিকে জাগ্রত করতেই এ মৃদু করাঘাত। সত্যটা হলো মানুষ যত শিক্ষিতই হোক না কেন, নৈতিকতার উন্মেষ এবং আল্লাহভীতির জাগরণ না ঘটানো গেলে সে শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিতই বানাতে পারে; মানুষ নয়। এভাবে চলতে থাকলে অবস্থার শুধু অবনতিই ঘটবে; উন্নতি নয়।
সহজে কথাটি ব্যাখ্যা করা যাক। চৌদ্দশ বছর আগে ফিরে যাওয়া যাক। মনুষ্যত্ব হারানো আর মানবিক মূল্যবোধ থেকে সরে যাওয়া সে যুগটাকে বিশ্ব ইতিহাসে জাহিলিয়া বা বর্বরতার যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মানুষকে কোনো জঘন্য কাজে প্রবৃত্ত হতে দেখলে এখনো মানুষ তাকে জাহেল বর্বর বলে নিন্দা জানায়। কিন্তু সে যুগেরই একদল লোক সহসা বদলে যান। শুধু বদলে যাওয়া কেন, বলতে গেলে পুরো দুনিয়াতেই বদলে দেন। তাঁদের সৌজন্যে মানবেতিসই লিখতে হয় নতুন করে। ধূলির ধরা হয়ে ওঠে অদেখা জান্নাত। তাঁদের ইতিহাস পড়ে এখনো মানুষ বিস্ময়ে থ হয়ে যায়। তাঁদের মনুষ্যত্ব বোধ ও আত্মদানের উপমা তুলে ধরে এখনো মানুষ মানবতা ও মহানুভতার পাঠ গ্রহণ করে।
কিন্তু তা কিসের বদৌলতে? কোন পরশ পাথরের ছোঁয়ায় এ রূপান্তর? সেটি কিন্তু এ শিক্ষার বদৌলতেই সাধিত হয়েছিল। শিক্ষার আলোই তাড়িয়ে দিয়েছিল সব আঁধারকে। তবে সে শিক্ষা যতটা না ছিল ভোগের। তারচে বেশি ছিল ত্যাগের। জাগতিকতা ও বস্তুর আসক্তি শেখায় নি তা। অক্ষম জড়বস্তুর পূজা ত্যাগ করে তা শিখিয়েছিল শক্তির আধার, সব কিছুর একক স্রষ্টা ও নিয়ন্তা আল্লাহর দাস হতে। আর তা ছিল ইসলামী শিক্ষা বা ইলমে ওহী।

ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

ইলম আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো জ্ঞান বা শিক্ষা (Knowledge বা Education)। ইসলামী শিক্ষা তথা কুরআনী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তা‘আলা একদল লোককে এর জন্য নিয়োজিত হবার নির্দেশ দেন। ইরশাদ করেন,
[ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢﴾ [التوبة : ٢٢١] 
‘অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ১২২}
পবিত্র কুরআনের বর্ণনাভঙ্গিতেও শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন নিচের আয়াতে আল্লাহ বলেন,
[ ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ ٣ عَلَّمَهُ ٱلۡبَيَانَ ٤ ﴾ [الرحمن: ١،  ٤]
‘পরম করুণাময়। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা।’ {সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪}
আয়াতে করুণাময় মানুষকে দেয়া তাঁর তিনটি নেয়ামতের কথা বলেছেন। কুরআন শেখানো, মানুষকে সৃষ্টি করা এবং তাকে ভাষা শিক্ষা দেওয়া। সাধারণভাবে বললে বলা হত মানুষ সৃষ্টি করেছেন তারপর তাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ সৃষ্টি করার আগে কুরআন শিক্ষা দেয়ার কথা বলা থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, দয়াময় আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তবে যারা কুরআন তথা কুরআনী শিক্ষা পায় নি তাদের যেন মানুষই গণ্য করেন নি তিনি।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে তিনি তাঁর রাসূলকে যে দায়িত্বগুলো দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাঁর একটি হলো শিক্ষা বিতরণ করা এবং কুরআন শিক্ষা দেওয়া। ইরশাদ হয়েছে,
[ كَمَآ أَرۡسَلۡنَا فِيكُمۡ رَسُولٗا مِّنكُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمۡ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمۡ تَكُونُواْ تَعۡلَمُونَ ١٥١ ﴾ [البقرة: ١٥١] 
‘যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫১}
একই বিষয়ে অপর সূরায় বলা হয়েছে,
[هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّ‍ۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢ ﴾ [الجمعة: ٢] 
‘তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।’ {সূরা আল-জুমুআ‘, আয়াত : ০২}
সুফয়ান ইবন উয়াইনা রহ. কে ইলমের মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তোমরা কি আল্লাহর বাণীর প্রতি লক্ষ্য করো না তিনি তো কী দিয়ে শুরু করেছেন?
[ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۢبِكَ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۗ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مُتَقَلَّبَكُمۡ وَمَثۡوَىٰكُمۡ ١٩ ﴾ [محمد : ١٩] 
‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।’ {সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯}
এ আয়াতে আল্লাহ আমলের কথা বলেছেন ইলমের পরে।
ইলম হলো নূর, যা দিয়ে মানুষ নানা বিষয়ের হাকীকত ও তাৎপর্য দেখতে পায়। এ দৃষ্টি ঠিক চোখের দৃষ্টি নয়। বরং অন্তরচক্ষু। আল্লাহ বলেন,
[ أَفَلَمۡ يَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَتَكُونَ لَهُمۡ قُلُوبٞ يَعۡقِلُونَ بِهَآ أَوۡ ءَاذَانٞ يَسۡمَعُونَ بِهَاۖ فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦ ﴾ [الحج : ٤٦] 
‘তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তাদের হত এমন হৃদয় যা দ্বারা তারা উপলব্ধি করতে পারত এবং এমন কান যা দ্বারা তারা শুনতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।’ {সূরা আল-হজ্জ, আয়াত : ৪৬}
এ জন্য আল্লাহ মানুষকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। একদল আলিম (জ্ঞানবান) অন্যদল অন্ধ (জ্ঞানহীন)। ইরশাদ হ,
[ ۞أَفَمَن يَعۡلَمُ أَنَّمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ ٱلۡحَقُّ كَمَنۡ هُوَ أَعۡمَىٰٓۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩ ﴾ [الرعد: ١٩] 
‘যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মত, যে অন্ধ? বুদ্ধিমানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে।’ {সূরা আর-রা‘দ, আয়াত : ১৯}
ইলম মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে। আর আল্লাহভীতিই পারে মানুষকে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে। আল্লাহ বলেন,
[ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَۗ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ ﴾ [فاطر: ٢٨] 
‘আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।’ {সূরা আল-ফাতির, আয়াত : ২৮}
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
[ قُلۡ ءَامِنُواْ بِهِۦٓ أَوۡ لَا تُؤۡمِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهِۦٓ إِذَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ يَخِرُّونَۤ لِلۡأَذۡقَانِۤ سُجَّدٗاۤ ١٠٧ ﴾ [الاسراء: ١٠٧] 
‘বল, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ১০৭}
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّينِ »
‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে তিনি দীন সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা দান করেন।’ [বুখারী : ৫৬৪৫; মুসলিম : ২৪৩৬]
 আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا ، لَمْ يَأْتِهِ إِلاَّ لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَمَنْ جَاءَ لِغَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى مَتَاعِ غَيْرِهِ »
‘যে ব্যক্তি আমার এ মসজিদে আসবে একমাত্র কল্যাণ অর্জনের জন্য যা সে শিখবে বা শেখাবে, সে আল্লাহর পথে মুজাহিদের স্তরে। আর যে এ ছাড়া অন্য উদ্দেশে আসবে, সে ওই ব্যক্তির স্তরে যে অন্যের বস্তুর প্রতি তাকায়।’ [ইবন মাজা : ৬৪৭২, হাদীসটি সহীহ সনদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।]  
প্রয়োজনীয় ইলম সবার জন্যই ফরয। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ »
‘ইলম শিক্ষা করা প্রতিটি মানুষের ওপর ফরয।’ [ইবন মাজাহ্‌ : ২২৪]
শুধু তাই নয় আমরা দেখতে পাই, শেষ নবীর ওপর অবতীর্ণ প্রথম ওহীতেই বলা হয় ‘পড়’।

শেষ কথা:

শুধু শিক্ষা অর্জন বা জ্ঞানার্জন করলেই হবে না তা হতে হবে রব বা প্রতিপালক তথা আল্লাহকে সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আমাদের গলদ আজ এখানেই। সবাই উপলব্ধি করছি পড়ার গুরুত্ব। সবাই গাইছি শিক্ষা ও বিদ্যার মাহাত্ম্য। অথচ এর সঠিক লক্ষ্যের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীগুলোর দিকে তাকালেও আমরা এমন ধারণা পাই। আলহামদুলিল্লাহ, মুসলিম ভাই-বোনেরা এখনো একথা স্বীকার করেন যে, ইসলামেই শিক্ষার প্রতি সবচে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আলবৎ ঠিক। একেবারে হক কথা। কিন্তু শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আমরা যত বলছি, এর উদ্দেশ্য ও অর্জন নিয়ে ততটা বলছি না। এর ফলাফল নিয়ে ভাবছি না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপকারী জ্ঞান শেখার এবং সে অনুযায়ী আমলের তাওফীক দিন। আমাদের সকলকে তাঁর দীনের ইলম প্রচারে খাদেম হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

[১]  ইন্টারনেটেপ্রাপ্ত বিভিন্ন লেখা থেকে সংগৃহীত
[২]  ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন লেখা থেকে সংগৃহীত



শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি। এই পোস্টি আপনার ফেসবুক পেইজে,আপনার ওয়ালে শেয়ার করুণ। প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :